![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিশাল শোয়ার ঘর। দরজাটা ভেজানোই ছিল। বাতিও নিভিয়ে রেখেছিলেন আগে থেকে। ভেজানো দরজাটা ঠেলে সন্তর্পণে ভেতরে ঢুকলেন খন্দকার আবদুল মজিদ। খুব সাবধানে দরজাটা বন্ধ করে দিলেন যেন কোনো শব্দ না হয়। তাপরপর লক করে দিলেন ভেতর থেকে এবং বাতি না জ্বেলে অন্ধকারেই খাটের দিকে ফিরে ফিসফিস করে বলে, জোহরা এসেছো? সাথে সাথেই খাটের দিক থেকে উত্তর আসে, হুম, এসেছি তো! তুমি এতো দেরি করলে কেন? ডিম লাইটটা জ্বেলে দাও।
ডিম লাইট জ্বেলে খন্দকার আবদুল মজিদ স্পস্ট দেখতে পেলেন জোহরা হাসি মুখে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। বরাবরের মতোই ফিনফিনে সাদা একটা লম্বা জামা। মাথায় একটা সাদা পাথর বসানো মুকুট পরা। এতক্ষণে সব দুশ্চিন্তা দূর হয়ে মনটা আনন্দে ভরে উঠল। খাটে উঠে জোহরা বেগমের মুখোমুখি বসলেন তিনি।
মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে অনেক দিন পর আজ ছেলে মেয়েরা এক সাথে বাড়িতে এসেছে। ছেলেমেয়েদের বাচ্চাকাচ্চাসহ বিরাট লটবহর। তার কি যে আনন্দ লাগছে বলে বুঝানো যাবে না। তার একটাই আশঙ্কা ছিল জোহরা এতো মানুষের ভীড়ে আসবে কি না। এই কথাটা বলতেই জোহরা বলেন, কী বল এসব, আমার ছেলেমেয়ে নাতিনাতনীরা এসেছে আর আমি আসব না। আমি সবই দেখছিলাম। তুমি ঘরটা রিজার্ভ রেখে ভাল করেছো। তা না হলে আমি আজ আসতে পারতাম না। সবার সাথে তো আমি দেখা করতে পারব না। দূর থেকে দেখেই খুশি। আমি তো মৃত।
দুই ছেলে এক মেয়ে খন্দকার আবদুল মজিদের। স্ত্রী জোহরা বেগম জীবিত থাকতেই ছেলেমেয়ে সবাই বিদেশে সংসার পেতেছে। মেয়ে থাকে অস্ট্রেলিয়াতে আর দুই ছেলে আমেরিকাতে সেটেলড। ছেলেরা আমেরিকাতে সেটেলড হওয়ার পর দেশে এসে বিয়ে করে বউ নিয়ে গেছে। মেয়ে এখান থেকে বিয়ে করে স্বামী স্ত্রী এক সাথে অস্ট্রেলিয়া চলে যায়। সন্তানদের সুখি দেখে আবদুল মজিদ আর জোহরা বেগমও খুশি।
ছেলে-মেয়ে সবার বিয়ে তিনি নিজের পছন্দে দিয়েছেন। এটা তার জন্য অনেক সুখের একটা বিষয়। তবে তিনি সন্তানদের মতামতও নিয়েছেন। তাদের ওপর জোর করে চাপিয়ে দেন নি কোনোকিছু। এখন ছেলে-মেয়েদের সাথে ফোনে যোগাযোগ হয় প্রতিদিনই। মাঝে মাঝে বেড়াতেও আসে ছেলে-মেয়েরা। তিনি নিজেও স্ত্রী জোহরা বেগমকে নিয়ে মাঝে মাঝে বেড়াতে যান ছেলে-মেয়েদের কাছে।
সন্তানরা বিদেশ চলে যাবার পর তাঁরা বুড়োবুড়ি অনকেটা একা হয়ে পড়েন। কিন্তু তাঁদের পরস্পরের প্রেম ভালবাসা যেন নতুন মাত্রা পায়। তাদের আবেগের বন্ধনগুলি যেন আরও দৃঢ় হয়। তাঁরা মানসিকভাবে পরস্পর যেন আরও কাছাকাছি হন।
দিন গড়াতে থাকে। এক সময় খন্দকার আবদুল মজিদের অবসরের সময় হয়। ব্যাংকিং সেক্টরের একজন অন্যতম সফল সিইও’র মর্যাদা নিয়ে তিনি অবসর গ্রহণ করলেন। দেশের ব্যাংকিং সেক্টওে তাঁর প্রজ্ঞার কথা সর্বজনস্বীকৃত। তাই অবসরের পরও চুক্তিভিত্তিক চাকরীর নানা প্রস্তাব আসতে থাকে তাঁর কাছে। তারও বসে থাকলে ভাল লাগে না। অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই অবসর যাপন না করে তিনি কোনো একটা চাকরি নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নেন।
