![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যুক্তি বিশ্বাস করিনা আমি, তবুও যুক্তি খোঁজে ফিরি।
তানজিম শুয়ে আছে চিৎ হয়ে। মনোবিজ্ঞানের খোলা বইটি পরে আছে তার চোখ-মুখের উপর। কিছুক্ষন আগে সে এটি পড়তেছিল। এখন সে পড়ছেনা, শিশিড় পাতের শব্দ শোনছে। প্রচন্ড শীতের রাত। সময় এগারটা চল্লিশের মত হবে। টিনের চালে টিপটপ ছন্দ তোলে শিশির ঝরছে। শিশির পাতের শব্দ শোনতে বেশ ভালই লাগছে। মাঝে মধ্যে একটা কুকুর ডেকে ওঠছে মারাত্মক রকমের করুন করে। হতে পারে কুকুরটা শীতে কষ্ট পাচ্ছে। দুই মিনিট থেকেই থেমে থেমে জানালায় একটা শব্দ হচ্ছে। কেউ অতি সাবধানে জানলায় টোকা দিচ্ছে এটা বুঝতে কষ্ট হচ্ছেনা। কিন্তু কে হতে পারে এত রাতে! তানজিম বুঝার চেষ্টা করছে বুঝতে পারছেনা। জানালায় আরেকবার টোকা পরল। এবার আগের চেয়ে সামান্য বেশি শব্দ হল।
তানজিম থাকে কলেজ হোস্টেলের দুই নম্বর ভবনের একপাশের একটি কামরায়। ভাল ছাত্র হতে পারার কারনে প্রিন্সিপাল স্যার তাকে খুব ভালবাসেন। স্যার ভালবাসেন বলেই সে একাই একটা রুম পেয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার, পরশু কিসের যেন একটা দিবস বলে হোস্টেলে কেউ নেই। সম্পূর্ণ হোস্টেল ফাঁকা। সামান্য ভুল বললাম। পাশের রুমে দুজন প্রথম বর্ষের ছাত্র আছে শুধু। ওরা বোধ হয় ঘুমোচ্ছে। প্রথম বর্ষের প্রায় সব ছাত্রই এইসময় ঘুমিয়ে পরে। কলেজ জীবনের প্রথম বছরে সবার মনেই রং থাকে। তারা সবকিছুতেই রং খোঁজে ফিরে। লেখাপড়ার চেয়ে মেয়ে বান্ধবীদের প্রতি বেশি আগ্রহী হয়। রাতে রঙ্গীন স্বপ্ন দেখতে দেখতে সুখনিদ্রায় যায়। এ নিদ্রা সহজে ভাঙ্গেনা। পাশের রুমের জানালায় সামান্য টোকার শব্দে ওদের ঘুম ভাঙ্গার তো প্রশ্নই আসেনা।
তানজিম সামান্য হলেও ভয় পেয়েছে। ভূতের ভয় নয়, সে ভূত বিশ্বাস করে কিন্তু ভয় পায়না। সে ভয় পাচ্ছে মানুষকে। মানুষ এখন নেমে এসেছে পশুর পর্যায়ে। মানুষ করতে পারেনা, এমন জঘন্য কাজ নেই পৃথিবীতে। সামান্য তেরশ টাকা মূল্যের একটি মোবাইল ফোনের জন্য আজকাল মানুষ মানুষকে খুন পর্যন্ত করে ফেলে। ভাবতেই গায়ে কাঁটা দেয়। কি ভয়ানক! তানজিমের ভয়ের মাত্রা বাড়তে লাগল। আবার জানালায় টোকা পরল। এবার জানালার ওপাশে পুরুষ মানুষের দীর্ঘ নিঃশ্বাসের শব্দ পাওয়া গেল। তানজিমের ভয় হঠাৎ করেই কমে গেল। কেননা, বাইরে যে আছে, সে নিশ্চয় খারাপ মানুষ হবেনা। খারাপ হলে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলতোনা। তার ধারনা জগতে যারা খারাপ তারা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলেনা। শুধু ভাল মানুষই হতাশায় পরলে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে।
চোখের উপর থেকে বইটা টেবিলে রেখে বিছানা ছেরে ওঠে হালকা গলায় বলল- 'কে বাইরে'?
