নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আমার ছায়া। আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন নিয়ে বাঁচি, হাতের মধ্যে আকাশ; তবু ছুঁতে পারিনা।

মোহাম্মদ বাসার

আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী। ফিচার এডিটর- বাংলাপোস্ট, যুক্তরাজ্য।

মোহাম্মদ বাসার › বিস্তারিত পোস্টঃ

নারী অধিকার ও নারীর প্রতি সহিংসতার কথা বলা শুধুই বলার জন্য বলা, গাল ভরা বুলি আর হাততালির সুবচনঃ

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৭:২৮

আমি লক্ষ্য করেছি আমি নিজেই লিঙ্গগতভাবে সাম্প্রদায়িক! কেননা যখন কোন পুরুষকে মারধোর বা পেটানো হয় তখন আমি বলি বা লিখি একজনকে মারধোর করা হয়েছে বা পিটানো হয়েছে। অর্থাৎ সে পুরুষ বা মেয়ে এটা না বলেই ধরে নিয়েছি সে পুরুষ এবং একজন মানুষ। কিন্তু একজন নারী যখন লাঞ্ছিত বা নিপীড়নের শিকার হন তখন সে যে একজন নারী তা উল্লেখ করতে ভু্লিনা। এবং ধরেই নেই নারী হওয়ার কারণে তার লাঞ্ছনা, নিপীড়ন বা নির্যাতন আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় দৃষ্টিকটু হলেও অনাকংখিত নয়।

আমার বেড়ে ওঠা একান্নবর্তী পরিবারে। আমার বাবা-চাচারা ৪ ভাই ১ বোন। আমার যখন বয়স ৭/৮ তখনই আমাদের চাচাত ভাই বোন নিয়ে আমরা প্রায় ২০/২২ জনের পরিবার। রান্না বান্না, বাজার সদায় ইত্যাদি নিয়ে তাল সা্মলানো প্রায় অসম্ভবই ছিল বলা যায়। আমাদের বিশাল বাড়িতে ফসলের মৌসুম গুলোতে বাড়ির চারপাশে ফসলের এত স্তুপ থাকত যে বাড়ির ভিতরে ঢোকাই অনেক সময় কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়াত। আমার বাবা ছিলেন সবার বড়, বাইরের অফিস আদালতের কাজ, ফসল বিক্রি, দূরের গঞ্জে নিয়ে বিক্রির ব্যবস্থা করা এবং আরও ছোট খাট যে সমস্ত ব্যাবসা ছিল তা বাবাকেই সামাল দিতে হত। বড় চাচা ও মেজ চাচা ক্ষেত-খামার ইত্যাদি দেখাশোনা করতেন। আর ছোট চাচা ছিলেন ফ্যান্টসি প্রিয়। অনেকটা 'খাইতেন, দাইতেন আর ঘুরিয়া বেড়াইতেন' জাতীয় লোক। তার শখ ছিল তিনি বন্দুক চালাবেন। এই জন্য তিনি আনসার বাহিনীতেও জয়েন করেছিলেন। আমার বড় চাচা ও মেজ চাচা মুক্তি যুদ্ধে গিয়েছিলেন, ছোট চাচা ছোট থাকার কারণে যেতে পারেননি, কিন্তু তিনি তার বড় দুই ভাইয়ের কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধের ও বন্দুক চালানোর গল্প শুনে নিজেও একদিন বন্দুক চালাবেন সেই স্বপ্ন দেখতেন। আমার মা আমাদের যৌথ পরিবারটাকে একাই সামলে রাখতেন বলা যায়। আমি যখন বুঝতে শিখি তখন অনেক সময় দেখেছি বাবা মাকে বকাঝকা করলে মা আমাদের নানা বাড়ি( মায়ের ফুফুর বাড়ি, মা ছোট থাকতেই তার বাবা মাকে হারান) চলে যান কিংবা আমাদের এক দাদা বাড়িও যান মাঝে মাঝে। পরে বাবা যেয়ে সবার অগোচরে চুপি চুপি আবার মাকে বাড়ী নিয়ে আসতেন। বাবা কখনো তেমন গায়ে হাত ঠাত তুলেছে এমনটা দেখিনি। কিন্তু আমার বড় চাচা এদিক দিয়ে খুব উদার ছিলেন। তখন আর আমদের যৌথ পরিবার নেই, বড় চাচীকে দেখতাম দুপুরের রান্না ঠিক সময়ে হয়নি সেই অপরাধের শস্তির হাত থেকে বাঁচার জন্য বাড়ী থেকে একটু দূরে টয়লেটের মধ্যেও লুকাতে মাঝে মাঝে। আমার ছোট্ট মাথায় এর ভালমন্দ কোন কিছুই খেলত না। আমি শুধু বাড়ী থেকে একটু দূরের ফাঁকা মাঠে যেয়ে টকটকে লাল সূর্যের ডুবে যাওয়া দেখতাম। আমি আমার মা ও কাকী দু'জনকেই দেখেছি আমার বাবা কিংবা চাচা তাদের কাছে দেবতার মত। বাড়িতে মাছ কিংবা অন্যান্য তরকারীর যখন কমতি থাকত তারা না খেয়ে বাবা কিংবা চাচার জন্য প্রয়োজনের অতিরিক্তই আলাদা করে অন্য বাটিতে তুলে রাখতেন। এতে ভালবাসা কতটুকু ছিল জানা নেই, কিন্তু ভয়ও যে একেবারে ছিল না তাতো নয়। আমাদের সমাজে নারীরা যে অধিকার বঞ্চিত এটা যতটুকু তাদের পুরুষরা বুঝিয়েছে তার চেয়ে বেশী মেনে নিয়েছে নারীরা নিজেরাই।