মাঝে মাঝে জোহরা বেগম বলেন, তোমার আগে যেন আমি চলে যাই। একথায় অন্য কেউ হলে হয়ত পাল্টা বলত, না, আমি যেন তোমার আগে যাই। কিন্তু আবদুল মজিদ তা বলেন না। তিনি বলেন, আমিও চাই তুমি আমার আগে চলে যাও। না হলে তোমাকে একা ফেলে আমি শান্তিতে যেতে পারব না। তুমি চলে গেলে আমি একা হলেও কোনোভাবে সামলে নিতে পারব। কিন্তু তুমি তা পারবে না।তুমি বিরাট সমস্যায় পড়ে যাবা। আমি বরং তোমাকে রেখে এসে আমার সময় হওয়ার অপেক্ষায় থাকব।
আবদুল মজিদের চাওয়াই পূর্ণ হলো। একদিন হুট করেই চলে গেলেন জোহরা বেগম। একটু অসুস্থ বোধ করছিলেন। ড্রাইভার বাড়ি চলে গিয়েছিল। তিনি নিজেই ড্রাইভ করে স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতাল গেলেন। কিন্তু হাসপাতাল পৌঁছতে না পৌঁছতেই থেমে গেল জোহরা বেগমের হৃদস্পন্দন।
জোহরা বেগম চলে যাওয়ার পর একাকিত্বের একটা ভারী পাথর যেন চেপে বসল খন্দকার আবদুল মজিদের বুকে। তাঁর বিরাট ডুপ্লেক্স বাড়িতে তিনি সম্পূর্ণ একা। ড্রাইভার, দারোয়ান আর আয়া বুয়া মিলিয়ে কাজের লোক আছে পাঁচজন। তারা বাড়ি পাহারা দেয়। তার খাবার দাবারের খেয়াল রাখে। ছেলে-মেয়েরা ফোন করে কাজের লোকদের বলে দেয় বাবার সেবা যতেœর কোনো ত্রুটি যেন না হয়। হয়ও না। কিন্তু তাতে খন্দকার আবদুল মজিদের একাকিত্ব ঘুচে না।
অফিসে তো সময় কেটে যায় নান ব্যস্ততায়। কিন্তু অফিসের পর বাসায় এলেই কেমন একটা দম বন্ধ করা অসহায়ত্বের অনুভূতি তাঁকে ঘিরে ধরে। এমনই অবস্থায় দিন চলতে চলতে এক সময় চলে আসে তাঁর আর জোহরা বেগমের বিয়ের পঞ্চাশতমবার্ষিকী। এদিনটি নিয়ে তাঁরা কতো পরিকল্পনা করে রেখেছিল। কিন্তু বিধাতার ইচ্ছে, মাত্র কয়েকটা মাসের জন্যদিনটি একসাথে পালন করতে পারলেন না তাঁরা।
অন্যান্য দিনের মতো এদিনও যথারীতি অফিসে চলে যান তিনি। অফিস থেকে ফিরে আসেন যখন তখন তিনি একটা বড় কেক নিয়ে আসেন। বুয়াকে বলেন কেকটা সাজাতে আর তাকে অর্ধেক মগ কফি দিতে। রাতে আর কিছু খাবেন না বলেও জানিয়ে দেন।
বুয়া কফি নিয়ে এলে তিনি বুয়াকে বলেন, আজকের মতো যাও, গিয়ে রেস্ট করোগে। আর যাওয়ার সময় সব বাতি নিভিয়ে দিয়ে যেও। মারা যাওয়ার পর সে রাতেই প্রথম আসেন জোহরা বেগম।
বুয়া চলে যাওয়ার পর কফি খেতে খেতে তিনি কিছুক্ষণ ইমেইল চেক করলেন। টিভি অন করাই ছিল।যদিও সেদিকে খুব একটা মনোযোগ নেই তার। সব বাতি নিভিয়ে দেওয়ার পর আলোর একমাত্র উৎস হয়ে রইল টিভিটা। ছেলে-মেয়েরা ফোন দিল। দূর থেকে হলেও সবাই যেন চেষ্টা করল বাবাকে সঙ্গ দিতে। কিন্তু তাতেও তাঁর নিঃসঙ্গতার অনুভূতি ফিকে হয় না।
একে একে সবার কথা শেষ হয়। তিনি বসে থাকেন বসার ঘরেই। কেকের কথাও ভুলে যান। স্ত্রীর কথা এক মুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারে না। বিশেষ করে আজকের এই বিশেষ দিনটি নিয়ে তাঁরা যেসব পরিকল্প করেছিলিন সেসব একটা একটা করে মনে পড়ছিল। এক পর্যায়ে কী হয় তিনি কাঁদতে শুরু করেন। মাথা নিচু করে কাঁদছিলেন তিনি। হঠাৎই স্পষ্ট শুনতে পেলেন জোহরা বেগমের কণ্ঠ, আরে আরে কাঁদছ কেন?। চকিতে মাথা তুলে দেখেন সামনে দাঁড়িয়ে আছেন জোহরা। ফিনফিনে সাদা একটা লম্বা জামা। মাথায় একটা মুকুট পরা।
খুশিতে আত্মহারা খন্দকার আবদুল মজিদ। তাঁর যেন কোনো হুঁশ থাকে না। জড়িয়ে ধরতে যান স্ত্রীকে। যেন মৃত স্ত্রীদের এভাবে চলে আসাটা খুই স্বাভাবিক। ত্রস্তে পেছনে চলে যান জোহরা বেগম। বলেন, তুমি বসো আমরা গল্প করি। আমি তো মৃত। আমকে ধরতে এসো না। আমাকে ধরা যাবে না। স্ত্রীর কথায় ধাতস্ত হন তিনি। সে রাতে অনেক গল্পগুজব করেন তারা।
