নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

মুজিব রহমান

মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ

মুজিব রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

পর্ব-২ একালের বাংলার কিশোরদের জনপ্রিয় দুটি বই

২৬ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:২৩


মুহম্মদ জাফর ইকবালের
‘দীপু নাম্বার টু’ এবং ‘আমার বন্ধু রাশেদ’


১৯৮৪ সালে প্রথম প্রকাশের পরেই বাংলাভাষী শিশু-কিশোরগণ বইটি গভীর ভালবাসার সাথে গ্রহণ করে নেয়। দীপু তাদের প্রিয় চরিত্র হয়ে উঠে। লেখকও তাদের প্রিয় হয়ে উঠে। বই হিসেবে প্রকাশের আগে ১৯৮১ সালে এটি একটি পত্রিকার ইদ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। মুহম্মদ জাফর ইকবাল যুক্তরাষ্ট্রে পিএইডি করার সময় নিঃসঙ্গতা দূর করার জন্য কল্পনায় একটি কিশোর চরিত্র তৈরি করে নেন। যখনই মন খারাপ হতো কিশোরটির সাথে মনে মনে কথা বলেই সময় কাটাতেন। একদিন সেই কিশোরের অ্যাডভেঞ্চারের কাহিনী শেষ করেন গভীর ভালবাসা নিয়েই। সেই কিশোরই দীপু নাম্বার টু।
জাফর ইকবালের মতো দীপুর বাবাও সরকারী চাকরি করেন। তার বছর বছর ভিন্ন জেলায় বদলী হয়। সাথে দীপুর স্কুলও বদলে যায়। স্কুল বদলাতে বদলাতে নতুন স্কুলে অস্টম শ্রেণিতে ভর্তি হয় দীপু। সেখানে ছিল আরেকজন দীপু। তাই ক্লাসের শিক্ষক-শিক্ষার্থী মিলেই তার নাম দেয় ‘দীপু নাম্বার টু’। নতুন স্কুলে সবার সাথে বন্ধুত্ব হতে সময় লাগেনি। শুধু একজন ছিল অন্য রকম। তার নাম তারিক। সে ভিন্ন প্রকৃতির ছেলে, অনেকটা অশীল। দীপুর সাথে তার লেগেই থাকে। দীপু কয়েকবার মারও খায়। অধিক বয়সের তারিকের শক্ত শরীরের সাথে দীপু পেরে উঠে না। দীপুর পরিবারে শুধু তার বাবা, মা নেই, ভাইবোনও নেই। তাই সবকথা বাবার সাথেই বিনিময় করে। তারিক সম্পর্কেও বলে। দীপুর বাবা দীপুকে বলে, তুই তারিককে দেখতে পারিস না তাই তারিকও তোকে দেখতে পারে না। যদি কখনও এরকম হয় যে, তোর হঠাৎ তারিককে ভাল লেগে যায়, তা হলে দেখবি তারিকও তোকে বন্ধু মনে করবে।
দীপু মাথা নেড়ে বলল, তারেককে ভাল লাগা অসম্ভব। চেহারা দেখলে মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। হলুদ দাঁত, কয়দিন মাজে না কে জানে!
বাস্তবিক সেই তারিকের সাথেই দীপুর বন্ধুত্ব হয়ে যায়। তারিকের সংকটটাও দীপু দেখতে পায়। অভাবের সংসারে সে বড় হয়। বাড়িতে অপ্রকৃতস্থ মা। দীপুর ভালবাসা পেয়ে, তারেক আরো বেশি ভালবাসে দীপুকে। তাদের বন্ধুত্বও উপন্যাসটির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তারা একটি অভিযানে নামে। যা সফল হলে ওরা প্রশংসিত ও পুরষ্কৃত হয়। তা দিয়ে অনেক সমস্যার সমাধান হয়।
এই কিশোর উপন্যাস নিয়ে মোরশেদুল ইসলাম তৈরি করেন ‘দীপু নাম্বার টু’ নামে একটি সিনেমা। সেখানে দীপু নামে যে ছেলেটি অভিনয় করে সে ছিল আমার একজন শিক্ষকের পুত্র অরুন কুমার সাহা। দীপুর পিতার চরিত্রে অভিনয় করে বুলবুল আহমেদ আর মায়ের চরিত্রে ববিতা। ও দীপুর তো মা নেই বলেই জানতাম। তাহলে মা এলো কোথা থেকে? আসলে দীপুই ভুল জানতো। তার মা বাবার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে, তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল আমেরিকায়। ছেলেকে দেখতে দেশে এসেছে। একাই ঢাকা গিয়ে দেখা করে আসে মায়ের সাথে। তার মায়ের আরেকটি সংসার রয়েছে। তাকে ফিরে যেতে হয় সেই সংসারে। দীপু ফিরে আসে বাবার কাছে। বাবারতো বদলীর চাকরি। স্কুল, অপরূপ প্রকৃতি আর এতোসব বন্ধুদের রেখে আবারো চলে যেতে হবে নতুন কোন শহরে? কিভাবে বিদায় নিবে?


