![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমাদের দেশের প্রধান শিল্পের মাঝে একটি হচ্ছে চা শিল্প। যা দিয়ে প্রতি বছর প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। মুলত এই শিল্পটি স্থাপিত হয়েছিল বৃটিশ উপনিবেশিক সময়েই। পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী সমাজ ব্যবস্থা যেহেতু শোষণ, লুন্ঠন ছাড়া টিকে থাকতে পারেনা। তাই শোষণ, লুন্টনের পরিকল্পনা সরুপ স্বস্তা শ্রম, প্রাকৃতিক ভাবে এই শিল্পের জন্য অনুকুল পহাড়ী অঞ্চলে গড়ে তুলেছিল এই শিল্প। আর এই শিল্পের শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল সমাজের সবচেয়ে নিচু শ্রেণীর হরিজন, কোল, মুন্ডা, কৈরি, চন্ডাল, সাওতাল প্রভৃতি সম্প্রদায়ের মানুষ গুলোকে। যাদের নিজস্ব সমাজ সংস্কৃতি থাকলেও আজকে তা উপেক্ষিত। জায়গা নেই, বাড়ি নেই। আজকেও তাদের অবস্থার মৌলিক কোন পরিবর্তন হয়নি। তাইতো তাদের দেখলেই মানিক বন্দোপধ্যায়ের বিখ্যাত “পদ্মা নদীর মাঝি” উপন্যাসে বর্ণিত কেতুপুর গ্রামটি চোখের সামনে ভেসে উঠে। একেকটি চা বাগান যেন একেকটি কেতুপুর গ্রাম। জানা যায় বৃটিশরা তাদের এতদ অঞ্চলে মাদ্রাজ, বিহার, উড়িষ্যা, উত্তর প্রদেশ, ঝাড়খন্ডের রাঁত্রি, ডোমকা, নাগপুর প্রভৃতি অঞ্চল থেকে রীতিমত ক্রীতদাসদের মতই স্থানান্তর করেছিল। যেমনটি আফ্রিকা থেকে জাহাজ বোঝাই করে দাসদের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হত। চা বাগান বানানো ছাড়া অন্য কোন কাজ জানা নেই ওদের। এছাড়া তাদের ভাষা, সংস্কৃতি, পেশার সাথে বাংলা ভাষাভাষীদের বিন্দু মাত্র মিল নেই। তারা এখনও আমাদের ভদ্র সমাজে আসতে ভয় পায়। বিজ্ঞানের আবিষ্কারে বিশ্ব অনেক দূর এগিয়ে গেলেও এর ছোঁয়া তারা পায় নি। বাগান গুলোতে নেই কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির পরিবর্তে এখনও তারা অতিপ্রকৃত শক্তির উপর নির্ভর চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করে। শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে কুসংস্কার তাদের মাঝে আষ্টেপিষ্টে বাঁধা। তাইতো চা বাগানের শত শত শিশু অপুষ্টির শিকার হয়ে থাকে। শিক্ষার ছোঁয়া থেকে দূরে থাকার কারনে পুষ্টি কিংবা অপুষ্টি সম্পর্কে তারা অজ্ঞ।
তাই সস্তা মজুরি, উপোস, ধার-কর্য, রোগ, শোক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সেবাহীনতা, নিরাপত্তাহীনতা তাদের নিত্যসাঙ্গী। এমতাবস্থায় তাদের ক্রন্দন কখনও বন্ধ হয়না। তাইতো জৈনক লেখকের “ঈশ্বর থাকেন ওই গ্রামে ভদ্র পল্লীতে। এখানে তাঁহাকে খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না” উক্তিটি যথার্থই স্থান পেয়েছে চা শ্রমিকদের ক্ষেত্রেও। চা বাগানে ঢুকলেই বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু তাদের এই মানবেতর জীবনযাপনে পরও ইশ্বর যেন মূখ ফিরিয়ে একটিবারের মতো তাকান না। তিনি যেন খুঁটি মেরে বসে রয়েছেন আমাদের এই ভদ্র সমাজে।
আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংস্থার(আইএলও) বিধান অনুযায়ী ৮ ঘন্টা শ্রমের নিয়ম থাকলেও তাদের নির্দিষ্ট কোন শ্রমঘন্টা নেই। মালিকরা তাদের মজুরি শোষণ করে বিশাল অট্রালিকা, দেশে-বিদেশে ব্যাংক-ব্যালেন্স গড়ে তুললেও তাদের নিম্নতম মজুরি টুকু দিতে নারাজ। এর মধ্যে যে টুকু দেয় তা দিয়ে তাদের নূন আনতে পান্থা ফুড়ায়, আর স্বাদ-আহ্লাদের (বিনোদন) তো প্রশ্নই উঠেনা। তবে বৃটিশ মালিকরা সারা দিন অমানসিক পরিশ্রমে কাতর শ্রমিকদের বিনোদনের জন্য হারয়া, বাঙ, চুয়ানি, গাজা খাওয়ার সুযোগ দিত। শ্রমিকরা যে টাকা মজুরি পেত তা আবার মালিকের পকেটেই যেমন চলে যেত তেমনি আবার এই নেশা গ্রস্ত শ্রমিকদের বিদ্রোহ থেকে বিরত রাখা যেত। এখনও এই অভিপ্রায় শেষ হয়ে যায়নি। জানা যায় প্রতি কেজি চা উৎপাদনে