![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তিন ভাই ও এক বোন। সাথে বাবা- মা এবং দাদা-দাদী এই নিয়ে তাদের ছোট একটি সংসার। গ্রামে তাদের বসবাস। অভাব অনটনের সংসার। কোন মতে কলিম উদ্দিন সংসার চালাতেন, স্ত্রী - সন্তানদের বুঝতে দেননি। টানাপোড়ন লেগেই থাকত। অনেকখানি জমি ছিল তাদের। কলিম উদ্দিন চাষ করে যা ফসল পেতেন, কিছু পরিমাণ খাবারের জন্য রেখে বাকি ফসল বিক্রি করে যা টাকা পেতেন তা দিয়ে সন্তানদের লেখা- পড়ার খরচ এবং সংসারের খরচ চালাতেন। বড় সন্তান নীরব মাত্র কলেজে পা রাখল। ধীরে ধীরে সংসারের খরচ বাড়তে শুরু করল। কলিম উদ্দিন হিমসিম খেতে শুরু করলেন। তাই কলিম উদ্দিন ক্রমান্বয়ে জমি বিক্রি করতে লাগলেন। জমি বিক্রির টাকায় সংসারের খরচ ও সন্তানদের লেখা- পড়ার খরচ ভালই চলছে। কিন্তু আর মাত্র কয়েক বিঘা জমি রইল। কলিম উদ্দিন ধীরে ধীরে চিন্তিত হয়ে পড়লেন। কিভাবে সংসার চালাবেন। কিন্তু কোনভাবেই তার পরিবারকে এর আচ পেতে দেননি। নীরব কিছুটা বুঝে উঠল। তাই সে তার বাবাকে এ বিষয় কিছু বলেনি। নীরব দুই একটি টিউশনি যোগাড় করল। নীরব প্রতিদিন টিউশনি করে রাতে বাড়িতে ফিরে। কলিম উদ্দিন কিছুটা অনুভব করলেন। ভাবলেন ছেলেকে জিজ্ঞাসা করবেন। কিন্তু বলা হয়ে উঠেনি। প্রায় কয়েকদিন পর কলিম উদ্দিন মনে মনে ভাবলেন ছেলেকে বলবেন, কেন রাতে বাড়ি ফিরে? কিন্তু এও ভাবলেন এখন ছেলে বড় হয়েছে। বাড়িতে ফিরতে দেরি হতেই পারে।
দুই_একদিন পর রাতে স্ত্রী দিয়া বেগম স্বামীকে খাবারের জন্য ডাকলেন। কলিম উদ্দিন দিয়া বেগমকে বললেন, একটু অপেক্ষা কর আজ নীরব আসার পর সবাই একসাথে খাব। কিছুক্ষণ পর নীরব আসল। হাত - মুখ ধৌত করার পর মাকে বলল, মা খাবার দাও। 'মা' দিয়া বেগম খাবার প্রস্তুত করে সবাইকে ডাকলেন, খেতে আস। সবাই খাবার খেতে আসল। খেতে খেতে কলিম উদ্দিন সবাইকে উদ্দেশ্য করে গল্প শুরু করলেন। সবার মুখে হাসি। যেন এক সুখের সংসার।
কলিম উদ্দিন হঠাৎ নীরবকে জিজ্ঞাসা করলেন, বাবা নীরব তুমি প্রতিদিন রাতে বাড়িতে ফির, কেন বাবা? নীরব বাবাকে বলল, বাবা আমি এখন অনেকটা বড় হয়ে গেছি। সংসার কি তা কিছুটা হলেও বুঝতে পারি। বাবা আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করবেন না। আপনার সন্তান আপনার আদর্শে গড়া। আমি বুঝতে পারি আপনি কিভাবে কষ্ট করে সংসার চালান। আপনারই সন্তান আমি।
