নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মিঠুন গোস্বামী

মিঠুন গোস্বামী › বিস্তারিত পোস্টঃ

কালাগুল চা বাগানে শ্রমিকদের মানবিক বিপর্যয়

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৩৫

চা এদেশে দ্বিতীয় অর্থকরী ফসল হিসেবে স্বীকৃত। বৃটিশ উপনিবেশিক সময়ে ১৯শতকের মাঝামাঝি এই অঞ্চলে ইংরেজদের হাত ধরেই চা শিল্পের বিকাশ লাভ ঘটে। মূলত এই শিল্পের জন্য উপযোগী ভূমি, প্রাকৃতিক পরিবেশ, পর্যাপ্ত সস্তা শ্রমের কারণে এই অঞ্চল তাদের মনোকর্ষণ করে। এই শিল্পের শ্রমিকদের অবস্থা তখন থেকেই অমানবিক। আমাদের দেশের শ্রমিকদের মাঝে সবচেয়ে অবহেলিত এবং নির্যাচিত হচ্ছে চা শ্রমিকরা। যুগেরপর যুগ এসকল শ্রমিকরা শোষণ, নির্যাতন, দারিদ্র, অশিক্ষা, অপুষ্টি, বিনা চিকিৎসায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। বর্তমানে তা আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। তেমনি সিলেটের প্রাণ কেন্দ্রে এম.এ.জি ওসমানি বিমান বন্দর সংলগ্ন বুরজান টি এস্টেটের অন্যতম কালাগুল চা বাগানের শ্রমিকদের দেখা দিয়েছে মানবিক অবস্থার চরম বিপর্যয়। গত ১ জুলাই থেকে এই বাগানের শ্রমিকরা ন্যায় সংঙ্গত ৮দফা দাবী বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ধর্মঘট শুরু করে। যা দীর্ঘ দু’মাস পেরিয়ে গেলেও এর কোন প্রকার সমাধান না হওয়ায় অর্ধাহারে-অনাহারে মানবেতর দিনাতিপাত করছে প্রায় কয়েক হাজার শ্রমিক। বাড়ির আঙ্গিনায় জন্মানো কচু, লতা, শাক সবজি খেয়ে তাদের দিন কাটছে। আর এই বিষয়টি সিলেটে বর্তমানে চাঞ্চল্যকর ঘটনায় পরিণত হয়েছে। শ্রমিকদের দাবিগুলোর মধ্যে প্রধানতম হচ্ছে ৩০০টাকা দৈনিক মজুরি। যা বর্তমানে রয়েছে ৬৯টাকা। উল্লেখ্য কিছুদিন আগেও তাদের বেতন ছিল মাত্র ৫২ টাকা। বর্তমান বাজারে দ্রব্যমূল্যে যেভাবে লাগামহীন ঘোড়া হয়ে ছুটছে তাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনার নাগাল এই চা শ্রমিকরা কোথায় পাবে? আর এই উর্দ্ধগতির বাজারে ৫২ কিংবা ৬৯ টাকা নেহাত হাসিরই খোরাক! শুধুমাত্র এই মজুরির জায়গাটুকু দিয়ে বিচার করলেই বুঝা যায়, এই দেশে চা শ্রমিকদের অবস্থানটা কোথায়। শিক্ষাদীক্ষা সহ সর্বোপরি মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত এই চা শ্রমিকরা তাদের দৈনিক মজুরি ৩০০টাকা বাস্তবায়নের দাবিতে বিভিন্ন সময় বাগান কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসক, এমনকি শ্রম মন্ত্রনালয় বরাবর স্বারকলিপি দিয়েছে। কিন্তু চা শ্রমিকদের আর্তনাদ শোনার কে আছে? আর তাই শুধুমাত্র দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে বাঁচতে অনন্যোপায় হয়ে তারা ধর্মঘট কর্মসূচী দিতে বাধ্য হয়েছে। শ্রমিকরা দিনের পর দিন অসহায়ের মতো বেঁচে না থেকে তারা অন্যান্য স্বাভাবিক মানুষের মতোই বাঁচতে চায়। কিন্তু শিক্ষা দীক্ষাহীন এই মানুষগুলোর আর্তনাদের কন্ঠ ক্ষেত্রবিশেষে চা বাগান পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থেকে যায়। যার ফলে মালিক পক্ষ কম মজুরি দিয়ে বেশী মুনাফা কিংবা উৎপাদন দুটোর ফায়দাই লুটছে বছরের পর বছর। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় শ্রমিকদের এই ধর্মঘট এখন তাদের জীবন-মরণের লড়াই হিসেবে পরিণত হয়েছে। তাদের অন্যান্য দাবীগুলোর মধ্যে রয়েছে-বাগানে এমবিবিএস ডাক্তার-মহিলা শ্রমিকদের জন্য মহিলা ডাক্তার নিয়োগ, স্যানিটারি ল্যট্রিন, কালভার্ট নির্মাণ, মসজিদ-মন্দির সংস্কার, পূর্ণাঙ্গ রেশন, ওষুধ প্রয়োগকারীদের গ্লাভস প্রদান, ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি কার্যকর করা। চা শ্রমিকদের এই দাবীগুলো কি আদৌ অন্যায্য? দীর্ঘদিন ধরে এই কালাগুল চা বাগানে কাজ করে আসা শ্রমিকরা যখন এসব দাবী বাস্তবায়নে ধর্মঘট আহবান করে, তখন তাদের অপূরণকৃত দাবির দিকে তাকালেই বুঝা যায় তাদের কষ্টের সীমা কতদূর। অবশ্যই এই দৃশ্য শুধুমাত্র কালাগুল চা বাগান নয়, পুরো দেশের প্রতিটি চা বাগানে একই চিত্র। যেখানে মালিকপক্ষের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে চা শ্রমিকরা আন্দোলনে যায়, তখন এই খবর হয়তো গণমাধ্যমের মাধ্যমে কিছুটা আমাদের চোখে পড়ে। কিন্তু খবরের অন্তরালে কত চা শ্রমিকদের নিদারুণ দু:খ-কষ্ট যে আড়ালেই চাপা পড়ে যায়, সে খবর কে রাখে?

