নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনেক অসাধারণের ভিড়ে আমি এক সাধারণ।

মনিরুজ্জামান স্বপন

যুক্তি বিশ্বাস করিনা আমি, তবুও যুক্তি খোঁজে ফিরি।

মনিরুজ্জামান স্বপন › বিস্তারিত পোস্টঃ

হাবীব সাহেবের লেগুনা ভ্রমন

০২ রা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:১০

তুমি কি আকাশপথে কাশিমপুর যাইবা মিয়া? তোমার গাড়ি কি পংখিরাজ? একটা থাবর দিয়া চাপার সবগুলান দাঁত ফেলাইয়া দিমু। আমার লগে ফাইজলামি কর? ফাইজলামি তোমার --- দিয়া হান্দাইয়া দিমু।



রাত দশটা ত্রিশ। নরসিংহপুর লেগুনা ষ্ট্যান্ডে প্রায় চল্লিশ মিনিট থেকে দাড়িয়ে আছেন হাবীব সাহেব। অপেক্ষা মধুর কোন বিষয় নয়। তবুও তিনি একটা লেগুনার জন্য অপেক্ষা করছেন। তাকে কাশিমপুর যেতে হবে। চারটা সিগারেট শেষ হওয়ার পর একটা লেগুনা পাওয়া গেল। সেটা নিয়েও জটিল সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। লেগুনার ড্রাইবার পথের কোন যাত্রী নিতে চাচ্ছেননা। পথের যাত্রী জোড় করেই গাড়িতে ওঠতে চাচ্ছে। তাদের মধ্যে একজন আবার হেলপারের সবগুলো দাঁত ফেলে দিতে চাচ্ছেন।



যে ভদ্রলোক দাঁত ফেলে দিবার মত জটিল কাজটি করতে চাচ্ছেন তিনি এই অঞ্চলেরই একজন বিশেষ ব্যাক্তি । এটা বুঝার জন্য বিশেষ জ্ঞানের দরকার হয়না। হাবীব সাহেবের মত বোকা লোকও তা বুঝতে পারছেন। এরকম পরিবেশে নিরব থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। হাবীব সাহেব নিরবে ব্যাপারগুলো দেখছেন আর মনে মনে হাসছেন। বিষয়টি এমন যে তিনি ভয়ঙ্কর মজার কোন দৃশ্য দেখছেন। দৃশ্যটি আর মজার থাকল না যখন ড্রাইভার বলল 'গাড়ি যাইবনা আপনেরা অন্য ব্যবস্থা দেহেন'। সঙ্গে সঙ্গে বিশেষ ব্যাক্তিটি ড্রাইভারের দিকে তেড়ে গেলেন।

-গাড়ি যাইবনা মানে, মগের মুল্লক পাইছ? তুমি যাইবা তোমার বাপ যাইব। একটা থাবরা দিয়া কান তবদা লাগাইয়া দিমু।

-বাপ তোইলা কথা কন কেরে, খবরদার! বাপ তোলবেননা। আমার বাপ গাড়ি চালাইতে আহে নাই মিয়া।

-কি কইলি শুয়ার। আমারে মিয়া কও? মিয়া তোমার ---- দিয়া দিব শুয়ার।

কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনি ড্রাইভারের গালে একটা থাপ্পর মেরে দিলেন। ড্রাইভার স্তম্ভিত হয়ে গেল। সে হয়ত বুঝতেই পারেনি যে ব্যাপারটা থাপ্পর পর্যন্ত গড়াতে পারে। এখানেই শেষ হলে ভাল হত কিন্তু হলনা। এমনিতেই লোকজনের মোটামোটি ভিড় লেগেছিল। ভিড় আরো বেড়ে দ্বিগুন হল। নিতান্ত ভাল মানুষও এখন ড্রাইভারকে মারতে চাচ্ছে। মারবেই বা না কেন। এতগুলো মানুষ এখানে শীতের মধ্যে দাড়িয়ে আছে আর বেটা বলছে কি-না গাড়ি যাবেনা! এতবড় স্পর্ধা কি মেনে নেয়া যায়? না, এ স্পর্ধা মেনে নেয়নি কেউ। তাকে আরো দুটা থাপ্পর দিয়ে, কান ধরে ড্রাইভিং সীটে বসানো হল।