আজকের যেই পোষ্টটা শেয়ার করলাম তাতে একটা ভিডিওও আছে। লক্ষ্য করুন এই দর্শক্দের মধ্যেএকজন নারীও আছে। আছে আরও ৮/১০ পুরুষ নামধারী খাশিও। একজন মানুষ নিপীড়নের শিকার, তাকে শারিরীকভাবে নিগৃহীত করা হচ্ছে তেমন কেউ এগিয়ে যাচ্ছে না, এ এক বিকলাঙ্গ জাতীর মানবিক স্খলন। এটা নতুন কিছু নয়, যে সভ্যতা, যে ধর্ম আমাদের শেখায় সুখে রাখার গ্যারান্টি দিতে পারলে একাধিক স্ত্রী রাখা দোষের কিছু নয় সেখানে মানবিক সুস্থতা আশা করা যায় না।

এবার নিজের একটি কাল্পনিক অনুভূতি শেয়ার করি। আমি একজনকে পছন্দ করি। সেও আমাকে করে। আমাদের সম্পর্কের মধ্যে চ্যুতি-বিচ্যুতির অনেক নুড়ি পাথর আছে। তার কাছে মাঝে মাঝে আমি বিলুপ্ত প্রাণী ডাইনোসারের মত অতীত হয়ে যাই, যে শুধু স্মৃতিতেই বড়সড় ঝাকুনী দেয়, তার উপেক্ষা আমাকে কষ্ট দেয়, আমি আকাশে চাঁদ দেখি, বাগানে প্রস্ফুটিত ফুল দেখি, ফুলের সৌরভ আমাকে আকৃষ্ট করে। আমি গ্লানীবোধে ভূগি। তাকে ভুলতে চেয়ে চাঁদ দেখি বলে, ফুলের গন্ধ্যে আকুল হতে ইচ্ছে করে বলে।

এবার আমার কাল্পনিক গল্পের মূল প্রসঙ্গে আসি। যৌনতার দিক দিয়ে মানুষের মানসিক গঠন এরকম আপনি ধর্মের দোহাই দেন আর না দেন এটা অনেকটা কেন পুরোটাই অসম্ভব ব্যাপার একাধিক স্ত্রীর মধ্যে নিজের অনুভূতি সমানুপাতিক হারে বন্টন করা কিংবা তাদের কাছে নিজেকে সমানভাবে মেলে ধরা। অর্থাৎ ধর্মের দোহাই দিয়ে হোক আর পুরুষতান্ত্রিক সমাজের সুবিধা নিয়ে হোক পুরুষরা নারীদের শোষণ করার একটা উপায় বের করে নিয়েছে। আর নারীরা ধর্মে বা সমাজের প্রচলিত নিয়মকে ঋষিবাক্য মনে করে তা মেনে নিয়েছে।

নারীদের অবদমিত করার যে কৌশল ধর্ম কিংবা সমাজ ব্যবস্থা আমাদের শিখিয়েছে সেই বদ্ধ ঘরের অর্গল ভেঙে ফেলার দায় পুরুষের যতটুকু নারীর তারচেয়ে বেশী। আর সেটা হল বিশ্বাস। নিজের স্বক্ষমতার উপর বিশ্বাস। পুরুষে মনোরঞ্জনের জন্য লিপিস্টিক, হিজাব, আর বাহারি পোষাকের সেলফী দিয়ে নারীর উন্নয়ন কিংবা নারীর প্রতি সহিংসতার কথা বলে যে সমস্ত নারীরা তর্কের ঝড় তুলছেন তাতে বড় ধরণের কোন আদর্শিক পরিবর্তন আসবে বলে আমার মনে হয় না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.