নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হামিদের ব্লগ

হামিদ আহসান

ভবের এই খেলাঘরে খেলে সব পুতুল খেলা জানি না এমন খেলা ভাঙে কখন কে জানে ...

হামিদ আহসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বেয়াড়া হৃদযন্ত্র

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৯

(এডগার অ্যালান পো'র দ্যা টেল টেল হার্ট গল্পের অনুবাদ)

হ্যাঁ এটা ঠিক যে অামি একটা ভয়ঙ্কর অসুখে ভোগেছি যা অামার শরীরও মনে গভীর প্রতিক্রিয়া রেখে গেছে, তাই বলে লোকে অামাকে পাগল বললে অামি মেনে নিব? অামি বুঝি না কেন তারা বলে, অামি মনের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছি, কেন তারা ভাবে অামি পাগল হয়ে গেছি? তারা কি দেখে না, মনের উপর অামার যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ রয়েছে? তারা কি বুঝতে পারে না অামি সম্পূর্ণ সুস্থ মস্তিষ্কের একজন মানুষ?

অাসলে সেই অসুখটা অামার মনকে, অামার অনুভূতিকে অামার ইন্দ্রিয়শক্তিকে অারও প্রখর করেছে মাত্র৷ তার বেশি কিছু নয়৷ বিশেষ করে অামার শ্রবণশক্তি অারও প্রখর হয়েছে৷ এখন অামি এমন সব শব্দ শুনতে পাই যা অাগে কখনও পেতাম না৷ এখন অামি স্বর্গ-নরকের শব্দও শুনতে পাই৷

শুনুন তবে, অামি অাপনাদের বলব এটা কীভাবে ঘটে৷ বুঝালে অাপনারা নিজেরাই বুঝবেন কতটা সুস্থ রয়েছে অামার মস্তিষ্কটা৷ তবে প্রথমে ব্যাপারটা কীভাবে ঘটেছিল সেটা বলা মুশকিল৷ অামি যা করেছি তার পক্ষে কোনো যুক্তি ছিল না৷ অামি বৃদ্ধলোকটিকে ঘৃণা করতে পারি নি; বরং তাকে ভালোবেসে ফেলেছি৷ সে কখনও অামাকে অাঘাত করে নি৷ অামি তার টাকা-পয়সাও চাই নি৷

অামার মনে হয় মূল কারণ ছিল তার চোখ৷ তার চোখ দু'টি ছিল শকুনের চোখের মতো৷ শকুন এমন এক ভয়ঙ্কর পাখি যার চোখ থাকে কখন কোন প্রাণীটি মরল সেই দিকে৷ তারপর মৃত প্রাণীটির শরীরটা টুকরা টুকরা করে খায়৷

বৃদ্ধ লোকটি যখন তার শকুনের চোখ দিয়ে অামার দিকে তাকাতো তখন একটা শীতল শিহরণ অামার শিড়দাড়া দিয়ে উঠানামা শুরু করে দিত৷ এমনকি অামার রক্তও ঠান্ডা হয়ে যেতো৷ একারণেই অবশেষে অামি সিদ্ধান্ত নেই, বৃদ্ধকে হত্যা করে চিরদিনের জন্য তার চোখের ওই শকুনদৃষ্টি থেকে মুক্তি পাবো৷

তারপরও কি অাপনারা বলবেন অামি পাগল? পাগল কি পরিকল্পনা করতে পারে? অথচ অামি ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে বৃদ্ধকে হত্যা করেছি৷ এক সপ্তাহ পর্যন্ত যতটুকু সম্ভব তার প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন থেকেছি, উষ্ণতাও ভালোবাসার ভান করেছি৷

প্রতি রাতে বারোটার দিকে অামি অাস্তে করে তার ঘরের দরজা খুলতাম৷ দরজাটা যথেষ্ট ফাঁক হলে অামি প্রথমে অামার হাত গলিয়ে দিতাম, তারপর মাথা৷ অামার হাতে থাকত একটি লাইট যা অামি কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে নিতাম যাতে অালো বের না হয়ে অাসে৷ নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতাম তারপর সন্তর্পণে একটুখানি কাপড় সরাতাম যাতে একটুকরো ছোট ক্ষীণ অালো ওই চোখের উপর পড়ে৷

