নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

মুজিব রহমান

মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ

মুজিব রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

পর্ব-৪ বাঙলা ভাষা ও সাহিত্যকে জানার কিশোরদের জন্য সেরা দুটি বই

২৮ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:২৪


হুমায়ুন আজাদের
লাল নীল দীপাবলি বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী
কতো নদী সরোবর বা বাঙলা ভাষার জীবনী


বাঙলা ভাষা ও বাঙলা সাহিত্য নিয়ে শিশু কিশোরদের জানা-বুঝার দরকার। এগুলো জানা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদেরই অথচ সে উপযোগী বইই ছিল না সুদীর্ঘকাল। ভষাবিজ্ঞানী হুমায়ুন আজাদ শিশু-কিশোরদের উপযোগী করে দুটি (যুগল) বই লেখেন। এর প্রথমটি হল বাঙলা সাহিত্য নিয়ে লেখা- ‘লাল নীল দীপাবলি বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী’। হাজার বছরের বেশি আগে থেকে লেখা হচ্ছে বাঙলা সাহিত্য। চর্যাপদ থেকে একেকটি বই আলো দিচ্ছে আমাদের। সেই আলোর ঝর্ণাধারা জ্বালিয়ে যাচ্ছে লাল নীল দীপাবলি। সাহিত্য হচ্ছে আলোর পৃথিবী, সেখানে যা কিছু আসে আলোকিত হয়ে আসে। পাঠকরাও আলোকিত হয়ে উঠে।

লাল নীল দীপাবলি নিয়ে হুমায়ুন আজাদ বলেছেন, বাঙলা সাহিত্যের দিকে তাকালে এক সময় আমার চোখে শুধু লাল নীল প্রদীপমালার রূপ ভেসে উঠতো, দেখতে পেতেন হাজার বছর ধরে জ্বেলে দেয়া ঝাড়লণ্ঠনের মালা। দীপ জ্বেলেছেন কাহ্নপাদ, বড়- চন্ডীদাস, মুকুন্দরাম, চণ্ডিদাস, বিদ্যাপতি, বিদ্যাসাগর, মধুসূদন, বিহারীলাল, বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ ও আরো অনেকে। লাল নীল দীপাবলিতে আমি স্বপ্ননীল কিশোর কিশোরী তরুণ-তরুণীদের চোখের সামনে বাঙলা সাহিত্যের হাজার বছরের আলোকমালার মতো জ্বেলে দিতে চেয়েছিলাম। বইটর পাতায় পাতায় রয়েছে সৃষ্টিশীলতার ছোঁয়া।

এই বই থেকে জানতে পারি চর্যাপদের কথা। চর্যাপদ হচ্ছে বাঙরা সাহিত্যের প্রথম কাব্যগ্রন্থ। এটি হাজার বছর আগের গীতি কবিতার সংকলন। জানতে পারি আরেকটি প্রদীপ হয়ে আসা মঙ্গল কাব্যের কথা। দেবতাদের কাছে মঙ্গল কামনা করে লেখা হয় এ কাব্যগুলো। প্রায় ৫শ বছর ধরে লেখা হয়েছে মঙ্গল কাব্য। এখানে বুড়ো চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের কথা, চণ্ডীমঙ্গলকাব্যের কালকেতু-ফুল্লরার কথা, মনসামঙ্গলকাব্যের চাঁদসদাগরের দুঃখের কথা জানতে পারি। মঙ্গলকাব্যে এমন আরো অনেক দেবদেবির প্রতি মঙ্গল কামনা করা হয়। বইটি পড়ে জানতে পারি মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর কথা, রায়গুণাকর ভারতচন্দ্রের কথা। বৈষ্ণব পদাবলি আসে আরো অনেক উজ্জ্বল আলো নিয়ে। এখানে জানতে পারি শ্রী চৈতন্যদেবের কথা, জ্ঞানদাস ও গোবিন্দ দাসের রচনার কথা যারা জ্বালিয়ে গেছেন দীপ। মহাভারত-রামায়নের কথা বলেছেন। মুসলিম কবিদের ভিন্ন প্রদীপের কথা বলেছেন। তারা নিয়ে আসেন মানুষের কথা। তারা লেখা ইউসুফ-জুলেখা, লাইলি-মজনু, মনোহর-মধুমালতীর কাহিনী নিয়ে কাব্য রচনা করেছেন। বুকের বাঁশরি লোক সাহিত্যের কথা বলেছেন, আমাদের উপন্যাস, কবিতা, নাটক, মহাকাব্যর কথা লিখেছেন। বইটি ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পায়।

