![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কী এক অকারণ বিষন্নতা পেয়ে বসেছে আজ নাতাশাকে। গত ক'দিন ধরেই কী যে হয়েছে কেমন এক অস্থিরতা বিরাজ করছে তার পুরো অস্তিত্ব জুড়ে। কী যেন নেই, কী যেন একটা তার চাই। মনের ভেতরেপ্রচ্ছন্ন একটা অনুভূতি। আজ অস্থিরতাটার সেই অনুভূতিটাই যেনতাকে কাবু করে ফেলল। সকালে অফিসের জন্য প্রস্তুত হয়েও শেষ পর্যন্ত যায় নি। অফিসে বসকে ইমেইলে জানিয়ে দিয়েছে, আজ শরীরটা ভাল যাচ্ছে না, আজ আসব না।
কেমন অদ্ভূৎ এক একাকীত্ব অনুভূত হচ্ছে আজ তার সমস্ত সত্তা জুড়ে! অফিসের পর বাসায় মা-বাবা আর ছোট ভাই বোনের সাথে ভালই সময় কাটে। তারপরও কেন এই একাকীত্বের অনুভূতি দিন দিন গাঢ় হচ্ছে সেটাই ভাবছে সে। তবে কি বিয়েটা করে ফেলাই দরকার?
মা বার বার বিয়ের কথা বলছে। জানতে চাইছে পছন্দের কেউ আছে কি না। নাতাশা বুঝতে পারে না তার পছন্দের কেউ সত্যিই আছে কি না। এই বিশেষ কারোর ভাবনাটা ইদানীং তাকে খুব ভাবাচ্ছে। অনেক ছেলেকেই তো পছন্দ হয়। কয়েকজন বেশ কাছেরবন্ধুও আছে। তবে কাউকে বিয়ে করবে বা প্রেম করবে কারো সাথে এমনভাবে তো কখনও ভাবে নি নাতাশা বা সেই অর্থে বিশেষ পছন্দের কেউ আছে বলে তার নিজের তো মনে হয় না।
বন্ধু যারা আছে, কী ছেলে, কী মেয়ে তাদের সবার জন্যই তার অন্তরে এক ধরনের ভালবাসার অনুভূতি আছে, কাছে না থাকলে মিস করে। তবে সেই ভালবাসাটা বিশেষ কারোর জন্য বিশেষ হয়ে উঠে নি এখনও। না, সে ভেবে দেখেছে, হয়ে উঠে নি। তবে তানভীরের বিষয়টা তাকে বেশ ভাবাচ্ছে। তানভীর কী করে তার মাথায় বাসা বাঁধল সে বুঝতে পারছে না! ইদানীং তানভীর সারাক্ষণই তার মাথায় থাকে। এমন কি ঘুমের মধ্যেও।
যেমন, আজ স্বপ্নে দেখে, সে আর তানভীর সূর্যোদয় দেখতে বের হয়েছে। হাত ধরাধরি করে বিশাল একটা মাঠে দু’জন হাঁটছে। তখনও সূর্য উঠে নি। হালকা লাল হয়ে উঠছে পুবাকাশ। খালি পা ভিজে উঠছে দুর্বাঘাসের ওপর রাতভর ঝরে পড়া শিশিরে। হঠাৎ তার পায়ে কী একটা বিধতেই ব্যাথায় ককিয়ে উঠে সে। আর তখনই ঘুমটা ভেঙ্গে যায় নাতাশার।
ঘুম ভাঙ্গতেই নাতাশা বুঝতে পারে সকাল হয়ে আসছে। দরজা খুলে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ায় সে।পূর্ব আকাশটা কী এক অপরূপ লালিমায় রাঙিয়ে দিয়ে সূর্য মামা উঠে আসছে। ছাদে চলে গেল নাতাশা। সময়টা কেমন অপার্থিব মনে হচ্ছে। তার মনে হচ্ছে এমন সকাল, এমন কৃষ্ণচূড়ার মতো টকটকে লাল সকালের আকাশ সে আরও একবার দেখেছিল। কিন্তু কবে দেখেছিল সেটা মনে পড়ছে না।
