নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মইন আহসান

মইন আহসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

"রাষ্ট্র মেরামত প্রস্তাব - ১ঃ দুর্নীতি নির্মূল"

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৪:১০

রাষ্ট্র মেরামত প্রস্তাব-২ “রাজনিতির দুর্বৃত্তায়ন রোধ”
রাষ্ট্র মেরামত প্রস্তাব-৩ "রাজা-প্রজা উপনিবেশিক আমলাতন্ত্রের আমূল সংস্কার”



ভুমিকা:

ঊপরের বাংলাদেশের মানচিত্রটি ভাল করে দেখু্ন। উত্তরে পৃথিবীর সর্ব উচ্চ হিমালয় পর্বতমালার নিচে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র গড় ৩০ ফুট উচ্চতার এক সমতল ভুমি, যার পুব আর পশ্চিমও পাহাড় ঘেরা। এই সমতল দিয়েই প্রায় সমগ্র পূর্ব ও মধ্য হিমালয় ও উত্তর ভারতের সব বরফ গলিত ও বৃষ্টির পানি নামে বঙ্গোপোসাগরে; আবার দক্ষিন থেকে আছে শুধু বঙ্গোপোসাগরের বাৎসরিক সাইক্লোন আর জ্বলোচ্ছাসের হমকিই নয়, আরো আছে পরিবেশ বিপর্যয়ের কারেনে প্রায় অবধারিত সমুদ্র উচ্চতা বৃদ্ধির বিশাল জীবন-মরন হুমকি। কিন্ত এখানেই শেষ নয়, আমাদের রয়েছে আরো বড় একটি জিবন-মরন ঝুকি - ভয়াবহ ভুমিকম্পের ঝুকি; বাংলাদেশের উত্তর সিমান্তে রয়েছে ভারতের ৩ কিঃ মিঃ উচ্চতার শিলং ম্যাসিফ আর এর সাথে, এর দক্ষিনে আমাদের সিমান্ত বরাবর রয়েছে ৩০০ কিঃ মিঃ বিস্ত্রিত ডাউকি ফল্ট বা ভুচ্যুত্যি; আর পূব সিমান্তে আর চট্টগ্রাম উপকুল জুড়ে রয়েছে বার্মা আর আরাকান মেগা থ্রাষ্ট (যাকিনা ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা ফল্ট পর্যন্ত বিস্তৃত)। পূব সিমান্তের উত্তর-দক্ষিন মুখি পাহাড়্গুলি অতিতের ভয়াবহ ভুমিকম্পের সৃষ্ট সাক্ষ্য। বিশেসজ্ঞদের মতে এই দুটি মেগা থ্রাষ্ট এবং ডাউকি ফল্টে যেকোন সময় বড় ধরেনের ভুমিকম্প হতে পারে, ইদানিগকার ঘন ঘন ছোট ছোট ভুমিকম্পগুলি সেই ইংগিতই দিচ্ছে। গোদের উপর বিষ ফোড়ার মত এর উপরে আছে আমাদের অতি জনসংখ্যা ও জনঘনত্ব, যা যেকোন প্রাক্রিতিক দুর্যোগে অতি ক্ষয়ক্ষতির কারন হবে। আমাদের ১৬/১৭ কোটি মানুষের অতি অল্পসংখ্যকেরই দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে - বাকিদের জন্য এই বিশাল প্রকৃতি বৈরিতার বিরুদ্ধে সমস্ত সম্পদ ও শক্তি নিয়ে সংগঠিত ভাবে যুদ্ধ করে বাচা ছাড়া কোন উপায় নেই।

অথচ আজকের বাংলাদেশে বিশাল প্রাকৃতিক চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় সংগঠিত হওয়ার পরিবর্তে চলছে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, রাজনিতিক আর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের দুর্নীতিতে সব রাষ্ট্রিয় সম্পদের অবাধ লুন্ঠন । তাদের এই সহজ অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোরতম শাস্তির ব্যাবস্থা না করা গেলে এই দুর্নীতির সুনামি বন্ধ করা যাবে না। দেশ আগুনে পুড়ে, ভবন ধস্বে, বন্যায় ভেসে, ভুমিকম্পে, সড়কের অরাজকতায়, নিরাপত্তা হিনতায়, অধিকার হিনতায়, সঠিক মানের শিক্ষার অভাবে, অরাজকতায়, আর ঘুষ দিতে দিতে শেষ হয়ে যাবে। প্রকৃতির সংগঠিত মোকাবেলাতো বহু দুরের কথা