চমচমের ছোট ভাই লাড্ডু নতুন ভর্তি হয়ে ক্লাসে ঢুকতেই শ্রেণি শিক্ষক নাম নিয়ে আপত্তি তুললেন। দুদিনে সবাই মিলে ওর নাম দিয়ে দিল লাড্ডু থেকে রাশেদ হাসান। ছেলেরা অনেকেই মানতে চায় না। কিন্তু রাশেদও কম মিচকে শয়তান নয়। সবাই বলতে বাধ্য হয় রাশেদ ডাকতে। ওদের এলাকার এক বড় ভাই শফিকের কাছে ওরা যায় একটা পরামর্শ করতে। শফিক ভাই জানতে চায়, দেশের অবস্থা খুব খারাপ সেটা জান? রাশেদ যখন বলে, ‘ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদ বন্ধ করে দিয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তান বাঙালিদের ক্ষমতায় যেতে দেবে না।’ তখন এ কথা শুনে সবাই খুব অবাক হয়। শফিক ভাই জানতে চান, ‘তুমি কেমন করে জানো বাঙালিদের ক্ষমতায় যেতে দিবে না।’ রাশেদ সবাইকে আরো বিস্মিত করে বলেছিল, ‘পশ্চিম পাকিস্তান আমাদের শোষণ করে বেঁচে থাকে। আমরা ক্ষমতায় গেলে আর শোষণ করতে পারবে না।’ এই হল রাশেদ। রাজনৈতিক সচেতন একজন মানুষ। বাবার কাছ থেকেই পেয়েছে রাজনৈতিক ধারণা। সে মশাল মিছিলে যায়, বাংলাদেশের পতাকা এনে বন্ধুদের দেখায়। রাশেদের মা নেই, তাঁর বাবা পাগল টাইপের মানুষ। ছেলের ভাল একটা নামও রাখেন নি, পড়াশোনার খবরও রাখেন না। সেই বাবাই ছেলের মধ্যে বপন করতে পেরেছিলেন স্বাধীনতার বীজমন্ত্র।
যুদ্ধ একসময় শুরু হয়েই যায়। উপন্যাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমরা যতকথা শুনি সব কিছুরই বক্তা ইবু। আমার বন্ধু রাশেদ মানে ইবুর বন্ধু রাশেদ। ওদের সাথে ছিল আরো দুই বন্ধু ফজলু আর আশরাফ। ওরাও জড়িয়ে যায় যুদ্ধের সাথে। এজন্যই অরু আপা যখন বলে, ‘উনিশশো একাত্তর সনের স্বাধীনতা সংগ্রাম এই দেশের শিশুদের কাছ থেকে তাদের শৈশব ছিনিয়ে নিয়েছে।’ তখন খুবই যৌক্তিক মনে হয়। ইবু আর রাশেদ ওদের স্কুলে স্থাপিত পাকিস্তানি সৈন্যদের ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের এক অপারেশনে হঠাৎ করেই অংশ নেয়। সেখানে গুলি খেয়ে ধরা পড়ে শফিক ভাই। তাকে উদ্ধার করবে কে? শফিক ভাই আর অরু আপা দুজনেই দুজনকে ভালবাসে। তারা দুজনেই আবার ভালবাসে এই ছোটছোট ছেলেদের। ওরা কোন ক্লাসে পড়ে তা বইতে লেখা নেই। আমার মনে হয়েছে ওরা সেভেনে পড়তো আর সেখানে নতুন ভর্তি হয় রাশেদ।
