![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যাত্রা শুরু আজিমপুর থেকে। বাসের সর্বশেষ খালি আসনটা পেয়ে গেলাম আমি । দুই জনের আসন। আগে যিনি জানালার পাশে বসে আছেন তিনি আসনটির আশি শতাংশ দখল করে রেখেছেন। বাকি জায়গায় বসতে গিয়ে আমার অর্ধেকটা বাইরেই রইল। অফিস টাইম। বলা যায় ভাগ্যজোরে সিটটা পেয়েছি। একবারে পেছনের সারির আগের সারিতে। লোকজন হুরমুর করে উছছে তো উঠছেই। একেবারে ঠেসে ভরে গেল বাসটা। কিন্তু বাসের পেটে জায়গা না থাকলেও কন্ডাক্টারের পেট ভরে না। সে চিল্লাতে থাকে ‘মামা পিছনে যান, পিছনে যান। পিছনেই পুরা খালি, পিছনে যান।’ আমার পাশে যে লোকটা দাঁড়িয়েছে সে তার নাভির নিচের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দিয়ে আমার কাঁধটা চেপে একেবারে ঠেসে ধরেছে। তারও উপায় নেই। তাকেও আরেকজন চেপে ধরেছে আমার গায়ের ওপর।
তারপর এক ঘন্টায় কলা বাগান পার হয়ে এখন আধ ঘন্টা যাবৎ বসে আছি ধানম-ি সাতাশ-এর সিগনালে। প্রচন্ড গরমে হাঁসফাাঁস অবস্থা। আধ ঘন্টা যাবৎ বসে বসে একটা বিলবোর্ড দেখছি। আমার মনে হচ্ছে অনন্তকাল ধরে আমি তাকিয়ে আছি বিলবোর্ডটার দিকে। মূলত পরিবেশটাকে ভুলে থাকতেই বিলবোর্ডটার আশ্রয় নিয়েছি। ঢাকার এই অংশের মাননীয় মেয়র স্যার টানিয়েছেন বিলবোর্ডটা। একটা ট্রেনের ছবি। সামনে তিনি দাঁড়ানো। বিলবোর্ডটিতে লেখা রয়েছে “এক অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ”।
একটু পরেই পাশে দাঁড়ানো লোকটা পাশ ফিরে প্রথমে বাম নিতম্বের পাশ দিয়ে চেপে ধরলেন আমাকে। তার একটু পরই আবার আমার মাথার ওপর ঝুঁকে পড়ে আমার সিটের পেছনটায় ঠেস দিয়ে দাঁড়ালেন। আমি মাথা সোজা করতে পারছিলাম না। ঘার কাত করে বসে আছি। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। তারপরও আমি লোকটাকে কিছু বলি না। অভ্যস্থ হয়ে গেছি হয়ত।
-‘দেখছেন ভাই, রাস্তায় পাবলিক বাস কয়টা আর প্রাইভেট কার কয়টা? এত এত প্রাইভেট কার থাকলে জ্যাম লাগবে না তো কী?’
-‘কোনো রকমে একুটু টাকা হলেই একটা গাড়ি কিনে ফেলে।’
-‘আপনার টাকা হলে আপনেও কিনতেন ভাই! টাকা থাকলে কে আর পাবলিক বাসের নরক যন্ত্রণা ভোগ করে?’
