নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

মুজিব রহমান

মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ

মুজিব রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

কৃষ্ণ ও পাণ্ডবরা কতটা ন্যায়যুদ্ধ করেছেন?

২৩ শে আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২৩


ক্যারেন আর্মস্ট্রং তার ‘স্রষ্টার ইতিবৃত্ত’ বইতে লিখেছেন, ‘অলৌকিক বিষয়াদি দ্বারা এখন আর মানুষ পরিবেষ্টিত থাকে না ফলে অনেকেই ধর্মকে অপ্রাসঙ্গিক মনে করতে পারছে। আমাদের বিজ্ঞানভিত্তিক সংস্কৃতি আমাদের চোখের সামনে থাকা ভৌত ও বস্তুজগতের দিকে মনোযোগ দিতে শেখায়’। মানে আমরা যখন অলৌকিক বিষয়ের মধ্যে থাকবো তখন আমাদের বিজ্ঞানমনষ্ক হওয়া সহজ হবে না। তবে আমরা বিজ্ঞানমনষ্কতা দিয়ে যাচাই করতে পারি অলৌকিকতাকে।

মহাভারতে কৃষ্ণ অর্জুনকে বহু উপদেশই দিয়েছেন। একটি উপদেশ এমন, ‘অনেক ক্ষেত্রেই সরাসরি মিথ্যা কথা বলা সম্পূর্ণ ধর্মসম্মত। বিবাহ, রতিক্রীড়া, প্রাণবিয়োগ ও সর্বস্বাপহরণকারে এবং ব্রাহ্মণের নিমিত্ত মিথ্যা প্রয়োগ করলেও পাতক হয় না’। ব্রাহ্মণের হিতের জন্য মিথ্যাকথনকে কিভাবে সমর্থন করি। কৃষ্ণ অর্জুনকে সমস্ত জ্ঞাতিনিধনের উদ্দেশ্যে যুদ্ধে প্রবৃত্ত করাই ছিল মূল লক্ষ্য। এই ভয়ঙ্কর যুদ্ধে কৃষ্ণ নিজে অসংখ্য ছলনার আশ্রয় নিয়েছিলেন। মহাভারত জুড়েই রয়েছে বহু ছলনা। উদাহরণ দিচ্ছি-

দ্রোণাচার্য আর একলব্যের বিষয়টি কি নৈতিক?
আমরা গুরুর প্রতি একনিষ্ঠ ভক্তির উদাহরণ দিয়ে একলব্যকে ধন্যবাদ দেই। তিনি গুরুদেব দ্রোণাচার্যের কাছে গিয়েছিলেন যুদ্ধবিদ্যা শিখতে। একলব্য ক্ষত্রিয় ছিল না বলে তাকে শিষ্য হিসেবে গ্রহণ করতে রাজি হলেন না দ্রোণ। একলব্য দ্রোণকেই গুরু মেনে একমনে যুদ্ধবিদ্যা শিখতে লাগলেন। একদিন দ্রোণ যখন জানতে পারলেন তিনি একলব্যের মানসগুরু। তিনি ছলনার আশ্রয় নিলেন। গুরুদক্ষিণা হিসেবে একলব্যের হাতের বুড়ো আঙুল চেয়ে বসলেন যাতে তার ক্ষত্রিয় শিষ্যরাই বিজয়ী হয়।

জতুগৃহে পুড়িয়ে মারা কি নৈতিক?
দুর্যোধন পাণ্ডবদের পুড়িয়ে মারার জন্য জতুগৃহ নির্মাণ করে সেখানে পাণ্ডবদের পাঠান। যুধিষ্ঠির আগেই জেনে যান ষড়যন্ত্রের কথা। তারা নদীতীর পর্যন্ত একটি সুড়ঙ্গ খনন করেন। পঞ্চপাণ্ডবের মা কুন্তি একটি ভোজসভার ব্যবস্থা করেন। নিষাদ জননী ও তার পঞ্চপুত্রদের আপ্যায়ন করে ঘরের মধ্যে রেখে আগুন লাগিয়ে দিয়ে তারা সুরঙ্গ পথে পালিয়ে যান। ঘরে থাকা নিমন্ত্রিত লোকেরা মারা যায়। তাদের লক্ষ্য ছিল- এতে দুর্যোধন আগুনে পুড়ে যাওয়া মৃতদেহ দেখে ভাববেন যে পাণ্ডবরা সবাই মারা গেছে।