আমরা শুধু সরকারের পতন ও বদল চেয়েই অভস্ত,এক দলের পরিবর্তে আরেক দল, এক নেতা/নেত্রীর বদলে আরেক, ব্যাস ওই পর্যন্তই। কিন্ত আমরা জানিনা সত্যিকারের উন্নত সভ্য সমাজ ও দেশ গড়তে কোন মৌলিক পরিবর্তন আর রাষ্ট্র ব্যাবস্থার পরিবর্তন চাই। এর ফলে স্বার্থান্বেষী রাজনিতিকরা তাদের রাজনৈতিক পারস্পপরিক অভিযোগ আর গালাগালাগালিকেই আমাদের এজেন্ডা বানিয়েছে, আমাদের দাবি বানিয়েছে, আমাদের রাজনৈতিক আলোচনার ইস্যু বানিয়েছে। তাই মৌলিক জনস্বার্থের ইস্যুগুলো নির্বাসিত হয়েছে রাজনীতি থেকে। মৌলিক জনস্বার্থের ইস্যুগুলোকে রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসাটাই এখন সবচেয়ে জরুরি।

এই প্রস্তাব মাত্র কয়েক লাখের বিরুদ্ধে ১৮০ মিলিয়নের বাঁচার প্রস্তাব:

দুর্নীতি নির্মূল প্রস্তাব

১) এই দুর্নিতির সুনামি বন্দ্ধে আইন করে সকল স্তরের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের নিয়োগের পূর্বে, অতঃপর প্রতি অর্থ বছর শুরুর দুই সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা সহ তাদের এবং তাদের নিকট আত্মীয়দের সম্পুর্ন সম্পদ বিবরণী ও সেগুলোর বৈধ উৎস প্রমানসহ দাখিল করতে হবে। আইনে ঐ সম্পদের বৈধ উৎস প্রমানের দায়্ও তাদের উপরেই বর্তানের ব্যাবস্থা করতে হবে।

২)সকল স্তরের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, সুপ্রিম কোর্ট ও তার অধস্তন সকল আদালতসহ, সকল বাহিনিসহ, সকল সরকারি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তর পরিদপ্তর, সেক্টর কর্পোরেশন ও অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধানগন, তার নিজেস্ব এবং অধিনস্ত সব কর্মকর্তা কর্মচারির সম্পদ বিবরণী দাখিলের এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে পাবলিশ ও সংরক্ষন করতে বাধ্য থাকবেন। এগুলোর কপিও এক্ই সাথে অডিট অফিস, আয়কর বিভাগ, ও দুদকে সাবমিট করতে বাধ্য থাকবেন।

৩)প্রতি জেলায়, জেলা জজ পদমর্যাদার 'দ্রুত দুর্নীতি নির্মূল আদালত' প্রতিষ্ঠা করে, দুর্নীতিগ্রস্থ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের দ্রুত বিচার ও শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এই আদালতগুলোর মূল বিচার্য্য বিষয় হবে - অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তার ও তার নিকট আত্মীয়দের সম্পদের বৈধ উৎস প্রমাণ করতে পেরেছেন, কি পারেন নাই; এবং দাখিল করা সম্পদ বিবরণীর বাইরে তাদের কোন সম্পদ আছে কিনা। সব সম্পদের বৈধ উৎস প্রমানে ব্যারথ হইলেই তাহারা দুর্নিতির দায়ে দোষি সাব্যস্ত হইবেন। এই আদালতগুলোতে দুর্নীতি নির্মূলে চার ভাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের হাজির করা হবে।