দিয়া বেগম বেগম ছেলের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলতে লাগলেন, আমাদের ছেলেটা কত বড় হয়ে গেছে। দাদী নূরজাহান বেগম নাতির দিকে তাকিয়ে দিয়া বেগমকে বলছেন, বৌমা আমার নাতীর জন্য এখন নাত বউর প্রয়োজন। লজ্জায় নীরবের মুখ লাল হয়ে গেল।
দিশান মেট্রিক পরীক্ষা দিবে। তাই, সে পড়াশুনায় খুবই মনযোগী। এবং সে একটি আবদার রাখল। বাবাকে বলল, যদি আমি ভাল রেজাল্ট করতে পারি তাহলে আমাকে ভাল একটি উপহার দিতে হবে। এর মধ্যে নীরব আগেই বলে বসল, দিশান তুই যদি ভাল রেজাল্ট করতে পারিছ তাহলে আমি তকে ভাল দামি ঘড়ি কিনে দিব। কলিম উদ্দিন ছোট ছেলে দিশানকে বললেন, বাবা ভাল রেজাল্ট কর, তুমি যা চাও তা পাবে। দিশান মহাখুশি। একে একে দুই। দিশান ভাল করে পড়াশুনা শুরু করল। দিশান বদ্ধপরিকর ভাল রেজাল্ট করবেই। আমার উপহার চাই-ই। পাশের গ্রামের একটি মেয়ের সাথে নীরবের সম্পর্ক। মেয়েটির নাম সিনথিয়া। নীরব এবং সিনথিয়ার সম্পর্ক ভালই চলছে। তাদের দুজনের মধ্যে এক অঅদ্ভুত রকমের মিল আছে। একে অন্যকে ভালই বুঝে। হঠাৎ একদিন সিনথিয়া নীরবকে ডেকে পাঠাল। নীরব বুঝতে পারে নি, কি জন্য সিনথিয়া ডাকল? নীরব সিনথিয়ার কাছে গেল। দুজন গল্প করতে করতে দারুন একটা সময় পাড় করতে লাগল। সিনথিয়া নীরবকে বিষয়টা কিভাবে বলবে বুঝতে পারছিলনা। এর মধ্যে নীরব বুঝতে পারল কিছু একটা বলতে চাচ্ছে সিনথিয়া। তাই, নীরব সিনথিয়াকে জিজ্ঞাসা করল, কিছু বলবে? সিনথিয়া মাথা নাড়ল। সিনথিয়া বলল, কিছু বলব কিন্তু কিভাবে বলি বুঝতে পারছিনা। নীরব সিনথিয়াকে সাহস দিল। বল কোন সমস্যা নাই। সিনথিয়া আর দেরি না করে বলে ফেলল, নীরব শোন আমার বাবা গত রাত মাকে বলছেন, সিনথিয়ার জন্য পাত্র খুঁজতে হবে। মাও সায় দিলেন। তুমি কিছু একটা কর। তোমার মা-বাবাকে দিয়ে আমার মা-বাবার কাছে বিয়ের প্র স্তাব পাঠাও। নীরব বলল, দেখ সিনথিয়া আমি এখনও পড়া-লেখা শেষ করতে পারিনি। বাবার কাছে কিভাবে বলি, বুঝতে পারছিনা। দেখ নীরব তুমি বিষয়টা তোমার দাদীর সাথে আলাপ করতে পার। মাস খানিক পর নীরব টিউশনির টাকা তার বাবার হাতে তোলে দিল। কলিম উদ্দিন খুশি হলেন। এর মধ্যে নীরব একটি পার্ট টাইম জবের ব্যবস্থা করে ফেলল। এখন সংসার ভালই চলছে। কিন্তু নীরব সংসারের যোগান দিতে গিয়ে নিজের শখ -বিলাস পিছনে ফেলল। প্রায়ই, এক কাপড় পরিধান করে কলেজে যায়। এতে অবশ্য নীরবের মনে কোন প্রকার আক্ষেপ নেই। কলিম উদ্দিনের আদরের মেয়ে মিথিলা, নীরবের ছোট বোন। ভাইদের আদরের বোন। সংসারের রাজ কন্যা। মিথিলা ইন্টারমিডিয়েট ফাষ্ট ইয়ারে অধ্যায়নরত। কলিম উদ্দিন তার মেয়েকে