দ্রৌপদীকে মিথ্যা পরিচয়ে বিয়ে করে পাঁচ ভাইর বউ বানানো কি নৈতিক?
রাজকন্যা দ্রৌপদীকে বিয়ে করার জন্য সয়ম্বরা সভায় শর্ত ছিল- শূন্যে ঘুরন্ত মাছের চোখে জলে প্রতিবিম্ব দেখে যে তীর বিদ্ধ করতে পারবে তাকেই স্বামীরূপে বরণ করবে। কর্ণ এই কাজ সম্পাদন করতে পারতেন। কিন্তু দ্রৌপদী আপত্তি করেন, সূতজাতকে বরণ করব না’। কুন্তির বিয়ের আগের পুত্র কর্ণ অর্থাৎ অর্জুনের সৎ ভাই। অর্জুন ছলনার আশ্রয় নেয়। নিজেকে ব্রাহ্মণপুত্র ঘোষণা দিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে এবং বিজয়ী হয়ে দ্রৌপদীকে বিয়ে করে নিয়ে আসে। কুন্তী বলে, যা এনেছো তাই পাঁচ ভাই ভাগ করে নেও। সে কথাতেই দ্রৌপদী হয়ে গেল পাঁচ ভাইর বউ।

অর্জুনের কি বনবাসের প্রতিজ্ঞা সম্পন্ন হয়েছিল?
যুধিষ্ঠির যখন দ্রৌপদীর সঙ্গে সহবাস করছিলেন তখন অর্জুন ঘরে ঢুকে পড়ে। অর্জন পূর্বশর্ত পালনের জন্য বারো বৎসর বনবাসের প্রতিজ্ঞা করে বেরিয়ে পড়লেন। তিনি প্রথমে গঙ্গাদ্বারে গিয়ে নাগকন্যা উলুপীকে বিয়ে করলেন। এরপর মণিপুরে গিয়ে রাজকন্যা চিত্রাংগদাকে বিয়ে করে তিন বছর মণিপুর রাজপ্রসাদেই বাস করলেন। শেষে দ্বারকায় গিয়ে সুভদ্রাকে হরণ করে বিয়ে করলেন এবং এক বছর তার সঙ্গেই দ্বারকায় থাকলেন। এটাকি বনবাস হল?

ভীমের জরাসন্ধকে হত্যা কি নৈতিক ছিল?
জরাসন্ধ ছিলেন তখন সবচেয়ে পরাক্রমশালী রাজা। তিনি জীবিত থাকতে যুথিষ্ঠির পক্ষে রাজসূয় যজ্ঞ করা সম্ভব ছিল না। এর আগে কৃষ্ণ ও তার জ্ঞাতিরা জরাসন্ধের কাছে বারবার পরাজিত হয়েছেন। কৃষ্ণ, অর্জুন ও ভীম ব্রাহ্মণের বেশ ধরে পেছনের দরজা দিয়ে জরাসন্ধের রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করে তার সামনে উপস্থিত হন এবং তারপর নিজেদের প্রকৃত পরিচয় প্রকাশ করে জরাসন্ধকে মল্লযুদ্ধে আহ্বান করেন। জরাসন্ধ তাদের এই ছলনার নিন্দা করলেও ভীমের সঙ্গে মল্লযুদ্ধে সম্মত হন এবং চৌদ্ধ দিন ধরে যুদ্ধ চলাকালে কৃষ্ণ, ভীম ও অর্জুনকে নিরাপদে অতিথি হিসেবে নিজ প্রাসাদে রাখেন। ক্ষত্রিয়রীতিতে ক্লান্ত এবং যুদ্ধবিমুখ যোদ্ধাকে বধ না করে সময দেবার প্রথা ছিল। কিন্তু এরকম অবস্থাতেই কৃষ্ণের কুটিল ইংগিতে ভীম জরাসন্ধকে বধ করেন।

