![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শিক্ষক
(২য় পর্ব/গতকালের পর)
উপরোল্লিখিত সূরা হুজুরাতের ছয় নম্বর আয়াতে সংবাদ অর্থে ‘নাবাউন’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। ‘নাবাউন’ থেকে নাবি বা নবি শব্দের উৎপত্তি। কাজেই নবির শাব্দিক অর্থ হবে সাংবাদিক। অন্য কথায় সাংবাদিক শব্দের আরবি প্রতিশব্দ হলো ‘নবি’। অবশ্য এটা শাব্দিক অর্থে, পারিভাষিক অর্থে নয়।
পারিভাষিক অর্থে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ঐশী-বার্তা যিনি মানুষের কাছে পৌঁছান, তিনি হলেন নবি। মহানবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন সর্বশেষ নবি। তাঁর পরে আর কোনো নবি আসবেন না। এটাই সঠিক কথা।
কাজেই বর্তমানে বার্তা বহনকারী সাংবাদিকগণ পারিভাষিক অর্থে নবি হতে পারবেন না, এটা ঠিক। কিন্তু সঠিক বার্তা বহনের মাধ্যমে নবির কাছের বা নবির নিকটবর্তী বা নবির অতি প্রিয় মানুষে তো উন্নীত হতে পারেন। নবির ঘনিষ্ট মানুষে পরিণত হতে কোনো বাঁধা বা আপত্তি নেই। সুতরাং আন্তরিকভাবে সঠিক ও যথাযথ এবং মানুষের জন্য কল্যাণকর সংবাদ বহনের মাধ্যমে পুরুষ ও মহিলা সাংবাদিকগণ নবির প্রিয় ও ঘনিষ্ট মানুষে পরিণত হয়ে সৌভাগ্য লাভে ধন্য হওয়াটাই হল বুদ্ধিমত্ত্বা ও সচেতনতার পরিচায়ক।
লক্ষণীয় যে, কারো দোষ-ত্রুটির মাত্রা নির্ধারণে ভুল করলে অনেক সময় মারাত্মক বিপর্যয় হবার সম্ভাবনা রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, দু’টি পক্ষের একটির দোষের পরিমাণ ৫% ও গুণের পরিমাণ ৯৫% এবং দ্বিতীয় পক্ষের গুণ ৫% ও দোষ ৯৫% । এমতাবস্থায় আপনি যদি প্রথম পক্ষের দোষকে অতিরিক্ত প্রচার করে কোনঠাসা করে ফেলেন, তাহলে দ্বিতীয় পক্ষ আপনা-আপনি লাভবান হতে থাকবে। ফলে দোষ বা মিথ্যার জয় জয়কার হবে। আর স্বাভাবিক কারণেই আপনি জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে দোষ-প্রধান শক্তির পক্ষে কাজ করে বসলেন। আমার কথার অর্থ এ নয় যে, আপনি তুলনামূলক ভালো পক্ষের দোষকে এড়িয়ে চলবেন। বরং আমার কথা হলো উভয় পক্ষের দোষের মাত্রা নির্ধারণ করে আনুপাতিক হারে দোষ বর্ণনা করবেন এবং উভয়ের গুণের দিকগুলোও আনুপাতিক হারে তুলে ধরবেন। আপনার প্রচারণার কারণে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যারা লাভবান হচ্ছে তাদের চরিত্র কেমন, সে দিকে লক্ষ রাখা সচেতন মানুষ হিসাবে আপনার জন্য অতীব জরুরী। সিরিয়ার আয়লান ও ওমরানদের জন্য মায়াকান্না করে সংবাদ পরিবেশন করতে অনেককে দেখা যায়। অপরদিকে এরাই এমন পক্ষের অনুকূলে ভূমিকা রাখেন, যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ঐসব ঘটনার জন্য দায়ী। পাশাপাশি এমন পক্ষের বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখেন, যারা ঐসব পরিবেশ পাল্টে দেয়ার সদিচ্ছা রাখে। অনুরূপভাবে দেশে দেশে এ ধরণের উদাহরণের অভাব নেই। কাজেই সংবাদ পরিবেশন করে সচেতনভাবে বা অবচেতন মনে আপনি কোন দলের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন, সেটা আপনাকে গভীরভাবে চিন্তা করে দেখতে হবে।
কোন ভুল বা মিথ্যা সংবাদ কোটি কোটি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার পর এর প্রভাবে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে গেলে পরে এটা সংশোধন করা এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ক্ষতিপূরণ করা চাইলেই সহজ নয়। পরকাল হওয়াটা বিজ্ঞান, ধর্ম, বিবেকবোধ ও ন্যায়বোধের অপরিহার্য দাবি। কাজেই পরকালীন দৃষ্টিতে বিষয়টিকে হালকাভাবে নেয়ার আদৌ সুযোগ নেই। মানুষকে কষ্ট দেয়া, মানুষকে লজ্জিত করা, মানুষকে অপদস্ত করা, মানুষকে হেয় ও খাটো করা, মানুষের সুনাম ও মর্যাদা নষ্ট করা, মানুষের চরিত্রে কালিমা লেপন করা, মানুষকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে একতরফা মন্তব্য করা, মানুষের একান্ত ব্যক্তিগত গোপন বিষয়াবলি তার অনুমতি ও ব্যাখ্যা ছাড়া জনসমক্ষে প্রকাশ করা প্রভৃতি নানাবিধ উপায়ে মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করার মাধ্যমে মানুষের অধিকার হরণ করা সকলের মতেই হারাম, অবৈধ ও নিষিদ্ধ। এটা মোটেই সাধারণ বিষয় নয়। এটা হক্কুল ইবাদ বা মানুষের অধিকার। এ অধিকার খর্বকারীরা কি মুসলিম বা ধার্মিক হতে পারে? অপপ্রচারে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা সন্তুষ্ট হয়ে ক্ষমা না করলে আল্লাহও ক্ষমা করবেন না। (চলবে)
©somewhere in net ltd.