নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মিঠুন গোস্বামী

মিঠুন গোস্বামী › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে দেশ....

২০ শে নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩০

আগামীতে কোন পদ্ধতির মাধ্যমে কে বা কারা ক্ষমতায় যাবে এই নিয়ে সারা দেশে চায়ের টেবিল থেকে শুরু করে প্রতিটি স্থানই সরগরম। কিন্তু শত আলোচনা সমালোচনা সত্ত্বেও কেউ কোন সমাধান টানতে পারছেন না। কারণ নির্বাচনকালীন কে এর মধ্যস্ততা করবে এ নিয়ে দেশের প্রধান দুই সংগঠনের মধ্যে যেন চলছে এক ধরনের হাডুডু খেলা। ক্ষমতায় যাওয়ার নিশ্চয়তা না পেলে কেউ নিজেদের অবস্থান থেকে এক চুলও নড়বেন না। এজন্য কেউ সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের দাবি আবার কেউ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি নিয়ে গো ধরে বসে রয়েছেন। জাতিসংঘ সহ দেশি-বিদেশি মহল থেকে সংলাপের পরামর্শ দিলেও তা কর্ণপাত না করে কার কতটুকু পেশি শক্তি রয়েছে তা দেখাতেই মরিয়া হয়ে উঠেছে। বিরোধী দলের সিনিয়র নেতাদের গ্রেফতারের পর সংকট আরো প্রকট হয়েছে। পেশী শক্তি দেখানোর জন্য গত ২৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ১০ দিন হরতাল পালিত হয়। হরতালের সহিংসতায় প্রায় অর্ধ শত তাজা প্রাণ অকালে ঝরে গেছে, অনেকে আগুনে পুড়ে গেছে আবার অনেকে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে। কিন্তু তারপরও কোন সুরাহা না হলেও এ সপ্তাহে মার্কিন দক্ষিন এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ সফর এবং স্বসস্ত্রবাহিনী দিবস থাকার কারণে ১৮দলীয় জোট কিছুটা নমনীয় ভাব দেখাচ্ছে। তবে জানা জাচ্ছে এ সপ্তাহের মধ্যে কোন সমঝোতা না হলে আগামী পুরো সপ্তাহ ব্যাপী হরতাল দিতে পারে। তাতেও কোন প্রকার কাজ না হলে এধরনের কর্মসূচি লাগাতার চলতে থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছে প্রধান বিরোধী দল সহ ১৮দল। তার মানে আরও কত গুলো তাজা প্রাণ অকালে ঝরে যাবে তা অনুমান করতে পারলেও তার সঠিক হিসাব কষা যাচ্ছে না। আমাদের দেশে প্রতিবারই নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্তে নির্বাচনটা কিভাবে কার অধীনে হবে এই পদ্ধতি কিংবা কোন ব্যাক্তি বিশেষে হবে এই নিয়ে ক্যারি-ক্যাছাল সৃষ্টি হয়ে থাকে। নির্বাচন আসলেই জনগণের মাঝে শুরু হয় আতঙ্ক, অনিশ্চয়তা। এবারও তার ব্যতিক্রম কিছু ঘটছে বলে মনে হচ্ছে না। হরতাল কিংবা সমধর্মী কোন কর্মসূচী মানেই হামলা, ভাংচুর, জালাও, পোড়াও, ককটেল, বোমা এই যুদ্ধময় পরিস্থিতিতে এখনকার বাংলাদেশ! টেলিভিশন কিংবা পত্রিকার পাতা উল্টালেই এধরনের দৃশ্যই লক্ষ্য করা যায়। এই ক্যারি-ক্যাছালের মধ্যে পড়ে দেশ প্রতিদিন প্রায় হাজার হাজার কোটি টাকার অর্থনৈতিক ক্ষতি গুণছে। পণ্য আমদানী রপ্তানী না হওয়ার দরুন দ্রব্য মূল্য এখন আকাশ ছোঁয়া। অন্যদিকে যারা দিন আনে দিন খায় তাদের পেটে লাথি। এদের মধ্যে কেউ উপোস কেউবা ধার কর্য করে চলছে। আবার কেউ পেটের দায়ে ভ্যান, রিকসা, ইজিবাইক, সিএনজি নিয়ে বের হলেও তাদের অনেকের কপালে জুটে পিকেটারদের মার, গাড়িতে আগুন, নিজের লাশ। অফিস কিংবা কর্মস্থলে যাওয়ার অনুকূল পরিবেশ না থাকলেও হেটে কিংবা, জীবন বাজি রেখে ছোট কোন যানবাহনে চড়ে এভাবেই অনিশ্চয়তার দিকে নিজেকে ঠেলে দিতে হয়। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস হচ্ছে কোমলমতী শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার মাস। পিএসসি, জেএসসি-জেডিসি সহ স্কুল গুলোর বার্ষিক পরিক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ভর্তি পরিক্ষা এ দুই মাসেই বেশি অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে এই পরীক্ষাগুলোতে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি। ইতিমধ্যে হরতালের কারণে জেএসসি ও জেডিসি পরিক্ষার তারিখ দুবার করে পরিবর্তন করা হয়েছে। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরিক্ষা স্থগিত ও তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। অন্যান্য পরিক্ষা গুলোর অবস্থা দেশের এমন পরিস্থিতিতে কি হয় তাও অনিশ্চিত। আর যে সকল জনগোষ্ঠী এই অনিশ্চয়তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে তাদেরকে বলা হয় আম জনতা! তাহলে কি তারা মানুষ নয়? হ্যাঁ! তবে সাধারণ মানুষ! তাইতো দুই দলই নিজেদের মতো করে বক্তব্য দিচ্ছে জনগণ এটা চায় না, ওটা চায়। কিন্তু জনগণ আসলে কি চায় তা কি তারা একবারের মতো করে ভেবে দেখেছে? জনগণ ক্ষমতার গিয়ে সিংহাসনে বসা নয়, দু’বেলা দু-মুটো পেট ভরে ভাত খেতে চায়, লজ্জা নিবারনে একটুকরো কাপড় চায়, সারা দিনের পরিশ্রম শেষে একটু মাথা গোজার ঠাঁই চায়, সামাজিক জীব হিসেবে মর্যাদা নিয়ে বাঁচার জন্য শিক্ষা চায়, অসুখে চিকিৎসা চায়, একটু শান্তিতে থাকতে চায়। কিন্তু আজকে যারা দেশের মানুষকে জিম্মি করে দেশ প্রেমের কথা বলে, জনগণের কল্যানের কথা বলে দেশকে একটি সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে ধাবিত করছে তারা কি জনগণকে শুধু মাত্র এই মৌলিক অধিকার গুলোর নিশ্চয়তা দিতে পেরেছে? সরকারি দল হোক আর বিরোধী দল হোক তারা দু’দলই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে একের অধিক বার করে ক্ষমতায় গিয়ে চাঁদাবাজী, সন্ত্রাসী, দখলবাজী, খুন, ধর্ষণ, লুটপাট ছাড়া আর তেমন কিবা উপহার দিয়েছে? আগামীতেও একই ধরণের কার্যকলাপের পূনরাবৃত্তি ঘটবেনা এর নিশ্চয়তাই বা কোথায়? লোক মুখে একটি প্রবাদ প্রায়ই শুনা যায় “যে যায় লঙ্কায়; সেই হয় রাবণ”। তারা আম জনতার মাথায় বসে কাঁঠাল ভেঙ্গে খেয়ে আঙ্গুল ফোলে কলা গাছ হয়। কিন্তু জনগণের ভাগ্যে জুটে শুধুই প্রতিশ্রুতির প্রহসন।