কৃষ্ণ কর্তৃক শিশুপালকে হত্যা করা কি নৈতিক ছিল?
যুধিষ্ঠির তার রাজসূয় যজ্ঞে কৃষ্ণকে শ্রেষ্ঠ অতিথি হিসেবে অর্ঘদান করেছিলেন। শিশুপাল এর বিরোধীতা করে বলেন, যেহেতু কৃষ্ণ রাজাও নন, ব্রাহ্মণও নন তাই এই অর্ঘ্য পাবার কোন অধিকার তার নেই। এছাড়া কৃষ্ণ অন্যায় উপায়ে জরাসন্ধকে বধ করেছেন। তাকে শ্রেষ্ঠ অতিথি করা যুধিষ্ঠির ধর্মাত্মা পরিচয়ই নষ্ট হল। যজ্ঞে উপস্থিত অনেক রাজাই শিশুপালকে সমর্থন করলেন। শিশুপালের সাথে কৃষ্ণের পূর্ব থেকেই শত্রুতা ছিল। সয়ম্বরা সভায় কৃষ্ণের স্ত্রী রুক্মিণীর পাণিপ্রার্থী ছিলেন শিশুপালও। কৃষ্ণ শিশুপালকে সুদর্শন চক্র দিয়ে শিরশ্ছেদ করেন।

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কি কৃষ্ণ ও পাণ্ডবরা নৈতিক ছিল?
ভীষ্মকে পরাজিত করতে পারছিলেন না। ভীষ্মের মহানুভবতার সুযোগ নিয়ে তাকে বধের উপায় জেনে নিয়ে- স্ত্রীলোককে সামনে রেখে আড়াল থেকে অর্জুন শরাঘাতে ভীষ্মকে শরশয্যায় শায়িত করেন।
দ্রোণকেও পাণ্ডবরা পরাজিত করতে পারছিলেন না। কৃষ্ণ বললেন, দ্রোণের পুত্র অশ্বত্থামা নিহত হয়েছে এমন সংবাদ পেলেই দ্রোণ যুদ্ধ থেকে বিরত হবে আর তাকে হত্যা করা যাবে। যুধিষ্ঠির উচ্ছকণ্ঠে ‘অশ্বত্থামা হত’ ঘোষণা করে অস্ফুট স্বরে ‘ইতি কুঞ্জর’ বললেন। এতে দ্রোণ অস্ত্র ত্যাগ করে যোগস্থ হলে তার শিরশ্ছেদ করা হয়। অথচ যুদ্ধের নিয়ম বন্ধনের সময় ঠিক হয়েছিল যে, অস্ত্রহীন কিংবা যুদ্ধে বিমুখ কোন ব্যক্তিকে আঘাত করা হবে না।
যুদ্ধের রীতি ছিল সূর্যাস্ত হলে যুদ্ধ বন্ধ থাকবে। জয়দ্রথের পরাক্রম পাণ্ডবেরা সহ্য করতে পারছিলেন না। তখন কৃষ্ণ মায়া দ্বারা তমসা সৃষ্টি করে সূর্যকে আচ্ছন্ন করলেন। সূর্যাস্ত হয়েছে মনে করে যুদ্ধের রীতি অনুয়ায়ী জয়দ্রথ অস্ত্রসংবরণ করে আকাশের দিকে তাকালেন। আর সেই সুযোগে অর্জুন জয়দ্রথের শিরশ্ছেদ করলেন।
যুদ্ধের আরেকটি রীতি ছিল- অপরের সাথে যুদ্ধরত ব্যক্তিকে তৃতীয় কেউ আঘাত করবে না। কিন' সাত্যকিকে পরাজিত করে তার মুণ্ডচ্ছেদনে উদ্যত ভুরিশ্রবাকে অর্জুন আক্রমণ করলেন এবং কৃষ্ণের উপদেশে ভুরিশ্রবার ডানহাত কেটে ফেললেন। এর প্রতিবাদে ভুরশ্রবা অস্ত্র ত্যাগ করে যোগস্থ হলে অর্জুন নিয়ম ভঙ্গ করে তাকে হত্যা করে।
কর্ণ যখন নিরস্ত্র অবস্থায় রথ থেকে নেমে মাটিতে বসে যাওয়া রথের চাকা তুলবার চেষ্টা করছিলেন, তখন অর্জুন কৃষ্ণের পরামর্শে আবার যুদ্ধের নিয়মভঙ্গ করে শরাঘাতে তাকে বধ করলেন।
ভীম ও দুর্যোধনের মধ্যে গদাযুদ্ধ চলছিল। কৃষ্ণ বললেন, ন্যায় যুদ্ধে দুর্যোধনকে পরাজিত করা যাবে না। তখন অর্জুনের ইংগিতে দুর্যোধনের উরুভেঙ্গে দেয়া হয় যুদ্ধের নিয়ম লংঘন করে।
দুর্যোধন কৃষ্ণকে দোষারোপ করলে তিনি বলেন, কৌরব বীরগণ অসাধারণ সমরবিশারদ ও ক্ষিপ্রহস্ত ছিলেন এবং পাণ্ডবেরা কখনো তাদের ন্যায়যুদ্ধে পরাজিত করতে পারতেন না। আমি যদি ঐরূপ কুটিল ব্যবহার না করতাম তাহলে তোমাদিগকে জয়লাভ, রাজ্যলাভ ও অর্থলাভ কখনই হইত না।