বাঙলা সাহিত্য নিয়ে লেখা বইটি শুধু কিশোর নয়, গবেষক ব্যতিত সকল বয়সের পাঠকদের জন্যই প্রয়োজন। বইটি খুবই প্রাঞ্জল ভাষায় লেখা। প্রকাশ করেছে আগামী প্রকাশনী।


বাঙলা ভাষার মতো বাঙলা সাহিত্য নিয়েও শিশু কিশোরদের জানা-বুঝার জন্য কোন বই ছিল না। এগুলো জানা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদেরই অথচ সে উপযোগী বইই ছিল না সুদীর্ঘকাল। লাল নীল দীপাবলি বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পেলে তিনি এর যুগল হিশেবে লেখেন কতো নদী সরোবর বা বাঙলা ভাষার জীবনী বইটি। বইটি প্রকাশিত হয় ১৯৮৭ সালে অর্থাৎ প্রথম বইটি প্রকাশের ১১ বছর পরে। এটিও তাঁর আরেকটি প্রিয় বিষয়। তিনি মূলত ভাষাবিজ্ঞানী তবে বহুমাত্রিক ও প্রথাবিরোধী লেখক হিশেবেই সুপরিচিত। এটি বাঙলা ভাষার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কিশোরদের উপযোগী করে লিখেছেন। এটাই বাঙলা ভাষার ইতিকথা। এই বইটিতে বাঙলা ভাষার ইতিহাস হুমায়ুন আজাদের হাতের ছোঁয়ায় হয়ে উঠেছে কবিতার মতো মধুর, সুখকর ও সুন্দর। এখানে তুলে এনেছেন বাঙলা ভাষার জন্মকথা, বিভিন্ন কাল, শব্দ, ভূগোল, গদ্য, পদ্য, মান, অভিধান, ব্যাকরণ এবং আরো বহু বিষয়।

হাজার বছর আগে প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা রূপান্তরিত হয়ে বঙ্গীয় অঞ্চলে জন্ম নিয়েছিল এক মধুর-কোমল-বেদ্রোহী প্রাকৃত ভাষা যার নাম বাঙলা। ওই ভাষাকে কখনো বলা হয়েছে ‘প্রাকৃত’ কখনো বলা হয়েছে ‘গৌড়ীয় ভাষা’। কখনো বলা হয়েছে ‘বাঙ্গালা’ বা ‘বাঙ্গলা’। এখন বলি ‘বাঙলা’ বা ‘বাংলা’। জন্মের সময় বাঙলা ভাষা স্নেহ পায়নি সমাজপ্রভুদের। এ-ভাষায় লেখা হয়নি কোনো ঐশী শ্লোক। কিন' তা হাজার বছর ধ‘রে বইছে ও প্রকাশ করছে কোটিকোটি মানুষের স্বপ্ন ও বাস্তব। এটিও তিনি প্রথাগত ভাষায় প্রাজ্ঞ পাঠকদের জন্য লিখেন নি, লিখেছেন কিশোরদের জন্য যারা স্বপ্ন ও আবেগতাড়িত। তাদের কাছে বাস্তবও অনেকটা স্বপ্নের মতো। জ্ঞান তাদের কাছে একরকম আবেগ ও সৌন্দর্য। বাঙলা ভাষার প্রতি তাঁর আবেগ ছিল প্রগাঢ়- তার রূপ, শোভা আর সৌন্দর্যে তিনি মুগ্ধ ছিলেন। তাঁর কাছে বাঙলার মতো আর কোন ভাষা ছিল না। তাঁর আনন্দ এই ভাষায় নেচে উঠতো ময়ূরের মতো। তিনি লিখেছেন, আমার সুখ ভোরের রৌদ্দর, বিকেলের ছায়া আর সন্ধ্যার আভার মতো বিচ্ছুরিত হয় বাঙলা ভাষায়। আমার মায়ের মুখের মতো সে শান্ত। তাঁর অস্ত্রর মতো সে কোমলকাতর। আমার মায়ের দীর্ঘশ্বাসের মতোই নরম আমার মাতৃভাষা।