সাতটি রাত অামি এই কাজটা করেছি, সাতটি লম্বা রাতের মধ্যরাতে৷ বৃদ্ধের চোখ সবসময়ই বন্ধ থাকত৷ তাই কাজটি করা অামার জন্য দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে৷ অামিতো সেই বৃদ্ধকে মারতে চাই নি, অামি শেষ করে দিতে চেয়েছি তার শয়তান চোখ দু'টি৷

সকালবেলা অাবার অামি তার ঘরে ঢুকতাম৷ কণ্ঠে বন্ধুত্বের উষ্ণতা অার মায়া নিয়ে জানতে চাইতাম ঘুম কেমন হয়েছে৷ সে একেবারেই বুঝতে পারে নি যে রাতের বেলা যখন সে ঘুমিয়ে থাকে তখন অামি তার ঘরে ঢুকি৷

এভাবে অষ্টম রাতে যেদিন অামি তার ঘরে ঢুকলাম সেদিন অামি অারও বেশি সতর্ক হয়ে কাজ করতে চেষ্টা করি৷ ঘড়ির কাঁটাও যেন অামার হাত থেকে দ্রুত নড়াচড়া করছিল৷ সে রাতেই অামার ভেতরের শক্তিটা সবচাইতে বেশি অনুভব করি৷ অামার মনে হতে থাকে সফল অামি হবই৷

বৃদ্ধ যথারীতি ঘুমিয়ে অাছে, স্বপ্নেও দেখছে না যে, অামি তার দরজায়৷ হঠাৎ বৃদ্ধটি বিছানায় নড়েচড়ে ওঠল৷ ভাবছেন অামি ভয় পেয়ে গেছি? অারে না! ঘরে অন্ধকার এতটাই ঘন অার ঘাঢ় ছিল যে অামি নিশ্চিত ছিলাম সে কিছুই দেখবে না৷ অামি অাস্তে অাস্তে দরজাটা ফাঁক করতে থাকলাম৷ প্রথমে মাথাটা গলিয়ে দিলাম তারপর লাইটসহ হাতটি৷ লাইটটি অাগের মতোই কাপড়ে পেঁচানো৷ হঠাৎই বৃদ্ধ ওঠে বিছানায় একেবারে সোজা হয়ে বসে পড়ল- কে? কে ওখানে?

অামি পুরো একটি ঘন্টা ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম, একটুও নড়াচড়া করলাম না পাছে বুড়ো টের পেয়ে যায়৷ এর মধ্যে বুড়োও শুয় না, বসে বসে বুঝতে চেষ্টা করে যেন কিছু একটা৷

একটু পর বুড়ো একটা অর্তনাদের মতো করল, ভয় পাচ্ছে সে বুঝা গেল৷ অন্ধকারেও অামি বুঝতে পারি বুড়ো বিছানায় বসে ভয়ে কাঁপছে৷ বুড়ো বুঝে গেছে অামি দরজায় দাঁড়িয়ে অাছি৷ সে অামাকে দেখেও নি, কোনো অাওয়াজও শুনে নি, তারপরও অামি অনুভব করি সে অামার উপস্থিতি টের পেয়ে গেছে, বুঝে গেছে মৃত্যু সেখানে দাঁড়িয়ে অাছে৷

অামি লাইট থেকে ধীরে ধীরে অল্প অল্প করে অামি লাইট থেকে কাপড় সরিয়ে নিলাম, যাতে অালোটা বের হতে পারে, বের হয়ে ওই শকুন চোখের উপর গিয়ে পড়ে৷ চোখ দু 'টি খোলা ছিল৷ বড় বড় চোখ করে বুড়ো যখন সোজা অামার দিকে তাকাল তখন অামার ক্রোধ কয়েকগুণ বেড়ে গেল৷ অামি বুড়োে চেহারা দেখতে পাচ্ছিলাম না, অামি কেবল দেখছিলাম ওই নীল শকুন চোখ দু'টি যা অামার রক্তকে বরফের মতো শীতল করে দিয়েছিল৷