শহরের অনেকগুলো ঘটনার সাথেই রাশেদ জড়িয়ে যায়। তা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের অবস্থাটাও আমরা বুঝতে পারি। রাজাকারদের অবস্থা, শহরের অবস্থা, মানুষের সামগ্রিক অবস্থাও উপলব্ধি করা যায়। শফিক ভাইকে উদ্ধার করার পরিকল্পনাও করে রাশেদই। রাশেদের কাছে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের একটি স্ট্যানগান। ওরা চারবন্ধু একজন ডাক্তারের সহযোগিতায় শফিক ভাইকে বিস্ময়কর পকিল্পনা করে মুক্ত করে ফেলে। ওরা গুলি ছুড়ে আতঙ্ক তৈরি করে একটি ফাকা স্ট্যাচারে করে সাদা কাপড় দিয়ে বালিশ ঢেকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল। শফিক সরে গিয়েছিল একটি খালি বেডে। তারপর দাড়ি কেটে একসময় একাই রোগী হিসেবে বেরিয়ে যায়।
এরপরই রাশেদকে রেখেই বন্ধুরা ওই শহর ছেড়ে চলে যায়, যার যার মা-বাবার সাথে। যুদ্ধ শেষ হয়। ওরা ফিরে আসে শহরে। কিন্তু ইবুদের বন্ধু রাশেদ কোথায়?
মুহম্মদ জাফর ইকবাল শিশু কিশোরদের জন্য একাত্তরকে নিয়ে লিখেছেন এই কিশোর উপন্যাসটি। আমাদের বাংলা সাহিত্যেই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ ও পরিপূর্ণ স্বার্থক উপন্যাস এখনো লেখা হয়নি বলা হয় সেখানে কজন কিশোরকে নিয়ে একটি স্বার্থক উপন্যাস লেখা আরো কঠিনই। খুব কম উপন্যাসেই নির্ভিক কিশোরদের এমন দুঃসাহসিক অংশগ্রহণের চিত্র রয়েছে। আমাদের শিশু-কিশোরদের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে একটি ভাল ধারণা দেয়ার জন্য খুবই উপযোগী বই ‘আমার বন্ধু রাশেদ’। এক নির্ভিক কিশোরের দুঃসাহসিক অভিযান আর দেশপ্রেমের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক শ্রেষ্ঠ কিশোর উপন্যাস। বাস্তবিকও মুক্তিযুদ্ধে বেশ কয়েকজন কিশোর মুক্তিযোদ্ধা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। কিশোর হওয়াতে তারাও সন্দেহের বাইরে থেকে কাজ করতে পেরেছে। এই উপন্যাসটি নিয়ে পরিচালক মোরশেদুল ইসলাম সিনেমা বানিয়েছেন একই নামে। সিনেমাটি ২০১১ সালে মুক্তি পেয়ে প্রশংশিত হয়েছে। ১৯৯৪ সালের বই মেলাতে কাকলী প্রকাশনী থেকে প্রথম প্রকাশ হয়েছিল। এখন চাইলে অনলাইন থেকেও নামিয়ে নিয়ে পড়া যায়।

