নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ট শিক্ষক হিসেবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত

হাফিজ মোঃ মাশহুদ চৌধুরীর

শিক্ষক

হাফিজ মোঃ মাশহুদ চৌধুরীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপরের হাত নিচের হাতের চেয়ে উত্তম

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:২১

যিনি কাউকে কোনো কিছু দান করেন, তার হাত সাধারণত উপরে থাকে। আর যিনি দান গ্রহণ করেন, তার হাত সাধারণত নিচে থাকে। তাই “উপরের হাত নিচের হাতের চেয়ে উত্তম” বলতে দানকারী বা দাতার মর্যাদা দান গ্রহণকারী বা দান গ্রহীতার মর্যাদার চেয়ে উত্তম বলে বুঝানো হয়েছে।
সাধারণত দাতাদের কাছে দান গ্রহীতারা ভিড় জমায়। দাতাদের মন আকৃষ্ট করার জন্য দান গ্রহীতারা নানাবিধ পন্থায় প্রচেষ্টা চালায়। স্বাভাবিক কারণেই দাতাদের ভূমিকা থাকে প্রবল এবং দান গ্রহীতাদের ভূমিকা থাকে দুর্বল। ফলে দাতারা দান গ্রহীতাদের উপর প্রভাব বিস্তার ও তা ধরে রাখার জন্য নানাবিধ কৌশল অবলম্বন করে থাকে। আর দান গ্রহীতারা বুঝে-না বুঝে দাতাদের দাবিসমূহ ক্ষতিকর হলেও স্বেচ্ছায়-অনিচ্ছায় চোখ-বোঝে মেনে নিয়ে থাকে। তাই দাতারা হয় প্রভাবশালী ও প্রভাব বিস্তারকারী। আর দান গ্রহীতারা হয় প্রভাবিত ও দুর্বল। এর অনিবার্য ফলশ্রুতিতে সবলরা দুর্বলদের উপর ইচ্ছেমতো ছড়ি ঘুরায় এবং যেমন খুশি তেমনি নাচানোর চেষ্টা চালায়। সবলরা চায় না দুর্বলরা এগিয়ে যাক। দুর্বলরা যাতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেজন্যে সবলরা অব্যাহত প্রচেষ্টা চালায়।
শিক্ষা-সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থ-সম্পদ, সমরশক্তি, প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে যারা এগিয়ে থাকে, তারাই প্রভাব-প্রতিপত্তি সম্পন্ন হয় এবং সাধারণত দাতার ভূমিকায় থাকে। আর উপরোক্ত সকল বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে যারা পিছিয়ে থাকে, তারাই দুর্বল হয় এবং দান গ্রহণের জন্য উদগ্রীব থাকে।
যারা দাতার ভূমিকায় থাকে তাদের পক্ষে যেমন ধংসাত্মক ও ক্ষতিকর কাজে লিপ্ত থাকার সুযোগ থাকে, তেমনি গঠনমূলক ও উন্নয়নমূলক কাজেও অগ্রণী ভূমিকা পালনের সুযোগ থাকে। যদি প্রভাবশালী দাতাদের মনে প্রকৃত দেশপ্রেম, মানবপ্রেম, বিবেকবোধ, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও পরকালের কর্মফলের চিন্তা জাগ্রত থাকে, তাহলে সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ার কাজে তারা সক্রিয় থাকে। অপরদিকে এসব বিষয় যাদের অন্তরে অনুপস্থিত থাকে, তারা বাহ্যিকভাবে সমাজ উন্নয়নের অভিনয় করলেও গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে তারা মানব ও সমাজ-বিধ্বংসী কাজে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভূমিকা রেখেই চলেছে। আমাদের চারপাশের সমাজ ও বিশ্ব পরিস্থিতির দিকে নজর দিলে এর অসংখ্য জ্বলন্ত উদাহরণ প্রতিনিয়ত দেখতে পাই।
ইহকাল ও পরকালে প্রকৃত সফলতা লাভ করতে হলে দান গ্রহীতা নয়, দাতার মর্যাদায় উন্নীত হতে হবে। ধর্মের মূল কথা হলো ‘স্রষ্টার সন্তুষ্টির জন্য মানব কল্যাণ’। আর মানব কল্যাণ করতে হলে সকল ক্ষেত্রে না হলেও আপনাকে কোনো না কোনো ক্ষেত্রে শ্রেষ্টত্ব অর্জন করতেই হবে। যেমন—