খুবই আদরে বড় করেছেন। যখন যা চায় তা পায়। মাত্র কয়েক দিনেই কলেজে প্রায় সবার প্রিয় হয়ে উঠছে। নীরবের দাদা-দাদী তাদের শরীরটাও ভাল চলছিল। নীরবের দাদা নিয়ামত আলী ও দাদী নূরজাহান বেগম সংসারের কাজে যথাসাধ্য সয়াহতা করেন। নিয়ামত আলী, ছেলে কলিম উদ্দিনকে কৃষি কাজে সর্বাধিক সহযোগিতা করেন। এমনকি একা একা ও কৃষি কাজ এবং বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ, পুকুরে মাছ চাষ প্রভৃতি কাজ করেন তিনি। ছোট ছেলে রবিন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে। ভাই -বোন সবার ছোট। আদরের শেষ নেই। কলিম উদ্দিন বাজারে যাওয়ার পূর্বে রবিনকে জিজ্ঞাসা করতেই হবে। কি আনব তোমার জন্য ? তা অবশ্য প্রতিদিনের রুটিন রবিনের কিছু চাই। মা দিয়া বেগম প্রতিদিন সন্ধার পর রবিনকে পড়তে বসান। রবিন অবশ্য পড়াশুনায় যতেষ্ট ভাল। দিশানএবং রবিন স্কুল থেকে আসার পর খেলাধূলার ফাঁকে ফাঁকে মায়ের সাথে সংসারের কাজে সহযোগিতা করে। বেশিরভাগ মায়ের সাথেই সময় পাড় করে। দিয়া বেগম বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষে নিয়ামত আলীকে সহযোগিতা করেন। সবজি তোলে বাজারে বিক্রি করার জন্য প্রস্তুত করে দেন। মিথিলা কলেজ থেকে আসার পর নূরজাহান বেগমের সাথে রান্নার কাজে সহযোগিতা করে। কলিম উদ্দিনের সংসারে সুখের কমতি নেই। সবাই একসাথে রাতে খাবার খাওয়ার সময় গল্পের শেষ নেই। দিয়া বেগম অবশ্য সবার খাওয়ার শেষে খাবার গ্রহন করেন। মিথিলা মাঝে মধ্যে মায়ের সাথে খাবার খায়। মিথিলা, রবিন ও দিশান প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর পূর্বে দাদীর কাছ থেকে গল্প না শুনে ঘুমাবে না। নূরজাহান বেগমও মহাখুশি নাতি-নাতনীকে কাছে পেয়ে। প্রতিদিন নূরজাহান বেগম তাদেরকে গল্প শুনান। মাঝে মধ্যে গল্প শুনতে শুনতে তারা দাদীর কাছে ঘুমিয়ে পড়ে। নীরব গ্রেজুয়েশন শেষ করে মাস্টার্স ১ম পর্বে ভর্তি হল। নীরব টিউশনি এবং পার্টটাইম জব থেকে যে পরিমান টাকা পায় তা থেকে বাবাকে সহযোগিতা করার পরও তার লেখাপড়ার খরচ ভালবাভেই চলছে। কোন রকম সমস্যা হচ্ছে না।
এদিকে, সিনথিয়া এবং নিরবের সম্পর্কের কথা তার মাকে জানিয়ে দিয়েছে ইতিমধ্যে। সিনথিয়ার মা-বাবা নীরবের সাথে সিনথিয়ার বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে সিনথিয়াকে বলেন, নীরবকে একদিন বাড়িতে আনতে। সিনথিয়ার মা জুমলা বেগমও প্রায়ই সিনথিয়াকে বলেন, নিরবকে ডেকে আনার জন্য। কিন্তু সিনথিয়া মাকে সান্তনা দেয়। কিছুদিন অপেক্ষা করার জন্য। সে মাকে বলে, মা নীরব এখনও পড়ালেখা শেষ করে চাকুরী যোগাড় করতে পারে নি। তাই এখন কিভাবে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবে। নীরব বলছে তাকে আরও কয়টা দিন সময় দিতে।
