![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছাত্র রাজনীতি মানে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ, খুন! আসলে কি তাই ? সম্প্রতি প্রায় প্রতিটি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকালে এরকম চিত্রই আমাদের সামনে ভেসে উঠে। হয়ত একারনেই কতিপয় বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ এবং মিডিয়াসহ সকল স্তরের মানুষের কাছে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের পাল্লাটাই ভারী হচ্ছে।
একটা সময় ছিল ছাত্ররা রাজনীতি করলে মানুষ সম্মান করত এবং তাদেরকে অনুপ্রেরনা দিত। কেননা ছাত্ররা তাদের ভূমিকা পালনের মধ্যে নিজেদের অবস্থান জন সাধারণের কাছে পরিষ্কার করেছিল। বলা হত ছাত্ররা রাজনীতি করবেনা তো কারা করবে? এরাইতো জাতির কর্ণধার, শিক্ষিত সচেতন শ্রেণী, দেশ পরিচালনার ভার আগামীদিনে তাদেরকেই গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু বর্তমানে ছাত্র রাজনীতির কথা শুনলেই ভয়ে আঁতকে উঠে মানুষ। সংগত কারনেই আজ প্রতিটি মহলে প্রশ্ন উঠছে কেন এই ছাত্র সমাজের বেহাল দশা ? এর জন্য কেউবা দায়ী করছেন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনকে, কেউবা প্রধান বিরোধী দলের ছাত্রসংগঠনকে আর কেউবা ছাত্র রাজনীতিকেই। অনেকে বলছেন ছাত্ররাজনীতিতে আদর্শিক অবস্থান এখন আর নেই, ছাত্ররা লেজুরবৃত্তি রাজনীতি করছে, তারা এখন পকেট খালি করার পরিবর্তে পকেট ভারী করার কাজে ব্যাস্ত-ঢালাওভাবে আরও বহু বদনাম।
আমাদের দেশে প্রতিটি জাতীয়-আন্তর্জাতিক আন্দোলনে ছাত্র সমাজের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভূথান, ৯০’র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। লোক মুখে শোনা যায় এসব আন্দোলনে ছাত্রদের স্বতস্ফুর্ত অংশ গ্রহণ না থাকলে আন্দোলনে সফলতা আসতোনা। আর একারনেই ছাত্র সমাজ শোষক গোষ্ঠীর কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর তাই ৯০’র পর থেকেই ছাত্র সমাজ এবং ছাত্র রাজনীতিকে কিভাবে ধ্বংস করা যায়, বিভিন্ন ছাত্র সংশ্লিষ্ট বিষয় সহ গণবিরোধী ইস্যুতে ছাত্রদেরকে কিভাবে দূরে সরিয়ে রাখা যায়, কিভাবে বিভাজন সৃষ্টি করা যায় রাষ্ট্রীয় ভাবে তার পরিকল্পনা চলে। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই ছাত্র সমাজকে জড়ানো হয় বিভিন্ন অপকর্মে। আজকে ছাত্ররা দেশের কথা না ভেবে মগ্ন থাকে অস্ত্র, মাদক নিয়ে। অন্যদিকে যারা রাজনীতির সংস্পর্শে আসতে চায়না তারা নিজের ক্যারিয়ার অথবা পুঁজিবাদী সমাজ তাদের কাছে এমন সব বিষয় এনে হাজির করেছে যে তারা এসব বিষয়েই বেশী মগ্ন।
এমতাবস্থায় কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরপরই পরিবার সহ আতœীয়-স্বজনরা প্রতিনিয়তই তার ছেলে অথবা মেয়েটিকে বলতে থাকেন রাজনীতির সাথে না জড়ানোর জন্য। ভালঘরের ছেলে মেয়েরা রাজনীতি করেনা-ইত্যাদি নানা রকম কথা বলে রাজনীতি সম্পর্কে তাদের মনে নেতিবাচক ধারণা গেঁথে দেন।
আজকে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর দিকে তাকালে দেখা যায় দখলদারিত্ব, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মারামারি লেগেই রয়েছে। অনেক সময় দেখা যায় কিছু শিক্ষার্থীকে উচ্চশিক্ষার পাঠ চুকানোর আগেই লাশ হয়ে বাড়ি ফিরছে। এই ঘটনাগুলো কতৃপক্ষ অনেক সময় তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কিন্তু বছর পেরোলেও তদন্তের কাজ শেষ হয়না। এতে সহজেই অনুমেয় দোষীরা যাতে পার পেয়ে যেতে পারে সেজন্যই নামে মাত্র এসব তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ফলে এসব তদন্ত কমিটির প্রতি আস্থা হারাচ্ছে ভুক্তভোগীরা। সাধারণত এসব অপকর্মের নেপথ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক সংগঠনের শিক্ষক, প্রশাসনে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা জড়িত থাকেন। কিন্তু এসব কার্যক্রমের সমস্ত দায়ভার চাপানো হচ্ছে সমগ্র ছাত্র সমাজের উপর। এর সত্যতা কতটুকু তা যাচাই করতে গিয়ে দেখা যায়, আমাদের দেশের নির্বাচনের পরপরই ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনগুলো ক্যম্পাস দখল, হল দখল করে প্রতিষ্ঠানগুলোকে এক ধরনের ‘মিনি ক্যান্টনমেন্ট’ হিসেবে তৈরী করে। যেখানে বিরোধীদলীয় ছাত্র সংগঠনের প্রবেশ একেবারেই নিষিদ্ধ হয়ে যায়! বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্র সংগঠনগুলোর সহবস্থানের কথা মুখে বললেও তারাই অসহবস্থানে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনকে নগ্নভাবে সহযোগীতা করে। অন্যদিকে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যখন বিরোধী দলীয় ছাত্র সংগঠন অথবা সচেতন শিক্ষর্থীরা সরকারের নেতিবাচক ভূমিকায় অথবা নিজ প্রতিষ্ঠানের অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুধে ক্যাম্পাসে মিছিল বের করে তখন তাদের উপর চড়াও হয় ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা পুলিশের সামনে দেশী বিদেশী অস্ত্র প্রদর্শন করলেও পুলিশ সহ প্রতিষ্ঠানের প্রশাসন নীরবভাবেই তাদেরকে সমর্থন দিয়ে যায়। অনেক সময় দেখা যায় ক্যাম্পাসে পুলিশ অবস্থান করলেও দুই একজন নিহত হওয়ার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ লাশ হাসপাতালে নেওয়ার জন্য উপস্থিত হয়। এতে করে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ এবং ছাত্রশিবিরের মধ্যে সংঘর্ষে ব্যবহৃত ছাত্রনামধারী ক্যাডারদের মরনাস্ত্র বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত এবং পুলিশের নখদর্পণে হলেও এখনও পর্যন্ত কাউকে আটকের খবর পাওয়া যায়নি। গেল বছর ৯ই ডিসেম্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের যে বর্বরতা এবং এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সরকার যেরকম জলঘোলা করতে চাইছে তা পুরো জাতিকে মর্মাহত করেছে। আর এর মধ্য দিয়ে সরকার এদেশের সুশীল সমাজকে সুযোগ করে দিয়েছেন নীতি কথায় পত্রিকার পাতা ভরানোর, টকশোতে বিতর্ক করার বা টেবিল চাপরানোর ! কিন্তু উনারা এ সকল ঘটনাকে একটু পর্যবেক্ষন করে দেখেন না যে, আজকে এই শিক্ষিত শ্রেণীকে দিয়ে এসব করানোর পেছনে কারা পশ্রয় দিচ্ছে, কেনইবা দিচ্ছে। নাকি এটাও এক ধরনের ঘড়যন্ত্র! আর উনাদেরকে একটি কথা বলে রাখা প্রয়োজন আজকে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন গুলোকে যে ভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে তাতে এসকল ঘটনা সাভাবিক বলেই ধরে নিতে হবে। একথায় হেমাঙ্গ বিশ্বাসের একটি গানের লাইন মনে পড়ে যায় “থাকিলে ডোবা খানা হবে কচুরি পানা....”। তাই এখনই সময় এদের সেই ডোবা খানা থেকে ফিরিয়ে আনতে লাগাম টেনে ধরার।
বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ’র প্রেসক্রিপশনে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ২০বছর (২০০৬-২৬) মেয়াদী কৌশলপত্র গ্রহণ করেছে। এখানে বলা রয়েছে ২০২৬ সালের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ভর্তুকি দেওয়া হবেনা, বিশ্ববিদ্যালয় গুলোকে নিজস্ব আয় থেকে চলতে হবে (ছাত্র বেতনসহ বিভিন্ন ফি বাড়াতে হবে)। আর তা বাস্তবায়নের জন্য ছাত্ররাজনীতি বন্ধের কথা কৌশলগত ভাবে বেশ জোরেসোরেই বলা রয়েছে কৌশলপত্রে। কারণ রাজনীতি সচেতন ছাত্ররা এর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলবে। কিন্তু ছাত্র রাজনীতিতো আর হঠাৎ করেই বন্ধ করে দেওয়া যায়না। তাই রাষ্ট্রীয় কৌশল হিসেবে প্রতিটি ক্যাম্পাসকে উত্তপ্ত করে