![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ
আমার হিন্দু বন্ধুদের মধ্যে অধিকাংশই নিম্নবর্ণের শূদ্র। উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের মধ্যে বামুন-ঠাকুর ব্যতিত অন্যদের তেমন একটা খুঁজে পাওয়া যায় না বাংলাদেশে। বন্দোপাধ্যায়, চট্টপাধ্যায়, মুখোপাধ্যায়, ভট্টাচার্যদের সংখ্যা একেবারেই কম। এদেশে ক্ষত্রিয় আগে থেকেই নেই। কিছু বৈশ্য সম্প্রদায়ের মানুষ দেখা যায়। দেশে বসবাসকারী হিন্দুদের সিংহভাগই শূদ্র। বাংলাদেশের হিন্দুদের প্রধান পূজা দুর্গা পূজা। শূদ্রদের অনেকেই এই পূজার আয়োজক। আমাদের গ্রামের তিনটি পূজার দুটির সম্পূর্ণ আয়োজকই তারা। অন্যটির নেতৃত্বেও তারা রয়েছেন। অথচ একসময় শূদ্রদের পূজা করার অধিকারই ছিল না। তাদের বেদ পাঠতো দূরের কথা, শোনারও অধিকার ছিল না। এমনকি একজন শূদ্র যদি ব্রাহ্মণের জন্য সংরক্ষিত আসনে বসে পড়তো, তবে তার বুকে গরম লৌহদণ্ডের ছ্যাকা দেয়া হতো অথবা পশ্চাৎদেশ কর্তন করে নেয়া হতো। এখন সেই শূদ্রদেরই দেখি হিন্দু ধর্মকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রধান ভূমিকা পালন করতে। তাদেরই দেখি অন্য ধর্মের প্রতি অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক হতে আবার নির্যাতিতও হতে।
মনুসংহিতায় রয়েছে- পরমেশ্বর নিজের মুখ থেকে ব্রাহ্মণ, বাহু থেকে ক্ষত্রিয়, উরু থেকে বৈশ্য আর পা থেকে শূদ্র সৃষ্টি করেছেন। এখানে বলা হয়েছে, দাসত্বের কাজ করার জন্যই বিধাতা শূদ্রদের সৃষ্টি করেছেন। মনুর বিধান হল- শূদ্রদের উপার্জিত ধন সম্পত্তি নিজেদের ভোগেরও অধিকার থাকবে না। সব উপার্জিত ধন দাস-মালিকরা (উচ্চ বর্ণের হিন্দুরা)ই গ্রহণ করবে। তিন বর্ণের মানুষের ক্রীতদাস হয়ে সেবা প্রদান করবার জন্যই তাদের জন্ম। তিন বর্ণের মানুষদের থেকে শূদ্ররা যে ভিন্নতর জীব তা জানানোর জন্য, প্রতি মাসে মাথার সব চুল কামিয়ে ফেলবার নির্দেশ রয়েছে। আজকের শূদ্ররা মনুর কথাকে অগ্রহ্য করে মহাপাতকের কাজ করে চলছে এটা বলা যায়। তবে তারা যে নিজেদের বদলে নিতে পেরেছে এটাও কম কথা নয়, এটা একটা উত্তরণই। এতে বর্ণপ্রথার তীব্রতা কিছুটা ম্লান হয়েছে।
ভারত ভাগের আগে ব্রাহ্মণরাই ছিল সমাজের অগ্রসর অংশ। কলকাতার উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বন্দ্যোপাধ্যায়-চট্টপাধ্যায়দের সংখ্যাই ছিল অর্ধেকের বেশি। এরাসহ অগ্রসর হিন্দুরাই বাংলাদেশের পাঠাগার ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো গড়ে তুলেছিলেন। অনেকে প্রগতিশীল রাজনীতি করেছেন। এই অংশটা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়াতে আমাদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। পাঠাগার ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে যায়। প্রগতিশীল নেতৃত্বে শূন্যতা তৈরি হয়। জ্যোতি বসু-বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যরা কলকাতায় গিয়ে সিপিএমকে শক্তিশালী করে তুলেন। আমাদের বাম সংগঠনগুলো নেতৃত্বশূন্যতা থেকে বের হতে পারেনি