নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনেক অসাধারণের ভিড়ে আমি এক সাধারণ।

মনিরুজ্জামান স্বপন

যুক্তি বিশ্বাস করিনা আমি, তবুও যুক্তি খোঁজে ফিরি।

মনিরুজ্জামান স্বপন › বিস্তারিত পোস্টঃ

নি-র-জা আর আমি

০৬ ই মে, ২০১৭ রাত ৯:৫২

আমার বুকে মুখ লুকিয়ে বাচ্চাদের মতোই কাঁদছে নিরজা। শব্দহীন চাঁপা কান্না। সমুদ্রের বিশাল ঢেউগুলো যেন আছড়ে পরছে বালুকাময় তীরে। তার কান্নার কারন আমি বুঝতে পারছি তবুও কিছুই বলতে পারছি না। শান্তনা দিতে ইচ্ছে করছেনা মোটেই। আমি জানি, এই মূহুর্তে ওকে কিছু বললেই সে আর নি:শব্দে কাঁদতে পারবেনা। বুকের ভিতরে যে ঢেউ বইছে তা তীরে এসে প্রচন্ড শব্দে আছড়ে পরবে। আমি শুধুই ভাবছি, নিরজার চোখের নোনা জলের স্রোত আমাকে অজানা কোথাও ভাসিয়ে নিয়ে যাবেনাতো! আমি যে ভাসতে চাইনা, আমার যে ভাসা উচিত নয়। নিরজার কান্না ক্রমেই শীথিল হয়ে এলো। মাথা তুলে একবার আমার মুখের দিকে তাকাল, তারপর ওয়াস রুমের দিকে পা বাড়াল। চোখে মুখে পানির ছিটা দিয়ে ফিরে এসেই রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

নিরজা পেশায় একজন সেবিকা। দেখতে আহা মরি রূপবতী না হলেও তার মধ্যে এমন কিছু একটা আছে যা হৃদয়কে প্রবলভাবে আকর্ষণ করে। ওর একটি হাসি-ই মনের দরজায় মারাত্মকভাবে কড়া নাড়ার জন্য যথেষ্ট। হাসি নয় যেন রিক্টর স্কেলে আট মাত্রার ভূমিকম্প! এ হাসি লন্ড ভন্ড করে দিতে পারে একটা জীবনকে।

আমাকে আজই রিলিজ দেয়া হবে। স্বপ্না গুছিয়ে নিচ্ছিল সবকিছু। আজকে স্বপ্নাকে কেন জানি কিছুটা হলেও অন্য রকম লাগছিল। গভীর ভাবনায় যেন নিমজ্জিত । চোখের নিচে কালি পরেছে। স্বাস্থ্য নষ্ট হয়ে গেছে। দারুন ঝরে লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া কোন গাছের মতো লাগছিল। মনে হচ্ছে এ ক’দিনে ওর বয়স বেশ ক’বছর বেড়ে গেছে। আমার জন্য দুশ্চিন্তাই এর একমাত্র কারন কি-না বুঝতে পারছিনা। গত দশ দিনে আমার সাথে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কথা বলেনি। স্বপ্না আনমনে ঔষধপত্রসহ প্রয়োজনীয় কাপড় গোছাচ্ছিল। রুমটা প্রচন্ড রকম নিরব হয়ে আছে। প্রচন্ড শব্দে বাজ পড়ার আগে পৃথিবী যেমন স্তদ্ধ হয়ে থাকে রুমটাও এখন ঠিক তেমনি নিরব হয়ে আছে। নি:শ্বাসের শব্দ ছাড়া অন্য কোন শব্দই হচ্ছেনা যেন।
-তুমি কি আরো কিছুদিন হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকতে চাচ্ছ?
বাজ পড়ল মনে হচ্ছে এবার। আমার চোখের দিকে পলকহীন জিজ্ঞাসু দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে স্বপ্না। হঠাৎ এমন ধরনের প্রশ্নের জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না আমি। নিরব থাকাই আমার জন্য নিরাপদ মনে হল তাই স্তদ্ধ হয়ে রইলাম। যেন তার কথা আমি শুনতেই পাইনি। আমি মাঝে মধ্যেই এমন করি, সে জানে। কোন কথার উত্তর আমার জানা না থাকলে কথা বলতে ইচ্ছে করে না। কিন্তু তার দৃষ্টি বলে দিচ্ছে এ প্রশ্নের জবাব না পেলে ঝড় বইবে।
-কেন এমনটি মনে হচ্ছে তোমার, সখ করে কি কেউ হাসপাতালে থাকে? তাছাড়া আমিতো এখন মোটামোটি সুস্থতা বোধ করছি।
-বেশ, ভাল। স্বপ্না আবার কাপড় গোছাতে ব্যস্ত হয়ে গেল।

