![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যুক্তি বিশ্বাস করিনা আমি, তবুও যুক্তি খোঁজে ফিরি।
''ত্যাদরামী করবানা কইলাম, আমার কিন্তু মাথা গরম অইতাছে অহন।'' কৃত্রিম রাগতস্বরে কথাগুলো বলল স্বপ্না। আমি তার রাগ-অনুরাগকে পাত্তা দিইনি কখনো, আজও দিতে ইচ্ছে হলনা। নিজের মতো করে জামা প্যান্ট পড়ে বেড়িয়ে যাচ্ছিলাম।
-অই, এইডা কি লাগব না আজ? সামনে দাড়াল সে, হাতে জন প্লেয়ারের প্যাকেটটা। ভুলে গিয়েছিলাম ওটার কথা। স্মিতহাস্যে হাতে নিলাম। মনে মনে বললাম -এজন্যই তোমাকে এত ভাল লাগে। আমার প্রয়োজনের খুব গুরুত্ব দাও তুমি। এজন্যই হয়ত তোমার এ জন্মের সব অন্যায়-অপরাধ অগ্রিম ক্ষমা করে দিয়েছি আমি। আমাকে ভালবাসার অধিকার দিয়েছি তোমাকে। প্যাকেটটা পকেটে পুরে বাড়ির বাইরে পা বাড়ালাম। গন্তব্য অজানা।
হাঁটছিলাম, নবীনগর টু টাঙ্গাইলের বড় রাস্তার ফুটপাত ধরে। সিগারেটের ভূত চাপল পোড়া মাথায়। প্যাকেটটা খালী হয়ে গিয়েছিল অনেক আগেই। রাস্তার বিপরীতে একটা দোকান দেখলাম। পার হওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ফোনটা বিশ্রীভাবে কেঁপে ওঠল। হাতে নিলাম, স্ক্রীনে-স্বপ্না কলিং লেখা দেখলাম, পা চলছিল তখনো। হ্যালো.......... রিসিভ করলাম।
মাথার ভিতরটা কেমন জানি খুব শূণ্য শূণ্য মনে হচ্ছে। বিভিন্ন গাড়ি অসহ্য শব্দে বাঁশি বাজাচ্ছে বোধ হয়। আর ভাবতে পারছিনা। দুই চোখে মরার মতো করে ঘুম আসছে। শত চেষ্টা করেও চোখের পাতা মেলে রাখতে পারছিনা। শরীরের কোথাও একটা অন্য রকম অপরিচিত ব্যথা হচ্ছে বুঝতে পারছিনা। হঠাৎ মনে হলো আমি মরে যাইনিতো! নাহ আর পারছিনা, ঘুম আসছে দু চোখ ভেঙ্গে।
কতটা সময় পর ঘুম ভাঙল বুঝতে পারছিনা। ক'টা বাজে এখন তাও বুঝতে পারছিনা। তবে বুঝতে পারছি আমি কোন হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি। বিছানার ধবধবে সাদা চাদর, ফিনাইলের তীব্র গন্ধ তাই বলছে। বুঝার চেষ্টা করলাম ব্যাপারটা। মনে পরতে থাকল ধীরে ধীরে। মোবাইলে কথা বলছিলাম স্বপ্নার সাথে। আরে..., মোবাইলটা গেল কোথায়? নড়তে পারছিনা। মোবাইলটা হাতে পাওয়া দরকার। ক'টা বাজে দেখতে হবে। বাড়ী ফিরতে হবে। স্বপ্না অপেক্ষা করছে হয়ত না খেয়ে। সাড়া শরীরেই ব্যথা পাচ্ছি। মাথাটা জোড় করেও নাড়াতে পারছিনা। কেউ যেন পেড়েক ঠুঁকে ওটাকে আটকে দিয়েছে বালিশের সাথে।
