নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হামিদের ব্লগ

হামিদ আহসান

ভবের এই খেলাঘরে খেলে সব পুতুল খেলা জানি না এমন খেলা ভাঙে কখন কে জানে ...

হামিদ আহসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

দ্য ওভাল পোট্রেট ....... ..(অনুবাদ গল্প)

০১ লা নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:০৯

মূলঃ এডগার এলান পো
রূপান্তরঃ হামিদ আহসান ©


আঘাতটা ভালই পেয়েছিলাম। এই ক্ষতবিক্ষত শরীরে তাই আমার সহচর আমাকে খোলা মাঠে রাত কাটাতে দিতে রাজি হল না; বরং আমাকে ধরে একটা পরিত্যক্ত ফরাসী পল্লীতে নিয়ে গেল। আমরা যে বাড়িটিতে উঠলাম দেখে মনে হয় খুব বেশি দিন হয় এটা পরিত্যাক্ত হয়েছে।  ভেতরের দিকে একটা ঘরে ঠাঁই নিলাম দু’জনে। চলার মতো জিনিসপত্র সবই আছে দেখলাম। সাজসজ্জা ও আসবাবপত্র বেশ পুরনো এবং মলিন হলেও বর্তমানে এগুলোর প্রত্নতাত্মিক মূল্য বেশ। দেয়ালে ঝুলছে দামি দামি পর্দা। নানা রকম অস্ত্র-শস্ত্র ঝুলছে এখানে সেখানে। দেয়ালগুলোতে শোভা বর্ধন করে আছে সোনালী ফ্রেমে বাঁধানো নানা রকম পেইন্টিং। আমাদের প্রকোষ্ঠটির নির্মাণ কৌশলও বিচিত্র! অনেকগুলো কোণ রয়েছে এতে। প্রতিটি কোণই পেইন্টিং দিয়ে সাজানো। সেখানে দেয়ালেও ঝুলছে পেইন্টিং।

পেইন্টিংগুলি দেখে আমি মহা খুশি! আমার সহচর পেড্রোকে তখনই বললাম বড় দরজাটা বন্ধ করে দিতে। আমার পালঙ্কের পাশেই ছিল একটা বড় মোমবতির ঝাড়। ঝাড়ের সবগুলো মোম বাতি জ্বালিয়ে দিতে বললাম। বিছানার চারদিক ঘিরে থাকা কালোপর্দাগুলোও সরিয়ে দিতে বললাম। আমার এতসব আয়োজন ঘুমানোর জন্য নয়; বরং পেইন্টিংগুলো উপভোগ করার জন্য। পেইন্টিং অামার খুবই প্রিয় বিষয়৷ মাথার কাছে রাখা পুস্তিকাটি পড়তে পড়তে পেইন্টিংগুলো দেখব। এই পুস্তিকাটিতে প্রতিটি ছবির বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া আছে।

ছবি দেখছি আর বইটি পড়ছি। এভাবে রাত অনেক গভীর হয়ে গেল। বাতির অালো ভালভাবে পাচ্ছিলাম না। এদিকে সহচর ঘুমের রাজ্যে বিচরণ করছে। নিজেই তাই ঝাড়টা একটু টেনে ঠিক জায়গায় রাখলাম যাতে পুস্তিকাটি পড়তে আর সমস্যা না হয়। আর তখনই ঘটল অপ্রত্যাশিত একটা ঘটনা। ঝাড়ের অগনিত মোমের আলোতে আলোকিত হয়ে উঠল প্রকোষ্ঠের একটি কোণ। তখনই চোখে পড়ল আরেকটা ছবি যেটা অন্ধকারের জন্য এতক্ষণ চোখে পড়ে নি। ছবিটি সদ্য যৌবনা একজন তরুণীর। দ্রুত চোখ বুলিয়ে নিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। চোখ কেন বন্ধ করলাম তা প্রথমে নিজেই বুঝি নি। চোখ বন্ধ করেই কারণটা ভাবলাম। মানুষ গভীরভাবে কিছু ভাবতে গেলেই চোখ বন্ধ করে। আমিও সেটাই করেছি। ভাবছি আমারই দৃষ্টি আমার সাথে প্রতারণা করছে নাতো। ভুল দেখলাম নাতো! কিছুক্ষণ শান্ত থেকে আমি আবার স্থির দৃষ্টি দিলাম ছবিটার ওপর। না, এবার আর সন্দেহ রইল না।

