![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী। ফিচার এডিটর- বাংলাপোস্ট, যুক্তরাজ্য।
বন্ধুরা অনেকদিন পর বের হলো রম্য চরিত্র চিপা সেলিমের ষষ্ট পর্ব। ভাল থাকুন।
শুভ সকাল।
চিপা সেলিম
পর্বঃ৬
দিগম্বর চিপার উচ্চ শিক্ষার্থে বিদেশ গমনঃ
♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦
চিপার স্ত্রী চয়মন বাহার আমার বান্ধবী ছিল। চয়মন বাহার খুব লাজুক প্রকৃতির না হলেও কেন যেন সে আমাকে তার বিয়ের কথা এড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমি চয়মন বাহারের নিকট এই জন্য কৃতজ্ঞ যে আমি দেশে বেড়াতে গিয়েছি শুনে চয়মন বাহার আমার সাথে তার স্বামী চিপাকে নিয়ে দেখা করতে এসছিল।
অবশ্য চয়মন বাহার যখন আমার সাথে দেখা করতে আসে আমি তাকে অবিবাহিতাই ভেবেছিলাম। আমার বন্ধু ডাঃ গুলজার হোসেনের চেম্বারে চয়মন বাহার যখন আসে তখন বেলা দ্বিপ্রহর। বাংলাদেশের উত্তরের জেলাগুলোতে তাপমাত্রা বেশী হলেও অক্টোবরের তখনকার আবহাওয়াটা অতটা রুক্ষ ছিল না। চয়মন বাহারকে বেশ সুন্দরী আর সপ্রতিভই লাগছিল। সাথে নিয়ে আসা কালো কুচকুচে আগন্তুককে পরিচয় করিয়ে দিল দূর সম্পর্কের খালাত ভাই হিসেবে। পরিধানের পোশাকে স্বচ্ছলতার অভাব ও ত্বকে মুখে পুষ্টিহীনতার কারণে চয়মন বাহারের সাথে আসা আগন্তুককে আমার নিকট ধনীর বাড়িতে ফাইফরমাশ খাটা গরীব আত্মীয়ই মনে হিয়েছিল।
অনেক দিন পরে চয়মনের সাথে আমার দেখা হতেই আমাদের দুজনের চোখের মধ্যেই কি যেন খেলে গেল! বলতে দ্বিধা নেই আমরা দু' জনই দুজনের চোখের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়েছিলাম। চয়মন কিছুক্ষণের মধ্যেই সম্বিৎ ফিরে পেয়ে সাথে আসা আগন্তুককে একটু আদেশের সুরেই বলল 'চিপা তুমি একটু পাশের রুমে বস'। সেই দিন আমি বুঝেছিলাম চয়মন তার অপছন্দের মানুষের কাছে কতটুকু নির্দয় হতে পারে।
চিপা পাশের রুমে যেতেই চয়মন আমার হাত ধরে বলল 'এত দেরী করলে কেন?' আমি কিছুই বলতে পারিনি।শুধু ফ্যালফ্যাল করে অনেকক্ষণ ওর হাতে হাত রেখে বসেছিলাম। কিছুক্ষণ পর পরই চিপা আমাদের কাছে লোক পাঠিয়েছিল দেরী দেখে। চয়মন বাহার যখন চলে যায় আমি তার গন্তব্যের দিকে তাকিয়ে দেখছিলাম বাতাসে উড়ছে তার লম্বা কেশগুচ্ছ। বন্ধু গুলজারের কথায় যখন সম্বিৎ ফিরে পেলাম, তখন সে বলল 'ও হচ্ছে চিপা সেলিম, চয়মনের স্বামী।' আমি শুধু অস্ফুটে বলে উঠলাম 'মানুষও এত কদাকার হয়।'
অনেকদিন চয়মনের সাথে দেখা নেই, কথাও হয়না। বন্ধু গুলজার বলল তার নাকি মেয়ে হয়েছে। দেখতে অবিকল চিপার মত। আমি বললাম 'বাঘডাসার ঘরেতো আর হরিণ শ্বাবক হবেনা।' অনেকদিন পরে কি যেন ভেবে চয়মনকে ফোন করলাম। জিজ্ঞেস করলাম হানিমুনে কোথায় গেলে।' চয়মন ম্রিয়মাণ গলায় ফ্যাসফ্যাসে বলল 'তোমার সাথে কথা হয় এই মিথ্যে অভিযোগ এনে চিপা আমাকে কোথাও নিয়ে যায়না।' আমি বুঝলাম চিপা শুধু নামেই চিপা না, টাকা পয়সা খরচেও চিপা।
