![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যুক্তি বিশ্বাস করিনা আমি, তবুও যুক্তি খোঁজে ফিরি।
কৃষ্ণচূঁড়ার তলায় নিরজা’র কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে ছিল অমিত। ভোরের মিষ্টি আলো চোখে মুখে পরতেই ঘুম ভাঙল তার। চোখ মেলে তাকাতেই মারাত্মক রকম চমকে ওঠল। নিরজা নেই! নরম ঘাসের বিছানায় একাকী পরে আছে সে। তার ডান হাতে পেঁচানো নিরজা’র গলার পূঁতির মালা তাকে যেন কিছু একটা বলতে চাইছে। কৃষ্ণচূঁড়ার তলায় তার নিথর হয়ে পড়ে থাকা আর নিরজা’র গলার পূতির মালা প্রামাণ করছে, গত রাতে যা কিছু ঘটে গেছে, তার এক বিন্দুও কল্পনা বা স্বপ্ন ছিলনা, পুরোটাই বাস্তব আর চরম সত্য ছিল। ঘুম ঘুম চোখে নিরজা’র বাসাকে উদ্দেশ্য করে হাঁটতে শুরু করল সে।
ঘুম ঘুম চোখে নেশাগ্রস্থের মতো অমিত নিরজা’র বাসার দরজায় এসে দাঁড়াল। দরজায় তালা ঝুলছে! পাশের রান্নাঘর হতে, কেউ একজন বলল- নিরজা আপা বাসায় নেই। তিনি ভোর বেলাতেই বেড়িয়ে গেছেন।
অপরিচিত মহিলার কথাগুলো, অমিতের হৃদয়ের খুব গভীরে যেন তীরের মতো লাগল। হৃদয় বীণার সুরের তারটি যেন মুহুর্তের মধ্যে কেউ হেঁচকা একটা টান দিয়ে ছিড়েঁ নিয়ে গেল। মনে মনে বলল –না, নিরজা তুমি আমাকে এভাবে ফাঁকি দিতে পার না। এমন করে আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পার না কিছুতেই। ক্ষনকাল থ হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে টাল মাটাল অবস্থায় অমিত নিরুদ্দেশের পথে পা বাড়াল।
বিকেল বেলা। বারান্দায় চেয়ারে বসে এলোপাথারী ভাবতেছিল স্বপ্না। মানুষটা গত রাতে হঠাৎ কোথায় যেন হাড়িয়ে গেল। ফেরার নামটি পর্যন্ত নেই! সে মাঝে মধ্যেই এমন করে নিখোঁজ হয়ে যায়। কিন্তু আবার সকাল বেলাতে ফিরেও আসে। স্বপ্না অনুযোগের দৃষ্টিতে চোখের দিকে তাকালে “জোসনা দেখতে গিয়েছিলাম” বলেই অল্প সময়ের মধ্যে গোসল, খাওয়া সেরে ঘুমুতে চলে যায়। কিন্তু আজ কি হলো তার? সারা দিন গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেল, তবুও তার দেখা নেই। গত রাতে আকাশে -মন মাতাল করা জোসনা ছিল। আকাশে জোসনা দেখা গেলে অমিতকে যে কিছুতেই ঘরে বন্ধি করেও রাখা যায় না তা স্বপ্না জানে। জোসনা দেখতে কোন জঙ্গলে যে গিয়েছে তার ও কোন ঠিক নেই। জানা থাকলে খোঁজে নিয়ে আসা যেত, কিন্তু তার কোন উপায় নেই। কোন বিপদ হল না ত! বন-জঙ্গল তো আবার সাপ-খোপের অভয়াশ্রম! স্বপ্নার সর্বাঙ্গে কাঁটা দিয়ে ওঠল। অজানা বিপদের আশঙ্কায় তার শরীর যেন পাথর হতে বসেছে। ঠিক এমন সময় দেখা গেল দু তিনজন স্বল্প পরিচিত লোক অমিতকে প্রায় কোলে করে গেট পার হয়ে বাড়ীর ভেতর ঢুকল। ও মাগো বলে চিৎকার দিয়ে ওখানেই জ্ঞান হারাল স্বপ্না।