৩-ক) রান্ড্যম বা দৈব চয়ন ভিত্তিতে: দুদক, অডিট অফিস ও আয়কর বিভাগ প্রতিবছর র‍্যান্ডমভাবে সকল সরকারি দপ্তর থেকে আনুপাতিক ভাবে নির্দিষ্ট সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারিকে এই আদালতগুলোয় হাজির করবে তাদের সম্পদের উৎস প্রমানে। এই ব্যাবস্থ দুর্নীতি প্রতিষোধক (deterrent) হিসেবে কাজ করবে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর।

৩-খ) নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে: দুদকের স্বপ্রণোদিত অনুসন্ধান, অভিযানে ও হুইসেল ব্লোয়ারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে; এবং যেকোন নাগরিকের দুদকের নিকট সুনির্দিষ্ট অভিযোগে ও তৎপরবর্তি অনুসন্ধানের ভিত্তিতে।

৩-গ) সন্দেহের ভিত্তিতে: দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণী ও তার উৎস ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করিয়া সন্দেহ হ্ইলে দুদক, অডিট অফিস ও আয়কর বিভাগ যেকোন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে এই আদালতগুলোয় হাজির করবে তাদের সম্পদের উৎস প্রমানে।

৩-ঘ) যেকোন নাগরিকের আদালতে সরাসরি অভিযোগের ভিত্তিতেঃ তবে, কাউকে অহেতুক হয়রানি ও অহেতুক আদালতের সময় অপচয় রোধে, অভিযোগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রমানিত হ্ইলে, অভিযোগকারীর উপরও সমান কঠোর সাজা প্রযোজ্য হইবে।

৩-ঙ) কোন কর্মকর্তা কর্মচারী দুর্নীতির দায়ে দোষী সাবস্ত্য হইলে তাহার ঊর্ধ্বতন সকলকেই তদন্তের আওতায় আনিয়া ঐ দুর্নীতিতে তাহাদের দ্বায় দ্বায়িত্ব অদক্ষতা ও দুর্নীতি সম্পৃক্ততা অনুসন্ধান করা হইবে এবং দোষী সাব্যস্ত হইলে পদানুযায়ি কঠোরতর শাস্তি প্রযোজ্য হইবে।

৪)সম্পদের বৈধ উৎস প্রমানে ব্যার্থ হ্ইলে, এবং দাখিল করা সম্পদ বিবরণীর বাইরে কোন সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেলেই তাহারা দুর্নিতির দায়ে দোষি সাব্যস্ত হইবেন এবংতাৎক্ষণিক ভাবে নিন্মোক্ত সকল শাস্তি প্রযোজ্য হ্ইবে:

৪-ক) পারমানেন্ট চাকুরিচ্যুতি - সকল অর্জিত পেনশন ও অন্যান্য সুবিধা বাতিল সহ। দুর্নীতির পরিমাণ যাহাই হোক না কেন। জিরো টলারেন্স।

৪-খ) সকল অবৈধ এবং বৈধ সম্পত্তি সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হবে।দুর্নীতির পরিমাণ যাহাই হোক না কেন। জিরো টলারেন্স।

৪-গ) দুর্নীতির মাত্রাভেদে এবং পদমরযাদাক্রমে সর্বনিম্ন ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড - কোন প্যারোল প্রযোজ্য হইবে না।


৫)সকল নিবন্ধিত রাজনিতিক দলের উপজেলা ও তার উপরস্থ সকল দলিয় পদধারিদের উপরও এই একই ব্যবস্থা প্রযোজ্য হইবে।

৬) অতি বড় ব্যাবসায়িদের বেলায়ও এই ব্যাবস্থা প্রয়োগ করা যাইতে পারে।
_________

মইন আহসান

____________________________________________________________
পটভূমি:
অভাবি মানুষ অন্যায় কিছু করলে, তা করে পেটের দায়ে। সমাজ রাষ্ট্র তাদের কিছুই দেয় না, তাই তাদের সমাজ বা রাষ্ট্রের প্রতি কোন দায়বদ্ধতা না থাকলে তাদের খুব একটা দোষ দেয়া যায় না। কিন্তু যারা সমাজ আর রাষ্ট্রের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি পেয়ে দুর্নীতি করে, আর সেই সমাজ আর রাষ্ট্রকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়, তারা তা করে লোভে অন্ধ হয়ে। তারা কোন রকম ক্ষমা পাওয়ার অযোগ্য।