চিপা যেদিন মনোবোস স্কলারশীপ পেয়ে জাপান চলে যাবে সেদিন জাপানে আলু নাও পাওয়া যেতে পারে এরকম ভেবে ৫ কেজি মুন্সিগঞ্জের গোলআলু পট্টি বেঁধে চিপার মা তার সাথে দিয়ে দিয়েছিল। সাতগাঁয়ের আত্মীয়দের ডেকে টাটকিনি মাছের ঝোল আর একটি মুরগীও সবাইকে খাইয়েছিল। আলতা স্নো পাউডারের বড় শখ চয়মন বাহারের। যদি জাপান থেকে কিনে পাঠাতে হয় সেই আশংকায় চিপা এগার কৌটা তিব্বত স্নো আর ৬ শিশি আক্লিমা আলতা কিনে চয়মনের জন্য তার মায়ের কাছে রেখে গিয়েছিল।
চয়মন বাহার ও চিপা সেলিমের সুখের সংসার দেখে অনেকেই ঈর্ষা পরায়ণ হন। দুজনেই চাকুরে। সঞ্চয়ের ফ্যাঁকড়া তুলে চিপা পারলে ঘর থেকেই বের হননা। যদিও স্ত্রী অর্থাৎ চয়মন বাহারের কিছুটা খরচের বাতিক আছে। ঘরে বসে খরচ কমানোর তরিকা উদ্ভাবনকারী চিপার একদিন দেখাদিল ভয়ানক বিপত্তি। উত্তরের জেলাগুলোর প্রচন্ড গরমের সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য ওখানকার মানুষের জীবনধারাও ভিন্ন। চিপা যখন বাসায় খাওয়া দাওয়ার পরে দিবা নিদ্রা যায় তখন তিনি সাধারণত লুঙ্গি ও স্যান্ট্রো গেঞ্জি পড়ে ঘুমান। গরমের দিন। প্রচন্ড গতিতে ফ্যান ঘুরছে। চিপার লুঙ্গী ফ্যানের বাতাসে উড়ে এসে তার মুখ ঢেকে গেল। চয়মন বাহার স্বামীকে সোহাগ করতে যেয়ে লুঙ্গী খানা মাথার উপর থেকে খুলে খাটের নীচে রাখল। ঐদিকে ৩ বছরের মেয়ে শরীফা পাশের রুম থেকে কেঁদে উঠতেই চয়মন বাহার দৌঁড়িয়ে পাশের রুমে গেল। দুপুরে বৈচা মাছ বিক্রেতা আব্দুল মিয়া হাক দিতেই তড়িঘড়ি করে দরজা খুলে দিল চিপা। পরনে যে লুঙ্গী নেই তা তার খেয়ালেই ছিলনা। সেন্ট্রো গেঞ্জি গায়ে অর্ধ উলঙ্গ চিপাকে দেখে আব্দুল মিয়া একদৌঁডে চিৎকার করে ভয়ে পালিয়ে গেল। পাড়াপ্রতিবেশী এসে দেখে কিছু বৈচা মাছ উঠানে পরে আছে আর অর্ধ উলঙ্গ শরীরে চিপা সেলিম দরজার আঁড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। উচ্চ শিক্ষিত চিপাকে উলঙ্গ অবস্থায় এভাবে দেখে সকলেই বলতে লাগল 'নিশ্চয় অতিরিক্ত পড়ালেখা করতে যাইয়া চিপার মাথা নষ্ট হইয়া গ্যাছে।' শহরে যখন এই কথা মুহুর্তের মধ্যে ছড়িয়ে গেল তখন চিপার বিজ্ঞ শ্বশুর অভিজ্ঞের মত মতামত দিল 'এই অবস্থায় জামাই বাবাজীকে আর এই দেশে রাখা ঠিক হইবে না।'
চিপাকে তার শশুর বলল- 'বাবাজী দেখতো অনলাইনে কোন জব ঠবের বিজ্ঞাপন পাওনি! চিপা তখনি খুঁজে বের করল পশ্চিমা দেশে প্রফেসরদের কাজের জন্য লোক দরকার। যারা গবেষণার জন্য এটা সেটা নাড়াচড়া করবে আর প্রয়োজনে প্রফেসরের ডিকটেশন লিখে রাখবে। বেতনও খারাপ না। চিপার শ্বশুর সবাইকে একহাত দেখিয়ে নেয়ার মত করে বললেন, 'বাবাজী আমার বড়ই গুণধর। আরেকটা পিএইচডি আনতে যাইব।'
তার কয়েকদিন পরে চয়মন বাহারের ফেসবুকে দেখা গেল লাল রঙের ব্যানারে বড় হরফের স্ট্যাটাস- 'দ্বিতীয়বার উচ্চ শিক্ষার জন্য চিপা সেলিমের জার্মান মুল্লুকে যাত্রা।'