অামি অাপনাদের বলেছিলাম যে অামার শ্রবণশক্তি অস্বাভাবিক প্রখর হয়েছে৷ তার প্রমাণ অাবার পেলাম৷ অামি স্পর্শ না করেও দেয়াল ঘড়ির টিকটিক শব্দের মতো বুড়োর হৃদপিণ্ডের স্পন্দনের শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম৷ অামি শান্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে চেষ্টা করলাম , কিন্তু বুড়োর হৃদপিণ্ডের অাওয়াজ অাস্তে অাস্তে জোরালো হচ্ছিল৷ তার ভয় বাড়ছিল৷ বুড়োর হৃদপিণ্ডের অাওয়ােজর সাথে সাথে অামার ক্রোধও বেড়ে যাচ্ছিল যা অামাকে খুবই যন্ত্রণা দিচ্ছিল৷ এটা নিছক ক্রোধ ছিল না; বরং তারচাইতেও ভয়ঙ্কর কিছু ছিল৷ শান্ত রাতের নীরব অন্ধকারে বুড়োর শোয়ার ঘরে অামার ক্রোধ ভীতিতে রূপান্তিরত হল৷ কারণ বুড়োর হৃদপিণ্ডের শব্দ এতটাই জোরাল হয়ে উঠল যে, নিশ্চিত কেউ শুনে ফেলবে৷

শেষপর্যন্ত মরো মরো বলতে বলতে অামি দৌড়ে দরজা থেকে বিছানার নিকট চলে গেলাম৷ অামি যখন তার উপর ঝাপিয়ে পড়লাম এবং বিছানার চাদর দিয়ে তার মাথাটা শক্ত করে চেপে ধরলাম তখন সে ভয়ে চিৎকার করে ওঠল৷ অামি হাসছিলাম কারণ বুঝতে পারছিলাম অামি সফল হতে যাচ্ছি৷ অনেক্ষণ পর্যন্ত হৃদস্পন্দন চালু থাকলেও শেষ পর্যন্ত থামে সেটা৷ বুড়ো মরে যায়৷ বিছানার চাদরটি তার মুখ থেকে সরিয়ে নিয়ে বুকে কান পাতলাম৷ না কোনো শব্দ নেই, থেমে গেছে বুড়োর হৃদপিণ্ড৷ বুড়ো এখন পাথরের মতোই মৃত, তার চোখ অামাকে অার কখনও জ্বালাবে না৷

এতটুক শুনে অামাকে পাগলই মনে হচ্ছে৷ কিন্তু অাপনার ধারণা পাল্টে যাবে যখন অাপনি দেখবেন কতটা নিপুণভাবে অামি তার ডেডবডিটা সরিয়ে ফেলেছি৷ একটা পাগলের পক্ষে সেটা সম্ভব হত না৷ প্রথমে অামি মাথাটা কাটলাম, তারপর কাটলাম হাত এবং পা৷ অামি খুবই সতর্ক ছিলাম যাতে এক ফোটা রক্তও ঘরের মেঝেতে না পড়ে৷ তারপর ঘরের মেঝের তিনটি তক্তা তুলে ফেলে লাশের টুকরোগুলো সেখানে ঢুকিয়ে দিলাম৷ তারপর তক্তাগুলো অাবার নিখঁতভাবে জায়গামতো বসিয়ে দিলাম যাতে কারো সন্দেহ না হয় যে কেউ তক্তাগুলো সরিয়েছিল৷

অামার কাজ শেষ হওয়ার পর দরজায় কারো পায়ের অাওয়াজ শুনতে পেলাম৷ তখন ভোর চারটা বাজে যদিও তখনও অন্ধকার দূর হয় নি৷ অামি যখন দরজা খুলতে গেলাম অামার মনে কোনো ভয় ছিল না৷ দরজায় তিন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে ছিল, তিনজন পুলিশ অফিসার৷ একজন প্রতিবেশি বুড়োর চিৎকার শুনে পুলিশকে খবর দিয়েছে৷ এই তিনজন এসেছে জিজ্ঞাসাবাদ করতে এবং গৃহ তল্লাশি করতে৷

অামি তাদেরকে ভেতরে নিয়ে এলাম৷ বললাম, প্রতিবেশি যে চিৎকার শুনেছে সেটা অামারই চিৎকার, একটা দুঃস্বপ্ন দেখছিলাম তারই প্রভাব৷ বুড়ো সম্পর্কে বললাম, সে গ্রামে গেছে এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে৷ অামি তাদেরকে সারা বাড়ি ঘুরিয়ে দেখালাম এবং বললাম ভালোকরে তল্লাশি করতে অনুরোধ করলাম৷ শেষ পর্যায়ে অামি তাদেরকে বুড়োর শুয়ার ঘরে নিয়ে গেলাম৷ অামি তাদের বললাম সেখানে বসে কিছুক্ষণ গল্প করকে, যেন অামি তাদের সাথে কোনো গেম খেলছি৷

