নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

মুজিব রহমান

মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ

মুজিব রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

পর্ব-১০: নিষিদ্ধ বই! অধিকাংশ খামোখাই নিষিদ্ধ!!

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:২৯


সম্প্রতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে সাইফুল বাতেন টিটোর বিষফোঁড়া উপন্যাসটি। বইটি সুধী মহলে খুব একটা দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেনি। নামটিও খুব মানানসই হয়নি। মাদ্রাসা শিক্ষাকে তিনি হয়তো বিষফোঁড়া বলতে চেয়েছেন। বইটির নাম হতে পারতো ‘লুতু কওম’। তিনি বইটি লিখেছেন কওমী মাদ্রাসায় শিশু ধর্ষণ নিয়ে। বাস্তবিক এখানে আসবে বলাৎকার শব্দটি। কোনভাবেই দক্ষতার সাথে তিনি উপস্থাপন করতে পারেননি। এই বইটি নিষিদ্ধ করে তো ‘লুতু কওম’ বন্ধ করা যাবে না। বরং লেখকের দাবি করা সত্যতা যাচাই করার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রকৃত অবস্থা খুঁজে বের করতে পারলেই তা আরো কাজে আসতো। হুমায়ুন আজাদের ‘পাক সার জমিন সাদবাদ’ ছিল আরো আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপিত। অথচ নিষিদ্ধ হল ‘বিষফোঁড়া’। এতে বইটির উপর পাঠকদের আকর্ষণ বেড়ে গেছে এবং তারা বিভিন্নভাবে বইটি সংগ্রহ করে পড়বে। বইটির প্রচার আরো বেড়ে যাবে। হুমায়ুন আজাদের ‘নারী’ বইটি কেন নিষিদ্ধ হয়েছিল? একেবারেই অযৌক্তিক ছিল নিষিদ্ধ করা। ‘নারী’ নিষিদ্ধ হলে তিনি ফরাসী বুদ্ধিজীবী সিমোন দ্য বোভোয়ারের ‘১৯৪৯ সালে প্রকাশিত ‘দ্য সেকেন্ড সেক্স’ বইটির অনুবাদ করে প্রকাশ করেন। এই বইটি আরো গুরুত্বপূর্ণ এবং তাতে ‘নারী’ নিষিদ্ধ অর্থহীন হয়ে যায়। এছাড়া নারী নিষিদ্ধ হলেও প্রচুর সংখ্যক মানুষ বিভিন্নভাবেই নারী পড়তে থাকে। নারী বইটি আরো বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠে। পরে আদালতের রায়ে নারী অবমুক্ত হয়।

বাংলাদেশে নিষিদ্ধের তালিকায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নামটি হল তসলিমা নাসরিন।প্রথমে তার লজ্জা উপন্যাসটি নিষিদ্ধ করা হয়। বইটি প্রকাশের প্রথম ৬ মাসেই বিক্রি হয়েছিল ৫০ হাজার কপি। নিষিদ্ধ হওয়ার পরে বিক্রি হয়েছে লক্ষ লক্ষ কপি। ভারতের গুরুত্বপূর্ণ সকল ভাষাতেই অনুবাদ করা হয়েছে। এছাড়া ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, ডাচ, জার্মানি, স্প্যানিশ, ইতালীয়, সুইডিশ, নরওয়েজীয়, ফিনীয়, ফার্সী, আরবী, ফিনীয়, নেপালী, মালয়লাম, সিংহলি ইত্যাদি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। অর্থাৎ নিষিদ্ধ করে প্রসার ঠেকিয়ে রাখা যায়নি। তাঁর পাঁচটি আত্মজীবনী নিষিদ্ধ করা হয়েছে বাংলাদেশে তার মধ্যে- আমার মেয়েবেলা, উতল হাওয়া, দ্বিখণ্ডিত/ক অন্যতম। বইগুলো পড়েছি এবং তাতে নিষিদ্ধ হওয়ার মতো উপাদান ছিল বলে মনে হয়নি।