চিপা সেলিম বাথরুমে পানির ট্যাপ প্রচন্ড জোরে ছেড়ে অট্টহাসিতে প্রকম্পিত করে বলে উঠল 'ইচ্ছেয় হোক কিংবা অনিচ্ছায় হোক মাঝে মাঝে দিগম্বর হওয়াও খারাপ না।'
২৭ শে অক্টোবর ২০১৭
যুক্তরাজ্য।
২৭ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:১৪
মোহাম্মদ বাসার বলেছেন: ধন্যবাদ ভৃগু ভাই। রম্যের প্রশংসার জন্য কৃতজ্ঞতা।
ভাল থাকুন।
২| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:১০
কঙ্কাবতী রাজকন্যা বলেছেন: শেষ লাইন পড়ে মনে হলো চিপা সেলিম অসম্ভব বুদ্ধিমান একজন মানুষ।
২৭ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:১৫
মোহাম্মদ বাসার বলেছেন: চিপা আসলেই বুদ্ধিমান, যদিও গল্পের চিপা ও বাস্তবের চিপার মধ্যে পার্থক্য সামান্য।
ধন্যবাদ।
৩| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:১৫
দি রিফর্মার বলেছেন: এই রকম একজন মালদার শশুড় পাইলে দিগম্বর হওয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে।।।।
২৭ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:১৮
মোহাম্মদ বাসার বলেছেন: হুম, তবে চিপার শ্বশুর চিপার মতই কুঞ্জুস। তাইতো সে কন্যার বিরহজ্বালা বাড়বে জেনেও ফেলোশিপ নামক জেলিফিস ধরার জন্য পশ্চিমা মুল্লুকে পাঠিয়েছে টাকা কামানোর জন্য।
ধন্যবাদ।
৪| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৮
মরুচারী বেদুঈন বলেছেন: এখন কথা হইল গিয়ে আপনার সাথে কি চয়মন বাহারের পিরিতি এখনো কি আছে?
২৭ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:২০
মোহাম্মদ বাসার বলেছেন: আছে আবার নাইও বেদুঈন ভাই। প্রাক্তন প্রেমিকার সাথে সম্পর্ক হইল জোয়ার ভাটার মত। সুবিধা মত যায় আর আসে।
ধন্যবাদ।
৫| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:৫৬
সুমন কর বলেছেন: হাহাহাহ..........খারাপ লাগেনি।
২৭ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:২২
মোহাম্মদ বাসার বলেছেন: খারাপ না লাগলেই হল সুমন দা। তবে বাস্তবের চিপাকে আপনার মজাদার মনেই হবে, গ্রান্টেড।
৬| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:০৫
নীলপরি বলেছেন: দারুণ ।
২৭ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:২৩
মোহাম্মদ বাসার বলেছেন: ধন্যবাদ। ভাল লাগার জন্য কৃতজ্ঞতা।
৭| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:৫১
প্রামানিক বলেছেন: দারুণ!
২৭ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:২৪
মোহাম্মদ বাসার বলেছেন: ধন্যবাদ প্রামানিক দাদা। আপনার উৎসাহ প্রেরণাদায়ক।
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১১:৫৮
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: হা হা হা
সেইরাম রম্য
তাইতো মনে হচছে