অন্য সব জিবের মত, self survival, বা নিজেকে বাঁচানো ও নিজের ভাল সবার আগে দেখার প্রবনতা আমাদের জ্বিনের মধ্যেই আছে। কিন্তু যেদিন থেকে মানুষ বুঝতে পেরেছে যে তার দির্ঘমেয়াদি সারভাইবাল, নিরাপত্তা আর স্বার্থ সবচেয়ে ভালো ভাবে নিশ্চিত হয় সমাজবদ্ধ হয়ে সামাজিক কিছু নিয়ম নিতি মেনে সমষ্টিগত ভাবে চললে; সেদিনই, পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্ন সময়ে, মানব সভ্যতার পত্তন হয়েছে।

তারপর থেকেই এই সমাজবদ্ধ মানব সভ্যতা উত্থান পতন ও নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভিতর দিয়ে চলছে।

আমাদের বান্গালি জাতির স্বশাসনের ইতিহাস ও অভিগ্গতা অত্যন্ত কম। আমরা আমাদের সামাজিক রিতি নিতি পেয়েছি ক্রমান্বয়ে হিন্দু, বৌদ্ধ আর ইসলাম ধর্ম থেকে। আর আমাদের রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যাবস্থা আর আইন পেয়েছি হুবহু বৃটিশ উপনিবেশিক শাসন ব্যাবস্থা থেকে।

১৯৭১ এর স্বাধীনতায়, এই ঐতিহ্যগত কিন্তু ভন্গুর সামাজ ব্যবস্থা আর বৃটিশ উপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থা নিয়েই আমাদের যাত্রা শুরু।

স্বশাসনে অনভিজ্ঞ বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় হঠাৎ করেই অধিষ্ঠিত হলেন অনভিজ্ঞ মফস্বলের উকিল, মোক্তার, শিক্ষকসহ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ। আর তাদের সাথে থাকলো হঠাৎ এসিস্ট্যান্ট আর ডেপুটি সেক্রেটারি পদ থেকে সরাসরি সেক্রেটারি পদে প্রমোশন পাওয়া বৃটিশ উপনিবেশিক ধারার রাজা-প্রজা মানসিকতার উন্নাসিক আমলারা।

নানা দন্ধেপূর্ন এক অদক্ষ অনভিজ্ঞ, জাতিয় উদ্দেশ্যহিন এক শাসকগোষ্ঠী। একদিকে দির্ঘদিনের সংস্কারহিন সমাজ ব্যাবস্থা, আরেকদিকে দুর্বলতম বৃটিশ উপনিবেশিক রাষ্ট্রযন্ত্র; একদিকে আপেক্ষিক ভাবে স্বল্প শিক্ষিত মন্ত্রিসভা, যারা উপনিবেশিক আমলাতন্ত্রের সামনে, তাদের তথাকথিত মেধার সামনে হিনমন্যতায় ভুগতেন (এখনো ভোগেন, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা পরিষদ বিশ্লেষণেই বুঝবেন). আর পশ্চিমা পুঁজিবাদী ব্যবস্থার এক অতি নিচ সংস্করণের সাথে আমাদের ভন্গুর সনাতন সমাজ ব্যবস্থার দন্দ্ধের।

এই সব মৌলিক দন্দ্ধেই আমাদের দুর্নীতির পথে যাত্রা শুরু, এবং আজ তা দুর্নীতির সুনামিতে পরিনত হয়ে রাষ্ট্র সমাজ, আর সব নাগরিককে গ্রাস করতে উদ্যত।