হাসপাতালের ঝামেলা মিটিয়ে বাসায় পৌঁছাতে দুপুর হয়ে গিয়েছিল। খাটের কার্ণিসে ঠেস দিয়ে আধশুয়া হয়ে আছি অনেকক্ষ থেকে। দূর্ঘটনার পর আজ প্রথম আয়নায় নিজের মুখ দেখছি। দেখে নিজেকে চিনতে কষ্ট হচ্ছে। মাথার অবশিষ্ট্য চুলগুলোও ছেঁটে দেয়া হয়েছিল। আমাকে দেখতে কেমন জানি ভয়ংকর ভয়ংকর লাগছে। নিজেকে বিভৎস, না-কি কিম্ভুতকিমাকার বলব বুঝতে পারছিনা। এ ক’দিন আয়না দেখা আমার জন্য এজন্যই হয়ত নিষেধ ছিল। হাত-পায়ের ক্ষতগুলো পুরো পুরিই শুকিয়ে গেছে। মাথার ক্ষত শুকোয়নি এখনো। হাঁটতে পারছি এখন কিছুটা। তবে অনেকটাই রোবটের মতো হাঁটা। মাথা ডানে বামে ঘুরাতে হলে সমস্ত শরীরটাই ঘুরাতে হয়। ডাক্তার বলেছেন- আরো কিছুটা সময় লাগবে পুরোপুরি সুস্থ্য হতে। অনেক দিন গোসল দেয়া হয়না। শরীর কেমন জানি করছিল। স্বপ্নার সাহায্য ছাড়া একা গোসল দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয় এখন। কিন্তু ও যেন কেমন গম্ভীর হয়ে আছে। ওর হাটা চলাতেও একটা সুক্ষ পরিবর্তণ লক্ষ্য করছি আমি। কারনটাও অনুমান করতে পারছি, কিন্তু ওকে কি বলব ভাবতে পারছিনা। তন্দ্রা লাগছিল চোখে। স্বপ্নার ডাকে ভাবনায় ছেদ পড়ল আমার।
-ওঠ এবার, পানি গরম করেছি গোসল দেবে। গায়ে হাসপাতালের উদ্ভট গন্ধ লেগে আছে তোমার।
-হু, দেয়া উচিত। শরীরটাও চাইছে। মাথা ভেজানো যাবে কী?
-মাথা ভিজানো যাবে কি-না সেটা আমি কেমনে জানব, আমি ডাক্তার নই! তাছাড়া ওটা আমার না জানলেও কোন ক্ষতি নেই। যে গোসল দিয়ে দিবার জন্য বসে আছে সেতো জানে।
স্বপ্নার কথাগুলো আমার হৃদয়ের কোথায় যেন তীব্রভাবে আঘাত করল। ওর কথাগুলো কাকে উদ্দেশ্য. করে বলা তা না বুঝার মতো অবুঝ নই আমি। তবুও কথা বাড়াতে ইচ্ছে করলনা। পাশেই থ হয়ে দাড়িয়ে থাকা নিরজার দিকে একবার তাকিয়ে ওর হাত ধরে গোসলখানার দিকে চললাম। নিরজাও আমার ডান হাতটা ধরে রেখেছিল তখন।

গোসল দেয়ার পর পরই কেন জানিনা একটা জন প্লেয়ার ধরাতে ভিষন ইচ্ছে করছে। আজ প্রায় এগার দিন হতে চলল নিকোটিনের প্রয়োজন পরছে না শরীরে। ভুলেই গিয়েছিলাম যে আমি ধুমপান করি। এখন হঠাৎই মনে পরল। মনটা কেমন জানি উস-খুস করছে একটা সিগারেটের জন্য। দোকানে যাওয়া আমার পক্ষে মোটেই সম্ভব নয়। শরীরটাকে এই মূহুর্তে টেনে নেয়া আমার পক্ষে কতটা অসম্ভব তা শুধু আমিই জানি। কিন্তু রক্ত ভিষনভাবেই নিকোটিন চাইছে। বসে বসে ভাবছি কাকে বললে ঘরে বসেই এক প্যাক জন প্লেয়ার পেতে পারি।
-এই নাও তোমার জন প্লেয়ার! তবে এগুলো আগে খেয়ে নিয়ে আমাকে উদ্ধার করো।