এমনিতেই গরম। বাসের ভেতরে কোনো ফ্যান রাখে না এরা। তার উপর মানুষের চিল্লাফাল্লায় আমার অস্থির লাগে। শরীরে কেমন যন্ত্রণা হয়। শরীরের যন্ত্রণা ভুলে থাকতে আমি বিল বোর্ডটার দিকে মনোযোগ দিতে চেষ্টা করি- “এক অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ”। ছবিতে মেয়র স্যার খুব হাসিখুশি। দেশের শীর্ষ নেতাদের ছবিও আছে তাঁর সাথে।
।। ২।।
অবশেষে ধানম-ি সাতাশের সিগনাল পার হয় বাসটি। একটু এগিয়ে মানিক মিয়া এভিনিউতে ঢুকার মুহূর্তে বাসটি স্টপেজ ধরে। হেলপার চেচিয়ে উঠে ‘এই আসাদগেট নামেন, আসাদগেট নামেন’। কিছু লোক নেমে যায়। তারপর উঠেও কিছু লোক। এর মধ্যে একজন কায়দা করে ভীড় ঠেলে পেছনের দিকে আসতে গিয়ে একজনের পায়ে পাড়া দেয়। পাড়া খেয়ে লোকটা খেঁকিয়ে উঠে। লোকটা নিশ্চয় বাসের নিয়মিত যাত্রি না। নিয়মিত যাত্রীরা অভ্যস্থ হয়ে যায়। পাড়া টারা খেলেও আর চেচামেচি করে না। আমিও প্রথম প্রথম এমন করতাম। এখন আর কিছুতেই মুখ দিয়ে শব্দ বের হয় না। যা ঘটে সবই এই শহরের বাস ভ্রমণে স্বাভাবিক ঘটনা। স্বাভাবিক ঘটনা নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখানোর তো কিছু নেই।
যে লোকটা ভীড় ঠেলে পেছন দিকে চলে এসেছে দেখতে বেশ ভদ্রমতো। ফুল হাতা শার্ট ইন করে পরা; পায়ে কালো সু। দেখেই মনে হচ্ছে অফিসে যাচ্ছে। বাসটি স্টপেজ ছাড়তেই লোকটা বলে,
-‘ভাই যারা গেটে আছেন পকেট, মোবাইল সাবধান। এই স্টপেজটা ভাল না। প্রায়ই পকেটমার হয়। মোবাইল টোবাইল নিয়ে নেয়’।
-‘ও ভাই, আমার মোবাইল নিয়া গেছে! আমার মোবাইল নিয়া গেছে! চিৎকার করে উঠে একজন। কাঁদার মতো শোনায় লোকটার কন্ঠস্বর।
-হায় হায়, কন কী’! কেউ একজন বলে।
-‘কোনসুম নিল ভাই’?
-‘এই তো ভাই উঠার সময়ও তো পকেটে ছিল’!
-‘কল দেন ভাই। এখানে কেউ নিয়া থাকলে রিং বাজব’।
-‘কল দিসি, কিন্তু মোবাইল বন্ধ’।
-‘এই কন্ডাক্টর, তুমি গেটের সবার পকেট চেক করো’।
গেটে যারা জটলা করে ছিল কারোও পকেটেই পাওয়া যায় না মোবাইলটা। বাসের ভেতরে হৈ চৈ শোরগোল চলতেই থাকে। এদিকে বাস ঠায় দাঁড়িয়ে আছে খামার বাড়ির মোড়ে। অসহ্য গরমে শারীরিক কষ্টের সাথে মানুষের শোরগোলে আমার অবস্থা করুন। এরই মধ্যে আমার কী মনে হল, বললাম,
‘ঐ ভদ্রলোককে চেক করেন যিনি চুরি হইতে পারে বইলা আপনাদের সাবধান করছিলেন’।
হৈ হৈ করে সবাই তাকে ধরে এবং ঠিকই তার কাছে মোবাইলটা পাওয়া যায়। এরপর আর যায় কোথায়, শুরু হয়ে যায় কিল ঘুষি। লোকজনের মনে হয় হাত সব সময় নিশপিশ করে। মানুষ মারতে না পেরে জীবনটা পানশে লাগে। তাই সুযোগ পেলেই বীরদর্পে নেমে পড়ে।