দুর্নীতির মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে পর্যাপ্ত বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে এখনো আসে নাই | বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ দুর্নীতিকে স্বাভাবিক হিসাবে মেনে নিয়েছে তাই এর বিরুদ্ধে কোনো শক্ত প্রতিরোধ বা প্রতিবাদ তেমন দেখা যায় না, যতটুকু দেখা যায় এক সরকারকে হটিয়ে আরেক সরকারকে সরানোর ক্ষেত্রে |

আমার ধারনা এর জন্য মুলত দ্বায়ি আমাদের ছোটলোক-বড়লোক আদি সমাজব্যবস্থা ও দীর্ঘ উপনিবিশেক শাসন ব্যবস্থা। একদিকে আমাদের আদি গ্রামিন সমাজ ব্যবস্থার সর্বব্যাপী বড় কোন সংস্কার হয়নি বহুদিন' আর অন্যদিকে বৃটিশ উপনিবেশিক শাসন ব্যাবস্থা ও কাঠামো পাকিস্তান পেড়িয়ে ৪৮ বছরের বাংলাদেশে এখনো স্বদরপে বিদ্যমান এর নিকৃষ্টতম মডেলে। এই দুইয়ের সংমিশ্রনে সাধারন মানুষ এখনো সরকারকে রাজা, সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারিকে রাজ প্রতিনিধি হিসাবেই দেখে, আর তাদের দুরনিতিকে অনেকটা ওদের অধিকার হিসাবে মেনে নিতেই অভ্যস্ত। এমনকি অনেক শিক্ষিত মধ্যবিত্তও এই ধরনের মানসিকতা পোষন করে।

তবে আশার কথা এই যে, বিশ্বায়িত যোগাযোগের কারনে এই মানসিকতার পরিবর্তন ত্বরান্বিত হচ্ছে। আগে সধারনত মানুষ দুরনিতির কারনে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিগতভাবে শুধু আর্থিক লোকসানের শিকার হতো। কিন্ত, সাম্প্রতিক বছরের বড় বড় দুর্নীতি ও দুর্নীতিজাত দুরঘটনায় জনসাধারনের সামষ্টিক ভাবে আর্থিক ও জীবন নাশের ভিক্টিম হচ্ছে (যেমন বিভিন্ন বড় বড় ব্যাংক জালিয়াতি, শেয়ার বাজার কেলেংকারি, চকবাজার ও এফ আর টাওয়ারের আগুন) হঠাত করেই দুর্নীতির মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে [img|https://s3.amazonaজনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা অনেক বেশি বেগবান করেছে। বিশেষ করে, কোটি কোটি মানুষ যখন লাইভ দেখেছে এফ আর টাওয়ারের আগুন থেকে লাফিয়ে পড়ে মানুষ মরছ্‌, তখন তারা অনেকেই নিজের এরকম ভয়াবহ মৃত্যুই দেখেছে; তাদের মধ্যে দুর্নীতিবাজ ও তাদের পরিবার পরিজনও আছে নিশ্চয়।

তবে আমি আশাবাদি, ছোট ছোট স্কুলের ছেলেমেয়েরা যখন আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে "রাষ্ট্র মেরামত" ছাড়া গতি নেই; আমি আশাবাদী, ১৮০ মিলিয়ন থেকে "রাষ্ট্র মেরামত" করার মত যোগ্য মানুষ নতুন জেনারেশন থেকে বেরিয়ে আসবেই।

আমার ধারনা ধর্মের কল বাতাসে নড়তে বেশি দেরি হবে না।

রাষ্ট্র মেরামত প্রস্তাব-২ “রাজনিতির দুর্বৃত্তায়ন রোধ”
রাষ্ট্র মেরামত প্রস্তাব-৩ "রাজা-প্রজা উপনিবেশিক আমলাতন্ত্রের আমূল সংস্কার”

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৪:৪৭

চাঁদগাজী বলেছেন:


আপনি বলছেন, " জনপ্রতিনিধিরা দুর্নীতি করে; এই দুর্নীতির সুনামী বন্ধ 'আইন করে' ব্লা ব্লা ব্লা"।