সকাল বেলার ঘুমটা তার বেশ প্রিয়। অনেক জমজমাট হয়তখন তারঘুম। ভোরে উঠে অনেকেই পড়াশোনা করে। কিন্তু তার পক্ষে এটা কখনও সম্ভব হয়নি। এখন তার মনে পড়ছে ছোট বেলায় বাবা-মার সাথে কূয়াকাটা বেড়াতে গিয়ে একবার সূর্যোদয় দেখেছিল। এছাড়া আর কখনও সূর্যোদয় দেখেনি সে। সেই অনুভূতির স্মৃতি হয়ত তার মস্তিষ্কে লুকানো ছিল। আজস্বপ্নে সেই স্মৃতিটাই হয়ত জাগ্রত হয়ে উঠল। তবে তার ভালই লাগছে,এক স্বপ্নের উসিলায় আজ এতো সকালে ঘুম ভাঙ্গল; সত্যি সত্যিসূর্যোদয় দেখল আবার। কিন্তু ঘুরে ঘুরে তার স্বপ্নে তানভীর কেন আসে সেটাই এখন তার বড় চিন্তা।
তানভীর তার কলিগ এবং ভাল বন্ধুও বটে। ছয় সাত মাস হল হেড অফিস থেকে বদলি হয়ে এসেছে। তানভীরের সাথে কি খুব বেশি মাখামাখি হয়ে যাচ্ছে? সব ব্যাপারেই তার আজকাল তানভীরের কথা আগে মনে পড়ে। সে কি তবে মানসিকভাবে কিংবা আবেগ অনুভূতির জায়গা থেকে তানভীরের দিকে ঝুঁকে পড়ছে? সে কি তাহলে অবচেতনেই তানভীরের প্রেমে পড়ি পড়ি করছে? সে কারণেই কি তার ভেতরের এই সব অস্থিরতা?আশপাশের মানুষরাও কি সেটা টের পাচ্ছে? অফিসে কলিগ থেকে কাছের বন্ধু হয়ে উঠা অদ্রি মেয়েটা কয়েক দিন হল তানভীরের ব্যাপারে তাকে সুযোগ পেলেই ক্ষেপাতে শুরু করেছে।
যদি তাই সত্য হয় তাহলে তানভীরেরও মনে হয় এতে সায় আছে। তানভীর আজকাল তার দিকে একটু বেশিই মনোযোগ দিচ্ছে। যেকোনো ব্যাপারে আগবাড়িয়ে তাকে সাহায্য করছে। অফিসে তার সুবিধা অসুবিধার খেয়াল রাখছে। কে জানে তার দিকে তানভীরের বাড়তি মনোযোগ এবং ছোট ছোট যত্ন আর সহযোগিতাগুলোই হয়ত তাকে তানভীরের প্রতি আকৃষ্ট করেছে।
এমন নানা ভাবনা মাথার মধ্যে ঘুরছে নাতাশার। সকালে নাস্তাও করে নি। মা কলেজে বের হবার আগে টেবিলে নাস্তা নিয়ে অনেক ডাকাডাকি করেছেন। খেতে ইচ্ছে করে নি। এখন এক মগ কফি বানিয়ে বসেছে। সকালে এক মগ ক্রিমড কফি হলে সারা দিন তার আর কিছু না হলেও চলবে মনে হয়।তাছাড়া জীবনানন্দ দাশের কবিতা আর কফি থাকলে বনবাসেও তার কোনো আপত্তি নেই। ধুমায়িতকফির মগে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়াতে ছোঁয়াতে জীবনানন্দ দাশের একটা কবিতার বই সামনে নিয়ে পড়তে চেষ্টা করে নাতাশা:
“তবু এই পৃথিবীর সব আলো একদিন নিভে গেলে পরে,
পৃথিবীর সব গল্প একদিন ফুরাবে যখন,
মানুষ র’বে না আর, র’বে শুধু মানুষের স্বপ্ন তখন
সেই সুখ আর আমি র’বো সেই স্বপ্নের ভিতরে।”
কিন্তু কবিতায়ও বেশিক্ষণ মনোযোগ রাখতে পারে না নাতাশা। হাতে জীবনানন্দের কবিতা আর সামনে কফি নিয়ে সে ভবনার কোনে সুদূর ভুবনে যেন চলে যায় সে। এর মধ্যেঅফিস থেকে অদ্রির ফোন তাকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনে। ফোন রিসিভ করার সাথে সাথে কোনো রকম হায়-হ্যালো বা ভূমিকা ছাড়াই অদ্রি বলে,
‘অবস্থা তো সিরিয়াস।’
‘কেন, কী হইছে অদ্রি? অফিসে কোনো সমস্যা?’