নাম তার অমিত চৌধুরী। বয়স তেত্রিশ চৌত্রিশ হবে। মাঝারি গড়ন। চোখে মুখে কেমন জানি একটা মায়া মায়া বিষয় আছে, যা সহজেই মানুষের দৃষ্টি কাড়ে। খুব ছোট বেলাতেই বাবা-মা দুজনকেই হারিয়েছে অদৃষ্টের ফেরে। অমিতের বাবা ছিলেন তাঁর বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান, অন্যদিকে মা ও তাই। আবার অমিত নিজেও তার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। মা-বাবা তাকে একা করে দিয়ে গেলেও সাথে দিয়ে গেছেন দুই পক্ষের বিশাল সম্পত্তি। কিন্তু অমিত নিজে সে সকল সম্পত্তির খুব একটা খোঁজ রাখতো না। সেখানে কর্মচারী নিয়োগ করে নিজে একটা প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকরী করে।
নিজের লোকের ভালবাসা যাদের কপালে জোটেনা তারা অন্যের ভালবাসাও খুব একটা পায় না। যদিও বা পায় তাও ক্ষনিকের জন্য। কিন্তু অমিত চৌধুরীর বেলায় সেরকম হয়নি। তার বাবা-মায়ের রেখে যাওয়া অগাধ সম্পত্তির কারনেই হোক বা তার মায়া মায়া মুখচ্ছবির জন্যই হোক, সে লোকের ভালবাসা পেয়েছে অনেক বেশি। বাড়ীর কাজের লোক যারা ছিল তারা সবাই অমিতকে অসম্ভব রকমের শ্রদ্ধা করতো -ভালবাসতো। আজ যখন সে অচেতন অবস্থায় রাস্তার পাশ্বেই পড়েছিল তখন কয়েক জন লোক তাকে তোলে বাসায় পৌছেঁ দিয়ে গেল।
প্রবল মানষিক আঘাতে বিপর্যস্ত হয়ে ওঠল অমিতের মন। শরীর যদিও সুস্থ হল কিন্তু মনের ভেতর যে ভাংচুর হয়েছিল তা সেরে ওঠার কোন লক্ষন দেখা গেল না। সে নিশ্চিৎ জানত যে, তার মনের ক্ষত নিরজা’র সাক্ষাত বিনা সেরে ওঠবে না কিছুতেই। কিন্তু নিরজার সাক্ষাত পাওয়া যে প্রায় অসম্ভব। নিরজার ঠিকানা সে জানত না। কোথায় খোঁজবে তাকে! ইতিমধ্যে চাকরীটাও ছেড়ে দিয়েছে। সারাদিন বাইরে বের হয় না বললেই চলে। চার দেয়ালের ভেতরেই নিজেকে সে সেচ্ছায় বন্ধি করে নিল। সব কিছুতেই চরম অরুচি ধরে গেল তার। ধীরে ধীরে যেন মায়াময় পৃথিবীটা একেবারেই যেন মায়াহীন হয়ে ওঠছে।
প্রায় ছয়মাস পর। বসন্তের শেষ সময় চলছিল। গাছের শুকনো পাতা ঝরার সময় এটা নয় তবুও বাড়ীর আঙিনায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিভিন্ন গাছের শত সহস্র শুকনো পাতা। প্রকৃতির লীলা বুঝা মুসকিল। হাসপাতাল থেকে ঠিকানা সংগ্রহ করে, এমনি এক বিকেল বেলায় ওঠোনের শুকনো পাতা দু পায়ে মাড়িয়ে, নিরজাদের বাড়ীর দরজায় এসে উপস্থিত হল অমিত। দরজায় বেশ কয়েকবার কড়া নাড়তেই ভেতর থেকে দরজা খোলে দিল বার তের বছরের একটি মেয়ে। কেউ না বলে দিলেও অমিত বুঝল এ নিরজা’র ছোট বোন। মেয়েটি অপলক তাকিয়ে রইল কিছুক্ষন তার মুখের দিকে। হঠাৎ মনে হলো এই ছোট্ট মেয়েটির কাজল কালো চোখে খেলা করছে অজস্র জলের সহস্র দ্বারা। অমিত বুঝতে পারছে না এর কারন কি হতে পারে। তবুও নিজের অজান্তেই মেয়েটিকে বুকে টেনে নিল সে। নিজেকে কিছুক্ষনের মধ্যেই সামলে নিয়ে মেয়েটি আর্দ্র কন্ঠে বলল,