শরীরটাকে নাড়াবার চেষ্টা করতেই কেউ একজন বলল –নরবেন না, চুপচাপ শুয়ে থাকুন। আমি চেষ্টা করেও তাকে চিনতে পারছিনা। মনে করার চেষ্টা করছি, পারছিনা। তবে কোথায় যেন দেখেছি মনে হচ্ছে। ও হ্যা মনে পড়েছে ও নিরজা। ক’টা বাজে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হচ্ছে। নিরজাকেও দেখতে পাচ্ছিনা। চোখ দুটোও ঘুরাতে পারছিনা। ‘আপনি গত দুদিন থেকে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছেন। এখন রাত তিনটা পনের বাজে, এবার ঘুমান তবে। ও হ্যা, স্বপ্না আপাকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি। গত দু রাত এক ফুঁটাও ঘুমাননি তিনি’ আমার মাথার ভিতরে কে জানি বলল কথাগুলো। কে বলল? বুঝতে পারছিনা। তবে কি নিরজা বলেছে! আমিতো ওকে কিছুই জিজ্ঞেস করতে পারিনি। তবে কি সে অন্তর্যামী! নাহ আর ভাবতে পারছিনা। মাথার মধ্যে অচেনা পোকারা সব কিলবিল করছে যেন। মনে হচ্ছে আমি ঘুমিয়ে যাচ্ছি। চোখ মেলে রাখার শক্তি হাড়িয়ে ফেলেছি আমি।
হঠাৎই ঘুম ভেঙ্গে গেল। তৃষ্ণা পেয়েছে খুব। পানির তেষ্টায় বুক শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে মনে হচ্ছে। একটু নড়ে ওঠার চেষ্টা করলাম। দারুনতো! হাত দুটো নাড়াতে পারছি, মনে হচ্ছে পা দুটোও নাড়াতে পারছি, অল্প হলেও। মাথাটা নাড়াতে পারছিনা কিছুতেই। ওটা আগের মতোই পেরেক মারা আছে বালিশের সাথে। হাত নাড়াতেই অন্য রকম ছোঁয়া পেলাম। বুঝতে পারছি এ স্বপ্নার ছোঁয়া নয়। তবে কি নিরজা? হ্যা নিরজা জেগে ওঠল। আমার মুখের কাছে মুখ এনে বলল- পানি খাবেন? আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। কতক্ষন তাকিয়ে ছিলাম জানি না। চোখের নিচে কালি পরেছে। স্পষ্ট হয়ে ওঠছে নির্ঘুম চোখ। যে কেউ দেখলেই বুঝতে পারবে এ চোখে কিছুক্ষন আগেও জল গড়িয়েছে। এক হাতে আমাকে সামান্য সোজা করে অন্য হাতে পানি পান করতে সাহায্য করল নিরজা। আমি আবার ওর চোখের দিকে তাকালাম। কত কিছু বলতে ইচ্ছা করছে, পারছিনা।
আজ হাসপাতালে আমার ছষ্ঠ দিন। ভাল লাগছে আজ শরীরটা। মাথার ওজনটাও কমেছে অনেকখানি। হাত-পা স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। কথাও বলতে পারছি কিছু কিছু। ঘুমাবার আগে স্বপ্নাকে দেখেছিলাম। আহা.., বেচারীর শরীরের কি যে অবস্থা হয়েছে। দেখেই বূঝতে পারছিলাম, ঠিকমত নাওয়া খাওয়া হচ্ছেনা তার। মুখটা কেমন যেন হয়ে গেছে। চিরচেনা হাসিটি নেই আর। কেমন যেন মরা মরা লাগছিল তাকে। আমার সাথে কথা বলেনি কোন। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল। নির্ঘুম পোড়া চোখে পানির আসার আগেই রুম থেকে বেড়িয়ে গিয়েছিল।