ইতোমধ্যে বলা হয়ে গেছে যে ছবিটা একজন তরুণীর। সম্পূর্ন অবয়বটা নয়, কেবল ঘার আর মাথাটা ফুটিয়ে তুলা হয়েছে চমৎকারভাবে। বাহু, বুক এমন কি লম্বা চুলের প্রান্তটা পর্যন্ত মিলিয়ে গেছে ছায়াময় পশ্চাৎপটে। ডিম্বাকৃতির ফ্রেমে বাঁধানো। শিল্প হিসেবে অনুলনীয় এই ছবি। কিন্তু এর নান্দনিকতা কিংবা একজন তরুণীর অসাধারণ পোট্রেট দেখে আমি চমকেছি ব্যাপারটা মোটেও তা নয়। তবে কি রাত দুপুরে ঘুম ঘুম চোখে ভুল দেখলাম? না, তাও না। ছবিটা জীবন্ত বলে মনে হল আমার! যদিও ছবির ফ্রেম, আকার আকৃতির গঠন সবই সেকেলে ধ্যান ধারণার প্রতিনিধিত্ব করছে। হাবিজাবি নানান কথা ভাবতে ভাবতে একটি ঘন্টা কেটে গেল আধ-শোয়া আধ-বাসা অবস্থায়। সারাক্ষণ অপলক চেয়ে রইলাম ছবিটির দিকে। তারপর ছবিটির শিল্পশৈলিই যে আমার ভেতরে অস্থিরতার জন্ম দিয়েছে মনে মনে সেটা নিশ্চত হয়েই শুয়ে পড়লাম বালিশে। আসলে ছবিটার মধ্যে একটিা আকর্ষণ আছে। একজন পুরুষের কাছে জীবিত নারীর আকর্ষণের মতোই সেই আকর্ষণ। মোমের ঝাড়টা আবার সরিয়ে রাখলাম আগের জায়গায়। রহস্যসময় ছবিটি আবার অন্ধকারে ঢেকে গেল। আমার বিক্ষুব্ধ মনও শান্ত হল। পুস্তিাটা আবার হাতে নিয়ে বের করলাম সেই ছবিটার বর্ণনাঃ

মেয়েটি অসামান্য রূপবতি ছিল। শরীর ভরা রূপই নয়, বরং প্রাণচাঞ্চল্যে ছিল ভরপুর। কোনো এক অশুভ লগ্নে দেখো হল এক শিল্পীর সাথে; ভালবাসল এবং বিয়েও করল শিল্পীকে। শিল্পী আবেগপ্রবন ছবি পাগল মানুষ। মেয়েটি হল তার মানসসুন্দরী। আশ্চর্য রূপবতী মেয়েটি সবসময় হাসিখুশি উচ্ছ্বল! সংসারের সবকিছুই ভালবাসে কেবল রঙ-তুলি ছাড়া। ওগুলো যে তার সতীন! শিল্পী যেদিন বলল মেয়েটির ছবি ফুটিয়ে তুলবে ক্যানভাসে সেদিন মেয়েটির মুখ শুকিয়ে গেল। কিন্তু অবাধ্য হতে সে জানে না। নীরবেই মান্য করল স্বামীর আদেশ। চিলেকোঠার অন্ধকারাচ্ছন্ন প্রকোষ্ঠে বসে রইল ঘন্টার পর ঘন্টা।মাথার উপরের গুলগুলি দিয়ে ম্লান আলো এসে পড়ত ক্যানভাসে। শিল্পী ঐ আলোতেই ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলতে লাগল তার মানস সুন্দরীর ছবি। ঘন্টার পর ঘন্টা, দিনের পর দিন। শিল্পী যেমন ভাবুক মানুষ তেমনি খাটতেও পারে উদয়াস্ত। সুন্দরের উপাসনায় নিমগ্ন হলে ভুলে যায় আশপাশের সবকিছু। তার খেয়ালও হল না ঐ ছাদের ঘরে কেমন বীভৎস আলো আসছে। সে আলোয় দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে তার সুন্দরী স্ত্রী! স্বামীর মুখে সুখ দেখতে নিজের মুখের হাসিটা বজায় রেখেছে শেষ পর্যন্ত। তার ভাবনা, স্বামী তাকে ভালবাসে। অমর করে রাখার জন্যই তাকে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলছে। মনপ্রাণ ঢেলে আঁকছে। দিনের পর দিন চেষ্টা করে যাচ্ছে ক্যানভাসে প্রাণ জাগানোর জন্য। তাই শরীর মানতে না চাইলেও সে বিনাবাক্যব্যয়ে স্বামীকে সহযোগিতা করছে। অার ছবি দেখেও অনেকেই অবাক হয়েছে। কেবল স্ত্রীর মুখটিই অবিকল ফুটিয়ে তুলে নি, স্ত্রীর প্রতি তার গভীর প্রেমও যেন বাঙ্ময় হয়ে উঠছে তুলির প্রতিটি আঁচড়ে। ছবি যখন প্রায় শেষ পর্যায়ে তখন শিল্পী চিলেকোঠাতে আর কাউকে ঢুকতে দিল না। দিন রাত চেয়ে রইল কেবল ছবিটার দিকে। পাগলের মতো তুলির আঁচড়ে আঁচড়ে শেষ করল অতুলনীয় একটি ছবির কাজ। এর মধ্যে স্ত্রীর দিকে একবার ফিরে দেখার কথাও মনে পড়ল না। শিল্পী তার ছবিতে এতটাই তন্ময় হয়ে রইল যে, সে টেরই পেল না ছবির গন্ডদেশে যে রক্তিম অাভা তুলির আঁড়ে ফুটে উঠছে তা সংগ্রহ করা হচ্ছে পাশে বসা ধীরে ধীরে রক্তশূন্য হয়ে উঠা হতভাগী তারই স্ত্রীর গন্ডদেশ থেকে। বেশ কয়েক সপ্তাহ গেল। এখন শুধু বাকি আছে ছবিসুন্দরীর চোখে মুখে শেষবারের মতো তুলির বোলানো। প্রদ্বীপ যেমন নেভার আগে শেষ বার দপ করে জ্বলে উঠে শিল্পীর স্ত্রীও সেরকম শেষবারের মতো জ্বলে উঠল। শেষ হল তুলির কাজ। এবার শিল্পী চেচিয়ে উঠল, আরে এযে জীবন্ত! হঠাৎই যেন মনে পড়ল প্রিয়তমার কথা। পাশে তাকিয়ে দেখে সে মারা গেছে!