আর। সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা হয় সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। এদেশে দুই ধর্মের মানুষই মৌলবাদের চর্চাটাই করছে, সংস্কৃতিটাকে দূরে সরিয়ে। শূদ্রদের মধ্যে প্রগতিশীল মানুষ পাওয়া দুষ্করই, অথচ তাদেরই নিজেদের স্বার্থেই প্রয়োজন ছিল প্রগতিশীল হওয়া। তবে প্রগতিশীল হওয়াওতো সহজ নয়। এজন্য প্রচুর পড়াশোনা ও অনুশীলন প্রয়োজন। একদা এই পড়াশোনা আর অনুশীলনের মধ্যে ছিলেন ওই উচ্চ বর্ণের হিন্দুরাই। আমাদের বিক্রমপুরের স্যার জগদীশচন্দ্র বসু, সরোজিনী নাইডু, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব বসু, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সঞ্জিব চট্টোপাধ্যায়, জয়ন্তানুজ বন্দ্যোপাধ্যায়, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, সমরেশ বসু, সিদ্ধার্থ শংকর রায়, চিত্তরঞ্জন (সি.আর.) দাশ, সত্যেন সেন, জ্ঞান চক্রবর্তী, কালী প্রসন্ন ঘোষ, প্রতিভা বসু, হরিআনন্দ বাড়রি, স্যার চন্দ্রমাধব ঘোষ, অতুল প্রসাদ সেন, শ্রেয়া ঘোষাল এবং আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব যারা প্রায় সবাই উচ্চ বর্ণের তারা দেশ ছেড়েছিলেন। তাঁরাই বাংলাদেশের পরিবর্তে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি-সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আলো ছড়িয়েছিলেন। এই শূন্যতা আর পূরণ হয়নি, হতে আরো সময় লাগবে।
২৪ শে অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১০:৫১
মুজিব রহমান বলেছেন: বিক্রমপুর বিখ্যাত এ কারণেই। আরো অনেক নাম লেখার সময় মনে আসেনি।
২| ২৪ শে অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১২:৪৮
রাজীব নুর বলেছেন: নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: বিক্রমপুর দেখি সোনারখনি।
আমি সোনারখনি অঞ্চলের মানুষ।
২৪ শে অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৩:২২
মুজিব রহমান বলেছেন: আপনিও সোনার মানুষ।
ভালবাসা, ভাল থাকুন।
৩| ২৪ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ৮:৪২
স্থিতধী বলেছেন: এই পূজাগূলোকে কে সার্বজনীন করার চেষ্টাও কোন কালে হতোনা যদিনা এ অঞ্চলে বৈদ্ধ ধর্ম আর ইসলামের আবির্ভাব না ঘটতো। এই দুই ধর্মের কাছে আরো হিন্দুর ধর্মান্তরিত হওয়ার আশঙ্কা দেখেই ঐ সংস্কার করা হয়। নিম্ন বর্ণের হিন্দুরা কিছুটা ছাড় পাওয়া শুরু করে। ভারতে তো আজও দলিত শ্রেনীর করুণ দশা করে রাখা হয়েছে ।
শীর্ষেন্দু আর সঞ্জীব আমার প্রিয় দুই লেখক। শ্রেয়া ঘোষালের বাবার বাড়ি যতদুর জানতাম আমাদের উত্তরবঙ্গে, পাবনা বা তার কাছাকাছি কোথাও, আমার অবশ্য ভুল হতে পারে।
২৪ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ৯:৪৮
মুজিব রহমান বলেছেন: শ্রেয়া ঘোষালের পৈতৃক বাড়ি বিক্রমপুরের হাঁসাড়া গ্রামে।
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১০:২৬
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: বিক্রমপুর দেখি সোনারখনি।