নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

মুজিব রহমান

মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ

মুজিব রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

পর্ব-১১: দ্য আউটসাইডার, আমি? আপনি??

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৪৪


আলবেয়ার কাম্যুর ‘দ্য প্লেগ’ পড়তে গিয়ে মনে হয়েছিল, প্লেগাক্রান্ত রক্তাক্ত ইঁদুর বুঝি আমার পায়ের কাছেই চলে এসেছে। আমি চেয়ার থেকে পা উঠিয়ে বসেছিলাম। এতোটাই জীবন্ত তাঁর কথাসাহিত্য। তবে কাম্যুর শ্রেষ্ঠ রচনা ‘দি আউটসাইডার’ পৃথিবীরই অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। মরসো এর প্রধান চরিত্র। আমার মনে হয়, অনেকেই নিজেকে আউটসাইডার ভাবেন একারণেও উপন্যাসটিকে তারা এতো ভালবাসেন, অন্তত আমি এ কারণেই বেশি ভালবেসেছি। পড়তে গিয়ে আপনার ভিতরে থাকা আউটসাইডারকে খুঁজে পেতে পারেন এবং তা পেয়ে মুগ্ধও হতে পারেন। বইটি পড়ে মনে হয়েছিল আমি নিজেও একজন আউটসাইডার।

আলবেয়ার কাম্যু জন্মেছিলেন ১৯১৩ সালে আলজেরিয়ায়। আলজিয়ার্স জাতীয় ফুটবল দলের গোলরক্ষকও ছিলেন। এরপরে ফ্রান্সের প্যারিসে এসে বেছে নেন সাংবাদিকতা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানী ফ্রান্স দখল করলে যোগ দিয়েছিলেন প্রতিরোধ যুদ্ধে। যুদ্ধের পরে বের হয় তার সারাজাগানো উপন্যাস ‘দি আউটসাইডার’। বইটি লেখা হয়ছিল ফরাসিতে। এর পটভূমি আলজেরিয়া। আউটসাইডার হল এক আলজিরীয় যুবক, নাম- মারসো। এই যুবকটিকে প্রায় ৮ দশক আগে নির্মাণ করা হলেও বর্তমানে আরো বেশি প্রাসঙ্গিক। সে আবেগহীন। তার আবেগহীনতার চূড়ান্ত দেখা যায় তার মায়ের মৃত্যুর সংবাদ শোনার পর। বৃদ্ধ-নিবাসে তার মায়ের আকস্মিক মৃত্যু সংবাদও তার মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া তৈরি করেনি। তাকে যেতে হয় অথবা সে যায়। নিরাসক্ত বা আবেগহীনই থাকে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করে তার ফিরে আসা পর্যন্ত। মায়ের কফিনের পাশে বসে সে ধরিয়ে ফেলতে পারে সিগারেট। সে চূড়ান্তভাবেই নিরাসক্ত এবং প্রতিক্রিয়াহীন। এইযে অস্বাভাবিকতা কিন' একজন আউটসাইডারের জন্য প্রকৃত অর্থেই যথার্থ বলেই মনে হবে, উপন্যাসটি পড়ার সময়।