দেখলাম অবস্থা বেগতিক। আমার ভেতরে এক ধরনের অপরাধ বোধ জেগে উঠে। আমার কারণে না লোকটা মরে যায়। আমি যতটা জোরে পারা যায় হুংকার দিলাম-‘কেউ মারবে না। এই বেটাকে পুলিশে দিয়ে দাও। একটা ভয় ছিল আমাকে না আবার চোরের দালাল বলে মারতে শুরু করে। কিন্তু আমার কারণেই যেহতেু চোর ধরা পড়েছে তাই মনে হয় তারা আমার কথা শুনল। একটু সামনেই একটা টহল পুলিশের গাড়ি পাওয়া গেল। চোরকে কয়েকজন ধরে তাদের কাছে হস্তান্তর করল। মোবাইলে মালিক মোবাইল পেয়ে খুশি।
।। ৩।।
মহাখালি ফ্লাইওভার পার হয়ে একটু এগিয়ে গিয়ে আটকে আছে বাস। শারীরিক কষ্ট আর মানসিক অবসাদে আমি কাহিল। তবে বাসের লোকজন এখন কমে গেছে। সিট পূর্ণ হয়ে পাঁচ ছয় জন মাত্র দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ বাতাসে তীব্র একটা দুর্গন্ধ পাই। আমার নাক বরাবর পাছা দিয়ে যিনি দাঁড়িয়ে আছেন এটা সম্ভবত তারই কাজ। বাসের মধ্যেও বায়ু ত্যাগ করতে হয়! আমার বিবমিষার মতো হয়। তবে বমি হয় না। বমি হয়ে গেলে চরম দূরবস্থা হতো। এই শহরে বাস ভ্রমণের সময়টায় কী করে এসব সহ্য করে যাই কে জানে! বাস আটকে আছে যানজটে। আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকাই। কোনো বিলবোর্ড যদি পাই। বিলবোর্ডে মনোযোগ দিয়ে পরিবেশটা ভুলে থাকার একটা চেষ্টা করা যেতে পারে।
এরই মধ্যে আচমকা এক ভদ্রলোক দৌড়ে এসে ড্রাইভারকে মারতে আরম্ভ করলেন। কথাবার্তায় বুঝতে পারলাম ইনি সেই সিএনজি অটোরিকশার যাত্রী যাকে আমাদের বাসটি ধাক্কা মেরে এসেছে। ভদ্রলোক এবং তার সাত আট বছর বয়সী মেয়েটা ছিল অটোরিকশাটিতে। এই ড্রাইভার খুবই খারাপভাবে সেই সিএনজি অটোরিকশাকে ধাক্কা মারে ফ্লাইওভারের ওপর। বলা যায় অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছেন তারা। ভদ্রলোক তাই ড্রাইভারকে বাগে পেয়ে ঝাল মিটাতে চাইলেন।
কিন্তু বাসের প্যাসেঞ্জারগণ তা হতে দিবেন কেন। ভাবখানা এমন যে, আমার বাসের ড্রাইভারকে আমার সামনে মেরে যাবে? সবাই এক সাথে ধরল ভদ্রলোককে। শুরু হল গণপিটুনী। ভদ্রলোক দৌড়ে বাস থেকে লাফ দিয়ে পড়ে বাঁচলেন। কিন্তু বাসের ভেতরের পাবলিকের উত্তেজনা থামে না। নানান কথায় তারা বাস সরগরম করে রাখে:
-‘শালার শাবাস কত’!
-‘দিসি হালার কুখশা বরাবর একটা লাত্থি। মনে থাকব সারা জীবন’।
-‘সিএনজির মধ্যে পিচ্চি মাইডারে রাইখা ওনি আইছে তাফালিং করতে’!
-‘আমগো ড্র্রাইভারেরও দোষ আছে। খামাখা চাপ দিল কেন সিএনজিডারে’?
