নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

মুজিব রহমান

মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ

মুজিব রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

যে বাংলা উপন্যাসে মার্কেজের ছায়া ছিল!

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৪৪


গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের ‘নিঃসঙ্গতার একশো বছর, পড়ে মনে হবে যেনো মার্কেজ নিজেই নির্মাণ করেছেন একটি নগর সভ্যতা একটি পরিবারের মধ্য দিয়ে। কোন পরিবারের ৬ প্রজন্মের গল্প টেনে নেয়া সহজ নয়। আর যেখানে এক বিরান ভূমিতে নতুন বসতি শুরু হওয়া এবং দ্রুত অগ্রসর হওয়ার কারণে তাদের জীবন যাপনের দ্রুত পরিবর্তন হওয়া, আচরণের পরিবর্তন, প্রভাব-প্রতিপত্তির পরিবর্তন নিখুঁতভাবে চিত্রিত করা খুবই জটিল কাজ। সে কাজটি একটি নতুন পদ্ধতিতে উপস্থাপন করা দুঃসাধ্যই। তিনিই সম্ভবত সর্বপ্রথম জাদুবাস্তবতা সফল প্রয়োগ করেছিলেন এই উপন্যাসে। এজন্যই তাঁকে জাদুবাস্তবতার নিপুণ কারিগর বলা হয়। মার্কেজের উপন্যাসে পুরুষদের নামগুলো বেশ খটমটে। শুধু পরিবারটির নাম বুয়েন্দিয়া বলেই মনে আছে। সেই পরিবারের প্রথম পুরুষ যিনি তার অনুসারীদের নিয়ে পত্তন ঘটান নতুন নগরীর। তিনি নিজে একজন গবেষক/বিজ্ঞানীও ছিলেন। আবিষ্কার করে ফেলেন পৃথিবী গোলাকার এবং স্বর্ণ বানানোসহ আরো কিছু আবিষ্কারের ব্যর্থ চেষ্টা করেন। তার স্ত্রী উরসুলা শতায়ু হন। উপন্যাস জুড়েই চমকপ্রদ সব ঘটনা ঘটতে থাকে। মনে হয় একটি উপন্যাসের ভিতরে সেটে দেয়া হয়েছে আরো দশটি উপন্যাস। মার্কেজ অনবরত জটিল ঘটনা উপস্থাপন করতে থাকেন সেগুলো বাস্তব, না বাস্তব নয় তা নিয়ে ধুয়াশা তৈরি হয়। উরসুলার প্রথম পুত্রর কথাই ধরি, যিনি ২৮ টি যুদ্ধ করে সবগুলোতেই পরাজিত হয়েছেন, ৪টি ফায়ারিং মঞ্চ থেকে বেঁচে এসেছেন এবং যার বিশ্বজুড়ে ১৭জন স্ত্রীর গর্ভে রয়েছে ১৭জন পুত্র যারা একবার এই নগরিতে একত্রিতও হয়েছিলেন। তিনি শেষ পর্যন্ত সবকিছু ছেড়ে বানাতে থাকেন স্বর্ণের মাছ।

উপন্যাস জুড়ে যৌনতার ঘনঘটা। ওই সমাজে এটা মেনে নেয়াটাই যেন স্বাভাবিক। কার সাথে কে সেক্স করতে পারে, আর পারে না তার কোন তোয়াক্কা নেই। ফুপুর সাথে, কিংবা এক নারীর সাথে দুই ভাই এবং সেই নারীর কাছেই যৌনক্ষুধা মেটাতে আসে তারই সন্তান। দুই ভাইয়েরই সন্তানই জন্ম দেন ওই নারী। বড়ই অদ্ভুতড়ে ব্যাপার। উরসুলা অনেকবারই এসব যৌনাচারের কারণে আশঙ্কা করেন তাদের বংশে একটি লেজওয়ালা পুত্র জন্মাবে। বিস্ময়করভাবেই শূকরের লেজযুক্ত একটি পুত্রও জন্মায় ওই পরিবারে। তাকে রেখে বাইরে থেকে ঘুরে এসে দেখে পিঁপড়ায় শিশুটিকে টেনে নিয়ে গেছে।

উপন্যাসে ফিরে আরে পুনরাবৃত্তি। যে বুয়েন্দিয়া পরিবার নতুন নগরের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কখনো সেই নগরী তাদের পরিবারের অধিনে থাকে, কখনো তারা থাকে বিপন্ন। একসময় পরিবারটি নিঃশ্বেষ হয়ে যায়। উপন্যাসটি রচিত হওয়ার পর অর্ধ শতাব্দির বেশি অতিক্রান্ত হয়েছে কিন্তু এর চাহিদা শেষ হয়ে যায় নি। দিন গড়িয়েছে আর তাঁর বইটির চাহিদা বেড়েছে। এখন মনে করা হয়, ‘নিঃসঙ্গতার একশো বছর’ উপন্যাসটিই পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া সিরিয়াস ধারার উপন্যাস। উপন্যাসটির ক্ষেত্রে বলা যায়, এটি জাদুর গোলক ধাঁধায় ঢুকে যাওয়ার মতো। ঢুকলে আর বের হতে পারবেন না। একসময় উপন্যাসটিই ঢুকে যাবে আপনার ভিতরে। জাদুবাস্তবতার সংজ্ঞা কি? আপনি জানেন? আমি জানি অথবা জানি না, তবে উদাহরণ দিতে পারি, ‘নিঃসঙ্গতার একশো বছর’ উপন্যাসটি পড়লেই বুঝতে পারা যায় জাদুবাস্তবতা কি?