একদিন রাতে খাওয়া দাওয়ার পর ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে কলিম উদ্দিন স্ত্রী দিয়া বেগমকে বললেন, দিয়া আমাদের মেয়ে মিথিলা অনেক বড় হয়ে গেছে। ওর বিয়ের ব্যাপারে তো ভাবতে হবে। কি বল তুমি। আমি মনে করি এ ব্যাপারে বাবা-মায়ের সাথে কথা বলা উচিত। দিয়া বেগম স্বামীকে বললেন, হ্যা তার দাদা-দাদীর সাথে কথা বলা দরকার। এ বিষয়ে আমরা আগামীকাল রাতে কথা বলব। তারা ঘুমিয়ে পড়ল। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর কলিম উদ্দিন দিয়া বেগমকে বললেন, দিয়া আমাকে তাড়াতাড়ি খাবার দাও। আমি ক্ষেতে যাব। নীরবের আজ কোন কাজ নেই। তাই সে ভাবল, বাবার সাথে আজ কাজে যাবে। বাবাকে বলল, বাবা আজ আমি তোমার সাথে কাজে যাব। কলিম উদ্দিন বললেন, বাবা তুমি কেন কষ্ট করবে। তুমি এসব পারবেনা। নীরবের এক কথাই সে যাবে। তাই সে বাবার সাথে ক্ষেতে কাজ করতে গেল।
দিশানের রেজাল্ট বের হবে আজ। তাই দিশান খুবই খুশি। সে প্রস্তুত হল স্কুলে যাবার জন্য সবার কাছ থেকে দোয়া নিল। রবিন মায়ের কাছে আবদার রাখল, ভাইয়ের সাথে স্কুলে যাবে। মা সায় দিল। মিথিলা ছোট ভাই রবিনকে প্রস্তুত করে দিশানের সাথে যেতে দিল। কলিম উদ্দিন এবং তার ছেলে নীরব আজকে একটু তাড়াতাড়িই বাড়িতে এল। কারন দিশানের পরীক্ষার ফল আজ প্রকাশ হবে। তারা গোসল করে অপেক্ষা করছে। দিশান আসার পর একসাথে সবাই দুপুরের খাবার খাবে। নীরব মিষ্টি কিনার জন্য টাকা নিজের কাছ থেকে বাবার কাছ থেকে মোটামোটি অনেকগুলো মিষ্টি আনতে হবে।
মিথিলাও আজ কলেজে যায়নি। কারণ, ভাইয়ের পাসের আনন্দের ভাগাভাগির অংশ ছাড় দিতে নারাজ। সবাই মিলে বাড়িতে আনন্দ উপভোগ করছে। যেন উৎসবের আমেজ। দাদা নিয়ামত আলী মহখুশিতে সবজি বাগান থেকে এসে পুকুরে জাল নিয়ে গেলেন। আজ বড় রৌ এবং কাতলা মাছ ধরতে হবে। নাতীর পছন্দের মাছ বলে কথা। তাছাড়া, নূরজাহান বেগমও মহাখুশি। নাতীর পছন্দের পিঠাগুলো সকাল থেকে খাটুনি খেটে তৈরী করেছেন। কিছুক্ষণ পর দিশান ও রবিন বাড়িতে আসল। সবাই ছুটে গেল তাদের কাছে। দিশান সু-সংবাদ দিল সবাইকে। সে পাশ করেছে। ভাল রেজাল্ট করেছে। ফাস্ট ডিভিশন পেয়েছে। শুনে সবাই মহাখুশি। নীরব সাথে সাথে বাজারে