![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ
প্রথাবিরোধী ও বহুমাত্রিক শব্দ দুটি বললে হুমায়ুন আজাদকেই বুঝাতো। মানব সভ্যতার প্রতিটি অগ্রযাত্রা হয়েছে প্রথা ভেঙ্গে। কিন্তু প্রথাভাঙ্গাকে প্রচলিত সমাজ কখনোই স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয় নি। প্রথাবিরোধী ও বহুমাত্রিক শব্দ দুটির মধ্যে হুমায়ুন আজাদের নামটি মিশে গিয়েছিল। তিনি ছিলেন প্রধান প্রথাবিরোধী, সত্যনিষ্ঠ ও বহুমাত্রিক লেখক। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ভাষাবিজ্ঞানী, সমালোচক, রাজনীতি ভাষ্যকার ও কিশোর সাহিত্যিক। তিনি প্রতিটি ক্ষেত্রেই সৃষ্টি করেছেন একটি ভিন্ন ধারা। ৭০ টির বেশি বই লিখেছেন কিন্তু কোন অর্থহীন লেখা লিখেন নি।
হুমায়ুন আজাদের লেখায় এবং ভাষ্যে মূল সুর ছিল প্রচলিত প্রথার বিরোধিতা করা। মৃত্যুর মধ্য থেকে জীবনে ফিরে আসার পরে ২ জুলাই ০৪ তাকে ভাগ্যকুল ও রাঢ়ীখালে সংবর্ধনা দেয়া হয়। তিনি সংবর্ধনার জবাবে কাব্যময় ঢঙ্গে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, আমি সেই শৈশব থেকে শুনে আসছি তোমরা সীমা লংঘন করো না। রাঢ়ীখাল ছিল আমার সীমা। সেই সীমা লংঘন করেই আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হয়েছি। আজ যে ছেলেরা জাপান, ইউরোপ বা মধ্যপ্রাচ্য থেকে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাচ্ছে তারাও তাদের সীমা লংঘন করেই দেশ ছেড়েছিল। যে সব প্রথা সমাজের অগ্রযাত্রায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তিনি সেই প্রথা ভেঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার আহবান জানান। তিনি প্রচলিত প্রায় সব বিশ্বাসকেই অস্বীকার করেছেন। তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ছিলেন সাহিত্যের ছাত্র। অধ্যাপক ছিলেন সাহিত্যের । কিন্তু তাঁর চেতনা জুড়ে ছিল বিজ্ঞান মনস্কতা।
উপন্যাস লেখা শুরু করার পরে তিনি নিয়মিত গ্রামে আসা শুরু করেন। ফেলে আসা ফুলের গন্ধময় গ্রামকে নতুন করে চিনতে থাকেন, সুক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। ভাগ্যকুলের তরুণদের সাথে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলেন। লেখার জন্য তথ্য সংগ্রহ করেন। তাঁর লেখার প্রধান উৎস যদিও তাঁর শৈশব। শৈশবের স্মৃতি নিয়ে লেখা শিশুতোষ গ্রন্থ ‘ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না’-এ সেই সময়ের বিক্রমপুরকে তুলে এনেছেন জীবন- করে। বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালীর পরে আর কেউ গ্রামকে এভাবে তুলে আনতে পারেন নি। ডালিম ফুল, মাছরাঙা, সরপুঁটি, কচুরিফুল, লাউডগা, খেজুর গাছ, আড়িয়ল বিল, পদ্মার ইলিশ ইত্যাদি নিয়ে লিখেছেন অসাধারণ উপমা যা বাংলা সাহিত্যে নতুন সংযোজন।
হুমায়ুন আজদের প্রথম প্রকাশিত বই ‘অলৌকিক ইস্টিমার’(১৯৭৩) কবিতার হলেও এরপর ভাষাবিজ্ঞান চর্চায় বেশি গুরুত্ব দেন। পাশাপাশি চলতে থাকে কবিতা সৃজন। তিনি কবিতা প্রেমীদের দৃষ্টি কাড়েন এবং অন্যতম প্রধান কবি হিসাবে তাঁর আ্তপ্রকাশ ঘটে। শুধু ভাষাবিজ্ঞান নিয়ে লিখলেও তিনি আরো খ্যাতিমান হতে পারতেন কিন' তা তিনি চান নি। সাহিত্যের সর্বক্ষেত্রে তিনি অবদান রাখতে চেয়েছেন।
১৯৯১ সালে প্রবন্ধের বই নারী প্রকাশিত হলে তিনি মৌলবাদীদের রোষানলে পড়েন। বইটিতে নারীর প্রতি যুগে যুগে নিপিড়নের কথা বলা হয়েছে। এ সময় তাঁর প্রকাশিত প্রবন্ধের বইগুলোতে প্রতিক্রিয়াশীল ও স্বাধীনতা বিরোধী মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে প্রচুর লিখেন। তাঁর ‘প্রবচন গুচ্ছ’ সত্যনিষ্ট ও যৌক্তিক হলেও তা নিয়ে একটি শ্রেণী বিদ্বেষ ছড়ায়। ১৯৯৪ সালে তিনি ঔপন্যাসিক হিসাবে আ্তপ্রকাশ করেন। প্রথম উপন্যাস ‘ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল’ আলোড়ন তোলে এবং বিপুল সমাদৃত হয়। উপন্যাসের মাধ্যমেও তিনি তাঁর চেতনার প্রকাশ ঘটাতে থাকেন। এরপরে অন্যান্য উপন্যাস একে একে প্রকাশিত হতে থাকে এবং প্রগতিশীল পাঠকদের কাছে বিপুল প্রশংশিত হতে থাকে। এরসাথে কবিতা, প্রবন্ধ ও ভাষাবিজ্ঞানের বইও প্রকাশিত হয়। তাঁর রচনার পরিমাণ বিপুল- যাতে তিনি প্রথার বিরাধিতা করেছেন সর্বত্র।