আমার দেখা-শুনার জন্য দুজন সার্বক্ষনিক নার্স নিয়োগ করা হয়েছিল। শোনলাম একজনকে নিরজা-ই ছাড়িয়ে দিয়েছে। নার্সিং পেশায় তার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার কারনে ডাক্তাররাও তার পরামর্শের মূল্য দেন। আজ প্রায় এক সপ্তাহ হতে চলল, নিরজা আমায় অকৃত্রিম সেবা দিয়ে যাচ্ছে। আমার খাওয়া, ঘুম, ব্লাড প্রেসার, এমনকি আমার প্রতিটা নি:শ্বাসের হিসেবও সে রাখছে নিপূণভাবেই। আমিও যমের দোয়ার থেকে ফিরে আসছি ক্রমেই। মাঝেই মাঝেই বিব্রত হই আমি। আমার শরীরটা প্রায়ই অচল ছিল। একটা অচল শরীর তার শালীনতা রক্ষা করতে কতটুকুই বা সক্ষম হয়। একজন পুরুষ মানুষকে রাখা উচিত ছিল নিরজার সাথে। নিরজা-ই রাখতে চায়নি। যখন অজ্ঞান ছিলাম তখন একটা অন্য ব্যপার ছিল। এখন কেমন জানি মনে হয়।
এখন যে রাত তা বুঝতে পারছি। সময় দেখতে ইচ্ছে করছে খুব। শোনেছি মোবাইলটা পাওয়া যায়নি। দূর্ঘটনার পর কেউ তুলে নিয়েছে হয়ত। যারা দয়া দেখিয়ে আমাকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছিল তারা মোবাইলটা পায়নি। মোবাইলটার জন্য মোটেও খারাপ লাগছেনা। ওটাতে স্বপ্নার দূর্লভ মূহুর্তের অনেকগুলো ছবি ছিল, যা আমি ছাড়া কেউ জানতনা। ওগুলোর জন্য মনটা কেমন জানি করছে। পাশেই, আমার পায়ের কাছে কুন্ডলী পাকিয়ে শুয়ে আছে নিরজা। একটু নড়েচড়ে ওঠলাম আমি।
-কি হয়েছে? নিরজা মূহুর্তের মধ্যেই ছটফট করে ওঠল। যেন ক্ষানিক ঘুমিয়ে সে অন্যায় করেছে।
-নাহ, কিছু না। ওর মুখের দিকে তাকালাম, চোখে স্বচ্ছ পানি টলমল করছিল তার।
আমার মুখের খুব কাছে চলে এল নিরজা। একবার ব্লাড প্রেসার চেক করল। ওর মুখ দেখে মনে হচ্ছে সব ঠিক ঠাক-ই আছে। একটা ঔষধ খাইয়ে দিল। মাথার চার ভাগের তিনভাগ চুল কেটে ফেলা হয়েছে আমার। মাথার কাছে দাড়িয়ে অবশিষ্ট চুলে বিলি কাটছিল সে। রাত তিনটা বাজে এখন আপনার ঘুমানো উচিত, ও বলল।
-হু,
-একটা কথা বলব?
-বল।
-পূর্ণজন্মে বিশ্বাস আছে আপনার?
-না, কেন?
-আমি বিশ্বাস করি। সত্যিই যদি এমন হয়, আবার আমাদের জন্ম হয়-তবে একটা কথা রাখবেন আমার?
নিরজার চোখের জল তখনও শুকায়নি। একবার চোখের দিকে তাকালাম, তারপর বললাম।
-বল কি কথা, রাখতে চেষ্টা করব। তাছাড়া তোমার সব কথায়-ই রাখা উচিত। আমার এ জীবন তোমারই দান- সে আমি জানি।
-ওকথা বলবেন না, তাহলে মরব আমি! এবার আর সে চোখের পানি লজ্জার বাঁধ দিয়ে বেঁধে রাখতে পারল না। দু’ফোটা অবাধ্য নোনা জল গড়িয়ে পড়ল আমার বুকে।
-বল, কথা দিলাম তোমার সব কথা রাখব কিন্তু তার আগে চোখ মোছ!