গেল মিষ্টি আনার জন্য। নিয়ামত আলী ও নূরজাহান বেগম নাতীর পাশের আনন্দে আত্মহারা। নাতীকে তারা আদর সোহাগে ভরিয়ে তুললেন। মিথিলা তার ভাইয়ের পাশের খবর সবাইকে জানাল। বাবা কলিম উদ্দিন ছেলেকে কাছে ডাকলেন, পাশে বসালেন। দিয়া বেগমকে বললেন, সবার খাবার দিতে। মা দিয়া বেগম দিশানকে আদর করলেন। তারপর খাবার আনতে গেলেন। নীরব অনেকগুলো মিষ্টি নিয়ে বাড়িতে আসল। দাদা নিয়ামত আলী নীরবকে বললেন, দাদা ভাই তুমি এখন মিষ্টি রাখ। আগে আমরা সবাই একসাথে খাবার খাব। তারপর সারা গ্রামে মিষ্টি বিতরণ করব। দিয়া বেগম খাবার প্রস্তুত করে মেয়েকে বললেন, মিথিলা খাবারগুলো খাবার জায়গায় নিয়ে যাও। মিথিলা মায়ের কথামত খাবার এনে টেবিলে সাঁজিয়ে রাখল। দিয়া বেগম সবাইকে ডাকলেন, খাবার টেবিলে আসার জন্য। সবাই খেতে আসল। নীরব মাকে বলল, আজ আমরা সবাই একসাথে খাব। মা তুমিও। সবাই একসাথে খাবার খেল। খাওয়া শেষে দাদী নূরজাহান বেগম, মিথিলা ও রবিন সারা গাঁয়ে মিষ্টি বিতরণ করতে গেল। গ্রামের সবাই খুশি দিশানের পাশের খবর শুনে। মোটামোটি, সারাটাদিন সবার আনন্দেই চলে গেল। রাতে খাবার শেষে কলিম উদ্দিন ও দিয়া বেগম, মিথিলার দাদা - দাদীর কাছে গেলেন মিথিলার বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে। নিয়ামত আলী ও নূরজাহান বেগম তারা সন্তানদের দেখে খুবই খুশি। এস বাবা কি জন্য এসেছ? কলিম উদ্দিন বাবাকে বলল, বাবা আমি আসছিলাম মিথিলার বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে। মিথিলার দাদা-দাদী শুনে খুশি। এবং তারা বলল, আমরাও কয়দিন ধরে তাই ভাবতেছি। তোমাদের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলব। ভালই হল।
মিথিলার মা-বাবা বললেন, এখন মিথিলার জন্য বর দেখা প্রয়োজন। কিন্তু মিথিলার দাদা-দাদী প্রতিউওরে বললেন, দেখ বৌ মা এ ব্যাপারে আমাদের উচিত মিথিলার সাথে কথা বলা। তার পছন্দ ও অপছন্দ থাকতে পারে। আমরা তার সাথে আগে এ বিষয় নিয়ে কথা বলি তারপর সিদ্ধান্ত নিব। মিথিলার দাদী বলে উঠলেন, ঠিক আছে আমি মিথিলার সাথে কথা বলব। সকালে ঘুম থেকে উঠার পর নিয়ামত আলী গেলেন সবজি বাগানে পরিচর্যা করার জন্য। সবজির ফলন ভালই হয়েছে। নিয়ামত আলী প্রতিদিন সবজি বিক্রি করে ভালই টাকা পান। তিনি সবজি ক্ষেত থেকে পুকুর পাড়ে গেলেন মাছ দেখতে। মাছের ফলনও ভাল হইছে। নিয়ামত আলী এখনও ঊনার সোনার সংসারটাকে আগলে রেখেছেন।