রাজনীতিবিদগণ উপন্যাসে তিনি আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামাতের রাজপরিবারতন্ত্র নীতির তীব্র কটাক্ষ করেছেন। ২০০৩ সালে প্রকাশিত তাঁর আরেকটি প্রবন্ধের বই ‘আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম’ এ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর পুতিগন্ধময় নোংরামি তুলে ধরেছেন। এসব লেখায় সবচেয়ে নিকৃষ্টভাবে উপস্থাপন করা হয় জামায়ত ইসলামী বাংলাদেশকে। এরপর ধুয়ে দেন বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে। আওয়ামীলীগকেও তাঁদের ভুলগুলোর সামনে দাঁড় করিয়ে দেন। ‘নারী’ থেকে ‘আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম’ পর্যন- লিখিত প্রবন্ধগুলোতে মৌলবাদের বিরুদ্ধে তীব্র চাবুক মেরেছেন। তাদের অপরাধ, প্রতারণা, ভণ্ডামী, নিষ্ঠুরতা, মূর্খতা নিয়ে লিখেছেন বিরতিহীনভাবে। পরিণতিতে উগ্র প্রতিক্রিয়াশীল চক্র হুমায়ুন আজাদকে তাদের প্রতারণার পথে বাঁধা হিসাবে চিহ্নিত করে প্রধান শত্রু হিসাবে ধরে নেয়।
২০০৩ সালে দৈনিক ইত্তেফাকের ঈদুল আযহা সংখ্যায় এবং ২০০৪ সালে গ্রন্থাকারে একুশে বই মেলায় ‘পাক সার জমিন সাদবাদ’ প্রকাশ পায়। বিবেকের তাড়নায় তিনি বইটি লিখেন। বইটিতে লেখক মৌলবাদীদের মুখোশ খুলে দেন। এটি উপন্যাস হলেও এর মধ্যে মানুষ মৌলবাদীদের স্বরূপ দেখতে পায়। তাদের জীবন যাপন, উপার্জিত অর্থের উৎস, যৌন জীবন, মিথ্যার ও প্রতারণার বেসাতি, ধর্মের নামে ধোঁকার রাজনীতি সবকিছুই উন্মোচিত হয়ে পড়ে। ফলে এটা আর উপন্যাস থাকে নি- হয়ে উঠেছিল মৌলবাদীদের জীবন যাপনের দলিল। মৌলবাদীরা সংঘবদ্ধ হয়ে পড়ে। নিজেদের মধ্যেকার হাজারো বিভেদ ভুলে গিয়ে ধর্মাশ্রয়ী দলগুলো সকলেই সমস্বরে একটা খুনের স্বপ্ন দেখতে থাকে। ওদের অসি-ত্ব বিনাশকারী হিসাবে চিহ্নিত করে তাঁর প্রাণ সংহারে উঠেপরে লেগে যায়। উগ্রপন্থী মৌলবাদীরা প্রকাশ্যে হত্যার হুমকী দিতে থাকে। একজন সাংসদ সংসদে দাঁড়িয়ে তাঁকে হত্যার জন্য উষ্কানী দেয়। তাঁকে বহুলোক এ সময়ে সাবধানে চলতে বলেন কিন' হুমায়ুন আজাদ ছিলেন নির্ভিক, তিনি স্বভাবিক চলাফেরা করতেই থাকেন।
আজ তাঁর প্রয়াণ দিবস। গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।
১৩ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩০
মুজিব রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ।
কাছ থেকে তাঁর দূরদৃষ্টি দেখে বিস্মিত হতাম।
২| ১২ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:৩৬
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: তার অনুসারীদের উচিত তার ধারনাগুলোকে অগ্রসর করা।
১৩ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩১
মুজিব রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ। ঠিক বলেছেন।
আমরাও চেষ্টা করি তাকে নিয়ে কিছু বলতে।
৩| ১২ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:৫২
রাশিয়া বলেছেন: বস্তির মহিলাদের মূত্রত্যাগের দৃশ্য যার সাহিত্যে ও আত্মকথনে আসে, তাঁকে সুসাহিত্যিক হিসেবে ভাবতে ঘৃণা হয়।
১৩ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩৩
মুজিব রহমান বলেছেন: বস্তির মানুষ দরিদ্র এজন্যই কি আপনার আপত্তি?
৪| ১৩ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:১২
রাজীব নুর বলেছেন: হুমায়ূণ আজাদ একজন জ্ঞানী মানুষ। প্রতিভাবান মানুষ।
আমি খুশি তার বাড়িও বিক্রমুপুর, আমার বাড়িও বিক্রমপুর।
১৩ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩৪
মুজিব রহমান বলেছেন: ভাল লাগে যখন দেখি অনেক জ্ঞানী ও প্রতিভাধর মানুষের জন্ম বিক্রমপুরে।
৫| ১৩ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১:১২
নেওয়াজ আলি বলেছেন: একজন সজ্জন মানুষ । স্মরণ করি শ্রদ্ধেয় ।
১৩ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩৫
মুজিব রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ।
৬| ১৩ ই আগস্ট, ২০২০ সকাল ৯:২৫
অন্তরা রহমান বলেছেন: একজন কিংবদন্তী
১৩ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩৫
মুজিব রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ
এজন্যই তিনি আমাদের অন্তরে।
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:১৮
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: অসাধারণ এক জন মানুষ।