-তুমি নিশ্চয় আমার অমিত দাদা, দিদি বলেছিল, তুমি না এসে থাকতেই পারবে না।
-হ্যা, আমিই তোমার অমিত দাদা, তোমার দিদিকে ত দেখছি না, সে কোথায়? তাকে একটিবার ডাকো না। কত দিন তাকে দেখি না।
-হ্যা, এসেই যখন পরেছো তখন দিদিকে ত দেখবেই, তার আগে চলো বারান্দায় চেয়ারে বসে একটু বিশ্রাম নেবে, ঘরের ভেতরে ঘরম খুব। ও হ্যা আমার নাম অর্পিতা, আমাকে তুমি নাম ধরেই ডাকবে। এখানে কিছুক্ষন বসে গায়ে বাতাস লাগাও, আমি এখনি আসছি।
অমিতকে হাত ধরে নিয়ে বারান্দায় একটি চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে অর্পিতা ঘরের ভেতরে চলে গেল নি:শব্দে। বারান্দায় বসে অমিত আকাশ দেখছিল। আকাশে তখন বিকেল বেলার শান্ত রোদ খেলা করছিল। অমিত মনে মনে ভাবছে নিরজা তাকে দেখে কত খুশিই না হবে। হয়ত নিরজা ভাবতেই পারেনি তার জন্য অমিত এত দূর থেকে চলে আসবে। তাকে দেখে সে নিশ্চয় চমকে যাবে। সেও নিরজাকে চমকে দিতে চায়। কত কথা বুকে জমা হয়ে আছে। সব কথা আজ তাকে বলার জন্যই ব্যকুল হয়ে আছে হৃদয়। হৃদয়ের সমস্ত যন্ত্রনার সমাপ্তি ঘটানোর জন্যই অমিত সব ছেড়ে নিরজার কাছে ছোটে এসেছে। আজ রাতেই সে নিরজাকে নিয়ে অন্য কোথাও চলে যাবে ঠিক করেই বাড়ী থেকে বেরিয়ে এসেছে। নিরজাকে নিয়ে সে এমন কোথাও চলে যাবে, যেখানে তাদেরকে কেউ চিনবে। অমিত যখন ভাবনা সাগরে আপাদমস্তক ঢুবে গিয়েছিল ঠিক তখনই অর্পিতা হাতে করে এক কাপ কফি নিয়ে তার সামনে এসে দাঁড়াল।
-দাদা, এই নাও তোমার কফি। ও হ্যা, আর এটা দিদি তোমাকে দিতে বলে গিয়েছিল।
খুব যত্ন করে ভাঁজ দেয়া এক খানি কাগজ কম্পিত হাতে অমিতের হাতে তোলে দিল অর্পিতা। তাকে কোন প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়ে অতি দ্রুত সামনে থেকে কোথায় যেন মূহুর্তের মধ্যেই উদাও হয়ে গেল সে। অমিত কফির মগ হাতে নিল। তা থেকে ওষ্ণ ধোঁয়া ওঠছিল তখনো। একটা চুমুক দিয়ে কাগজের ভাঁজ খোলে চোখের সামনে মেলে ধরল।
মায়া নিও। কি সম্বোধন করব তোমায়! ভাবতে পারছি না। প্রিয়, প্রিয়তমেষু, কিংবা আর যাই লিখিনা কেন, আমার কাছে নশ্বর দুনিয়ার কোন সম্বোধন-ই তোমার জন্য যথেষ্ট হবে না। তাই সাদা সিদে করেই শুরু করলাম।
যখন আমার গাঁথা কথার মালা তোমার হাতে পৌঁছুবে, তখন আমি তোমার থেকে লক্ষ যোজন দূরে থাকব এমনটাই আমার বিশ্বাস। কোন এক পাতা ঝড়া সন্ধায় এক কাপ ধোঁয়া ওঠা কফির সাথে আমার কথার মালা, দু’চোখ জলে ভাসাবে তোমার। তুমি আমার জন্য তোমার চোখ লাল করবে, এর চেয়ে বেশি পাওয়া আর কি হতে পারে! এর চেয়ে বেশি কিছু যে আমি চাইনি কখনো।