আমার সামনে এক হাতে ফলের প্লেট অন্য হাতে জন প্লেয়ার এর প্যাকেট নিয়ে স্বপ্না দাঁড়িয়ে। ওকে আজ কেন জানি অন্য রকম লাগছে। বুঝতে পারছিনা। বুঝার চেষ্টা করছি। লাল পাড়ের সাদা শাড়িতে অদ্ভুত রকমের সুন্দর লাগছে। কপালে সরিষার দানার মতো ছোট্ট কালো টিপ, ওকে খুউব বেশি আকর্ষনীয়া করে তোলেছে। সেই সাথে ঠোঁটে আমার প্রিয় হালকা গোলাপি রঙের লিপস্টিক। গলায় সোনার সরু চেন। তাতে ঝুলছে বিশেষ আকৃতির ছোট্ট লকেট। রাঙা ঠোঁটে ভূবন ভুলানো এক টুকরো ভয়ংকর হাসি। সব মিলিয়ে যেন দেবী দূর্গার মতো লাগছে। আমি যেন ওর মাঝে হারিয়ে যাচ্ছিলাম। মনে মনে বললাম- এমন করে সেজে আমার সামনে আসার জন্য তোমার আগামি দশ বছরের ছোট বড় সব অপরাধ নি:শর্ত ক্ষমা করে দিলাম।
-এভাবে দেখার কিছুই নেই। নাও খেয়ে আমাকে উদ্ধার করো।
-হু, দাও।
কাটা চামিচ দিয়ে পাকা পেঁপের এক-একটা টুকরো আমার মুখে তুলে দিচ্ছিল স্বপ্না। আমি তা চিবুচ্ছিলামা আর ওকে দেখছিলাম। খাওয়া, ভাবনা, ওকে দেখা- চলছিল একই সমান্তরালে। অনেক দিন এমন তৃপ্তি নিয়ে খাওয়া হয়না। খাওয়া শেষ করেই জন প্লেয়ার হাতে নিলাম। ধোঁয়ার কুণ্ডলী পাকাতে ইচ্ছে করছে। খাটের কার্ণিশে ঠেস দিয়ে আয়েশী ভাব নিয়ে বাতাসে শুভ্র ধোঁয়ার ভেসে বেড়ানো দেখছিলাম আনমনে। সিগারেট জ্বলছে, ধোঁয়া উড়ছে হালকা বাতাসে। আহ! কি শান্তি। অনেকদিন ভাল ঘুম হয়নি। ঘুম আসছে দু-চোখ ভেঙ্গে।

এখন সম্পূর্ণ সুস্থ আমি। নিয়মিত অফিস করছি। সব কিছুই স্বাভাবিক চলছিল। নিরজা’র সাথে দেখা হয়না তেমন। মাঝে মধ্যে বাসায় আসে, কিছুক্ষন থাকে। আমার কোশল জিজ্ঞেস করে, আমি ছোট্ট করে জবাব দিই। স্বপ্নার সাথে কথা বলে কিছুক্ষন। তারপর চলে যায়।