আর মাত্র কিছুদিন পর নীরবের মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা। তাই সে পড়া-লেখা নিয়ে ব্যস্ত। সিনথিয়া নীরবকে খবর দিল, তার সাথে দেখা করার জন্য। নীরব কলেজ থেকে আসার পর কাজে গেল। কাজ থেকে আসার পথে সিনথিয়ার সাথে দেখা করল। নীরব এবং সিনথিয়ার মধ্যে কিছুক্ষণ আলাপ- চারিতা চলল। তারপর নীরব বাড়িতে চলে গেল। সন্ধার পর নূরজাহান বেগম মিথিলাকে ঊনার ঘরে ডেকে আনলেন। দাদী নাতনীকে বললেন, দিদিভাই তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। এর মধ্যে মিথিলার 'মা' দিয়া বেগমও ঘরে ঢুকলেন। তারা দুজনেই মিথিলার সাথে কথা বললেন। মা মিথিলা তুমি অনেক বড় হয়ে গেছ। আমরা তোমার সাথে তোমার বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে চাই। তোমার দাদা এবং বাবা এ বিষয়ে কথা বলতে বলেছেন। তোমার কোন রকম মতামত থাকলে আমাদেরকে বলতে পার। মিথিলা, মা এবং দাদীকে সাফ জানিয়ে দিল। মা এখন আমি বিয়ে করব না। আমার বি.এ ফাইনাল শেষে বিয়ে করব। দাদী মিথিলাকে জিজ্ঞাসা করলেন, দিদিভাই তোমার কারো সাথে সম্পর্ক থাকলে আমাদেরকে বলতে পার। মিথিলা বলল, না মা এরকম কিছু আমার নাই। ঠিক আছে মা আমরা এ ব্যাপারে তোমার বাবা ও দাদার সাথে কথা বলব।
দিশান একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হবে। তাই বাবা কলিম উদ্দিনকে বলল, বাবা আগামীকাল আমার কলেজে ভর্তি হতে হবে। কলিম উদ্দিন বললেন, ঠিক আছে তুমি চিন্তা কর না। আমি নীরবকে বলব। তোমার ভাই নীরবকে বল আমার কাছে আসতে। দিশান গেল নীরবের কাছে। ভাইয়া আব্বু তোমাকে ডাকছেন। সাথে সাথে নীরব বাবার কাছে চলে এল। কলিম উদ্দিন নীরবকে বললেন, নীরব দিশানের ভর্তির বিষয়ে কিছু ভাবছ? কোথায় ভর্তি করবে? বাবা আমি যে কলেজে পড়ি ওকে ঐ কলেজে ভর্তি করব। ঠিক আছে বাবা তুমি আগামীকাল ওকে কলেজে নিয়ে ভর্তি করে দিও। পরের দিন সকালে কলেজে গিয়ে দিশানকে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি করে দিল।
নীরবের মাস্টর্স পরীক্ষা শেষ, রেজাল্টের অপেক্ষা। নীরব রাতে খাবার শেষে মা ও দাদীর সাথে সিনথিয়াকে নিয়ে কথা বলল। নীরবকে নূরজাহান বেগম বললেন, তুমি চিন্তা কর না। আমরা সবাই মিলে সিনথিয়ার মা -বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাব। নীরব বলল, না না এখন না। আমি শুধু তোমাদের মতামত জানার জন্য এখন এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করলাম। আগে আমি একটি ভাল চাকুরীর ব্যাবস্থা করি তারপর।