[এডগার এলান পো (Edgar Allan Poe- January 19, 1809 – October 7, 1849)একজন প্রখ্যাত আমেরিকান লেখক। তার এই রহস্য গল্পটির প্রকাশিত হয় ১৮৫০ সালে। অর্থাৎ মৃত্যুর এক বছর পরে তাঁর অপ্রকাশিত লেখা হিসেবে এটি প্রকাশিত হয়।]

মন্তব্য ২৩ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:২২

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: দারুন!

শিল্পীরা কি এমনই হয়?

০১ লা নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৪২

হামিদ আহসান বলেছেন: এমন শিল্পীরাই অসাধারণ কিছু সৃষ্টি করে হয়ত .।

অনেক ধন্যবাদ ..

২| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৫

জেন রসি বলেছেন: এডগার এলান পো মানব মনের অন্ধকার দিকগুলো খুব চমৎকার ভাবে তার গল্পগুলোতে উপস্থাপন করেছেন।

আপনার অনুবাদ ভালো হয়েছে। শুভকামনা রইলো।

০১ লা নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৬

হামিদ আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ৷ শুভকামনা রইল

৩| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৪০

অগ্নি সারথি বলেছেন: অনুবাদ দারুন হয়েছে। শুভকামনা।

০১ লা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৪৩

হামিদ আহসান বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ

৪| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:২৩

রিকি বলেছেন: আমার অনেক প্রিয় একজন লেখক পো---তার প্রতিটা ছোটগল্প অসাধারণ। গল্পের অনুবাদে অনেক অনেক ভালো লাগা জানবেন :) :) :)

০১ লা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৪৫

হামিদ আহসান বলেছেন: অাপনাকেও অনেক ধন্যবাদ

৫| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৫৭

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: বাহ! দারুন। এডগার এলান পো এর লেখায় শক্তি ছিল আলাদা।

আপনার অনুবাদটাও বেশ সুন্দর হয়েছে।

০২ রা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৭:৫১

হামিদ আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ৷ শুভকামনা নিরন্তর জানবেন .।

৬| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:০৪

কিরমানী লিটন বলেছেন: চমৎকার অনুবাদ,অনেক সাধুবাদ প্রিয় হামিদ আহসান ভাই-আপনার নান্দনিক প্রচেষ্টার জন্য ...
শুভকামনা জানবেন...

০২ রা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৭:৫৩

হামিদ আহসান বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ৷ শুভকামনা নিরন্তর জানবেন

৭| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:০২

রহস্যময় ডিটেকটিভ ঈশান বলেছেন: অনেক সুন্দর হয়েছে অনুবাদ। খুব ভাল লাগলো।যদি মেইনটা আমার পড়া ছিলো।

০২ রা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৪৫

হামিদ আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ৷ শুভেচ্ছা নিরন্তর জানবেন.

৮| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৪

হামিদ আহসান বলেছেন: ..

৯| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৪৭

প্রামানিক বলেছেন: চমৎকার অনুবাদ। খুব ভাল লাগল। ধন্যবাদ হামিদ ভাই।

০২ রা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:১১

হামিদ আহসান বলেছেন: ধন্যবাদ জানবেন প্রামানিক ভাই

১০| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৪০

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ঝরঝরে অনুবাদ, ভাল লেগেছে।

ভাল থাকুন। সবসময়।

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৩৩

হামিদ আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ...

১১| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৪৫

জুন বলেছেন: প্রিয় লেখকের গল্প, সেই সাথে আপনার অনুবাদও অনেক সাবলীল/ঝরঝরে, কিন্ত শিল্পীর কাজটা ভালোলাগলো না হামিদ আহসান :(
+

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৫৯

হামিদ আহসান বলেছেন: ঠিক তাই৷ অামারও ভাল লাগে নি শিল্পীর এই (অ)কাজটা৷
অনেক ধন্যবাদ .....।

১২| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৩

মামুন রশিদ বলেছেন: জমাট উত্তেজনা গল্পটার ছত্রে ছত্রে । অনুবাদটাও হয়েছে সেই রকম, বাঙময় ।

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৪৩

হামিদ আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ মামুন ভাই ....

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.