আনা ফ্রাঙ্কের ডাইরী আমেরিকার কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে নিষিদ্ধ ছিল। তাদের হাস্যকর অভিযোগ ছিল, বইটিতে নাজি সেনাদের ধ্বংসযজ্ঞের বর্ণনা রয়েছে যা শিশু-কিশোরদের কোমল অনুভূতিতে আঘাত হানতে পারে। তবে মার্ক টোয়েনের ‘দি এডভেঞ্চার অব টম সয়্যার’ এবং দি এডভেঞ্চার অব হাকলবেরি ফিন’ নিষিদ্ধ করা ছিল আরো হাস্যকর। নিউইয়র্ক ও কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের অভিযোগ ছিল টম এক বিতর্কিত চরিত্র। এই বই পড়ে শিশু-কিশোরগণ অবাধ্যতা আর দুষ্টুমি শিখবে। হাকলবেরি ফিন নিষিদ্ধ ছিল কারণ বইতে ধারণা দেয়া হয়েছিল যে, নিগ্রোরা দাস হিসেবে নয়, অন্যান্য মানুষের মতোই সম্মান নিয়ে বাঁচতে পারে। তাদের আরো অভিযোগ ছিল, বইটিতে কথ্য শব্দ রয়েছে যা শিশু-কিশোরদের অনুপযোগী। আরেকটি বিখ্যাত বই হ্যারিয়েট বিচার স্টোর ‘আঙ্কল টমস কেবিন’ নিষিদ্ধ হয়েছিল বইটির কারণেই নাকি আমেরিকার গৃহযুদ্ধ লেগেছিল। বইটি যুক্তরাষ্ট্রে প্রচলিত দাসপ্রথার ভিত্তি নাড়িয়ে দিয়েছিল। জর্জ অরওয়েলের এনিম্যাল ফার্ম প্রাণিদের নিয়ে লেখা হলেও এর গভীরে ছিল রাজনীতি। সোভিয়েত ইউযনিয়নের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের সমালোচনা ছিল ইংগিতে তাই সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সমাজতান্ত্রিক দেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ড্যান ব্রাউনের বিখ্যাত থ্রিলার ‘দ্য দা ভিঞ্চিকোড’ নিষিদ্ধ করা হয় লেবাননে। এই বইতে যিশুর স্ত্রী ও সন্তানদের কথা বলা হয়েছিল। মেরি শেলির বিখ্যাত উপন্যাস ‘ফ্রাঙ্কোস্টাইন’ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকায় অশ্লীলতার অভিযোগে। এই ছয়টি বই পড়েছি; পড়ে আজ যে কেউই বলবে, আরে এই বই নিষিদ্ধ করে কোন পাগলে?

যৌনতার অভিযোগ নিষিদ্ধ হয়েছিল ডিএইচ লরেন্স এর প্রেমের উপন্যাস ল্যাডি চাটার্লিজ লাভার ও পশ্চিমবঙ্গের সমরেশ বসুর প্রজাপতি। লেডি চাটার্লিজ লাভার নিষিদ্ধ হওয়ার কোন উপাদানই নেই। সামান্য যৌনতা আছে তা রগরগে নয় মোটেই। প্রজাপতির ক্ষেত্রেও বলতে পারি পশ্চিমবঙ্গে এর আগে আরো রগরগে বই প্রকাশিত হয়েছে কিন' নিষিদ্ধ হয়নি। সম্ভবত গ্রামের এক আখক্ষেতের পাশে সামান্য ভালবাসা বিনিময়ের কারণে বইটি নিষিদ্ধ করা হয়। বই দুটি অনেক আগের পড়া বলে বিস্তারিত লিখলে ভুল হতে পারে। প্রথম আলোর ইদ সংখ্যায় এমন একটি বই পুনঃপ্রকাশ করেছিল। ইরানের শাহ আমলের বিখ্যাত লেখক ও মন্ত্রী আলি দস্তির ‘নবী মোহাম্মদের ২৩ বছর’ ইরান ও বাংলাদেশসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশে নিষিদ্ধ। লেখক কোরআন ও হাদিস বিশ্লেষণ করে নবী মোহাম্মদ (সা.) এর জীবনী লিখেন ও বিভিন্ন অলৌকিকতার বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা দেন। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ ‘ইসলাম বিতর্ক’ নামে একটি বই সম্পাদনা করে বা লিখে প্রকাশক/লেখক শামসুজ্জোহা মানিক গ্রেফতার হন। বইটি পড়ে দেখেছি এর একটি লেখাও তার নয়। শিরোনাম ইংরেজি করে সার্চ দিলেই মূল ইংরেজি লেখা চলে আসে। তাতে স্পষ্ট হয় যে, মানিক শুধু ইংরেজি থেকে বাংলায় রূপান্তর করে প্রকাশ করেছেন। বইটি শেষ পর্যন্ত সম্ভবত নিষিদ্ধ হয়নি।
বাংলাদেশে ‘আমার ফাঁসি চাই’ নামে একটি বই নিষিদ্ধ হয়েছিল। বইটি নিষিদ্ধ হওয়ার আগে পড়েছিলাম। বিএনপির আমলে বইমেলাতে এটি পুলিশ প্রহরায় বিক্রি করা হয়। আওয়ামী লীগ প্রধানে বিরুদ্ধে কুৎসা রটানোর অভিযোগে আওয়ামীলীগ সরকার বইটি নিষিদ্ধ করে। বইটি প্রকাশের আগে সম্ভবত দৈনিক দিনকাল পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। এটিই একমাত্র বই যার নিষিদ্ধ হওয়ার যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে।