দেওয়া হচ্ছে। ছাত্র দিয়ে ছাত্র হত্যার মত ন্যক্কার জনক কাজ করতেও পিছপা হচ্ছে না। এমন কি এদের হাত থেকে শিক্ষকরাও বাদ পরছেন না। গেল বছর এমনই একটি ঘটনা ঘটে গেল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে শিক্ষকদের একটি কর্মসূচীতে ছাত্রলীগ হঠাৎ হামলা চালায়। এতে কয়েকজন শিক্ষক আহত হন। এছাড়াও সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যারয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বিএম কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গনের উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়। আর এসকল ঘটনা ঘটার পরপরই অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ছাত্ররাজনীতি বন্ধের আরেকটি কৌশল হিসেবে দেখা যায় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় সহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে রাজনীতিতে না জরানোর শর্তে ভর্তি করানো হচ্ছে। সম্প্রতি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের জন্য চলতি বর্ষ থেকে ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থী ও তাদের অভিবাবকদের কাছ থেকে চুক্তিপত্রে স¦াক্ষর করিয়ে নেয়ার আইন পাশ হয়েছে বলে গণমাধ্যম থেকে জানা গেছে। এছাড়া খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই ছাত্র-রাজনীতি বন্ধ। কিন্তু সেখানে শিক্ষক রাজনীতি থেমে নেই। এখান থেকে সহজেই বুঝা যাচ্ছে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ রয়েছে কার স্বার্থে।
সংবিধানে সকল নাগরিকের রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে। এসকল সিদ্ধান্ত সংবিধান বিরোধী হলেও আমাদের দেশে যারা প্রগতিশীল মার্কা বুদ্ধিজীবী হিসেবে খ্যাত তারা চুপ রয়েছেন। অথচ তারাই বিভিন্ন সভা সেমিনারে মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার কথা বলেন। কিন্তু ছাত্র রাজনীতি যে মুক্তচিন্তার বাইরে নয় সেটা কি তারা বেমালুম ভুলে গেলেন? অন্যদিকে আমাদের বিশিষ্ট নেতারা গণতন্ত্রের কথা বলে মুখে ফেনা তুললেও এ বিষয়ে তাদের সুষ্পষ্ট কোন বক্তব্য নেই। ফলে জাতীয় রাজনীতিতে জায়গা করে নিচ্ছে ব্যবসায়ী, অভিনেতা-নেত্রী, এমন কি সন্ত্রাসীরাও বাদ পড়ছেনা। যারা নিজেদের আখের গোছানোতেই ব্যস্ত। তাই এখনই সময়-ছাত্র রাজনীতি নিয়ে নতুন করে ভাবার। আর এক্ষেত্রে ছাত্র সংগঠনের নেতা সহ জাতীয় নেতৃবৃন্দকেই এগিয়ে আসতে হবে।
২| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৩২
জীবনকেসি বলেছেন: আপনি আপনার ছেলেকে দিয়া রাজনীতি করান। আমি করামু না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটাই আমার জবাব। ঘুনেধরা শিক্ষব্যবস্থা। শিক্ষাগ্রহণই ছাত্রদের প্রথম কাজ। গুলি খেয়ে মরা নয়, টেন্ডারবাজি করা নয়, নেত্রীর পুজা করা নয়, চাদাবাজি করা নয়, মাদক ব্যবসা-সেবন করা নয়।
তাই ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে দেয়াই হবে উত্তম কাজ। এটা সময়ের দাবী।
ধন্যবাদ।
৩| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৩৪
শয়ন কুমার বলেছেন: জীবনকেসি বলেছেন: আপনি আপনার ছেলেকে দিয়া রাজনীতি করান। আমি করামু না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটাই আমার জবাব। ঘুনেধরা শিক্ষব্যবস্থা। শিক্ষাগ্রহণই ছাত্রদের প্রথম কাজ। গুলি খেয়ে মরা নয়, টেন্ডারবাজি করা নয়, নেত্রীর পুজা করা নয়, চাদাবাজি করা নয়, মাদক ব্যবসা-সেবন করা নয়।
তাই ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে দেয়াই হবে উত্তম কাজ। এটা সময়ের দাবী।
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৪০
টাইটান ১ বলেছেন: আপনাকে একজন বড় বুদ্ধিজীবী বলে ডাকতে পারি আমরা।