আমি তোমাকে ভালবেসেছিলাম হয়ত একটু বেশিই। তোমাকে কিছুটা সময়ের জন্য হলেও পেতে চেয়েছিলাম নিজের মতো করে। হাজার বছরের তৃষ্ণা বুকে নিয়ে, তাই সেদিন রাত্তিরে ছোঁটে গিয়েছিলাম কিছুটা সময়ের জন্য তোমার বুকে মুখ লোকাব বলে। ঈশ্বর আমার মনোবাসনা পূর্ণ করেছেন, এজন্য আমি তাঁর কাছে ঋণী।
ভোর বেলায়, তুমি তখন আমার কোলে মাথা রেখে পরম তৃপ্তিতে ঘুমোচ্ছিলে। হ্ঠাৎই মনে হলো, জীবনের কাছে আর কোন চাওয়া-পাওয়া নেই আমার । এই জন্মে যেটুকু চেয়েছিলাম তার চেয়ে বেশিই পাওয়া হয়ে গেছে। তাছাড়া এর চেয়ে বেশি কিছু পাওয়ার সৌভাগ্য নিয়ে জন্মাইনি আমি, সে আমি জানতাম। তাইতো সকাল হওয়ার আগেই তোমাকে ফাঁকি দিতে ইচ্ছে হলো। তুমি নিশ্চয় বুঝবে, তোমাকে ছেড়ে আসতে কতটা যন্ত্রনা হচ্ছিল আমার। তবুও কোন উপায় ছিলনা। আমার গলার পূতির মালাটা তোমার ডান হাতে সোঁপে দিয়ে তোমাকে একা করে দিতে ইচ্ছে হল।
বাসায় আসার পর মনে হলো, ঘুম ভাঙলেই তুমি পাগলের মতো আমার কাছে ছোটে আসতে চাইবে। অথচ এমনটি করা তোমার উচিত হবে না। তুমিও যে বন্ধি হয়ে আছো সমাজ-সংসারের নিয়মনীতির শৃঙ্খলে। সে অদৃশ্য সিঁকল ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে, একে অন্যের কাছে ছোটেঁ যাওয়া, তোমার-আমার সাধ্যের অতীত। তাছাড়া তুমি আমার জন্য সমাজ-সংসারের নিচু মনের মানুষগুলোর কাছে ছোট হও সেও আমি চাইতে পারি না। সেজন্যই তোমার চোখের আড়াল হতে ইচ্ছে হল। আমি জানি, ঘুম ভাঙার পর তুমি নিশ্চয় আমার বাসাতেও আসবে। তাই তোমার ঘুম ভাঙার আগে, সকাল বেলাতেই বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম।
বাড়ীতে এসেও মনে শান্তি পাচ্ছিলাম না। কেবলি মনে হচ্ছিল, বুকের ভেতর থেকে বিশেষ কিছু একটা তোমার কাছে ফেলে এসেছি। খাওয়া, ঘুম সবই যেন আমার থেকে দূরে চলে যাচ্ছিল ধীরে ধীরে। নতুন করে শুরু হল মাথার যন্ত্রনা! এক মূহুর্তের জন্যও তোমাকে ভুলে থাকা আমার জন্য দূর্বিসহ হয়ে ওঠেছিল ক্রমেই। তবে মনে সুখও পাচ্ছিলাম সীমাহীন। আমার মধ্যে বিশেষ এক অদ্ভুত ক্ষমতার জন্ম হয়েছিল। চোখ বন্ধ করলেই তোমাকে দেখতে পেতাম। তোমার ছোঁয়া অনুভব করতে পেতাম। বিশ্বাস হচ্ছেতো তোমার? জানি, আমাকে তুমি বিশ্বাস করবে। জানো? চোখ বন্ধ করে আমাকে ছুঁইয়ে দেবার ভয়ংকর ক্ষমতা আমি তোমাকে দিয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু এতে যেমন সুখ আছে তেমন যন্ত্রনাও আছে। চোখ মেলে যখন দেখবে আমি তোমার সামনে নেই তখনই মরে যেতে ইচ্ছে করবে তোমার। তোমার কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা নিতান্তই কম। এমনতর ভয়ংকর যন্ত্রনা তুমি সহ্য করতে পারবে না। তখন এ জগত সংসার তোমার আর ভাল লাগবে না। সে জন্যই এ অদ্ভুত ক্ষমতা তোমাকে দিতে পারলাম না। আমি চাই, তুমি এ সংসারে তোমার সকল দায়িত্ব পালন শেষ করেই আমার কাছে ফিরে এসো।