-আগামী জন্মে আমি মুসলমান হয়ে জন্মাব, আপনার কাছের কেউ হয়ে। আমাকে কাছে রাখবেন তখন?
নিরজা আর কিছু বলতে পারলনা। বিদ্যুত-গতিতে ওয়াশ রুমে ঢুকল। হয়ত চোখের জল আমাকে দেখাতে চাইছেনা।
নিরজা হিন্দু ধর্মাবলম্বী। একটা মেয়ের মধ্যে যে গুনগুলো থাকলে আমরা তাকে ভাল মেয়ে বলি, তার সবগুলোই ওর মধ্যে আছে, প্রবলভাবেই আছে। নিরজা আমার পূর্ব পরিচিতা ছিল কিন্তু এতটা কাছ থেকে জানতামনা আগে। মাঝে মধ্যেই আমাদের বাসায় আসত এটা সেটা নিয়ে। স্বপ্নার সাথে কথা বলত। আমার সাথে সৌজন্য মূলক কথা হতো কদাচিৎ। আজ মনে পরছে- একদিন সে নারকেলের নাড়ু বানিয়ে এনেছিল। নারকেলের নাড়ু খেতে আমার খুব ভাল লাগে ওটা সে জানতে পেরেছিল কোনভাবে। বেশ ক’টা নাড়ু খেয়েছিলাম আমি। তৃপ্তি পেয়েছিলাম অনেক বেশি। মনে মনে ভাবছিলাম নাড়ুর এত স্বাদ এল কোত্থেকে। নিরজা পাশেই চেয়ারে বসে ছিল। আমার নাড়ু খাওয়া দেখছিল আড় চোখে। আমি নাড়ুর জন্য ওকে ধন্যবাদ দিতে ভুলে গিয়েছিলাম।
আজ সন্ধার পর। স্বপ্না থাকতে চেয়েছিল আমার
নিরজা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এল। শত ক্লান্তির মধ্যেও ওর মুখে খানিক আলোর জ্বলসানি দেখলাম আমি। ঠোঁটে সামান্য হাসি লেগে আছে। যেন কিছুক্ষন আগে কোন যুদ্ধ জয় করে এসেছে। আমার পাশেই বসল নিরজা। ওর শরীরের কিছু অংশ আমার দূর্বল শরীরটাকে ছূঁই ছুঁই করছিল। নিরবতা ভাঙল সে।
-আজ আপনাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেবে বলেছেন ডাক্তার।
-হু,
-আমি কিন্তু আরো কিছুদিন থাকতে চাই আপনার পাশে, থাকাটা দরকার বড়। আপনি সুস্থ হলেই ভুলে যাব সব। নিরজা হাসল মলিন করে।
-তোমাকে "না" বলার শক্তি আমার নেই। তুমি যতদিন চাইবে থাকবে নিশ্চয়।
-আমার কথাগুলো বলা শেষ হয়নি এখনো।
-আর বলতে হবেনা তোমার, কথা দিলাম যদি আবার জন্ম হয় তবে, তোমার হব শতভাগ।
-মাথা রাখতে চাই আপনার বুকে!
ওর শেষ কথার কোন জবাব দিইনি আমি। নিরজা আমার বুকে মাথা রাখল নিশ্চিন্তে, কাঁদল অনেকক্ষন।
২| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৮:০৯
মনিরুজ্জামান স্বপন বলেছেন: ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাইছিনা- দোয়া করবেন ভাল লেখার চেষ্টা করব।
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১০:২২
আহমেদ জী এস বলেছেন: মনিরুজ্জামান স্বপন ,
একটা নিটোল ভালোবাসার গল্প । সাদামাটা কাহিনী হলেও ভালোবাসার কমতি নেই । নিরজা চরিত্রটি ভালো লাগলো ।