-অ মিয়া সাবরা, আপনেরা গাড়িতে ওডেন। ডাইভর যাইব, ডাইভরের বাপ যাইব। আমার বুকের উপরে দিয়া গাড়ি চালায়। আবার আমার লগেই ভাব লয়! এইডাতো আমি মাইন্যা লইবার পারিনা। তয় একখান কথা মিয়া সাবরা, যেইখানেই যাইতে চাইন ভাড়া কিন্তু বিশ টেকাই দেওন লাগব।

বিশেষ ব্যাক্তির আহবানে প্রায় সবাই গাড়িতে ওঠল। দুই একজন ভাড়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি। তারা প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছিল কোন লাভ হয়নি। ভদ্রলোকের এক কথা- 'গেলে যাও না গেলে নাই, ভাড়া বিশ টেকা'। দ্বিগুন ভাড়ার বিষয়টি হাবীব সাহেব মানতে না পারলেও গাড়িতে ওঠলেন। কারন এই মূহুর্তে টাকা বড় কথা নয়, বড় কথা বাসায় পৌছানো।



বিরস মনে ড্রাইভার গাড়ি ছেড়ে দিল। চৌদ্দ সীটের গাড়িতে লোক ওঠল প্রায় বিশ-বাইশজন। চারজন আবার পেছন দিকে বানরঝুলা হয়ে রইল। যে কোন সময় একটা দুর্ঘটনা ঘটে যাবার সম্ভাবনা । সেদিকে কারো খেয়াল নেই। এখন একমাত্র চিন্তা হচ্ছে বাসায় পৌাছানো, সেটা যে করেই হোক।



মিয়া সাবরা এমন তবদা মারলেন কেন? তবদা মাইরা গাড়িতে বইসা থাকতে আমার ভাল্লাগেনা। এই ছ্যাড়া রাস্তার যাত্রিগ থাইকা ভাড়া তোল। বিশেষ ব্যাক্তির কথায় গাড়ির থমথমে পরিবেশটা হালকা হয়ে গেল।

হেলপার ফ্যাকাসে মুখে ভাড়া তুলতে আরম্ভ করল। দুই তিন জনের ভাড়া ওঠানোর পরপর হেলাপার বেচারার ফ্যাকাসে মুখ কিছুটা আলোকিত হল। কিন্ত সেই আলো দীর্ঘস্থায়ী হলনা। একজন যাত্রী কিছুতেই দ্বিগুন ভাড়া দিতে রাজি হচ্ছেনা। তার সাথে আরো দুজন যোগ হল। একজন বলল-

'কেন দেব দিগুন ভাড়া? ওরা পাইছেটা কী? দেশটা কী মগের মুল্লক'?



আরেক জন আগুনে ঘী ঢাললেন- ঠিকই কইছেন ভাই, ওরা আমাগো মগ পাইছে! দুই ঈদে কয় বোনাস দেও! একটু রাত হইলে কয় ভাড়া দ্বিগুন লাগব! রাস্তায় সামান্য কাঁদা হইলে-এক টাকার ভাড়া পাঁচ টাকা চায়! কেনরে ভাই? টাকা কী --- আসে?



দ্বিতীয় ব্যাক্তির শেষ বাক্যটি হেলপারের আত্মসম্মানে মারাত্মকভাবে আঘাত করেছে। সে ফোঁস করে ওঠল-অ মিয়া মুখ খারাপ করেন ক্যান? আমরা কি আপনাগো থেইক্যা জোড় কইরা টেকা লই না-কি? গেলে যাবেন না--।

হেলপার কথা শেষ করার আগেই প্রথম ব্যাক্তি ওর দিকে তেড়ে আসছিল, ঠিক তখন-ই বিশেষ ব্যাক্তিটি বললেন -'এই গাড়ি বেরেক করতে ক, আমি নামমু'।

গাড়ি থামল। ভদ্রলোক অবলীলায় গাড়ি থেকে নেমে গেলেন। হেলপার তার চলে যাওয়ার পথে ওয়াক থু বলে বড় করে থুতু ফেলল। হাবীব সাহেব হেলপারের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলেন।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৪১

দীঘল গঁাােয়র েছেল বলেছেন: সুন্দর গল্প। হুমায়নী রং।

২| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:২৭

মনিরুজ্জামান স্বপন বলেছেন: ধন্যবাদ ৷

৩| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:১২

কলমের কালি শেষ বলেছেন: ভালো লাগলো গল্পে ।

৪| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৪৪

মনিরুজ্জামান স্বপন বলেছেন: thank you

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.