বিশ্বের চা উৎপাদনকারী দেশের দিকে তাকালে দেখা যাবে-শ্রীলঙ্কায় শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৫৫০রুপি(৩৩০টাকা), আবার ভারতে শ্রমিকরা ২৮৫রুপি(৩৫০টাকা) মজুরির দাবিতে আন্দোলনরত। বর্তমান সময়ে একজন প্রাপ্ত বয়ষ্ক মানুষের দৈনিক খাবার খরচ কত তা আমাদের কাছে সহজেই অনুমেয়। তাছাড়া তাদের পরিবার পরিজনতো রয়েছেই। যেখানে কেবলমাত্র তার মৌলিক অধিকারের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় দ্রব্য খাদ্যের চাহিদা পূরণ করতে পারছেনা, সেখানে অন্যান্য মৌলিক অধিকারগুলো পূরণের কথা চিন্তাও করতে পারে না। তাদের ভাষা, সমাজ-সংস্কৃতি আমাদের থেকে ভিন্ন। চা বাগানে কাজ করা ছাড়া অন্যকোন কাজ এই শ্রমিকদের জানা নেই, সুযোগও নেই। জীবন বাঁচাতে চলমান অবস্থায় কালাগুলের শ্রমিকরা যাদের একমাত্র অবলম্বন গরু, ছাগল, ভেড়া, হাঁস-মুরগি রয়েছে তাও বিক্রি করে দিয়ে আজ নিঃস্ব। এ দিয়ে কয়েকদিন পার করলেও এখন পকেট শুন্য। দৈনিক ৬৯টাকা মজুরি দিয়ে যাদের খাদ্যের যোগানই হয়না, তা থেকে তারা আবার সঞ্চয় করবে কিভাবে? তারা যে জায়গায় বসবাস করে তাও বাগান মালিকের কিংবা রাষ্ট্রের। নিজস্ব সম্পদ বলতে তাদের কিছুই নেই। বাগানের আশপাশের মানুষজন তাদের পাশে দাঁড়ালেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য। একবার খেলে আর একবার কি খাবে তার কোনই নিশ্চয়তা নেই। এই অবস্থায় তারা এখন অনাহারে মৃত্যুর মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সরকার কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এর সমাধানে এগিয়ে আসছে না বরং বিরুপ আচরণ করছে। আমাদের শাসক গোষ্ঠী সব সময় মালিক গোষ্ঠীর স্বার্থই রক্ষা করে থাকে। সেখানে শ্রমিকরাতো অসহায়। যদিও অধিকাংশ এই শ্রমিক শ্রেণীর ভোটেই তারা শাসনের মর্যাদা লাভ করে থাকেন। এতদিন যে শ্রমিকদের নিরলস শ্রমের ফলে মালিক প্রচুর পরিমাণ মুনাফা অর্জন করেছে আজকে সেই শ্রমিকরাই উপোস করছে। চা শ্রমিকরা দীর্ঘ ২মাস ধরে ধর্মঘট ধারাবাহিক রাখলেও তাদের দাবি পূরণে এগিয়ে আসছে না মালিক পক্ষ। অন্যদিকে এখন পর্যন্ত চা শ্রমিকদের পাশে সরকার পক্ষের কাউকে কোন আশ্বাস বা দাবি পূরণে কোন কথা বলতে দেখা যায়নি। উপর্যুপুরি শ্রমিকদের দমনে পুলিশের হয়রানি, হামলা, মামলা, আটকতো রয়েছেই। প্রশ্ন জাগে নিরপরাধ শ্রমিকদের উপর পুলিশের এই হামলা কী সরকারের ইশারার বাহিরে? সরকার শুধুমাত্র তাদের মৌলিক চাহিদাই পূরণ করতে পারেনি, তাদের জীবনের নিরাপত্তা দিতেও ব্যর্থ হয়েছে। একবেলা খেয়ে না খেয়ে সারাদিন পার করে যে চা শ্রমিক ঘুমুুতে যান, সে কী পুলিশের ভয়ে নিশ্চিন্তে রাত পার করতে পারেন?