আইন কে তৈরি করে?
ফাঁসকরা প্রশ্নে পাশ করে, এসব বিষয়ে লেখা সম্ভব নয়।

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ২:৪৮

মইন আহসান বলেছেন: সত্যিকারের উন্নত দেশে দূর্নীতি রোধের ইতিহাস পড়ে দেখুন, জনসমর্থনে সব্ই সম্ভব। আজকের যেই ব্রিটিশ পুলিশ সারা দুনিয়ার আদর্শ, একদিন এই পুলিশ বাহিনীর প্রধান, তখনকার দুর্নীতি গ্রস্থ বাহিনির ৯০% ভাইকে বরখাস্ত করে আজকের বৃটিশ পুলিশের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন।

কিছু করা যাবেনা, দেশ দুর্নীতির সুনামিতে ডুবে শেষ হয়ে যাক, কিছুই করার দরকার নেই, নিজের ও গোষ্ঠী স্বার্থ দেখা ছাড়া, এইসব মন্তব্যই প্রমান করে কে প্রশ্ন ফাঁস আর দূর্নীতির প্রোডাক্ট।

ছোট ছোট স্কুলের ছেলেমেয়েরা যখন আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে "রাষ্ট্র মেরামত" ছাড়া গতি নেই; আমি আশাবাদী, ১৮০ মিলিয়ন থেকে "রাষ্ট্র মেরামত" করার মত যোগ্য মানুষ নতুন জেনারেশন থেকে বেরিয়ে আসবেই।

২| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৫:০৭

ঢাবিয়ান বলেছেন: রাস্ট্র মেরামতে প্রধান বাধা অবৈধ স্বৈরাচারী সরকার। এই সরকারের পতন না হলে আপনার কোন প্রস্তাবই কেউই কানে তুলবে না।

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ২:৫০

মইন আহসান বলেছেন: একদম ঠিক বলেছেন, সেই আশাতেই এই প্রস্তাব।
আমরা সেই এরশাদ আমলে থেকেই শুধু সরকারের পতন চেয়েই অভস্ত,এক দলের পরিবর্তে আরেক দল, এক নেতা/নেত্রীর বদলে আরেক, ব্যাস ও পর্যন্ত। কিন্ত আমরা জানিনা সত্যিকারের উন্নত সভ্যতা সমাজ ও দেশ গড়তে কোন মৌলিক পরিবর্তন আর রাষ্ট্র ব্যাবস্থার পরিবর্তন চাই।
এর ফলে স্বার্থান্বেষী রাজনিতিকরা তাদের রাজনৈতিক গালাগালাগালিকেই আমাদের এজেন্ডা বানিয়েছে, আমাদের দাবি বানিয়েছে, আমাদের রাজনৈতিক আলোচনার ইস্যু বানিয়েছে।

মৌলিক জনস্বার্থের ইস্যুগুলো নির্বাসিত হয়েছে রাজনীতি থেকে। মৌলিক জনস্বার্থের ইস্যুগুলোকে রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসাটাই এখন সবচেয়ে জরুরি।

৩| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:২৩

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: আপনার মডেলের ১ম দাবি হলো, কিছু দেশপ্রেমিক মানুষজন যারা কাজটা করবে।
আর আমরা সেই দেশপ্রেমিকদের তীব্র সংকটে ভুগছি!!

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ২:৫১

মইন আহসান বলেছেন: ব্লগার_প্রান্ত, আপনি ঠিক বলেছেন। তবে আশা হারাবেন না। জাতীয় জিবন মরনের এই ইস্যুতে ১৮০ মিলিয়নের দেশ থেকে দেশপ্রেমিকরা ঠিকই উঠে আসবেন এ কয়েক লাখ দুর্বৃত্যদের ঠিক করতে।

৪| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৯:১৭

রাজীব নুর বলেছেন: ১০০ দূর্নীতিবাজকে ধরে আচ্ছা মতো ডলা দিলে দূর্নীতি কমে যাবে। এমন তাদের সমস্ত সম্পত্তি নিয়ে নিতে হবে।

