![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী। ফিচার এডিটর- বাংলাপোস্ট, যুক্তরাজ্য।
আলো জ্বালা এ শহর
মাটির মায়াতো ভুলেগেছি সেই কবেই!
হাতের কাস্তের দাগ মুছে দিতে যেদিন বাবাকে দেখেছি
বাড়িতে মাকে রান্না করতে বলেছে কিছু 'ভালোমন্দ'
শহুরে ভূড়িওয়ালা প্রকৌশলী সাহেব আসবে বলে,
সেদিন ঠিকই বুঝে গিয়েছিলাম
আস্তে আস্তে আমাদের পায়ের নীচ থেকে
সরে যাচ্ছে আমাদের অস্বিত্তের স্যাঁত স্যাঁতে কাদা মাটি;
যেদিন অনেকগুলো পাঁচশো টাকার বান্ডেল মাকে দেখিয়ে বাবা সিন্দুকে পুরেছিল
সেদিন মায়ের মুখেও ক্যামন যেন একটা চকচকে হাসি দেখেছিলাম।
অবলিলায় আমাদের পুকুরের মাছ, গাছের কাঁঠাল, ক্ষেতের সবজি
কতকি দেখেছি সুশোভন ব্যাগে ভর্তী করে পাঠানো হয়েছে
প্রকৌশলী ঘুষখোর নকরদের কাছে।
আমরা আর আমাদের জমিতে লাঙ্গল চালাইনি,
গোয়ালে যেখানে সারি সারি গরু বাধা থাকত
সেখানে নিপাট ক্ষুতহীন সুরভিত গোলাপের বাগান করেছিল
আমাদের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা।
শহর থেকে সরকারের নকর এসে মাঝে বলত 'বাহ! বাহ!'
তখন আমাদের চোখগুলো কি সীমাহীন কৃতজ্ঞতায় জ্বল জ্বল করে উঠতো!
আমাদের যে ক্ষেতগুলো মৌসুমী ফসলে সবুজ হয়ে থাকত
কিংবা পেকে ওঠার আগে কখনোবা হলুদ বা সোনালী
সেখানে কাস্তে বা নাঙ্গলের স্পর্শ না পাওয়ায়
জন্মানো লতাগুল্ম দেখে যখন সন্মানীত নকররা বলতেন
'ওখানে ব্যাডমিন্টনের কোর্ট হলে মন্দ হয়না মাদবর সাহেব';
এভাবেই আমরা কখনো আমাদের ইচ্ছেয় বা অনিচ্ছায় হারিয়েছি
ফসলের মাঠ, কখনো বা বসত বাড়ি।
আজ আমরা কত সহজ স্বাচ্ছন্দ্যে বেঁচে আছি!
সাপ্লাইর পানিতে গোসল করি,
বাজার থেকে বিদেশী বরফ মেশানো টাটকা মাছ কিনে খাই!
শহুরে নকরদের মত প্যান্টের মধ্যে জামা গুঁজে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাই।
এই যে ড্রেনটা বা ছোট্ট খালটা উঠিয়ে দিয়ে বিল্ডিংয়ের দৈর্ঘ্য পাঁচ ফিট বাড়ানো যায়
এই পরামর্শে প্রধান প্রকৌশলীর পিঠ চাপড়ে দেই।
এই শহর কত সহজেই এখন 'কুয়াকাটা' বা 'পতেঙ্গা' হয়ে ওঠে,
মাইলের পর মাইল আমরা হেঁটে যাই গ্রামের 'সাহারা' দিয়ে।
আমরা বিস্ময়করভাবে খুব শহুরে এখন।
হে প্রিয় পিতা, প্রপিতামহ, জানা অজানা পূর্বসূরীরা
তোমাদের জন্য কি নিদারুণ করুণা হয় আমাদের!
নিয়নের আলো জ্বালা এ শহর
তোমরা খুব একটা কখনোই দেখনি।
১৫ই অগাস্ট ২০১৭
নরউইচ, যুক্তরাজ্য।
১৭ ই আগস্ট, ২০১৭ ভোর ৪:৪১
মোহাম্মদ বাসার বলেছেন: ধন্যবাদ ভৃগু ভাই। এখন হয়ত সময় এসে গেছে আবার গ্রামীন জীবনে ফিরে যাওয়ার। মানুষ ফিল করে শহুরে পোকা মাকড় আর ভাঙা ইটের মধ্যে জীবন নেই।
২| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৮:১১
চাঁদগাজী বলেছেন:
সময়ের সাথে বদলানোর কথা ছিল, লাংগলের যায়গায় ট্রাক্টর আসার কথা ছিলো; কিন্তু বসুন্ধরা নগরী, কিংবা আফতাব নগর হওয়ার কথা ছিলো না।
১৭ ই আগস্ট, ২০১৭ ভোর ৪:৫০
মোহাম্মদ বাসার বলেছেন: হয়ত। আমি কৃষকদের আর বাপ দাদার ঐতিহ্য রক্ষার জন্য ফসল ফলাতে বলিনা। আপনি হয়ত জানেন একজন শ্রমিকের মজুরী দৈনিক এখন ৪০০টাকার উপরে। আরও আছে সার ও কীটনাশকের খরচ। ইরি ধান হলে সেচের খরচ, এত কিছু দিয়ে এক মন ধানের পিছনে কৃষকের খরচ হয় ৮০০টাকার উপরে। অথচ অভাবের কারণে তাঁকে বিক্রি করে দিতে হয় ধানের মৌসুমেই। মৌসুমে গত কয়েক বছরে এক মন ধানের মূল্য ৫০০/৫৫০টাকা। পাগলা কুকুরে না কামড়ালে কৃষকের ৬ মাস ৮০০ টাকা বিনিয়োগ করে ৩০০/৩০০টাকা লোকসান দেয়ার কথা না। কৃষি ব্যবস্থায় সরকারী ভর্তুকীর ব্যবস্থা না করতে পারলে এ খাতকে বাঁচানো সম্ভব না। ধন্যবাদ।
৩| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৯
অর্ক বলেছেন: অত্যন্ত হৃদয়স্পর্শী! ভালো লাগলো অনেক ভ্রাতা। এই মাটিই কিন্তু কখনও কখনও প্রতিশোধ নেয়, আর তা ভয়াবহ। নিঃসন্দেহে চমৎকার একটি পরিপূরয়ে কবিতা! শুভেচ্ছা।
১৭ ই আগস্ট, ২০১৭ ভোর ৪:৫৯
মোহাম্মদ বাসার বলেছেন: ধন্যবাদ অর্ক ভাই। এই কবিতার পটভূমি আমার জীবন থেকে নেয়া। একান্নবর্তী কৃষক পরিবারে আমার জন্ম। আমাদের সেই গোলাভরা ধান আর পুকুর ভরা মাছ এখন কেবলি স্মৃতি। প্রায় ১৫/২০ বছর হলো আমাদের আমাদের অনেক জমি অনাবাদী পড়ে আছে। এভাবেই কৃষি নির্ভর একটা জাতি নামকাওয়াস্তে এখন হাওয়া নির্ভর হয়ে বেঁচে আছে।
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৮:০৯
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: শেকড় ছেড়ার কথকতা উঠ েএসছে দারুন সাবলীলতায়...
আগাছা গুল্ম হয়ে বেঁচে থাকা ‘শহুরে’ জীবনে সেই সোঁদা মাটির ঘ্রান্ও নেই প্রাণও নেই
++++