বাহিরে আস, আমি তোমার---। ফিসফিস করে কিছু একটা বলল লোকটি। তানজিম শোনতে পেলনা। শুধু বুঝতে পারল তার পরিচিত কেউ হবে। সে দরজা খোলে বা্হিরে বের হয়ে এল। কোয়াশা আর জোছনা মিলে একটা ভয়ংকর সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। বারান্দায় একজন দাড়িয়ে আছে। তার আপাদমস্তক চাদরে ডাকা, চোখ দুটা শুধু দেখা যাচ্ছে। চোখ দেখে মানুষ চেনা যায়না। কিন্তু তানজিম আগন্তুককে চিনতে পারছে। তিনি ওদের বাংলা বিভাগের প্রভাষক সাহেব।তিনি তাকে খুব ভালবাসেন,ভাল জানেন। অবশ্য তারমত ভাল ছাত্রদেরকে সবাই ভালবাসেন। তানজিম বুঝতে পারছে না যে, এত রাতে স্যার কেন তার কাছে এসেছেন। বিশ্ময় গোপন রেখে স্যারের দিকে এগিয়ে গেল।
- স্যার আপনি এত রাতে?
- এলাম, তোমাকে নিয়ে যাব এক জায়গায়। দ্রুত গরম কাপড় গায়ে দিয়ে আসো।
তানজিম দ্বিতীয় প্রশ্ন না করে রুমে প্রবেশ করল। মাত্র এক মিনিটে তৈরী হয়ে স্যারের সামনে এসে দাড়াল। দুজনে কলেজের প্রধান ফটক পেরিয়ে বড় রাস্তা ধরে হাটতে লাগল।
সুনশান রাস্তা। রাস্তার দুধারে ঘন বাঁশবন। তীব্র কুয়াশার কারনে ভয়ানক রকমের অন্ধকার পথ। স্যারের পাঁচ ব্যাটারী টর্চ লাইটের আলোতে দুই তিন হাত দূরের বস্তুটিও দেখা যাচ্ছে না। দুজন হাটছে, কেউ কিছু বলছে না। দূর থেকে মহিষের গাড়ীর বিচিত্র আওয়াজ আসছে। রাস্তার ডানপাশের জঙ্গলের খানিকটা ভেতরে গড়ড়ড় গড়ড়ড় করে অচেনা একটা শব্দ হল। তানজিম থ হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। স্যার হাটছে যেন কিছুই হয়নি। ভয়ঙ্কর নিরবতা ভাঙ্গল তানজিম।
-স্যার আমরা কোথায় যাচ্ছি?
-ভাবের দুনিয়ায়!
ভাবের দুনিয়ায়? তানজিম মারাত্মক রকমের একটা সখ খেল। কী বলছে লোকটা! এটা স্যারতো? না-কি স্যারের রূপে অন্য জগতের কেউ? তানজিম স্যারের পায়ের দিকে তাকাল। ভূতের শরীরের ছায়া, পায়ের পাতা থাকার কথা না। পায়ের পাতা থাকলেও গোড়ালি ওল্টা থাকার কথা। এসব বিষয় তানজিম তার দাদীর কাছ থেকে জেনেছে। দাদী নিশ্চয় মিথ্যা বলেননি। অন্ধকারে স্যারের ছায়াতো দূরের কথা পা দুটোও দেখা যাচ্ছেনা। তানজিম দাড়িয়ে গেল। স্যারও দাড়ালেন। নিজের পায়ের দিকে টর্চলাইটের আলো ফেললেন। স্যারের পা দুটো দেখা যাচ্ছে। সুন্দর একজোড়া কেড়স জুতা পায়ে। এই জুতাজোড়া তানজিমের খুব পছন্দ। স্যার বলেছেন আগামী বেতন পেলে তাকে এরকম একজোড়া জুতো কিনে দিবেন। আচ্ছা ভূতেরা কি জুতো পায়ে দেয়? সেটাতো দাদীকে জিজ্ঞেস করা হয়নি কখনো। একদিন জিজ্ঞেস করে জেনে নিতে হবে। দাদী নিশ্চয় জানেন!
-এই দেখ আমি ভূত বা অশরিরী কেউ নই! আমি তোমার স্যার। (স্যার হাসছেন)
-আমি ভূত বিষয়ে ভাবছি আপনি কিভাবে জানলেন?