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৩:০২

মইন আহসান বলেছেন: রাজীব নুর, একদম ঠিক বলেছেন, ১০০ জনও লাগবে না, বড় বড় ১০ জন দুর্নীতিবাজকে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা
করতে পারলেি ৯০% দুর্নীতি বন্ধ হয়ে যাবে, ব্যাবস্থা স্থায়ি ভাবে প্রস্তাবের আদলে কাজ শুরু করলে ৯৫-৯৭% দুর্নীতি বন্ধ হয়ে যাবে। বাকি ৩-৫% হার্ডকোর ক্রিমিনালরা হয়তো তাদের দুর্নীতি চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে, তবে তা কঠিন হবে। উন্নত দেশেও এরকম ৩-৫% দুর্নীতি আছে, এটাই মানব সমাজের চরিত্র।

৫| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৯ ভোর ৬:৪৫

স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলেছেন: বাংলাদেশের জনগণের সকল দুর্ভোগ ও অশান্তির মূল কারণই হচ্ছে অবাধ দুর্নীতি | দেশের জনসাধারণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এতটাই দুর্নীতিতে নিমজ্জিত যে এর মধ্যে হাবুডুবু খেতে থাকা মানুষ বুঝে উঠতে পারে না কি কারণে তাদের এতো দুর্গতি পোহাতে হচ্ছে |

আইন কানুন থাকলেই দুর্নীতি দূর হয় না | একে যথোপযুক্ত প্রয়োগ আবশ্যিক | আর তার জন্য দুর্নীতির মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে পর্যাপ্ত সচেতনতা থাকতে হবে - যা বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে এখনো আসে নাই | বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ দুর্নীতিকে স্বাভাবিক হিসাবে মেনে নিয়েছে তাই এর বিরুদ্ধে কোনো শক্ত প্রতিরোধ বা প্রতিবাদ তেমন দেখা যায় না, যতটুকু দেখা যায় এক সরকারকে হটিয়ে আরেক সরকারকে সরানোর ক্ষেত্রে | ধর্মের পক্ষে বিপক্ষে তুমুল বাকযুদ্ধ করতে দেখা যায়, যতটা না করতে দেখা যায় সততা ও অসততা নিয়ে |

তবে এর পরিবর্তন আসবে একদিন, হয়তো আমাদের জীবদ্দশায় তা দেখে যেতে পারবো না | মানুষ নিষ্পেষিত হতে হতে যখন তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাবে এবং বুঝতে পারবে যে তাদের সকল অশান্তির মূল কারণই হচ্ছে সমাজের বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতি, তখনি ইতিহাসের অমোঘ নিয়মে জনগণ বিদ্রোহ করে বসবে সকল দুর্নীতি ও অনৈতিকতার বিরুদ্ধে |

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৪:৪৪

মইন আহসান বলেছেন: অনেক ধ্যন্যবাদ আপনার সুচিন্তিত মতের জন্য।

বিশেষ করে "দুর্নীতির জনসচেতনার" উপর আপনার নিন্মোক্ত মূল্যবান ইন্সাইটের জন্যঃ

"দুর্নীতির মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে পর্যাপ্ত সচেতনতা থাকতে হবে - যা বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে এখনো আসে নাই | বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ দুর্নীতিকে স্বাভাবিক হিসাবে মেনে নিয়েছে তাই এর বিরুদ্ধে কোনো শক্ত প্রতিরোধ বা প্রতিবাদ তেমন দেখা যায় না, যতটুকু দেখা যায় এক সরকারকে হটিয়ে আরেক সরকারকে সরানোর ক্ষেত্রে | ধর্মের পক্ষে বিপক্ষে তুমুল বাকযুদ্ধ করতে দেখা যায়, যতটা না করতে দেখা যায় সততা ও অসততা নিয়ে |"