আগামী নির্বাচন কিভাবে হবে, কোন পদ্ধতিতে গেলে দুই পক্ষ সমঝোতায় আসবে তা নিয়ে দেশের ভেতর যেমন চলছে তেমনি ভাবে চলছে বিদেশী কুটনৈতিকদের দৌড় ঝাঁপ। কোন কোন ক্ষেত্রে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। জানা যাচ্ছে এই টানাপোড়নে কর্তা দেশগুলোর মধ্যেও দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে। আবার জানা যাচ্ছে মোড়লদের মাঝে দ্বিমত থাকার কারণেই আমাদের দেশের দুই দলের মাঝে সমঝোতা পিছিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে আন্ত:সা¤্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বের প্রেক্ষিতে কে, কার লবিংয়ে যাবে তার প্রস্তুতি চলছে। এ অঞ্চলে আধিপত্ত্বকারী মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদ অর্থনৈতিক মন্দা সহ বিশ্ব নেতৃত্বে সম্প্রতি কিছুটা বেকায়দায় থাকার কারণে একক ভাবে কোন প্রভাব ফেলতে পারছে না। এ প্রেক্ষিতে রুশ সা¤্রাজ্যবাদ এবং তার সহচর এশিয়ার উদীয়মান শক্তি চীনের দিকে থাকিয়ে রয়েছে পশ্চিমা বিশ্ব তথা মার্কিন। ইতিমধ্যে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী শক্তিশালী রাষ্ট্র ভারত সফর করেছেন। এছাড়াও নির্বাচন সহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার জন্য তাঁর চীন সফর করার কথা রয়েছে। এখন চীনের মতামতের উপর নির্ভর করবে সিদ্ধান্ত কি হবে। কিন্তু যে সরকারের অধীনেই নির্বাচন হোক না কেন নির্বাচনের বৈধ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে প্রতিবারই। উভয় দলের নেতারা যারা নির্বাচনে হেরে যান তারা নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলেন। বলা হয় আমরা বিদেশিদের সাথে দেশ বিরোধী চুক্তি বা দেশের সম্পদ তুলে দিতে পারিনি বলে ক্ষমতায় আসতে পারিনি। এমন অবস্থায় কিছু প্রশ্ন স্বাভাবিক ভাবেই উঠে আসে। তাহলে কি দেশের সম্পদ বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার বিনিময়ে তারা ক্ষমতায় আসেন? এজন্যই কি আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ কোন দরপত্র ছাড়াই বহুজাতিক কোম্পানীর হাতে তুলে দেওয়া হয়, জনগণের স্বার্থের কথা চিন্তা না করে তাদের প্রেসক্রিপশনে সেবা খাত গুলো থেকে ভর্তুকি উঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে? তাহলে নির্বাচন মানে কি একটি পাতানো খেলা? জনগণের আইওয়াশ! এবারও বিদেশী কূটনৈতিকদের যে তৎপরতা এটা কি তারই বহি:প্রকাশ?