সকালবেলা কাজের লোক এসে দেখতে পায় তিনি বসার ঘরেই সোফাতে কাত হয়ে ঘুমিয়ে আছেন। সেই থেকে শুরু। এরপর বিশেষ বিশেষ তারিখের রাতগুলোতে কিংবা যেদিন তাঁর জোহরা বেগমের কথা বেশি মনে পড়ে এবং তিনি চান জোহরা বেগম আজ আসুক সেদিন ঘর অন্ধকার করে রাখেন খন্দকার আবদুল মজিদ। জোহরা বেগম এসে গল্পগুজব করেন তিনি না ঘুমানো পর্যন্ত। তিনি ঘুমালে পরে চলে যান। আবদুল মজিদ দি¦তীয় কোনো ব্যাক্তির কাছে এই ঘটনা প্রকাশ করেন নি। এই রহস্যময় রাতগুলোর কথা তিনি সম্পূর্ণ গোপন রেখেছেন। পাছে লোকে ভাবে, খন্দকার আবদুল মজিদ পাগল হয়ে গেছেন।
২২ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৫১
হামিদ আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য.....ভাল থাকবেন
২| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০২
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: বুড়োবুড়ির ইউিনক প্রেম অনবদ্য সাবলীলতায় ফুটিয়ে তুলেছেন্।
সবার ভেতরের মজিদই এমনটিই চাইবে- অন্তহীন ভালবাসার মানুষ যেন সবসময় পাশে পাশে থাকে। শশশশশ
কাউকে বলা যাবে না। পাছে লোকে কিছু ভাবে
+++++++
২২ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৫২
হামিদ আহসান বলেছেন: হা হা হা ......অনেক ধন্যবাদ
৩| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৭
প্রামানিক বলেছেন: ভাল লাগল। ধন্যবাদ হামিদ ভাই।
২২ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৫৪
হামিদ আহসান বলেছেন: ধন্যবাদ প্রামানিক ভাই
৪| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৪০
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: হামিদ ভাই চমৎকার গল্পের জন্য
আবারো ধন্যবাদ আপনাকে
২৩ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫২
হামিদ আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ নুরু ভাই
৫| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:১৩
অগ্নি সারথি বলেছেন: চমৎকার হামিদ ভাই। শুভ কামনা।
২৩ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৩
হামিদ আহসান বলেছেন: ধন্যবাদ ও শুভকামনা
৬| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৪১
অভ্রনীল হৃদয় বলেছেন: চমৎকার একটি গল্প লিখেছেন!
২৩ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৪
হামিদ আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ৷
৭| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৪১
সুলতানা রহমান বলেছেন: প্রিয় মানুষ দের আমরা হারাতে চাইনা। ভাল লাগল।
২৩ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৬
হামিদ আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ....
৮| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৯
হামিদ আহসান বলেছেন: ..
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৮
আরজু পনি বলেছেন:
এমন সুসম্পর্কের লেখা পড়লে মনে হয় যেনো বুড়ো বসে যদি বেঁচে থাকি তবে বর-বউ দু'জনেই যেন সুসম্পর্কের বাঁধনেই আবদ্ধ থাকতে পারি ।
মানুষের মন যা প্রচণ্ড রকম ভাবে চায় তাই সে বাস্তবে দেখতে পায় হোক তা অলিক ।