খরচ হয় ১২০-১৩০ টাকা। তা বিক্রি হয় ৩০০-৪০০টাকা। প্রতিদিন একজন শ্রমিককে নি¤œতম ১৮-২৩ কেজি চা পাতা তুলতে হয়। যদিও তারা এর থেকেও বেশি তুলে থাকে। কিন্তু দিনে মাত্র ৫২ টাকা মজুরি যা কিছু দিন পূর্বে শ্রমিকদের আন্দোলনের মূখে ৬৯ টাকা করতে বাধ্য হয়। দেয়ালে যখন পিঠ ঠেকে যায় তখন বাধ্য হয়েই উল্টো দিকে মুভ করতে হয়। জানা যায় সিলেটের আশেপাশের বাগানের চা শ্রমিকরা ৫২ টাকা মজুরিকে বর্তমান বাজারে চা শ্রমিকদের সাথে উপহাস কিংবা মস্করা বলে অখ্যায়িত দিয়ে ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্বারকলিপি দেওয়ার মাধ্যমে সরকারে কাছে দাবী জানিয়ে ছিল। তাদের সেই দাবী আমাদের ভদ্র সমাজের সাধারণ জনগনেরও সম্মতি অর্জন করেছিল। কিন্তু প্রশ্ন হলো সরকার যে ৬৯ টাকা মজুরি ঘোষনা করল বর্তমান বাজারে তাও কি মস্করা নয়? তাদের দু:খ-কষ্টের এখানেই শেষ নয়। ১৯৬২ সালের আইনে শ্রমিকদের জন্য নির্ধারিত পদ্ধতিতে বাসস্থান তৈরি করে দেওয়া এবং প্রতি বছর ১০ভাগ হিসাবে গৃহ নির্মাণের বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু এই কাজটি বাগান মালিকরা সচেতন ভাবেই এড়িয়ে যান। তবে মাঝে মাঝে লোক দেখানো কার্যক্রম যে করেন না তা বলার অবকাশ নেই। বর্ষা মৌসুম এলেই তাদের জন্য দূর্ভোগ নেমে আসে। তখন নিজেরা কোন ক্রমে খড়খুটো টিকাটাকা দিয়ে কোন রকমে মাথা গুজার ঠাঁই করে নেয়। আইনে প্রতি বছর শ্রমিকদের মেডিকেল চেকআপ করার কথা থাকলেও তা চোখে পড়েনা। এছাড়াও এখন হাসপাতালে রোগীদের পথ্য ডিম, দুধ দেওয়া হয়না যা বৃটিশ আমলে দিত। এতে দেখা যায় ভারতীয় উপমহাদেশ ভেঙ্গে দু’দুবার দুটি রাষ্ট্র কাঠামো গড়ে উঠলেও তাদের সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর পরিবর্তে কর্তণ করা হয়েছে!
আমাদের ভদ্র সমাজের মানুষজন আনন্দে সময় কাঠানোর জন্য ছুটে আসেন সবুজের সমারোহ এই চা বাগানে। নানা রঙ্গের ভঙ্গিতে ছবি তুলেন। এমনকি চা শ্রমিকদের সাথে ছবিটি তুলতেও মিস করেন না। আবার অনেকে বিশাল অট্রালিকায় ওয়ালমেট হিসেবে টানিয়ে রাখেন বাগানে কর্মরত শ্রমিকদের ছবি। কিন্তু তারা কি একবারের মতো ভেবে দেখেন না যে যারা এই অপূর্ব মনোরম দৃশ্যের সৃষ্টিকারী কারিঘর গুলোর জীবন-জীবিকা কিভাবে পরিচালিত হয় ? আমাদের শাসক গোষ্ঠী সর্বদা মালিক গোষ্ঠীর স্বার্থই দেখে থাকে। বাজার দরের সাথে সংগতি রেখে নি¤œতর মজুরি নির্ধারন করার দাবী থাকলেও ২০০৭ সালে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয় দায়সারা ভাবে জাতীয় নিম্নতম মজুরি ১৫০০টাকা ঘোষণা করে। প্রতি ৫ বছর পর পর নি¤œতম মজুরি ঘোষণা করার বিধান রয়েছে যা আজকে ৬ বছর পর দ্রব্য মূল্যের দাম লাগাম ছাড়া হলেও তা এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে। আজকেও শ্রমিক অঙ্গন থেকে দাবী উঠছে নিম্নতম মজুরি ঘোষণা করার। মালিকসহ নীতি নির্ধারকদের একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে; শ্রমিকরাই হচ্ছে অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। শ্রমিক বাঁচলে এদেশের অর্থনীতি বাঁচবে। তাই শ্রমিকদের অবজ্ঞা করে নয় বরং তাদের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে জীবন ধারনের উপযোগী নিম্নতম মজুরি দিতে হবে। এতে আমাদের অর্থনীতি ও শিল্পের মান বাড়বে বৈ কমবে না।“ইশ্বর থাকেন ওই গ্রামে ভদ্র পল্লীতে .....”
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৮:৫২
ভিটামিন সি বলেছেন: চা শ্রমিকদের দৈনিক মুজুরি নূন্যতম ২৪০ টাকা করা করা হউক ৮ কর্মঘন্টার ভিত্তিতে। আর ওভারটাইম করলে তার জন্য এক্সট্রা পে করার ব্যবস্থার নিয়ম করা হউক। কোন জাতি, গোষ্টি বা পেশাজিবীর জন্য আলাদা কোন নিয়ম থাকতে পারে না। উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষিত করছি।