সেদিন রাত্তিরে, আকাশ জুড়ে খেলা করছিল নীল জোসনা। তোমাকে খুব মনে পড়ছিল। চোখ বন্ধ করলাম। মনে হলো তুমি সেই কৃষ্ণচূঁড়ার তলায় বিরস মনে বসে আছো। তোমার হাতের সিগারেট জ্বলছে নিরবে। তোমার চোখে জল দেখে আমার কতটা কষ্ট হচ্ছিল তা তুমি নিশ্চয় বুঝতে পারছো। মনে হচ্ছিল পদ্মা পাড়ি দিয়ে ছোঁটে যাই তোমার কাছে। কিন্তু সে ক্ষমতা আমার ছিল না।
আমি যা পারতাম তাই করলাম। তোমার কষ্ট দেখার চেয়ে মুত্যু শ্রেয় মনে হলো তাই স্ব-ইচ্ছায় মৃত্যুকে বুকে জড়িয়ে নিলাম। বিশ্বাস কর একবারের জন্যও মনে হয়নি আমি পাপি হতে যাচ্ছি। তুমি যাকে স্পর্শ করেছো পাপ তাকে স্পর্শ করার সাহস পাবে কোথায়!
অনেক কথা হলো, এবার ঘুমুও তুমি। আমি তোমার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছি। চোখ বন্ধ কর তুমি। ও হ্যা শোনো...! আমি তোমার জন্য এপাড়ে অপেক্ষা করছি। চলে এসো তোমার সব দায়িত্ব পালন শেষ করেই। তারপর বিধাতার কাছে অনুমোদন নিয়ে আবার যাব দুজন একসাথে সেই কৃষ্ণচূঁড়ার তলায়। সেদিন ধর্ম, সমাজ বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না দুজনের মধ্যখানে। আর একটা কথা, তুমি যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন প্রতি পূর্ণিমার রাতেই আমার জন্য সেই কৃষ্ণচূঁড়ার তলায় এসো। প্রতি পূর্ণিমায় আমি সেখানে তোমার জন্য অপেক্ষা করবো।
-তোমারই আমি।
নিরজাকে এভাবে হারাতে হবে তা কখনো ভাবতেই পারেনি অমিত। ভিষন ঘুম পাচ্ছে তার। দু’চোখের পাতা মেলে রাখতে পারছে না। মনে হচ্ছে সতি সত্যিই নিরজা তার চুলে কোমল হাতে বিলি কাটছে। অসহ্য ঘুম তাকে নিথর করে দিচ্ছে যেন। হঠাৎ জ্ঞান হারাল সে।
অমিতের মানসিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল ক্রমেই। কখনো হাসে আবার কখনো বা নিজের মনেই কাঁদে। এভাবে চললেও মন্দ হতো না। কিন্তু হঠাৎ মন মাতাল করা এক জোসনা রাতে স্বপ্নার চোখকে ফাঁকি দিয়ে কোথায় যেন হারিয়ে গেল সে।
প্রায় পাঁচ বছর পরের কথা। আমি টঙ্গী রেল জংশনে ট্রেনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ শত ছিন্ন বস্ত্র পরিহিত এক পাগল চোখে পড়ল। সে ইংরেজীতে কি যেন বলছিল। উৎসুক জনতার ভিড় ঠেলে আমি তার কাছে গেলাম। পাগল তখনো বলতেছিল-
Niroja, please come back, please come back Niroja.
I am waiting for you, please come back.
©somewhere in net ltd.