নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

মুজিব রহমান

মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ

মুজিব রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

পর্ব-৩: যে দুটি বই মানুষ তৈরির কারখানা

২৭ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:৪৩


দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের যে গল্পের শেষ নেই
জওহরলাল নেহরুর পৃথিবীর ইতিহাস


বই পড়ি জেনে আমার হাই স্কুল জীবনের প্রিয় একজন শিক্ষক কমল চন্দ্র মোদক স্যার একটি বই পড়তে বললেন- দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘যে গল্পের শেষ নেই’। ঢাকা থেকে তখন বই কেনানো খুবই ঝামেলার। আমাদের এক প্রতিবেশি লঞ্চে করে প্রতি শনিবার সকালে ঢাকা যেতো আসতো বৃহস্পতিবার রাতে। তিনি বাংলাবাজার চৌরাস্তা হয়েই সদরঘাটে আসতেন বলে তাকেই ধরিয়ে দিতাম বইয়ের নাম সাথে মূল্য। সে গায়ের মূল্যের চেয়ে বেশিও নিতো প্রায় সময়। তার মাধ্যমেই আনিয়ে দেখি, এটা কোন গল্পের বই নয়। ব্যক্তি জীবনের গল্প নয়, মানুষের উৎপত্তি ও বিকাশের কথা। শূন্য থেকে কিভাবে শুরু হল এবং তারপর কিভাবে আসলো আজকের মানব জীবন। সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিকাশের ইতিহাস তুলে এনেছেন সহজ ভাষায়। এপ থেকে মানুষ পর্যন্ত ধারাবাহিক ছবিটি সেই প্রথম দেখেছিলাম। বইটিতে আরো কিছু ছবি ছিল বিভিন্ন প্রাণির ক্রণের মিলের ছবি। জীবনের বিকাশ ও বিবর্তনের শেষ নেই বলেই বইটির নাম এমন ছিল। আসলে মানুষের জীবনের গল্পের কোন শেষ নেই। একশত বছর পরেই হবে ভিন্ন গল্প। লেখক নিজেও বইটি ১৯৫১ সালে লেখার ৪০ বছর যাবৎ তথ্য হালনাগাদ করে আসছিলেন। তারপরও পার হয়ে গেছে আরো অনেক দিন, লেখক ১৯৯৩ সালে মৃত্যুবরণ করেছেন তাই থেমেও গেছে হালনাগাদের কাজ। লেখক তার নাতিকে গল্পই বলা শুরু করেছিলেন আদিম মানুষ নিয়ে, তারপর আধুনিক মানুষ, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতি সব নিয়েই আলোচনা করেছেন। অর্থাৎ সভ্যতা ও সমাজ বিকাশের ইতিহাস বলেছেন গল্পচ্ছলে। শেষ মানুষটি বেঁচে থাকা পর্যন্ত মানুষের গল্পের শেষ হবে না। বাংলাদেশের অসংখ্য প্রকাশনি বইটি প্রকাশ করেছেন। হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়।


ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বয়স তখন মাত্র দশ বছর। ইন্দিরা ছিলেন হিমালয় শৈল মুসৌরিতে। তার পিতা ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু তখন থাকেন এলাহাবাদে। ১৯২৮ সাল। ওইটুকুন কন্যাকে উদ্দেশ্য করে তিনি লিখলেন একেরপর এক ৩০টি চিঠি। চিঠিগুলো নিয়ে প্রকাশিত বিখ্যাত গ্রন্থ- ‘লেটার ফ্রম এ ফাদার টু হিজ ডটার’ প্রকাশিত হয় ১৯২৯ সালে। এই গ্রন্থেরই বাংলা অনুবাদ ‘পৃথিবীর ইতিহাস’। জওহরলাল নেহরুকে ধন্যবাদ দিতেই হয়- চিঠিগুলো পাঠকদের নিকট উপস্থাপন করার জন্য। চিঠিগুলো পড়ে অসংখ্য ছেলেমেয়ে ধীরে ধীরে চিন্তা করতে পেরেছে যে, আমাদের এই পৃথিবী কতকগুলো বিভিন্ন জাতির সমন্বয়ে গঠিত বৃহৎ একটি পরিবার।
ইন্দিরা এই চিঠিগুলো পড়ে, নতুন চোখে সবকিছু দেখতে চিনলেন। এগুলো তাকে, মানুষের সম্বন্ধে চিন্তাভাবনা করতে এবং চারপাশের জগৎ সম্বন্ধে তাঁর মনে আগ্রহ জাগিয়ে তুলতে ভূমিকা রেখেছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘এ চিঠিগুলো পড়েই প্রকৃতিকে একটি বই হিসেবে দেখতে শিখেছি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তন্ময় হয়ে আমি পাথর, গাছপালা, পোকামাকড়দের জীবন এবং রাত্রে আকাশের নক্ষত্র লক্ষ্য করে দেখেছি’।
ইন্দিরা যখন পিতার কাছে থাকতেন তখনও নানা রকম প্রশ্ন করতেন, নেহেরু চেষ্টা করতেন জবাব দিতে। ইন্দিরা কাছে না থাকায় সে সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ইন্দিরার যাতে জানার ঘাটতি না হয় সেজন্যই তিনি চিঠিগুলো লিখেন। কিভাবে আমরা পৃথিবীর কথা জানতে পারলাম, তার কথা দিয়েই শুরু করলেন প্রথম চিঠি। ইন্দিরা প্রকৃতির কথা জানতে পারলেন প্রথম চিঠি থেকে। দ্বিতীয় চিঠিতে জানলেন, প্রাচীন ইতিহাসের উপাদানের কথা, তৃতীয় চিঠিতে পৃথিবীর জন্ম কথা, চতুর্থ চিঠিতে প্রাণের সূচনার কথা এরপর প্রাণের আবির্ভাবের কথা, আদি মানুষের কথা, বিভিন্ন জাতি ও ভাষার কথা, সভ্যতার কথা, ধর্মের কথা এবং আরো বহু কথা। এই চিঠিগুলোই তার শিক্ষার ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছিল, একজন দৃঢ় ও সফল রাষ্ট্ররায়ক হতে।
পরে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন জওহরলাল নেহরু। তাঁর মৃত্যুর পর তারই সুযোগ্যা কন্যা ইন্দিরা গান্ধী ভারতের প্রথম ও এখনপর্যন্ত একমাত্র নারী প্রধানমন্ত্রী হন। এমন পিতার এমন কন্যার প্রতি লেখা চিঠিগুলো আমাদের পড়তে হবে নিজেকে এবং নিজের পৃথিবীকে জানার জন্য, বুঝার জন্য।
বাংলাদেশে বহু প্রকাশনী সংস্থাই বইটি দুই নামেই বের করেছে। শ্রী প্রবোধচন্দ্র দাশগুপ্তর অনুবাদ প্রকাশ করেছে বাংলাবাজারের বুক ক্লাব। প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষ, মূল্য ১০০/- টাকা। মেয়ের কাছে বাবার চিঠি নামেও অনুবাদ পাওয়া যায়।

ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে এ বই দুটো পড়ানো খুবই দরকার। শিশু-কিশোরদের জন্য উপহার হিসেবে এ দুটি বই প্রকৃত প্রস্তাবেই সেরা।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:২২

রাজীব নুর বলেছেন: দু'টা ভালো বইয়ের সন্ধান দিলেন।

২৭ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:৩৮

মুজিব রহমান বলেছেন: এমন বই বাধ্যতামূলক করা দরকার। সব শিশুরাই পড়বে। আহা যদি এমনটা হতো!

২| ২৭ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:৫৫

কল্পদ্রুম বলেছেন: পাঠ্যপুস্তকের বাইরেও ভালো বই পড়ার উৎসাহ দেন এবং নিজেই নাম বলে দেন,স্কুল জীবনে এরকম শিক্ষক পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।আপনার শিক্ষক কমলচন্দ্র স্যারের ধন্যবাদ প্রাপ্য।আপনিও নিশ্চয়ই আপনার ছাত্রদেরও একই রকমভাবে নতুন নতুন বইয়ের সাথে পরিচিত করান।

২৮ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ৭:৩৭

মুজিব রহমান বলেছেন: আমাদের গ্রামে একটি ভাল পাঠাগার করেছি যেখানে দেশ-বিদেশের সেরা বইগুলো রেখেছি। শিক্ষার্থী ও অন্যরা সদস্য না হয়েই এবং কোনরূপ জামানত ছাড়াই গুরুত্বপূর্ণ বই নিয়ে পড়তে পারে।
এক বছরে ১৫০০ বই ইস্যু করেছি। তারপর শুরু হল করোনা। আশা করবো শিঘ্রই আবারো শুরু হবে।

৩| ২৮ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:৪০

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: চমৎকার দুটো বই!

২৮ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ৭:৩৮

মুজিব রহমান বলেছেন: ভারতে লেখা এমন দুটি বই যা বাংলাদেশেও ব্যাপক জনপ্রিয়।

৪| ২৮ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১:১২

সন্ধ্যা রাতের ঝিঁঝিঁ বলেছেন: চমৎকার দুটি বইয়ের সাথে পরিচিত করে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

২৮ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ৭:৩৯

মুজিব রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ।
উপস্থাপন ভিন্ন হলেও বিষয়বস্তর মিল থাকায় একসাথে দিয়েছি। ধন্যবাদ আপনাকেও।

৫| ২৮ শে আগস্ট, ২০২০ ভোর ৪:৩২

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: প্রথমটা পড়া দ্বতীয়টার প্রতি আগ্রহ ছিন না।

২৮ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ৭:৪০

মুজিব রহমান বলেছেন: খুবই ছোট বই। খুবই ভাল লাগে নেহেরুর দূরদৃষ্টি দেখে। কন্যাকে মানুষ করেছিলেন চিঠি লিখে।

৬| ২৮ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:৪৫

নেওয়াজ আলি বলেছেন: বেশী বেশী বই পড়া উচিত সকলের যেন দেশে একটা সৃজনশীল সমাজ সৃষ্টি হয়।

২৮ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:২৮

মুজিব রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ। এর কোন বিকল্প নেই। জ্ঞানীদের নিজের মধ্যে ধারণ করতে হলে তাদের বই পড়তেই হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.