-একটা গুঁইসাপ শুকনোপাতা মারিয়ে দ্রূতগতীতে রাস্তা থেকে জঙ্গলে ঢোকেছে। তুমি সেই শব্দ শুনে ভয় পেয়েছ। পথটাও অনেকটা ভৌতিক অন্ধকার। এইসময় তুমি ভূত বিষয়ে ভাববে এটাই স্বাভাবিক নয়?
-জি স্যার স্বাভাবিক। ওই শব্দটা যে গুঁইসাপের চলে যাওয়ারই ছিল তা বুঝলেন কিভাবে?
-শব্দটার সাথে আমি বেশ পরিচিত। চল হাঁটা যাক। এখনো অনেকটা পথ বাকী আছে।
স্যার হাটছেন। তানজিম স্যারকে অনুসরন করছে। দুজনেই লম্ব লম্বা পা ফেলছে। এই শীতেও তারা খানিকটা ঘেমে ওঠেছে। দূর থেকে অস্পষ্ট একটা গানের সুর ভেসে আসছে। ক্রমেই সুর স্পষ্ট হচ্ছে। এখন পরিষ্কার শুনা যাচ্ছে। গায়ক দরদী গলায় গায়ছেন-
দেখে যারে মাইজভান্ডারে হইতাছে নূরের খেলা
নূরে-মাওলা বসাইছে প্রেমের মেলা।
-স্যার একটু দাড়াতে হবে। স্যারের চাদরের কোনায় ধরে হালকা টান দিল তানজিম।
-কোন সমস্যা?
-বুঝতে পারছিনা কিভাবে বলব!
-ওমা, একি কথা! কি এমন কথা বলতে পারছনা। হিসু পেয়েছে?
-হু। অন্ধকারে মাথা নাড়ল তানজিম।
-যাও, ওখানে দাড়িয়ে কাজটা সেরে ফেল। আমি ততক্ষনে একটা সিগারেট ধরাব। আমি সিগারেট খেলে তোমার কি আপত্তি থাকবে?
তানজিম ততক্ষনে রাস্তার পাশে বসে গেছে। ছোট কাজটা শেষ করে ফিরে এসে বলল।
-আমার আপত্তি নেই, আপনি খেতে পারেন।
স্যার সিগারেট ধরালেন। একটা টান দিয়ে খোলা আকাশে ধোঁয়া ছারলেন। তারা হাটতে শুরু করেছে। চুপচাপ হাটতে ভাল লাগেনা। তানজিম কিছু একটা বলতে চাচ্ছে কিন্তু কি বলবে বুঝতে পারছেনা। নিরবতা ভাঙ্গল স্যার।
-আমরা কোথায় যাচ্ছি তোমাকে পরিষ্কার করে তখন বলিনি। রহস্য করেছিলাম। তুমি কি গান শোনতে পাচ্ছ?
-জি স্যার শুনতে পাচ্ছি।
-এসব গান তোমার ভাল লাগে?
-না স্যার, ভাল লাগেনা।
-ভাল না লাগলেও শুনবা, মন দিয়ে শুনবা। এসব গানেও ভাববার মত অনেক বিষয় থাকে।
-আমি এইসব গানে ভাববার মতো কোন বিষয় পাইনা স্যার।
-পাইবা, মন দিয়ে শোনলেই কেবল পাইবা। এখন যে গানটা হচ্ছে তা মন দিয়ে শোন।
-শোনছি, মন দিয়েই শোনছি কিন্তু বিশেষ কিছুই বুঝতে পারছিনা।
-তুমি কিছুই বুঝতে পারছনা?