১৯৭১ সালে সা¤্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ, আমলা, দালালদের থেকে মুক্ত না হওয়ায় এদেশে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন তারা সা¤্রাজ্যবাদীদের পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন করে থাকে। আজকেও যে কামড়াকামড়ি তাও এর বাইরে কিছু নয়। এবার কোন বিশ্বস্ত দালালকে ক্ষমতায় আনবে তারই অভিপ্রায় হিসেবে মার্কিন প্রতিনিধি নিশা দেশাই,র বাংলাদেশ সফর। তবে এ বিষয়ে কোন ধরনের সমঝোতা হয়েছে তা এখনও কেউ প্রকাশ করছে না। ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বের কারণে বাংলাদেশে স্থায়ী মার্কিন ঘাঁটি স্থপন করতে আগামী ২৫ নভেম্বর টিকফা চুক্তি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র। দেশ বিরোধী এ চুক্তিটি করা জন্য যুক্তরাষ্ট্র যেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে তেমনি ভাবে আমাদের সরকারও আগামীতে ক্ষমতায় যাওয়ার নিশ্চয়তা পাওয়ার জন্য চুক্তিটি করতে উঠে পড়ে লেগেছে। কিন্তু দেখা যায় আজকে যারা আগামীতে ক্ষমতায় যাওয়ার আশায় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে হরতাল, অগ্নিসংযোগ, জ্বালাও, পুড়াও করছে তারা দেশ বিরোধী এ সর্বনাশা চুক্তি করলেও এ সম্পর্কে কোন কথা বলছেনা। এমনকি বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি সহ সা¤্রাজ্যবাদী ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রেসক্রিপশনে যখন সেবা খাত গুলো থেকে ভর্তুকি প্রত্যাহার করে জনগণের উপর বাড়তি চাপ ঢেলে দেয় তখনও তাদের সুষ্পষ্ট কোন বক্তব্য কিংবা কর্মসূচি লক্ষ্য করা যায় না। তার মানে তাদের স্বার্থগত বিষয়ে কোন পার্থক্য নেই। আর এই সকল দালাল সংগঠন গুলোর কাছে দেশ, দেশের সম্পদ কিংবা জনগণ কোনটাই নিরাপদ নয়। তাই আজকে এ সকল অত্যাচার, নির্যাতন থেকে মুক্তি পেতে হলে সকল আপামর জনগণকে সা¤্রাজ্যবাদের বিরোদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। এদেশের সামন্তবাদ-মুৎসুদ্ধি বুর্জুয়া-আমলা-দালালদের উচ্ছেদ করে জনগণের সরকার ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.