‘সমস্যা অফিসেই, তবে অফিসের না। একজনের ব্যাক্তিগত সমস্যা’।
এখানে বলে রাখি, অদ্রি, নাতাশা আর তানভীর একই ব্যাচের ছাত্র ছিল এবং এই প্রাইভেট কমার্শিয়াল ব্যাংকটিতে একই ব্যাচে ম্যানেজম্যান্ট ট্রেইনি হিসেবে যোগ দিয়েছে তিন বছর হয়। ফলে তাদের সম্পর্কটা শুরু থেকেই তুমির । তারপর যখন এক সঙ্গে এক মাসের ওরিয়েন্টেশন ট্রেইনিং করে তখন থেকেই তারা ভাল বন্ধু হয়ে যায়। কলিগরা বন্ধু হয় কি না এ নিয়ে জগৎবাসীর বিতর্কে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। নাতাশা আর অদ্রির পোস্টিং শুরু থেকেই এই শাখায় হয়েছে। তানভীরের পোস্টিং হয়েছিল হেড অফিসে। ছয় সাত মাস হয় তানভীরকে বদলি করা হয়েছে এই শাখায়। যাই হোক অদ্রির ফোন পেয়ে নাতাশা জানতে চায়,
‘খুলে বলো তো অদ্রি আসল ঘটনাটা কী’?
‘ঘটনা তেমন কিছু না আবার গুরুতরও বলা যায়। সকাল থেকে তোমাকে অফিসে না পেয়ে তোমার খোঁজ খবর নিতে বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়ে বেচারা তানভীর। আমাকে জিজ্ঞস করে তোমার কী হয়েছে, কেন আসোনি, সিরিয়াস কোনো সমস্যা কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি। তার হতে যাচ্ছে প্রিয়াকে ছাড়া অফিসে যে তার মন একদম বসছে না সেটা বেশ বুঝা যাচ্ছে’।
‘তুমি কী বললা’?
‘আমি বললাম, তোমারের পেয়ারের লোক। তার কী হয়েছে সেটা তো আমার চেয়ে তোমার ভাল জানার কথা। ফোন দিয়ে নিজে খবর নাও না কেন? আমার কথা শুনে ছেলে তো লজ্জায় লাল হয়ে উঠল একেবারে’।
‘অদ্রি তুমি এতো ফাজিল কেন’?
আমি ফাজিল হই আর যাই হই কথা কিন্তু মিথ্যে বলি নি এক রত্তিও। যাই হোক, তোমরা চালিয়ে যাও নাতাশা। আমি তো আছিই যে কোনো দরকারে। তোমাদের হবে। তোমাদের হচ্ছে। এভাবেই হয়। বলেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠল অদ্রি।
০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:১৪
হামিদ আহসান বলেছেন: ধন্যবাদ অাপনাকে
২| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৩
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: অদ্রি'রা খুব ভাল ,এঁদের সামান্য দূতিয়ালিতে অনেক প্রেম উৎরে যায় ।
লিখা ভাল লেগেছে ।
০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:১৫
হামিদ আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ..
৩| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৫২
অগ্নি সারথি বলেছেন: তারপর.......?
০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:১৬
হামিদ আহসান বলেছেন: তারপর.......?
হা হা হা ......তারপর কী জানি না৷ ধন্যবাদ
৪| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৪৮
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: এভাবেই হয়? হলে তো ভালোই হত...
০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:১২
হামিদ আহসান বলেছেন:
৫| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৫১
আরজু পনি বলেছেন:
হাহাহা এভাবেই হয়...আসলেই ।
০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৪৭
হামিদ আহসান বলেছেন: হা হা হা .....সেটাই
৬| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৫৬
প্রামানিক বলেছেন: দুতীয়ালীর গল্প ভালই লাগল।
০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৩৭
হামিদ আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ প্রামানিক ভাই
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:১৯
তাশফিয়া নওরিন বলেছেন: দারুন