নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আমার ছায়া। আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন নিয়ে বাঁচি, হাতের মধ্যে আকাশ; তবু ছুঁতে পারিনা।

মোহাম্মদ বাসার

আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী। ফিচার এডিটর- বাংলাপোস্ট, যুক্তরাজ্য।

মোহাম্মদ বাসার › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প

২১ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ৯:৪৪

বন্ধুরা আজ ৩ পর্বের ধারাবাহিক রাজনৈতিক গল্প আয়নার প্রতিবিম্বে ইবলিশ-এর প্রথম পর্ব, ৩ সপ্তাহে এই গল্পটি শেষ করবো সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

আয়নার প্রতিবিম্বে ইবলিশ

এক

আলিফ মিয়াঁর মন খারাপ। তেমন কাউকেই খুঁজে পাওয়া যচ্ছেনা। অথচ তেমন কাউকে না পেলে এবারের উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হওয়াতো দূরের কথা, ভোটে দাঁড়াবার টিকেটই পাওয়া যাবেনা।

আলিফ মিয়াঁ শ্লেষাত্মক হাসিটা ঠোঁটের কোণে ঝুলিয়ে আকাশের দিকে তাকালেন। রৌদ্রের এরকম কাঁকফাটা ভাব সে এর আগে কখনো অনুভব করেনি। রৌদ্রের তাপে দর দর করে ঘামছেন আলিফ মিয়াঁ অথচ তার রঙিন বাদুর ছাতাটা হাতের মধ্যেই পরিপাটিভাবে ভাঁজ করে রাখা। রৌদ্রের তাপ সহ্য করতে না পেরে আলিফ মিয়াঁ একটু দূরে বন উন্নয়ন কতৃপক্ষের লাগানো রাস্তার পাশে মেহগনি গাছের ছায়ার নীচে বসলেন আর তখনি তার হাতে যে মোহনীয় বাদুর ছাতাটা আছে তাও খেয়াল করলেন। আহা ছাতা! এইতো সেদিন জার্মানী থেকে মেয়ে পাঠিয়েছে, তার মেয়ে আম্বিয়ার কথা মনে পড়তেই একরাশ কষ্টের একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসল।

বেশী দিন আগের কথা নয়, মাত্র বছর পনের আগের কথা। গঞ্জের হাটে বটগাছের নীচে বসে পান-সুপারি বিক্রি করত আলিফ মিয়াঁ। অভাবের সংসারে চারটি মুখ তাকিয়ে থাকত তার সপ্তাহের দুই হাটের ইনকামের দিকে। এই টানাটানির মধ্যেও আলিফ মিয়াঁর মনে শান্তি ছিল। সুস্বাদু মিষ্টি পান বিক্রির সুনাম ছিল আলিফ মিয়াঁর সারা গঞ্জ ব্যাপী। এই পান বিক্রি করতে করতেই তার সাথে জানাশোনা হয়ে ওঠে মন্নাস মিয়াঁর। দুই তিনবার মেম্বরির ইলেকশান করার অভিজ্ঞতাও ছিল মন্নাসের, কিন্তু কোন বারই নির্বাচিত হতে পারেনি, নির্বাচন করতে যেয়েই দুই চার গ্রামের দুষ্ট লোক থেকে শুরু করে ভালমন্দ সবার সাথেই একটা সম্পর্ক তৈরী হয় মন্নাসের। রাতারাতি টাকার কুমির বনে যাওয়ার ব্যাপারে মন্নাসের এই পরিচয় অনেকটা কাজে লেগেছে বলে অনেকেই মনে করে। ঝির ঝির করে বৃষ্টি পড়ার সেই সন্ধ্যেটা আলিফ মিয়াঁর এখনো মনে আছে। দুই মাড়ির পাটির দাঁতের ফাঁকে এক খিলি মিষ্টি গুঁজে দিয়ে মান্নাস তাকে যা বলেছিল এখনও তা তার চোখে ভাসে---
- কি মিয়াঁ আলিফ সারা জীবন কি পানই খাওয়াইবা নাকি পোলাও-কোরমাও কিছু জুটবো?
- কি যে কন মিয়াঁ ভাই! একবেলা দুইডা খাইতে দেওয়ারই মুরোদ নাই আবার কন পোলাও কোরমার কথা! তয় আইয়েন গরীবের বাইত্তে পোলাও কোরমা না হউক দুইডা ডাইল-ভাত খাইয়া যাইয়েন।
- আলিফ মিয়াঁ এইডা কি হুনাইলা? ইচ্ছে থাকলে সবই হয়। ক্যান হুনো নাই যার ইচ্ছা নাই তারে উপরওয়ালাও সাহায্য করেনা।
মন্নাস মিয়াঁর কথা শুনে আলিফ মিয়াঁ তার মুখের দিকে অনেকক্ষণ ভাবলেশহীনভাবে তাকিয়ে থাকেন। তার চোখের মধ্যে মুহুর্তেই খেলা করে যায় স্ত্রী জরিনা, দুই কন্যা আম্বিয়া, আমেনা ও পুত্র আব্বাসের সুন্দর, সুখী আর স্বচ্ছ্বল আনন্দময় মুখ। আলিফ মিয়াঁ মন্নাসের মুখের দিকে আবার চেয়ে থাকে তারপর বিষণ্ণভাবে বলে
- তাইলে কি করতে হইবো মিয়াঁ ভাই?
ঝির ঝির বৃষ্টি তখনও ঝরছে, মুখটা একটু খাকারি দিয়ে মন্নাস মিয়াঁ একদলা পানের পিকসহ থুথু ছাপড়া ঘরের বেড়ায় ছিটিয়ে বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেই তার কাল রঙের টেট্রনের ছাতাটা ফুটিয়ে হন হন কর বের হওয়ার সময় তাকে বলে
- তাইলে আইও, কাইলকেই আইও; সূর্য ওডার আগেই আইও।
(চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.