কখনো ভাবতেই পারি নি এমন জাদুবাস্তবতার সফল প্রয়োগ ঘটিয়ে বাংলায় কেউ একটি উপন্যাস লিখতে পারবে। শহীদুল জহিরের ‘সে রাতে পূর্ণিমা ছিল’ পড়ে মনে হয়েছিল- হ্যাঁ, হয়েছে সফল প্রয়োগ। উপন্যাসটিতে আমি মার্কেজের ছায়া উপভোগ করেছি। গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের ‘নিঃসঙ্গতার একশত বছর’ পড়ে আফসোস হয়েছিল, বইটি সম্পূর্ণ উপভোগ করার জন্য- হায়! যদি ল্যাটিন মানে স্প্যানিশ জানতাম! একটি রাষ্ট্র গড়ে উঠা এবং একইসাথে একটি পরিবারের আচার, কুসংস্কার, বাস্তবতা-পরাবাস্তবতা, যৌনাচারের এক মহাকাব্যিক আখ্যান, জি.এইচ. হাবীবের ভাল অনুবাদে পড়েও মনে হয়েছিল, কোথায় যেনো ঘাটতি আছে, তাই অতৃপ্তি ছিল। অতৃপ্তি উত্তরণের পথ হয়তো স্প্যানিশ জানতে পারা, তবে এই অতৃপ্তি দূর হয়েছিল শহীদুল জহিরের ‘সে রাতে পূর্ণিমা ছিল’ উপন্যাসটি পড়ে; যেখানে আখ্যানকে ছিড়ে টুকরো টুকরো করে সেই খণ্ডগুলোকে বাতাসে উড়িয়ে দিয়ে, যখন যেটা হাতে আসে তা উপস্থাপন করেন আর এগিয়ে যান সুনিপুণ দক্ষতায়, এক বিস্ময়কর অলৌকিক সূত্রধর হিসাবে। আমার কাছে স্পষ্টতই মনে হয়েছিল শহীদুল জহির মার্কেজের যাদুবাস্তবতায় মুগ্ধ হয়েই লিখেছেন ‘সে রাতে পূর্ণিমা ছিল’ এবং সম্পূর্ণ সফল হয়েছেন। এভাবে একটি উপন্যাস উপস্থাপন করা চাট্টিখানি কথা নয়, মেধা এবং ভাষার দখল চাই এবং তার সংমিশ্রণ ঘটানো দক্ষতা চাই। তিনিও পাঠককে মোহাচ্ছন্ন করে রাখেন সুদীর্ঘসময়কাল। হয়তো ১শ বছর নয় তবে তার কাছাকাছি সময়ের আখ্যান গ্রামের মানুষের চোখ দিয়ে দেখা বা শোনা কথা। বাংলাভাষায় লেখা যাদুবাস্তবতার সবচেয়ে সফল নাকি সকল হিসাবেই সফলতম উপন্যাস যা পড়া শেষ করেও বহুদিন ভাবতে হয়- এই যে, বহুদিন পড়েও ভাবছি, ভাববো- কিভাবে লেখতে পারলেন ‘নিঃসঙ্গতার একশত বছর’ বা ‘সে রাতে পূর্ণিমা ছিল’। ‘সে রাতে পূর্ণিমা ছিল’ পড়ে মনে হয়েছিল, বাংলা ভাষা জানি বলেই, সম্পূর্ণ তৃপ্তি নিয়ে পাঠ করা গেল একটি মহৎ উপন্যাস!

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:০৪

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: আপনার বিশ্লেষণ ভাল লেগেছে। ধন্যবাদ নিন।

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ ভোর ৬:৪৩

মুজিব রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।
সে রাতে পূর্ণিমা ছিল উপন্যাসটি আরো আলোচিত ও পঠিত হওয়া প্রত্যাশিত ছিল। তবে এটি পাঠ করার মতো পাঠকই হয়তো কম রয়েছে।

২| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:১৩

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: The Canterbury Tales এর বাংলা অনুবাদের কিছু বিক্ষিপ্ত অংশ মনে হয় লাইব্রেরীতে ছোটকালে পড়েছিলাম। এই ব্যাপারে জানলে লিখবেন দয়া করে। আমার শুধু নামটা মনে আছে।

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ ভোর ৬:৪৪

মুজিব রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ।
এ বইটি পড়েছি সেবার অনুবাদ। অনুবাদ সাহিত্য নিয়ে লিখবো।

৩| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৩৯

রাজীব নুর বলেছেন: সুখপাঠ্য।

আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ ভোর ৬:৪৪

মুজিব রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও।

৪| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ ভোর ৪:৩০

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: বইটির অনুবাদ নিয়মিত বের হয় বিডি নিউজ ২৪য়ে।অনুবাদ করেন শুসাহিত্যিক আনিসুজ্জামান।তখন পড়া।

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ ভোর ৬:৪৬

মুজিব রহমান বলেছেন: সেটাও খেয়াল করেছি। শতাধীক পর্ব। ওভাবে পড়া আমার পোষায় না।

৫| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ ভোর ৪:৩১

সেনসেই বলেছেন: চমৎকার পোস্ট

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ ভোর ৬:৪৭

মুজিব রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ।

৬| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ ভোর ৪:২৩

সেনসেই বলেছেন: ভালো লাগলো

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৬

মুজিব রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.