এখানে স্পষ্ট যে কৃষ্ণ ও পাণ্ডবরা ন্যায়যুদ্ধ করেননি। এটা স্পষ্ট হয় তারা একটি মহাকাব্যের চরিত্র বলেই এমনটা করতে পেরেছেন। তাই প্রমাণও করা হয় যে মহাভারত অবশ্যই মহাকাব্য- যেখানে ছলনা ও শঠতা থাকবে, যুদ্ধ জয়ের জন্য মিথ্যাচার ও প্রতারণা থাকবে।

তথ্যসূত্র:
মহাভারত- বেদব্যাস
স্রষ্টার ইতিবৃত্ত- ক্যারেন আর্মস্ট্রং
মহাকাব্য ও মৌলবাদ- জয়ন্তানুজ বন্দ্যোপাধ্যায়

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:০৪

রাজীব নুর বলেছেন: অতীতে দেবদেবীরা মনে হয় যুদ্ধ টুদ্ধ কখনও করেনি। এগুলো রুপ কথা। সব বাকোয়াস। বানোয়াট।

২৪ শে আগস্ট, ২০২০ ভোর ৬:৪১

মুজিব রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ। এজন্যই বলা হয়, মহাভারত-রামায়ণ বাস্তবিক মহাকাব্য, কল্পগল্পই হবে।

২| ২৩ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:৫৬

অজ্ঞ বালক বলেছেন: আপনার সবগুলা পোস্ট দেখি, পড়ি আর হাসি। আইচ্ছা, এই ব্লগে যদি কেউ কোরআন শরীফ মানুষের লেখা বইলা লম্বা পোস্ট দেয় কেমন লাগবো আপনার? একটা সর্বজনস্বীকৃত ধর্মগ্রন্থরে মহাকাব্য (শুধু মহাকাব্য, যা সেইটা আসলেই) প্রমাণে উইঠা-পইড়া লাগসেন আপনি। জিনিসটা একে তো খারাপ, তার উপরে বিপদজনক। 'লোশক' নামের একটা 'ফ্যান্টাসি' বইয়ে বুদ্ধরে নিয়া লেখার জন্য ১০ কোটি টাকার মামলা করা হইসে। এরকম আরও দুইটা ধর্মবিষয়ক মামলা হইছে। হঠাৎ কইরা 'সামু' আর আপনার নামেও মামলা হইয়া যাইতে পারে। সময়টা খুব খারাপ আর অস্থির যাইতাসে। এইসময় সবর করা লাগে।