আমি আপনার সাথে সম্পূরন একমত। আমার ধারনা এর জন্য মুলত দ্বায়ি আমাদের ছোটলোক-বড়লোক আদি সমাজব্যবস্থা ও দীর্ঘ উপনিবিশেক শাসন ব্যবস্থা। একদিকে আমাদের আদি গ্রামিন সমাজ ব্যবস্থার সর্বব্যাপী বড় কোন সংস্কার হয়নি বহুদিন' আর অন্যদিকে বৃটিশ উপনিবেশিক শাসন ব্যাবস্থা ও কাঠামো পাকিস্তান পেড়িয়ে ৪৮ বছরের বাংলাদেশে এখনো স্বদরপে বিদ্যমান এর নিকৃষ্টতম মডেলে। এই দুইয়ের সংমিশ্রনে সাধারন মানুষ এখনো সরকারকে রাজা, সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারিকে রাজ প্রতিনিধি হিসাবেই দেখে, আর তাদের দুরনিতিকে অনেকটা ওদের অধিকার হিসাবে মেনে নিতেই অভ্যস্ত। এমনকি অনেক শিক্ষিত মধ্যবিত্তও এই ধরনের মানসিকতা পোষন করে।

তবে আশার কথা এই যে, বিশ্বায়িত যোগাযোগের কারনে এই মানসিকতার পরিবর্তন ত্বরান্বিত হচ্ছে। তছাড়া, সাম্প্রতিক বছরের বড় বড় দুর্নীতি ও দুর্নীতিজাত দুরঘটনায় জনসাধারনের সামষ্টিক ভাবে ভিক্টিম হওয়াতে; যেমন বিভিন্ন বড় বড় ব্যাংক জালিয়াতি, চকবাজার ও এফ আর টাওয়ারের আগুন। এর আগে সধারনত মানুষ দুরনিতির শুধু আর্থিক ভুক্তভোগিথিক, তাও আবার বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিগতভাবে। আমার ধারনায়, এই সামষ্টিক আর্থিক ও জীবন ভিকিটিমাইজেশন হঠাত করেই দুর্নীতির মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা অনেক বেশি বেগবান করেছে। বিশেষ করে, কোটি কোটি মানুষ যখন লাইভ দেখেছে এফ আর টাওয়ারের আগুন থেকে লাফিয়ে পড়ে মানুষ মরছ্‌, তখন তারা অনেকেই নিজের এরকম ভয়াবহ মৃত্যুই দেখেছে; তাদের মধ্যে দুর্নীতিবাজ ও তাদের পরিবার পরিজনও আছে নিশ্চয়।

আমার ধারনা ধর্মের কল বাতাসে নড়তে তত দেরি হবে না।



৬| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১০:৫৬

করুণাধারা বলেছেন: আপনার পোস্ট ভালো লাগলো, তাই লাইক দিলাম।

আপনার প্রতিমন্তব্যগুলো ঠিকমত করা হচ্ছে না। যখন কেউ একজন আপনার পোস্টে মন্তব্য করে, তখন আপনি যদি প্রতিমন্তব্য করেন, তবে তার কাছে নোটিফিকেশন যায়। প্রতিমন্তব্য করতে হয় মন্তব্যের সবুজ তিরে ক্লিক করে। আপনি যেভাবে মন্তব্যের আকারে উত্তর দিচ্ছেন, এভাবে করলে কোন মন্তব্যকারীর কাছে নোটিফিকেশন যাবে না যে আপনি তার উত্তর দিয়েছেন। আমি ভেবেছিলাম আপনি সবুজ তীরে ক্লিক করে প্রতি মন্তব্য করা জানেন না, কিন্তু আপনার দ্বিতীয় পোস্টে গিয়ে দেখলাম, আপনি সেভাবে প্রতি মন্তব্য করেছেন। আশা করি এরপর থেকে সেভাবেই করবেন। শুভকামনা রইল।

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৪:৫২

মইন আহসান বলেছেন: আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ ভুল ধরিয়ে দেবার এবং লাইক দেওয়ার জন্য।
আমি বেশিরভাগ সময় লিখি ও কমেণ্ট করি মোবাইল থেকে, এ্যাপে সবুজ তীরটা পাই না, আর অন্য কোন অপশন না পাওয়াতেই ভুল হচ্ছিলো সঠিকভাবে কমেন্ট করতে। এখন কম্পিউটারে বসে ঠিক করে দিয়েছি।

আপনাকে আবারো ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.