জাফর ইকবালের লেখা প্রতিমার মতো চকচকে উজ্জ্বল আকর্ষণীয়। দুটি উপন্যাসেই কোথাও কোথাও আরোপিত মনে হয়েছে। মনে হয়েছে প্রাণের ঘাটতি আছে অর্থাৎ প্রাণবন্ত নয়। তবুও আপনার সন্তানদের, ছোট ভাইবোনদের জন্য বাংলায় লেখা এর চেয়ে ভাল কোন কিশোর উপন্যাস নেই বলে উপহার দিতে পারেন।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:৪৭

রাকু হাসান বলেছেন:

উনার এই দুটি বই ভাল বলবো। এমন থিমে তিনি ভাল লিখেন । তবে সামাজিক গড়ানার থিম থেকে ক্রমেই দূরে সরে আসছেন । এবং একই গল্প বারবার বলা শুরু করছেন । বিশেষ করে সর্বশেষ বইগুলো পড়ে এটাই মনে হয়েছে।

২৬ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:৩৩

মুজিব রহমান বলেছেন: দুটি বইর মধ্যে অনেক মিল রয়েছে।
রাশেদ ও দীপু ৭/৮ ক্লাসে পড়ে। দুজনেরই মা নেই। সন্তানদের উপরে বাবার চাপ নেই। দুজনেই নতুন স্কুলে এসে ভর্তি হয়। তাদের নাম নিয়ে ঝামেলা হয়। ইত্যাদি।
রাশেদ যদি ৭ম শ্রেণিতে পড়ে (এমনকি ৬ষ্ঠও হতে পারে) তবে তার যতই ম্যাচুরিটি হোক তার পক্ষে স্ট্যানগান ব্যবহার করা অসম্ভব। এছাড়া সে যেভাবে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে তাতে একজন বয়স্ক মানুষের ম্যাচুরিটিই মনে হবে। তার অনেক কর্মকাণ্ডই আরোপিত মনে হয়েছে। জোর করে একটি শিশুকে দিয়ে করিয়ে নেয়ার মতো মনে হয়েছে।

২| ২৬ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:০১

কল্পদ্রুম বলেছেন: দুটোই পছন্দের বই।এখন বাচ্চাদের বই গিফট করতে এগুলোই প্রথমে মাথায় আসে।জাফর ইকবাল স্যারের লেখা আরোপিত মনে হলেও কিশোরদের জন্যে ওনার মতো করে কেউ লিখতে পারেন নি এখনো।অন্য কারো বই বাচ্চারা এত আগ্রহ নিয়ে পড়ে না।বিশেষত ওনার সায়েন্স ফিকশনগুলো।

২৬ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:৩৫

মুজিব রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ।
অথচ আমাদের ঠাকুমার ঝুলির মতো গল্প রয়েছে। এরপর আসলে রূপকথাও ভাল লেখা হয়নি। শিশু/কিশোরদের বই বাংলা সাহিত্যিকরা তেমন লিখতে পারেননি।

৩| ২৬ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:২২

রাজীব নুর বলেছেন: দুইটা বই অসাধারন। আমি পড়েছি।
মুহম্মদ জাফর স্যারের আরেকটা বই আছে। নাম কাচ সমুদ্র। এটাও দারুন একটা বই। কিন্তু এই বইটার কথা কেউ বলে না।

২৭ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:৪৫

মুজিব রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ।
তবে রাশা, টুনটুনি ও ছোটাচ্চু এবং কিছু সাইন্স ফিকশন বেশি জনপ্রিয়।

৪| ২৬ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:০৫

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: বাচ্চাদের জন্য লেখা হলেও দুই আমি পড়েছি

২৭ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:৪৮

মুজিব রহমান বলেছেন: বাচ্চাদের নিয়ে লেখা হলেও এধরনের উপন্যাস বাস্তবিক সবার জন্যই লেখা।

৫| ২৭ শে আগস্ট, ২০২০ ভোর ৬:০৭

ইসিয়াক বলেছেন:



আমার খুব প্রিয় দুইটি বই। দিপু নাম্বার টু আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে পেয়েছিলাম ,পড়ে দারুণ ভালো লেগেছিলো তখন।কতদিন আগের কথা এখনো সমস্ত ঘটনা মনে হয় চোখের সামনে ঘটে চলেছে।

২৭ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:৪৯

মুজিব রহমান বলেছেন: তাহলে ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ও ভাল লাগবে। পড়ে ফেলুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.