সবচেয়ে বড় একটা কথা কই, গর্ব করাটা আমার স্বভাব না, তাও কই, আমি এই দেশের দশজন মহাভারত গবেষকের একজন। এই এক বই নিয়া আমার প্রায় শ'খানেক বই পড়া আছে। লিটারেলি, দেশী-বিদেশী মিলাইয়া। আপনেও ততটা পড়েন, তারপর গিয়া অনেক কিছুই আপনার কাছে ক্লিয়ার হইয়া আসবো। তার আগে এইসব পোস্ট দিতে পারবেন ঠিকই দশ-বিশটা বই পইড়া। যুদ্ধে অন্যায় বইলা কিছু নাই, এনিথিং ক্যান হ্যাপেন। এনিথিং। আপনে আসছেন ন্যায় নিয়া। অন্যায় হইসে, তাই এইটা ধর্মগ্রন্থ না! হাউ ফানি!

১/ একলব্য ক্ষত্রিয় ছিল না, কাজেই তার যুদ্ধশিক্ষাই অন্যায়, তৎকালীন নিয়ম বিবেচনায়।
২/ না, নৈতিক না। কিন্তু, এইটা নীতিশিক্ষার পাশাপাশি রাজনীতি-কূটনীতি শিখারও বই। যেটা এখানে দারুণভাবে করা হয়েছে। এই জতুগৃহের আইডিয়া কার ছিল জানেন - কণিকের, যার নীতি রাজনীতির ময়দানে অব্যর্থ, এখনো পড়া হয়।
৩/ মিথ্যা পরিচয় মানে? দ্রৌপদী আগে থেকেই গোঁ ধরে ছিল, বিয়ে সে অর্জুনকেই করবে। তাই এই প্রতিযোগীতার আয়োজন। কেন অর্জুন? যাতে, পাঞ্চাল-দেশের জামাই হয় অর্জুন, আর আত্মীয় হয় পাণ্ডবরা। যাতে, দ্রোণের করা অপমানের বদলা ভবিষ্যতে নেয়া যায়। তারে জন্মই দেয়া হইসে যজ্ঞের মাধ্যমে সেই অপমানের বদলা নেয়ার জন্য যার কারনে তার আরেক নাম যাজ্ঞসেনী। এখন একারণে কর্ণরে মানা করা লাগসে, তা না হইলে কর্ণ পারতো কাজটা করতে। আর অর্জুন ঐখানে বিয়ার উদ্দেশ্যেই গেসিলো। এর আগে তারা নিজেদের একজন পরামর্শদাতা নিয়োগ দিসে যে তাদেরকে বলছে, এখনই বিয়া করার সময়, সংসার শুরু করার সময় তা আনা হইলে কুরুদের সাথে তারা পারবে না। এখানে কোনো অন্যায়ই হয় নাই।
৪/ বনবাস মানে বনে বাস না, এর মানে আলাদা থাকা, দূরে থাকা, বিশেষ করে দ্রৌপদীর থেকে। আপনি কি জানেন এইটা কেন হইছিলো? যাতে দ্রৌপদীর সাথে অর্জুনের প্রেমটা কমে, তা না হইলে পাঁচ ভাই-এক বউ সংসার টিকতো না।
৫/ জরাসন্ধকে মারার আরও কারণ ছিল। কৃষ্ণের সাথে পুরান শত্রুতা ছিল তার। যাই হোক, ভীম কিন্তু একাধিকবার জরাসন্ধরে দুইভাগ করে ফেলছিল। বার বার সে জোড়া লেগে যায় (তার জন্মবৃত্তান্ত দ্রষ্টব্য)। তখন কৃষ্ণের কথামতো দুই খন্ডো যাতে না মিলিত হয় সেইটা ভীম নিশ্চিত করার পর জরাসন্ধর মৃত্যু হয়। এখানেও নীতির কোন সমস্যা দেখি না। এটা ডুয়েলই ছিল।