অামি এমন সহজ অার শান্তভাবে কথাবার্তা বলছিলাম যে পুলিশের লোকেরা অামার কথা বিশ্বাস করল৷ তাই তারা বসল এবং অামার সাথে অান্তরিকতার সাথে কথাবার্তা বলতে লাগল৷ অামিও তাদের সাথে স্বাভাবিকভাবে কথা বলছিলাম, কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই অামার মন চাইছিল তারা চলে যাক৷ অামার মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছিল এবং কানের মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম৷ অামি তাদের সাথে ইচ্ছে করেই দ্রুত অনেক কথা বলতে লাগলাম, কিন্তু কানে বাজতে থাকা শব্দগুলো তাতেও না কমে করং অাস্তে অাস্তে পরিস্কার হতে লাগল৷ পুলিশরা তখনও বসে গল্প করছিল৷

অাচমকা অামি বুঝতে পারলাম শব্দগুলো কেবল অামার কানে কিংবা অামার মাথার ভেতরে বাজছে এমন নয় ব্যাপারটা৷ এসময় অামি একদম ফ্যাকাশে হয়ে গেলাম, কিন্তু তারপরও অামি অারও উচ্চস্বরে এবং অারও দ্রুত লয়ে কথা বলে যেতে লাগলাম অার শব্দগুলোও অারও জোরালো হতে লাগল৷

শব্দটি ছিল দ্রুত লয়ের নিচু, কোমল, দেয়াল ঘড়ির টিক টিক শব্দের মতো৷ অামি ভালভাবেই চিনতে পারি শব্দটি৷ শব্দটি অাস্তে অাস্তে জোরালো হচ্ছিল৷ পুলিশগুলোও যে কেন যাচ্ছিল না৷ শব্দগুলো জোরালো হতেই লাগল৷ অামি ওঠে ঘরময় দ্রুত পায়চারি করতে লাগলাম৷ অামি অামার চেয়ারটি ছুড়ে মারলাম যাতে অারও শব্দ তৈরি হয়ে সেই ভয়ঙ্কর শব্দটি ঢেকে যায়৷ অামি অারও উচ্চস্বরে কথা বলতে লাগলাম, তখনও পুলিশের লোকগুলো বসে বসে গল্প করছিল, হাসছিল৷ এটা কি সম্ভব যে তারা শব্দটি শুনছে না, অামি পাচ্ছিলাম না৷

তারপর বুঝলাম, তারাও শুনছে শব্দটি৷ অামি নিশ্চত তারাও শুনছে৷ এখন তারা অামার সাথে গেম খেলছে৷ অামার মাথার যন্ত্রণা সহ্যের বাইরে চলে যাচ্ছিল৷ তাদের কথা, তাদের হাসি অামার যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছিল৷ শব্দটাও জোরালো হতে লাগল৷ হঠাৎই কি হল অামি অার সহ্য করতে পারলাম না৷ অামি তক্তাগুলোর দিকে ইঙ্গিত করে কেঁদে ফেললাম৷

হ্যাঁ হ্যাঁ অামি তাকে হত্যা করেছি৷ তক্তাগুলো তুললেই অাপনারা তার ডেডবডি দেখতে পাবেন৷ অামি তাকে মেরে ফেলছি তারপরও কেন তার হৃদযন্ত্রটি থামছে না? কেন থামছে না হৃদযন্ত্রটির স্পন্দন?

১১০৯/২০১৬
লালবাগ, ঢাকা

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৪২

আহা রুবন বলেছেন: গল্পটি পড়ার ব্যবস্থা করে দেয়ায় আপনাকে ধন্যবাদ।

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:০৮

হামিদ আহসান বলেছেন: অাপনাকেও ধন্যবাদ

২| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৫০

বিজন রয় বলেছেন: ঈদ মোবারক।
আপনার এবং পরিবারের সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।

৩| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ২:২৯

আরিফুজ্জামান১৯৮৭ বলেছেন: ভাল লিখেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.