এদিকে, কলিম উদ্দিন ভালই ফসল পাচ্ছেন। ক্ষেতে ধান চাষ, সবজি চাষ এবং পুকুরে মাছ চাষ এসবে তিনি ও বাবা নিয়ামত আলীর সহযোগিতায় ভালই সুবিধা পাচ্ছেন। এখন সংসারের খরচ চালিয়ে কিছু সঞ্চয়ও করতে পারছেন।
দুপুরে খাবার শেষে কলিম উদ্দিন স্ত্রী দিয়া বেগমকে জিজ্ঞাসা করলেন, কি তুমি মিথিলার সাথে সাথে কথা বলেছ? হ্যা আমি আর মা মিথিলার সাথে এ ব্যাপারে কথা বলেছি। সে কি বলল। সে বলল, পড়ালেখা শেষ করে বিয়ে করবে। এর আগে না। কলিম উদ্দিন বললেন, ঠিক আছে আমরা তার ইচ্ছাটাকে গুরুত্ব দিব।
সিনথিয়াদের বেশ স্বচ্ছল সংসার। দুই ভাই এবং মা-বাবা এই নিয়ে তাদের সুখের সংসার। সিনথিয়ার বড় ভাই সমির উদ্দিন শহরে থাকে। চাকুরী করে। স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে থাকে। ছোট ভাই নাঈম শহরে ভাইয়ের সাথে থেকে লেখাপড়া করে। মা জুমলা বেগম ও বাবা সাদিক মিয়া সিনথিয়াকে খুবই আদর সোহাগে বড় করেছেন। ছেলেদের থেকেও মেয়ের গুরুত্ব বেশি তাদের কাছে।
নীরবের পরীক্ষার রেজাল্ট বের হয়েছে। ভাল রেজাল্ট করেছে। এ খবর বাড়িতে সবাইকে দিল। সবাই শুনে খুশি হল। দাদা-দাদী নাতীকে বললেন, এবার আর দেরি নয়। শুভ কাজ সেরে ফেলব। সবাই সায় দিল তাতে। কিন্তু নীরব বলল, এখন না আগে আমি ভাল একটা চাকুরী পাই। তাছাড়া, মিথিলার বিয়ে আগে দেই তারপর আমার চিন্তা করা যাবে। অবশ্য তাতে সবাই একমত হল।
মিথিলার দ্বাদশ শ্রেণীর পড়া শেষ। মিথিলার বাবা কলিম উদ্দিন মিথিলার জন্য বর দেখতেছেন। এর মধ্যে বর ঠিক করে ফেললেন। সুটাম দেহের অধিকারী। বর ব্যবসা করে। বরের নাম ইমতিয়াজ উদ্দিন। বেশ স্বচ্ছল পরিবার। কলিম উদ্দিন মেয়েকে দেখার জন্য ইমতিয়াজ উদ্দিনের বাবা-মাকে আমন্ত্রন জানালেন। ইমতিয়াজ উদ্দিনের বাবা-মা কলিম উদ্দিনকে বললেন, আগামী সপ্তাহে মেয়ে দেখতে আসবেন।
কলিম উদ্দিন ছেলে নিরবকে বললেন, বরের মা-বাবা মিথিলাকে দেখতে আসবে। তাই সবকিছু ব্যবস্তা করার জন্য। নীরব প্রয়োজনুযায়ী সবকিছুর ব্যবস্থা করল।
নিয়ামত আলী ও কলিম উদ্দিন ধান চাষ, সবজি চাষ এবং মাছ চাষ উভয় ক্ষেত্রে ভাল ফলনের মাধ্যমে পরিবারের স্বচ্ছলতাকে দিন দিন ক্রমান্বয়ে বাড়িয়েই নিচ্ছেন। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম তাদের ছেলে-মেয়েদের জন্য আদর্শ স্বরুপ। আগামীকাল ইমতিয়াজের মা-বাবা কনে দেখতে আসবে। তাই দিয়া বেগম ও নূরজাহান বেগম সবজি ক্ষেতে গেলেন। টাটকা সবজিগুলো আনলেন। নিয়ামত আলী নাতী দিশান ও রবিনকে নিয়ে পুকুরে গেলেন। বড় বড় মাছ ধরলেন। নানারকম পিঠা, মাছ ও মাংস যেন খাবারের সমাহার তৈরী করলেন।