৬/ ১০০ অপরাধ ক্ষমা করার পরও শিশুপালকে বধ করলে যদি সেইটা অন্যায় হয় তাইলে আর কি বলার থাকে? আর যেইখানে কৃষ্ণ আছে, সেইখানে তার চাইতে বড়ো(!) কে থাকতে পারে???
৭/ ভীষ্ম স্বেচ্ছা-মৃত্যু মেনে নিয়েছিলেন দেখেই তার মৃত্যু হয়েছিলো।
ঐ মিথ্যাটা যুধিষ্ঠির ছাড়া কেউ বললে দ্রোণ বিশ্বাসই করতেন না। আর সেটা ঐ মুহূর্তে দরকার ছিল, একজন 'অধিরথ' কে মারার জন্য আপনি যা যা দরকার, তাই করবেন।
জয়দ্রথ আগের দিন অভিমণ্যুকে অনেক ন্যায়(!) অনুসরণ করে মারছিলো তো তা অর্জুন বলেছিল যে সন্ধ্যার আগে তাকে না মারলে সে আত্মহত্যা করবে, সেই মতন প্রবঞ্চনার আশ্রয় নেয়া। ঐদিনের যুদ্ধের বিবরণ বার বার পড়েন। দেখেন কিভাবে জয়দ্রথকে পদ্মব্যুহ তৈরি করে ঘিরে রাখা হইছিল। যাই হোক, এটাও কূটচাল ছিল। কিন্তু, অন্যায় না।
ভূরিশ্রবারে মারতে সবাই মানা করার পরও সাত্যকি যুদ্ধের উন্মাদনায় মেরে ফেলে। দুইজন পারফেক্ট কন্ডিশনে থাকলে সাত্যকি জিতত। দ্রোণ তারে ভীষ্মের সাথে তুলনা দিছে এমনই ভালো যোদ্ধা ছিল সে। কিন্তু, ঐদিন সে টানা দ্রোণের সাথে যুদ্ধ করছে, পদ্মব্যুহ ভেদ কইরা অর্জুনরে সাহায্য করতে আসছে, এই অবস্থায় ক্লান্ত সাত্যকিরে আক্রমণ করে ভূরিশ্রবা, তাই পাশ থেকে অর্জুনের সাহায্য করা। যুদ্ধের ময়দানে আবার ডুয়েল কিসের?
কর্ণের রথের চাকা বইসা গেলো কেন? সে যে মিথ্যা বইলা পরশুরামের থেইকা যুদ্ধ শিখলো আবার ব্রাহ্মণরে অপমান করলো - তাই। ঐসময়ই বুঝা যায়, তার মৃত্যু হবে এখনই। কেন, কারণ এইটা অভিশাপের ফল। আর আবারও বলি, আপনি যুদ্ধ জিততে হইলে অধিরথদের মারতেই হবে, যেমনে সম্ভব।
দুর্যোধন আর ভীম দুইজনই গদায় সমানে-সমান। তাই ন্যায়যুদ্ধে হার-জিত হইতো না, সেকারণেই গদাযুদ্ধের নীতি ভাইঙা উড়ুতে আঘাত। এটাও অন্যায় ছিল।
ভালো কথা, এইসব অন্যায় করার কারণেই পান্ডবদের নরকবাস হইছিল আর কৌরবরা ডাইরেক্ট স্বর্গবাসী।

উফ, এই সময়ে একটা পোস্ট লিখতে পারতাম। যাই হোক ভাই, গেলাম। যা খুশি পোস্ট দেন। আমি বলার কে? তাও বলি, সম্মান দিলেই সম্মান পাওয়া যায়। আপনি অন্য ধর্মরে সম্মান করেন, তারাও আপনার ধর্মরে সম্মান করবো। ভালো থাইকেন।