বই সবচেয়ে বেশি নিষিদ্ধ হয় অশ্লীলতা, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কারণে। ধর্মীয় কারণে নিষিদ্ধ হওয়া আলোচিত বই হল সালমান রুশদির ‘দ্যা স্যাটানিক ভার্সেস। সম্ভবত সকল মুসলিম দেশেই বইটি নিষিদ্ধ করা রয়েছে। এছাড়া ভারত, শ্রীলংকা, সিংগাপুর, থাইল্যান্ড, পাপুয়া নিউগিনি, কেনিয়া ইত্যাদি দেশেও নিষিদ্ধ। বহু বিখ্যাত ব্যক্তির বইই নিষিদ্ধ হয়েছে। রার্ট্রান্ড রাসেল, জেমস জয়েস, ড্যানিয়েল ডিফো, এলেন গিন্সবার্গ, জন স্ট্যাইনব্যাক, ভলতেয়ার, নোয়াম চমস্কিসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ লেখকের বই কোন কোন দেশ কর্তৃক সাময়িক বা দীর্ঘ সময়ের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছে।

মন্তব্য ১৭ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:১৬

চাঁদগাজী বলেছেন:


বারট্রান্ড রাসেলের বই বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হওয়া উচিত; বেশীরভাগ শিক্ষকও এই বইগুলো পড়ে বুঝার কথা নয়; আপনি ২/১টা পড়েছেন নাকি?

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৪৭

মুজিব রহমান বলেছেন: সুখ, আমি কেন খৃস্টান নই, বিবাহ ও নৈতিকতা পড়েছি। আরো দুএকটি পড়তে পারি। মানুষের কি ভবিষ্যৎ আছে? পড়েছি।

২| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:২০

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: বেশির ভাগ বই নিষিদ্ধ করার পেছনে যৌক্তিক কারণ ছিলো না। যেমন বুদ্ধদেব বসুর রাতভরে বৃষ্টি উপন্যাসটিও নিষিদ্ধ হয়েছিলো। অথচ ওটা একটা মানবীয় সম্পর্কের টানাপোড়নের উপন্যাস,মাল্যবানের মতো।

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৪৭

মুজিব রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ। যৌনতার অভিযোগ ছিল!

৩| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:০৭

নূর আলম হিরণ বলেছেন: অভিজিৎ এর বিশ্বাসের ভাইরাস ও নিষিদ্ধ হয়েছিল।

৪| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৩২

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: সুন্দর পোস্ট।

৫| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৩৬

রাজীব নুর বলেছেন: চিলে কান নিয়ে গেছে, লোকজন চিলের পেছনে ছুটে। এই হলো অবস্থা।

নিষিদ্ধ হলেও তিনটা বইই আমি পড়েছি।

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৪৯

মুজিব রহমান বলেছেন: অনেক বইয়ের কথাই বলেছি?
সম্ভবত প্রচ্ছদ তিনটির কথা বলছেন আপনি

৬| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৪৪

কল্পদ্রুম বলেছেন: বই নিষিদ্ধ করা উচিত না।ভালো মন্দ সব ধরণের বই পাশাপাশি থাকবে।একটা খারাপ বইয়ের বিপরীতে দরকার হলে আরো দশজন বই লিখুক।বাকিটা পাঠকের বিবেচনার উপর ছেড়ে দেওয়া উচিত।

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:১০

মুজিব রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ।
ভুল বই পাঠকই প্রত্যাখ্যান করবে। সরাসরি ব্যক্তি/দলকে আক্রমণ করা ভুল বই নিয়ে ভাবাও দরকার। নইলে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করারও সুযোগ থেকে যাবে। ভিন্নমত/দর্শন নিলে লেখার স্বাধীনতা থাকা দরকার।

৭| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ ভোর ৬:৩৪

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:

বই নিষিদ্ধ করা বোকামী।
যার খুশী পড়বে, যার খুশী পড়বে না।
সবারই স্বাধীনতা থাকা দরকার।

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:১১

মুজিব রহমান বলেছেন: মত প্রকাশের সুযোগ অবারিত হোক শুধু ব্যক্তিগত বিদ্বেষের সুযোগ বাদে।

৮| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:১১

সাগর শরীফ বলেছেন: বেশ কয়েকজন লেখকের নামটাই মার্কড হয়ে আছে। তাদের নাম দেখে বই নিষিদ্ধ করা হয়।

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:১১

মুজিব রহমান বলেছেন: খারাপ বলেননি। তসলিমার আত্মজীবনী নিষিদ্ধ করতে পড়া লাগে না যেনো।

৯| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:৩৫

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: লিটল হাউস অন দা প্রেইরিও সম্ভবত নিষিদ্ধ ছিল কিছুদিন।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:২৬

মুজিব রহমান বলেছেন: জানা নেই।
বিচিত্র কারণে বই নিষিদ্ধ হয়েছে। আমার কোন একটি দেশ হয়তো অন্যদেশের বই নিষিদ্ধ করেছে। হিসাব রাখা কঠিন। বাংলাদেশের কোন এক লেখকের সকল বই-ই নিষিদ্ধ অথচ ওনার নামটি আর মনে নেই। সুপরিচিত নন।

১০| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৩৬

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: রেড ইন্ডিয়ানদের বিরুদ্ধে কিছু কথা ছিল লিটল হাউস অন দা প্রেইরি বইয়ে। একারণের নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.