মাঝ রাত্রি। ঘুম আসছিল না। সিগারেট টানতে ইচ্ছে করছিল তাই একটা সিগারেট হাতে, বাইরের বারান্দায় চলে এলাম। আকাশে পূর্ণ চাঁদ। নীল জোসনা খেলা করছে প্রকৃতির বুক জুড়ে। মাতাল জোসনা গাছের পাতার ফাঁক গলিয়ে আছড়ে পরছে নরম ঘাসের কোলে। ঘাস-ফুলগুলোও পরম তৃপ্তিতে চোখ ভোজে জোসনা-স্নান করছে যেন। মৃদু বাতাস বইছে। পাশেই কোথাও ঝি ঝি পোকারা ডেকে যাচ্ছে বিরতিহীন। মাঝে মধ্যেই শিয়ালের হোক্কা-হোয়া ডাক শোনা যাচ্ছে। এসময় একটা সিগারেটে আমার কিছুই হবে না! অনেকগুলো চাই। রুম থেকে পুরো প্যাকেটটাই নিয়ে এলাম কিন্তু সিগারেটে অগ্নিসংযোগ ঘটাতে ইচ্ছে করছিল না। জোসনা দেখছিলাম অবচেতন মনে, কতক্ষন জানি না। হঠাৎ-ই মনে হলো কে যে নাম ধরে ডাকছে আমায়!
-এইই.... প্রিতম।
কিছুটা অবাক লাগছে! এত রাতে কে ডাকবে আমায়! তাকালাম- দৃষ্টি যতদূর যায়। কোথাও কেউ নেই। বারান্দার গেট খুলে বাইরে বেরিয়ে আনমনে হাঁটছি। বাসা থেকে অনেকটা পথ চলে আসার পর, হঠাৎই মনে হল কেউ একজন আমার হাত ধরে নি:শব্দে হাঁটছে পাশা-পাশিই । থ হয়ে দাঁড়িয়ে জোসনায় তার মুখ দেখলাম আমি। একি! এ যে নিরজা! প্রচন্ড রকম ধাক্কা খেলাম মনের খুউব অচেনা জায়গায়। জোসনার আলোতে ওকে দেখছি আমি। দেখছি আর অবাক হচ্ছি। ধবধবে সাধা শাড়িতে অপূর্ব লাগছিল ওকে। “সাঁজ বিহীন সুন্দরী” কথাটা শোনেছিলাম, আজ প্রথম দেখছি। একেই হয়ত সাঁজ বিহীন সুন্দরী বলা যায়। পরনে ধবধবে সাদা শাড়ি, গলায় পুতিঁর একছড়া মালা, লিপস্টিকহীন ঠোঁট, কাজল বিহীন চোখ, খালি পা। কেমন জানি মোহ ছড়াচ্ছিল।
- তুমি এত রাতে!
- হু, আমি ডেকেছি বলেই তুমি এসেছো। এমন জোসনা রাতে কেউ ঘুমিয়ে থাকতে পারে? তাইতো তোমাকে ডেকে নিলাম।
নিরজার কণ্ঠটা আজ কেমন জানি অন্য রকম লাগছিল, কিছুটা অপরিচিত যেন। কথাগুলোর মধ্যেও কোথায় যেন একটা মোহ কাজ করছে, বুঝতে পারছি না। কথা নয় যেন বেদ-মন্ত্র!
- তুমি আমায় ডেকেছিলে? কখন?
- আমার ডাকেই তোমার ঘুম ভেঙ্গেছে এত রাতে।
অবিশ্বাস্য লাগছে নিরজার কথাগুলো। রহস্যময় লাগছে আমার কাছে। সে কখনোই আমাকে তুমি করে বলেনি, আজ বলছে অবলীলায়।
- তোমার ডাকেতো আমার ঘুম ভাঙ্গেনি! আমিতো জেগেই ছিলাম।
- না, তুমি ঘুমিয়েছিলে, আমি ডেকে তুলেছি তোমায়। ও হ্যা তোমার সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছিল। এখন খেতে পারো একটা। দিয়াশলাই দাও, আমি ধরিয়ে দিচ্ছি।
আমি মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় ওর হাতে দিয়াশলাই দিয়ে ঠোঁটে সিগারেট নিলাম। ততক্ষনে জ্বলছে সিগারেট। ধোঁয়া উড়ছে বাতাসে। আজকের ধোঁয়ার কুণ্ডলীটাও যেন একটু অন্য রকম লাগছিল।
- আমরা কোথায় যাচ্ছি?
- শালবনে, জোসনা-স্নান করতে, হাহাহাহা।
ও হাসছে! জোসনার আবছা আলো বিদীর্ণ করে সে হাসির শব্দ প্রতিধ্বনিত হচ্ছে যেন গাছের প্রতিটি পাতায় পাতায়। জোসনার মধ্যেও কেমন জানি একটা ঢেউ খেলে গেলো মূহুর্তের জন্য।
- জোসনা-স্নান? এটা আবার কি?
- তোমার না জানলেও চলবে জোস্না-স্নান কী, সামনে তাকাও একবার।