২৪ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ৭:০২

মুজিব রহমান বলেছেন: ধর্মগ্রন্থগুলো নিয়ে প্রচুর বলা দরকার। এতে মানুষের ভিতরে থাকা অন্ধত্ব কমে আসবে। আপনি লিখুন।
ধর্মগ্রন্থতো হবে শাশ্বত। আজকের বিচারেও তা হবে যথার্থ। মহাভারতের প্রতিটি ঘটনার পেছনেই আরো ঘটনা থাকে। কৃষ্ণের মৃত্যু হল ব্যাধের শরে। কেন আরেক জন্মের কাহিনী। যুদ্ধের নীতিগুলো ঠিক করা হয়েছিল যুদ্ধের আগেই। যদি ধর্মযুদ্ধ হয় তবে তাতো ন্যায় যুদ্ধই হবে। কৃষ্ণ বহু কিছুই অলৌকিকভাবে করে দিয়েছে। যুদ্ধে জেতার জন্য কৃষ্ণ আগেই পথ থেকে সরিয়ে দিয়েছে কাউকে। সেরকমতো কৌরবদেরও সরিয়ে দিতে পারতো। তাহলেও যুদ্ধের এতো ক্ষয়ক্ষতি হতো না, এতো অন্যায় হতো না। ধর্মগ্রন্থের উদ্দেশ্য থাকে- মানুষকে নীতিশিক্ষা দেয়, সংশ্লিষ্ট ধর্মের বিষয়ে শিক্ষা দেয়া। গল্পগুলোর উদ্দেশ্যও তাই। এখানে কাহিনী বর্ণনার জন্যিই সব এসেছে। একটা উপন্যাসে যেমন আসে, মহাকাব্যে আসে। প্রতিটি ঘটনাই সুবিশাল যা থেকে সংক্ষেপেই লেখা হয়েছে। শুধু যুদ্ধবিদ্যাই না- ভারতীয় দর্শন, সমাজচিত্র, রাজনীতি, পরিবার, প্রকৃতি ইত্যাদি বহুবিষয়ও উঠে এসেছে। প্রত্যেক গবেষকদেরই সব জানা কথা। তবে গবেষকদেরও প্রকারভেদ থাকবে। কেউ হবে ধর্মের ভিতরে থেকে, দায়িত্ব নিয়ে এর ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরে একে শ্রেষ্ঠ ও বিজ্ঞানসম্মত গ্রন্থ হিসেবে তুলে ধরা। আর নিরপেক্ষ গবেষকগণই প্রকৃত তথ্যগুলো তুিলে ধরেছেন। এসবকথা কোরান, ত্রিপিটক, তাওরাত, বাইবেল সবার জন্যই প্রযোজ্য।
ধন্যবাদ আপনাকে।

৩| ২৩ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:৫৯

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: যুদ্ধে যারা জয়লাভ করে তাদের যুদ্ধই ন্যায়যুদ্ধ,বুর্জোয়াদের লিখিত ইতিহাস তাই বলে।

২৪ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ৭:০৫

মুজিব রহমান বলেছেন: ইতিহাস হিসেবে মহাভারতকে মানা হয় না। একটি কাহিনীকাব্যেও এটাই প্রতিফলিত হয় এবং বিজয়ীদেরই নায়ক বানানো হয় সাধারণত।

৪| ২৩ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:১১

ইলি বলেছেন: বিজিত সব সময়ই সন্মানিত, নিতি নৈতিকতা অন্য ব্যপার যা যুদ্ধে চলেনা যুদ্ধ চলে ছলে বলে কৌশলে। কৃষ্ণের অনেক কুটিল বুদ্ধির কারনে পাণ্ডবরা এই যুদ্ধে জিতেছিল। ধন্যবাদ।

২৪ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ৭:০৩

মুজিব রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ। এজন্যই মহাকাব্যে কৃষ্ণের এতো গুরুত্ব।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.