-‘অ ভাই হইছে তো, আর কাউ কাউ কইরেন না’।
-‘আমি দিসিলাম একটা ঘুষা। লাগলে খবর আছিল। লাগে নাই’।
-‘হেলপার লাঠি পাইল কই? অয় দেহি লাঠি দিয়া বাড়ি মারতাছে’।
-‘মাথায় লাগলে খবর আছিল’।
মানুষের হাউ কাউ অসহ্য লাগছিল। আর পারছিলাম না। তবে আমার ভাগ্য ভাল এর মধ্যেই বাসটি আমার গন্তব্যে মানে কাকলি মোড়ে এসে পড়ে। আমি নেমে গিয়ে তখনকার মতো বাঁচি।
১৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:০৭
হামিদ আহসান বলেছেন: হা হা হা .....
২| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:২৩
মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:
হামিদ ভাই... অভিনন্দন নেন!!!
একদিনে দু'টি গণপিটুনির রাজসাক্ষী আপনি
//একটা ট্রেনের ছবি। সামনে তিনি দাঁড়ানো। বিলবোর্ডটিতে লেখা রয়েছে “এক অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ”।//
ঠিক বাংলাদেশ ট্রেনের গতিতে যদি দেশ চলে তাহলে সত্যিই খবর আছে। ট্রেনের গতি এখন ঘণ্টার ১৫কিমি'র নিচে।
১৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৮
হামিদ আহসান বলেছেন: হা হা হা .....
ধন্যবাদ মইনুল ভাই ..
৩| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৩
রায়হান মজিদ বলেছেন: ঢাকা বাংলাদেশের বিষফোরা।
১৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৯
হামিদ আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ..
৪| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:১১
অগ্নি সারথি বলেছেন: সত্যিই এক অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ।
১৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:২৫
হামিদ আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য ..
৫| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:২৬
বোকা শিয়াল বলেছেন: ''এক অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ '' এইটা ভালো হইছে
১৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৪
হামিদ আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ৷ ভাল থাকুন ..
৬| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৩
আরজু পনি বলেছেন:
এমন ভাবে লিখলেন যেনো চোখে দেখতে পেলাম ।
দারুণ জীবন্ত !
১৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৫
হামিদ আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ৷ ভাল থাকুন ...।
৭| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৫
আজমান আন্দালিব বলেছেন: ঢাকার নিত্যদিনের খণ্ডিত চিত্র ভালোভাবেই এঁকেছেন।
১৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৬
হামিদ আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ৷ ভাল থাকুন ..
৮| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১:০৫
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ২৭ নম্বর বাস...
২, ৭, ৮, ১৩, ২৭ এগুলো হল ঢাকা শহরের গর্ব
১৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:০৮
হামিদ আহসান বলেছেন: হা হা হা .........ঠিকই বলেছেন
৯| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৬
হামিদ আহসান বলেছেন: ..
১০| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৭
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: “এক অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ”। বিজ্ঞাপনে উন্নয়ন উন্নয়নের বিজ্ঞাপন!
সবই মার্কেটিং পলিসি! দেখেন না আমনা সবাই কত্ত হ্যাপ্পি!
আপনার চেয়েও ধৈয্যশীল পুরা জাতি। সাত চড়ে রা করে না টাইপ! এখন বাকী কেবল বিজ্ঞাপনের! রাজনীতির বিজ্ঞাপন! সগৌরবে চলছে বিলবোর্ডে বিলবোর্ডে....
১৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:২৩
হামিদ আহসান বলেছেন: হা হা হা ......সুন্দর বলেছেন ৷
১১| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:২৩
হামিদ আহসান বলেছেন: ...
১২| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৭
জুন বলেছেন: পড়তে পড়তে মনে হলো আমিও সেই বাসের ভেতর বসে আছি, আর চোখের সামনে সব ঘটনাগুলো ঘটে চলেছে।
অপুর্ব
+
২৪ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৫১
হামিদ আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:১৯
এন ইউ এমিল বলেছেন: “এক অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ" এর রাজধানী এখন মানুষে থাকার অনুপযুক্ত