মূহুর্তের জন্য হলেও প্রচণ্ড রকম ভয় পেলাম আমি। মনে হচ্ছে কথার ফাকেঁ হাঁটতে হাঁটতে বাসা থেকে অনেক দূরে কোথাও চলে এসেছি আমরা। জায়গাটা অপরিচিত আর ভয়ংকর সুন্দর লাগছে। চারপাশে চোখ যতদূর যায় শুধুই শাল আর গজারি গাছ। পায়ে চলার আঁকা বাঁকা মেঠো পথে হেঁটে চলেছি আমরা। পথের দু’ধার ঘন গুল্ম লতায় ঘেরা। এবার থামল নিরজা।
- চল, আমরা ঐ গাছটার নিচে বসব।
ক্ষানিক দূরে একটা কৃষ্ণচূঁড়া গাছ দেখলাম। গাছের প্রতিটি শাখায় ফুঁটে রয়েছে অজস্র লাল ফুল। অসহ্য সুন্দর লাগছে। গাছে যেন আগুন লেগেছে! পাগল হতে আর সময় লাগবে না মনে হচ্ছে। হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে গেলাম গাছটার কাছে। নিরজা গাছে ঠেস দিয়ে, দুই পা লম্বা করে বসে আমার দিকে হাত বাড়াল। বুঝতে পারছিনা আমি স্বপ্ন দেখছি না-কি সত্যি সব।
- আরে... তুমি স্বপ্ন দেখছ না, সবই সত্যি। বিশ্বাস না হলে আমাকে ছুঁইয়ে দেখ।
নরম ঘাসের বিছানায় শুয়ে মন্ত্রমুগদ্ধের মত তার কোলে মাথা রাখলাম আমি। নিরজা কিছুটা ঝুকে আসল আমার মুখের কাছে। নাক টেনে দিল একবার। তার এলো চুল ছড়িয়ে পরেছে আমার নাকে মুখে। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওর লিপস্টিক বিহীন ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল আমার ঠোঁট।
- সিগারেট খাবে একটা?
- ওহু, ইচ্ছে করছে না।
- একটা খাও, ভাল লাগবে।
সিগারেট টানছি আমি। বাতাসে উড়ছে শুভ্র ধোঁয়া আর নিরজার মাথার এলো চুল। সিগারেটের ধোঁয়া সাধারনত মেয়ে মানুষ সহ্য করতে পারেনা। নিরজার নাকে মুখে সিগারেটের ধোঁয়াগুলো অসভ্যের মতো খেলা করলেও তার কোন সমস্যা হচ্ছে বলে বোধ হচ্ছেনা। আমার এক হাতে বিষাক্ত নিকোটিন ভরা জনপ্লেয়ার অন্য হাতে নিরজার এক গাছি চুল। অসহ্য মাতাল নীল জোসনারা আছরে পরছে আমাদের শরীর ধুইয়ে দিতে। নি:শ্বাসের শব্দ ছাড়া পৃথিবীর কোন শব্দই কানে বাজছে না। কারো ঠোঁটে কথা সরছেনা। এ যেন এক নৈস্বর্গিক দৃশ্য।
- আমি তোমার কোলে এভাবেই মাথা রাখতে চাই।
আমি ওঠে তার মতোই কৃষ্ণচূঁড়া গাছটিতে ঠেস দিয়ে বসলাম। নিরজা আমার কোলে মাথা রাখল। আমার একটা হাত ওর কোমল হাতের মুঠোয় বন্ধি। আমার হাত খেলা করছে ওর হাতের মুঠোয়। কখনো কখনো আমার হাতটাকে টেনে নিয়ে ওর গাল, ঠোঁটে আলতো করে ছোঁয়া দিচ্ছিল অবলীলায়। আমি নিষ্পলক তাকিয়ে আছি তার পদ্ম দিঘীর মতো চোখের দিকে। দারুন জোসনার গৃহত্যাগী নীল আলো, এক বিন্দুতে মিলিত হয়ে নিরজার চোখে মুখে ছড়িয়ে পরছে। মারাত্মক রকমের মোহ ছড়াচ্ছে যেন।
- আমি তোমার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছি, তুমি ঘুমাও এবার। তুমি ঘুমালে তবেই নির্লজ্জের মতো আরেকবার তোমার ঠোঁট ছোঁব।
নিরজা আমার মাথার ছোট ছোট চুলে কোমল হাতে বিলি কাটছিল। ওর ছোঁয়ায় যেন স্বর্গীয় আবেশ লেগে রয়েছে। দুই চোখের পাতা জোড় করেও মেলে রাখতে পারছিনা আমি। সাড়া শরীরটা যেন ধীরে ধীরে অবশ হয়ে আসছে। গভীর ঘুমে অচেতন হতে যাচ্ছি আমি না-কি মারা যাচ্ছি বুঝতে পারছিনা। নাহ... আর ভাবতে পারছি না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.