মারসো‘র নিতান্তই ছোট একটি চাকুরি, একাকী আনন্দহীন জীবন। আর সপ্তাহান্তে গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে সময় কাটানো। এভাবেই চলছিল। একই রকম জীবন। সপ্তাহান্তে অস'ায়ী গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে সমুদ্র সৈকতে গিয়ে ঘটনাচক্রে একটি খুন করে ফেলে। প্রথম পর্বের সমাপ্তি এখানেই। কিন' বইটির মূল আকর্ষণ মারসো‘র গ্রেফতার হওয়ার পর। নিঃসঙ্গ প্রকোষ্ঠকেই মনে হয় তার যথার্থ জায়গা। বিচারক, উকিলের সাথে একজন আউটসাইডারের আচরণকে পারফেক্টই বলতে হবে। ছোট্ট সেল তার জন্য খুবই উপযোগী হয়ে উঠে। ফাঁসির আগে পাদরী এসে যখন বলে, ‘তার উপর অপরাধের যে বোঝা চেপে আছে যা থেকে অবশ্যই তাকে মুক্তি পেতে হবে’। পাদরীর মতে, ‘মানুষের বিচার মূল্যহীন; শুধু ঈশ্বরের বিচারে যায় আসে’। মারসো বলে, ‘পূর্বোক্তটি আমায় অভিযুক্ত করেছে’। পাদরী বলে, ‘কিন' তা তাকে পাপ থেকে মুক্তি দেয়নি’। মারসো বলে, ‘পাপ সম্পর্কে আমি সচেতন নই; যা জানি তা হল, ফৌজদারি অপরাধের জন্যে আমি অভিযুক্ত। এবং আমি সেই অপরাধের দাম দিচ্ছি এবং কারও অধিকার নেই আমার থেকে এর চেয়ে বেশিকিছু আশা করা’। একজন আউটসাইডার মারসো পৃথিবীর মানুষের কাছে অর্থহীন, অনুপযোগী। কিন্তু কাম্যুর সৃষ্টি হিসাবে অনন্য এবং অমর। এরকম একটি জটিল চরিত্র নিখুঁতভাবে সৃষ্টি করা শুধু কাম্যুর পক্ষেই সম্ভব ছিল।

মারসো প্রতিভাহীন নিষ্পৃহ সুপুরুষ। উত্তর আফ্রিকার এই শক্তিমান লেখকের শ্রেষ্ঠ উপন্যাসের মূলশক্তি হল এর নির্মাণশৈলীর শ্রেষ্ঠত্বে। মারসোর ফাঁসি হলেও তিনি সাহিত্যে অমর হয়েই থাকবেন। দেয়ালের একটি দাগ বা ফোকর দিয়ে দেখা এক চিলতে আকাশও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণটা শিখি মরসোর কাছ থেকেই। ব্যাপার না, আমার কিছু যায় আসে না- এমন একটা ভাবও মানুষকে চিন্তারোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে। বহুবিধ কারণেই দি আউটসাইডার পাঠ আবশ্যক বলেই মনে করি। সমাজের বিভিন্ন মানুষকে পর্যবেক্ষণ করার অনেক কৌশল শিখিয়ে দিবে আপনাকে। আউটসাইডার মরসোকেও এবং শেষ পর্যন্ত কোন মানুষকেই আর অপরাধী মনে হবে না।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৫৩

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:

আমার ফরাসি ভাষা শেখা শেষ হলে আমি মূল বইটি ফরাসি থেকে পড়বো।

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৩৭

মুজিব রহমান বলেছেন: বাহ! চমৎকার সৌভাগ্য আপনার। ফরাসি জানে এবং মূল বই পড়েছে এমন একজনের কাছে শুনেছিলাম- আসল স্বাদ নাকি ফরাসিতে পড়ায়!

২| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:০১

ৎঁৎঁৎঁ বলেছেন: পছন্দের একটি বই, আবারও পড়তে চাই। বাংলায় কার অনুবাদ আপনার ভালো লেগেছে? যতদূর মনে হয় কবীর চৌধুরীর একটা অনুবাদ পড়েছিলাম।

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৩৮

মুজিব রহমান বলেছেন: আমি কয়েকবার পড়েছি কয়েকজনের অনুবাদ। অনুবাদ সমস্যা তেমন করেনি। যে প্রচ্ছদটি দিয়েছি এটাও পড়েছি।

৩| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১২:০০

রাজীব নুর বলেছেন: পড়েছি। অতি চমৎকার বই। সকলের পড়া উচিত।

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:০৭

মুজিব রহমান বলেছেন: সহমত! জীবনকে বুঝার জন্য, অন্য মানুষকে বুঝার জন্য বইটি পড়া দরকার।

৪| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:০৬

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: বই কিনলাম আর পড়ে ফেললাম এমন কোন কঠিন বিষয় না,আন্তরে ধারন করাটা কঠিন।

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:০৬

মুজিব রহমান বলেছেন: এমন একটি বই যদি পড়ে ফেলা যায় তবে অন্তরে কিছু থেকেই যাবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.