স্যার আশাহত হলেন। তিনি ভেবেছিলেন তানজিমের মত ভাল ছাত্র নিশ্চয় এই গানের অর্থ বুঝবে। এখন যে গানটা হচ্ছে তার অর্থ বড়ই জটিল। মানুষ পৃথিবীতে আসতে চায়নি। জটিল কারিগড় অনেকটাই ষড়যন্ত্র করে, জোড় করে মানুষকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। দুনিয়ায় তার আচার-আচরন পূর্বেই নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যাকে যা করতে বলা হয়েছে সে তাই করবে। অনেকটাই মঞ্চনাটকের অভিনয়ের মত। পরিচালকের আদেশের একচুলও এদিক সেদিক হবার উপায় নেই! পরিচালকের আদেশই শেষ কথা! মানুষ চালিত হবে পরিচালকের বিচিত্র খেয়াল খুশিতে! মানুষ শেষ ঠিকানায় ফিরে যেতে চায়না। পরিচালক জোড়করেই প্রস্থান করিয়ে দেন। সবকিছু তাঁর ইচ্ছাতে হলেও মানুষেরই কৃতকর্মের বিচার হবে! কি ভয়ানক অবিচার! গানে এসব বিষই বলা হয়েছে। বিষয়বস্তু বড়ই জটিল। এসব জটিল বিষয় বেশি ভাবতে ভাল লাগেনা।
এসব গানে ঢোল, তবলা, বাঁশিসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার হয়। এসব বাদ্যের শব্দ মানুষের শরিরে এক ধরনের তরঙ্গের মত সৃষ্টি করে। এখন একটা গান হচ্ছে। গানের কথাগুলো পরিষ্কার শোনা যাচ্ছে। গায়ক মমতা মেশানো সুরে গাইছে "মন্দিরে দেবতা নাই রে অন্তরে খোঁজ তাঁরে রে"। বাঁশির সুর সরাসরি মাথার মগজে আঘাত করছে। সে সুর বড়ই দুখের। তারা হয়ত গন্তব্যের খুব কাছেই চলে এসেছে।
তানজিম, আমরা চলে এসেছি।
আমি বুঝতে পারছি স্যার।
তোমাকে একটা কাজ করতে দেব, পারবে?
পারব স্যার।
কি কাজ দেব তাতো বলিনি, পারব বলছ কিভাবে?
জানিনা স্যার। তবে পারব, আপনি বলুন কি করতে হবে।
একটা রিকসা অথবা ভ্যান বাকি রাতটার জন্য ভাড়া করতে হবে।
রিকসা ভ্যান দিয়ে কি হবে স্যার?
আমরা রিকসায় বসে অনুষ্ঠান দেখব আর শুনব।
ঠিক আছে স্যার আমি দেখছি কি করতে পারি।
তানজিম রিকসা ঠিক করতে চলে গেল। স্যার চারদিগটা একবার ভাল করে দেখে সিগারেট ধরালেন। ওনি একটা বিশাল বট গাছের নিচে দাড়িয়ে আছেন। টপটপ করে শিশির পড়ছে। হ্যাজাক লাইটের আলোতে চারপাশ আলোকিত। অন্যদের তোলনায় উচ্চতা কম থাকায় তিনি মঞ্চ দেখতে পাচ্ছেন না। শুধু গান শুনতে পারছেন। একারনেই রিকসার ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। তানজিম নগদ নব্বই টাকা দিয়ে একটা রিকসা ঠিক করে নিয়ে এল।
স্যার রিকসায় ওঠে পড়েন।
কত টাকায় ঠিক করলে, কতক্ষনের জন্য?
নব্বই টাকা স্যার, যতক্ষন গান হয়।
এত টাকা কেন?