জন্মকথা অধ্যায়ে তিনি লিখেছেন, মাগধী প্রাকৃতের কোন পূর্বাঞ্চলীয় রূপ থেকে জন্ম নেয় বাঙলা ভাষা। প্রাকৃত ভাষা হচ্ছে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের কথ্য ভাষা। আমরা জানতে পারি সংস্কৃত ভাষা থেকে বাঙলা ভাষার জন্ম হয়নি। বাঙলা ভাষাকে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশের সদস্য বলে গণ্য করা হয়। এসব নিয়ে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন কথাও তিনি তুলে ধরেছেন। সপ্তম শতক থেকে নবম শতকের মধ্যে বাঙলা ভাষার জন্ম হয়। অর্থাৎ বাঙলা ভাষার বয়স হাজার বছরের বেশি।

বাঙলা সাহিত্য ও বাঙলা ভাষা লেখা যুগল গ্রন্থ দুটি শুধু কিশোর নয়, গবেষক ব্যতিত সকল বয়সের পাঠকদের জন্যই প্রয়োজন। বই দুটিই খুব প্রাঞ্জল ভাষায় লেখা। ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে কিশোরদের উপযোগী বই প্রকাশ সহজ নয়। সে কঠিন কাজটিই হুমায়ুন আজাদের হাতের ছোঁয়ায় কোমল হয়ে প্রকাশ পেয়েছে। এটিও প্রকাশ করেছে আগামী প্রকাশনী। মূলত হুমায়ুন আজাদের লেখা প্রায় সকল বই-ই প্রকাশ করেছে আগামী প্রকাশনী।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:৩৪

চাঁদগাজী বলেছেন:


১ টা'তে নিয়ে আসা যায় না? যেটা হতে পারে পুর্ণাংগ জীবন ব্যবস্হা?

২৮ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:০৯

মুজিব রহমান বলেছেন: আগামী প্রকাশনী বিবেচনা করতেই পারে। একসাথে হওয়াই বাঞ্ছনীয়।

২| ২৮ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:১৩

চাঁদগাজী বলেছেন:



আপনি হিউমার টিউমার ইত্যাদি করেন টরেন, নাকি শুধু হারমোনিয়াম বাজান?

২৮ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:২৬

মুজিব রহমান বলেছেন: আপনি ব্যক্তিগত আক্রমণ করতে খুব পছন্দ করেন দেখছি।

৩| ২৮ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:৪০

নেওয়াজ আলি বলেছেন: হুমায়ুন আজাদের এই বইগুলি এখন অনেক পাঠক প্রিয়

২৯ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ৭:৩২

মুজিব রহমান বলেছেন: আরো পাঠকপ্রিয় হওয়া উচিৎ ছিল।
আমাদের ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাস নিয়ে কিশোরদের জন্য এতো ভাল বই আর নেই।

৪| ২৮ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:৪৬

রাজীব নুর বলেছেন: আগামী প্রকাশনীর কর্নধার কি ওসমান গনি সাহেব?

২৯ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ৭:৩১

মুজিব রহমান বলেছেন: হ্যাঁ

৫| ২৮ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:০০

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: দুটি ভাল বইএর সাথে পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দিলেন।
আমি সংরহের চেষ্টা করব।

২৯ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ৭:৩৩

মুজিব রহমান বলেছেন: যদিও গবেষকদের জন্য বইটি নয় তবুও সবারই ভাল লাগবে।

৬| ২৯ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ২:১৪

কল্পদ্রুম বলেছেন: কলেজ জীবনে হুমায়ুন আজাদের উপন্যাস পড়ে ওনার উপর খুব বিরক্ত হয়েছিলাম।বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ওনার 'নারী' বইটা পড়েছি।ভালো লাগেনি।এরপর ওনার প্রবন্ধগুলো পড়ে ভালো লেগেছে।এই বইদুটো পড়ে ওনার গদ্য সাহিত্যের উপর মুগ্ধতা জন্মেছিলো।আগের মন্তব্যের উত্তরে আপনার প্রতিষ্ঠিত লাইব্রেরির কথা জেনেছি।আপনাকে ধন্যবাদ স্যার এরকম ভালো কাজের জন্য।

২৯ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ৭:৩৬

মুজিব রহমান বলেছেন: আমাদের স্কুলে আমরা একটি পাঠাগার করেছিলাম। যার উদ্বোধন করেছিলেন হুমায়ুন আজাদ। সাথে তিনি একসেট বই দিয়েছিলেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ পাঠাগারটি ধ্বংস করে দিয়েছিল।
এখন আমাদের নতুন পাঠাগারটি ভাল আছে। বাস্তবিক হুমায়ুন আজাদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পাই। মূলত ওনি ভাষাবিজ্ঞানের লোক। কিছু ভাল কবিতাও লিখেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.