গনমাধ্যম থেকে জানা যায়, ঐ শ্রমিকদের দু'জন নেতাকে (নুরুল ইসলাম মকবুল এবং রুপক দাস) গ্রেফতার করে নিয়ে পুলিশ বিভিন্ন নামে বেনামে মামলা দিয়ে রিমান্ড সহ বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করছে।

চা কেবল একটি শিল্প নয়, পর্যটন কেন্দ্রও বটে। যেখানে বেড়ানোর জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষজন ছুটে আসে। কিন্তু এই সুন্দর প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশের যারা রুপকার তাদের আজ করুন অবস্থা। শ্রমিকরা হচ্ছে চা বাগানের প্রাণ। শ্রমিক বাঁচলে বাগান বাঁচবে। আর বাগান বাাঁচলে দেশের শিল্প বাঁচবে। তাই শ্রমিকদের অবজ্ঞা করে নয়, তাদের বাঁচার মতো মজুরি দিয়ে, অনুকুল পরিবেশ এবং সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেই দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

ন্যায় সংঙ্গত এই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সচতেন মানুষগণদের কাছে শ্রমিকরা মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে তাদের পাশে দাঁড়ানো এবং সাহা্য্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আবেদন জানাচ্ছে।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৫৫

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: চা বাগানের শ্রমিকেরা সবসময়েই এমন অবহেলিত , নির্যাতিত :(
পোস্টে সহমত ও সমর্থন রইলো ।

২| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৫৬

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: শ্রমিকরা হচ্ছে চা বাগানের প্রাণ। শ্রমিক বাঁচলে বাগান বাঁচবে। আর বাগান বাাঁচলে দেশের শিল্প বাঁচবে। তাই শ্রমিকদের অবজ্ঞা করে নয়, তাদের বাঁচার মতো মজুরি দিয়ে, অনুকুল পরিবেশ এবং সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেই দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
ন্যায় সংঙ্গত এই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সচতেন মানুষগণদের কাছে শ্রমিকরা মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে তাদের পাশে দাঁড়ানো এবং সাহা্য্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আবেদন জানাচ্ছে।

+++++++++++++++++

মানবাধীকার সংগঠন, সামাজিক মর্যাদাবান ব্যক্তি সকলেরই উচিত তাদের ন্যায্য দাবীর প্রতি একাত্বতা পোষন করে তাদের ন্যায্য দাবী পূরণে সাহায্যের হাত বাড়ানো।

৩| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:০০

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: তাদের সাথে সবাইকে যোগ দিতে হবে। নইলে সবাই বিপাকে পড়ব।

দেশে ন্যায় বলতে কিছুই নেই।

ঘোষ, খুন সবই টাকার কারণে।

৪| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:১৮

হরিণা-১৯৭১ বলেছেন: বাগানটা শ্রমিকদের হওয়া উচিত।

৫| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:০২

যাযাবর বেদুঈন বলেছেন: আমাদের উচিত তাদের এই আন্দোলনের সাথে একাত্মতা জানান। শুধু চা বাগান নয় দেশের সকল শ্রমিকরাই অবহেলিত। তাদের ন্যায্য পাওনার এই দাবী চলবে আর কতকাল ?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.