স্যার আমরা এই রিকসা করেই ফিরে যেতে পারব এজন্য টাকা বেশি দিতে হল।
ওকে গুড। ওঠে আস তবে।
দুজন রিকসায় চেপে বসল। তানজিমের অনুমতির অপেক্ষা না করে স্যার আরেকটা সিগারেট ধরালেন। রিকসায় বসে সমস্ত মঞ্চই পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। একজন ঘোষক মঞ্চে ওঠে এলেন। তিনি হাসি হাসি মুখ করে চারদিগের জনতাকে একবার দেখলেন তারপর মধুর ভঙ্গিতে বললেন-
বন্ধুগন, আপনাদের অপেক্ষার পালা এবার শেষ হতে যাচ্ছে। আপনারা এতক্ষন ধরে যার মধুর কন্ঠ শুনার জন্য অধির আগ্রহে বসে আছেন। এবার তিনিই মঞ্চে আসছেন। মঞ্চে আসছেন বাংলাদেশের বিখ্যাত কন্ঠশিল্পি, সুর সম্রাজ্ঞী জনাবা ---।
ঘোষক তার কথা শেষ করতে পারলেন না। শত শত মানুষ একসাথে হৈচৈ শুরু করল। কেউ কেউ শিষ বাজাতে লাগল। কেউ আবার গায়ের জামা খোলে শুন্যে নাড়তে লাগল। হাসিমুখে মঞ্চে ওঠে এলেন সেই বিখ্যাত শিল্পি। তানজিম তাকে কখনো দেখেছে বলে মনে হচ্ছেনা। তানজিমের দেখা নাদেখার সাথে কারো বিখ্যাত হবার কোন সম্পর্ক নিশ্চয় নেই। সুর সম্রজ্ঞী তার কোকিল কন্ঠি সুর ছরিয়ে দিলেন ভক্তদের মধ্যে।
পালাইবা কই যাইয়ারে মানুষ যাইবা কই পালাইয়া
আজরাইল আসিয়া যেদিন বান্ধিব কষিয়ারে
জগত স্বামীর ঘরে যাইতে হবে রে
সবাই নিরব, কোন হৈচৈ নেই। একটার পর একটা গান হচ্ছে। পাঁচটা গান করার পর শিল্পি সবাইকে ধন্যবদ জানিয়ে মঞ্চ থেকে নেমে গেল। হঠা্ৎ প্রায় সবাই একসঙ্গে হৈচৈ শুরু করল। সঙ্গে সঙ্গেই মঞ্চে ওঠে এল একজন কিশোর শিল্পি। ভূমিকা ছাড়াই গান ধরল-
যার লাগিয়া পাগল হইলাম তারে কি আর পাবনা
যে রূপ দেইখা মন দিয়াছি সেই রূপ কি আর কোনদিন দেখতে পাবনা
চারদিগ হঠাৎ করেই আবার নিরব হয়ে গেল। ভয়ানক রকমের নিরবতা। ছেলেটি মায়া ভরা গলায় গায়ছে। দুটা গান হবার পর ছেলেটি মঞ্চ থেকে নেমে গেল। কোন অজানা করনে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই একটা গন্ডগোলের সৃষ্টি হল। শোনা গেল কোন একটা মেয়েকে কিছু বাজে ছেলেরা ধরে নিয়ে গেছে। সবাই এদিক সেদিক উদ্ভ্রান্তের মত ছোটাছোটি করছে। বাশের খুটিতে ঝুলে থাকা একটি হ্যাজাক লাইট একজনের উপড় পড়ে গিয়েছে। বেচার গায়ে প্রায় আগুন ধরে ধরে অবস্থ। একজন ঘোষক মঞ্চে ওঠে এসেছেন অনেকক্ষন আগেই। তিনি বিরতিহীন ভাবে বলে যাচ্ছেন-"বন্ধুগন আপনারা বিসৃঙ্খলা সৃষ্টি করবেন না"।
আরেক জন লোক মঞ্চে ওঠে এলেন। আচমকাই ঘোষকের হাত থেকে মাইক্রোফোন টেনে নিয়ে ওনি বললেন-
ভাইসব আমার কথা শুনেন, ভাইসব আপনেরা আমার কথা শুনেন। এইখানে অনেক টেকা খরচ কইরা ভাবের আয়োজন করা অইছে। আপনেরা যারা অভাবী মানুষ আছুইন, দয়া কইরা তারা চইল্লা যাইন।
ঘটনা ক্রমেই ঘোলাটে হচ্ছে। ঘোসকের কথা কারো কানে ঢোকছে বলে মনে হচ্ছেনা। বেশিরভাগ হ্যাজাক লাইট ইতিমধ্যে অজানা কারনে আলো ছড়ানো বন্ধ করে দিয়েছে। মঞ্চটাও কেঁপে কেঁপে ওঠছে মনে হচ্ছে। মানুষগুলো বেপরোয়া হয়ে এদিক সেদিক ছোটছে। স্যার তানজিমের পিঠে হাত রেখে বললেন-
"চল ব্যাটা ভাবের দুনিয়া ত্যাগ করি। এই রিকসা চল"।
রিকসাওয়ালা অনুমতির অপেক্ষাতেই ছিল। অনুমতি মাত্রই রিকসা সামনের দিকে চলতে লাগল। অন্ধকারে স্যার বুঝতে পারছেননা যে, তানজিম তঁর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
©somewhere in net ltd.