![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী। ফিচার এডিটর- বাংলাপোস্ট, যুক্তরাজ্য।
সদানন্দের সন্তান প্রাপ্তি
উঠোন পেরিয়ে দূরের বটগাছটার দিকে তাকায় সদানন্দ,
তার ঘরে চারুলতা যেদিন বউ হয়ে আসলো
সেদিন সন্ধ্যায় বটগাছের নীচে
পুজোর প্রসাদ রেখে আসছিল সদানন্দ একথা তার এখনো মনে আছে;
বটগাছের নীচে গেরুয়া পরা ঠাকুর বাবা তার মাথায় হাত রেখে বলেছিল
'যা ঘরে যা, আমি আর্শীবাদ করি ভগবান তোর মনস্কামনা পূর্ণ করুন।'
গত ছয় বছরে সদানন্দের তেমন কোন ইচ্ছেই অপূর্ণ রাখেননি ভগবান,
তার একটা ঝুপড়ির মত কাপড়ের দোকান থেকে তিন তিনটা কাপড়ের দোকান হয়েছে;
ছোট্ট টিনের ছাউনীর একটা কাঁচা ঘর থেকে দোতলা বিল্ডিং করেছেন সদানন্দ।
দুপুরের খাবার খেতে যখন মাঝে মাঝে বাড়িতে আসেন সদানন্দ
তখন চারুলতার অনেক সুখী সুখী একটা মুখের মধ্যে
কেমন যেন একটা দুঃখ দুঃখ ভাব লক্ষ্য করেন সদানন্দ।
সদানন্দ বোঝেন কিন্তু কোন এক অচীন অক্ষমতার লজ্জায়
তিনি তার বউকে কিছুই বলেন না;
আজকের এই দুপুরের নির্জনতা ভেদ করে
সদানন্দের মাথায় ঝন ঝন করে বেজে ওঠে এক অলীক সম্ভাবনা,
তিনি নারিকেলের শলাকা দিয়ে দাঁত খেঁচতে খেঁচতে
অনেকদিন পর ঠাকুর বাবার কথা আবার ভাবলেন;
সদানন্দ কালবিলম্ব না করে চারুলতাকে তার মনোবাসনা শুধাতেই
চারুলতা বললেন ' আইজ্ঞে আপনের যা ইচ্ছা'।
ধ্যানে মগ্ন ঠাকুর বাবা দূর থেকে সদানন্দকে স্ত্রী সমেত আসতে দেখেই হিসেব কষলেন,
'আহা গত ছয় বছরে অন্ততপক্ষে চারুলতা ষাট বারেরও বেশী সময় আসা যাওয়া করেছে তার সামনে দিয়ে',
ঠাকুর বলরাম তার অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝেছেন
এই পেশায় শিকার পুরাপুরি খাঁচায় না ঢোকা পর্যন্ত তাকে বধ করতে নেই।
পায়ে মানব হস্তের স্পর্শ আর কানে অলঙ্কারের শব্দ আসতেই
ঠাকুর বলরাম চোখ বুজেই বলে উঠলেন 'কিরে এতদিনে সময় হোল?'
'যা ওপাশের ঘরে যা হারাধনই তোকে সব বুঝিয়ে দেবে'।
ঠাকুর বলরামের শিষ্যরা পাশ থেকে সমস্বরে বলে উঠলেন 'জয় বাবা বলরাম, জয় বাবা বলরাম;'
ঠাকুর বাবার বেশ প্রতিপত্তি বেড়েছে, বিষণ্ণ বটগাছের সেই উদোম ফাঁকা যায়গা নেই;
এসব কথা ভেবে ভেবে চারুলতাকে নিয়ে পাশের রুমে হারাধনের কাছে যেতে যেতে
দরজার আড়ে মাথায় টাক খেলেন একবার সদানন্দ।
স্ত্রী চারুলতাকে ছাড়া এই প্রথম রাত্রি যাপন করছেন সদানন্দ,
'আহা কি আনন্দ! ঠাকুর বাবার ইচ্ছেয় বছর না ঘুরতেই তাদের সংসারে নতুন অতিথি আসবে।
এখন রাত্রি দ্বিপ্রহর,
ঠাকুর বাবা সদানন্দকে বলেছেন এমন সময় তিনি যখন মন্ত্র পাঠ করবেন
তখন চারুলতাকে চন্দ্র ও ভগবানের সংগম দেখতে হবে ঠাকুর মন্দিরের জানালার ফাঁক দিয়ে,
এমন করে একমাসে তিনবার তার স্ত্রী চারুলতাকে চন্দ্র ও ভগবানের সংগম দেখতে হবে।
আহা কি আনন্দ! ভাবতে ভাবতেই বিষণ্ণ সদানন্দ কখন ঘুমিয়ে গেলেন টের পেলেন না।
পরদিন ভোরবেলা চারুলতা যখন বাড়িতে এসে দরজার কড়া নাড়ল
সদানন্দ দরজা খুলে স্ত্রীকে ঘরে ঢুকিয়ে জিজ্ঞেস করল
'এই তুমি চন্দ্র এ ভগবানের সংগম দেখেছ?'
'হুম দেখেছি', স্বগোক্তির মত করে বলে উঠলো চারুলতা,
সেই যে ঠাকুর বাবা লেবু শরবতের পানি দিল তার পর থেকেই এখনো তার মাথা ভন ভন করছে।
তারও দশ মাস পরে সদানন্দ যখন তার স্ত্রী চারুলতা ও শিশু পুত্র গঙ্গারামকে নিয়ে
ঠাকুর বাবার কাছে দেখা করতে গেল
তখন ঠাকুর বলরাম তার শিষ্য হারাধনকে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন
কোন ড্রয়ারে চেতনা নাশক ও কোন ড্রয়ারে চেতনা উত্তেজক বটিকা রাখতে হবে।
'এত এত বটিকা! বাবা কি ঔষধের দোকান খুলবেন নাকি?'
সদানন্দের প্রশ্ন শুনে ও তাকে হঠাৎ দেখে চমকে উঠলেন ঠাকুর বলরাম;
সম্বিৎ ফিরে পেতেই বলে উঠলেন
'নহে বৎস নহে, এসব ভগবান পাঠিয়েছেন, আমি কেবলি রক্ষক মাত্র।'
২০শে মার্চ ২০১৭
যুক্তরাজ্য।
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ৯:৫২
অতঃপর হৃদয় বলেছেন: ভাল।