ইমতিয়াজ উদ্দিন সহ বাবা - মা ও ভাই-বোন আসলেন। খাবার খেলেন। মেয়ে দেখলেন মেয়ে পছন্দ হল। তাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা শেষে বিয়ের তারিখ ঠিক করলেন।
নীরব একটি ভাল চাকুরী পেল। আজ চাকুরীর প্রথম দিন। প্রথম অফিস করবে। তাই অফিসে যাওয়ার আগে সবার কাছ থেকে দোয়া নিল। তাকে সবাই আর্শিবাদ করল। ছোট ছোট ভাই-বোনের আবদার প্রথম মাসের বেতন পেলে তাদেরকে নতুন জামা কিনে দিতে হবে। নীরব অফিসে যাওয়ার পর তার উপরি কর্মকর্তা তাকে ঊনার কাছে ডাকলেন। নীরবকে দিক-নির্দেশনা দিলেন। অবশ্য কাজের প্রথম দিন নীরব অফিস কলিকদের সাথে বেশ আনন্দেই কাজ করল।
ইমতিয়াজ উদ্দিনের সাথে মিথিলার বিয়ে হয়ে গেল। মিথিলা নতুন সংসার ইমতিয়াজ, মা-বাবা, ছোট ভাই-বোন সবার সাথে ভালই মানিয়ে নিল। ইমতিয়াজের সংসারে গিয়ে যেন মিথিলা এক নতুন গতি পেল। মিথিলা পরিবারের এক অন্যতম সদস্য হয়ে উঠল। তারা সবাই মিথিলাকে সব বিষয়ে গুরুত্ব দেয়। মিথিলার বাবা-মা, দাদা-দাদী, ছোট ভাই দিশান ও রবিন মিথিলার নতুন সংসারে দেখতে গেল। মিথিলার শশুর বাড়ির লোকজন মিথিলার মা-বাবাকে দেখে খুবই খুশি হলেন। তাদেরকে আদর-আপ্যায়নে ভরিয়ে তুললেন।
নীরব প্রথম মাসের বেতন পেয়ে পরিবারের সবার জন্য জামা-কাপড় কিনল। এমনকি, মিথিলার বর ইমতিয়াজ উদ্দিন ও তার পরিবারের সকলের জন্যও জামা কিনল। সবাইকে জামা বণ্টন করল। সবাই খুশি।
দাদা নিয়ামত আলী নীরবকে বললেন, সিনথিয়াকে বলার জন্য যে, তারা বিয়ের আলোচনা করতে সিনথিয়াদের বাড়ি যাবে। নীরব তাই করল। সিনথিয়ার বাবা সাদিক মিয়া নীরবকে যাওয়ার তারিখ দিলেন।
নীরবের বোন জামাই সহ পরিবারের সকল সিনথিয়াদের বাড়ি গেল। সিনথিয়ারা নীরবের পরিবারকে আপ্যায়ন করার পর সিনথিয়ার বাবা, ভাই সহ আলোচনায় বসলেন। সবাই মিলে বিয়ের দিন ঠিক করলেন।
মিথিলার শশুর বাড়ির লোকজন মিথিলার বাপের বাড়িতে আসল। তাদেরকে আদর আপ্যায়ন, কাপড় মোটকথা যতটুকু করার প্রয়োজন তাই করল।
নীরব ও সিনথিয়ার বিয়ে হয়ে গেল। সিনথিয়া শশুর বাড়িতে সবার সাথে সুখের সংসার করতে লাগল। কলিম উদ্দিন ছেলে ও মেয়ের সন্তানদের প্রতিবছর একসাথে সবাইকে ভিবন্ন উপহার দেন।
নিয়ামত আলী ও নূরজাহান বেগম তারা রাতে ঘুমানোর সময় একে অন্যের সাথে আলোচনায় লিপ্ত। আমাদের সংসারটা খুবই সুখের। মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, এভাবেই যেন আমাদের সংসারে সুখ বয়ে চলে।
©somewhere in net ltd.