কাউকে কোনো কিছু দান করতে হলে আপনার স্বচ্ছলতা বা দান করার ক্ষমতা থাকতে হবে। রোগীর সেবা করতে হলে আপনাকে সুস্থ থাকতে হবে। কাউকে উপদেশ-পরামর্শ দিতে হলে আপনাকে বিদ্যা-বুদ্ধিতে শ্রেষ্ঠ হতে হবে ইত্যাদি। আবার আপনি যদি মর্যাদাপূর্ণ আসনে আসীন হতে না পারেন, তাহলে যতো মূল্যবান কথা-ই বলুন না কেনো আপনার কথাকে কেউই গুরুত্ব দিতে চাইবে না। অন্যদিকে গুরুত্বপুর্ণ আসনে আসীন হয়ে অনেক সময় ভুল কথা বললেও সে কথাকে শিরোধার্য করার লোকের অভাব থাকবে না। অনেক জ্ঞানী লোকের ভুল উচ্চারণ অনেক সময় গ্রহণযোগ্যতার দলীল হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। এসবের ভুরি ভুরি উদাহরণ সমাজে রয়েছে। কাজেই প্রমাণিত হলো যে, আপনার কথাকে গুরুত্বপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হলে আপনাকে সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ আসনে আসীন হতে হবে। তাইতো আরবিতে একটি প্রবাদ আছে—“আন-নাসু আ’লা দীনি মুলূকিহিম” অর্থাৎ জনগণ কর্তৃত্বশালী নেতাদের দ্বারা প্রভাবিত ও পরিচালিত হয়ে থাকে।
প্রকৃতপক্ষে নিজের জন্য বা মানুষের জন্য উল্লেখযোগ্য কিছু করতে হলে আপনাকে সামাজিক নেতৃত্ব ও দাতার আসনে আসীন হবার জন্যে কাজ করতে হবে। অপরদিকে এ ক্ষেত্রে যারা পিছিয়ে থাকবে, তাদেরকে দান ও অনুগ্রহ গ্রহীতার মতো অপমানজনক নিম্ন আসনে অবস্থান করতে হবে। এ মৌলিক কথা যেমনভাবে ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তেমনিভাবে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
আমাদের এ প্রিয় মাতৃভূমিকে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত ও মর্যাদাপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছাতে হলে দেশটিকে এবং ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে সকল ক্ষেত্রে পরনির্ভশীলতা মুক্ত করে স্বনির্ভর করে গড়ে তোলার সার্বিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে পরনির্ভরশীলতার অনিবার্য পরিণতি হলো ভিক্ষাবৃত্তি বা অন্যের কাছে সাহায্য সহযোগিতার জন্য হাত পাতা। আর ধর্মে ভিক্ষাবৃত্তিকে অশ্লীল কাজসমূহের মধ্যে গণ্য করা হয়েছে। কাজেই এ অশ্লীল কাজ থেকে বাঁচতে হলে সকল ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা অর্জনের যথাযথ চেষ্টা অবশ্যই করে যেতে হবে। তাইতো বুখারী শরীফের একটি হাদীসে উল্লেখ আছে রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন—“আল-ইয়াদুল ঊলইয়া খাইরুম মিনাল ইয়াদিস-সুফলা”—অর্থাৎ উপরের হাত নিচের হাতের চেয়ে উত্তম।
উপরের হাতের অধিকারী হবার জন্য ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে করণীয়ঃ
১. জ্ঞান-বিজ্ঞানে শ্রেষ্টত্ব অর্জনের সার্থক উদ্যোগ নিতে হবে।
২. আর্থিক স্বচ্ছলতা অর্জনের জন্য উৎপাদনমূখী ও সৃজনশীল পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৩. সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের উপযোগী করে নিজেদেরকে গড়ে তুলতে হবে।
৪. সকল ক্ষেত্রে সর্বশেষ প্রযুক্তি আয়ত্ত করতে হবে।
৫. ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
৬. চাকরি করার চেয়ে চাকরি দেয়ার যোগ্যতা অর্জন এবং এ লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৭. অন্যের দিকে না তাকিয়ে নিজের যা আছে তা কাজে লাগিয়ে অগ্রসর হবার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। নিজের সমস্যার সমাধান নিজেকেই করতে হবে।
৮. চেষ্টা-প্রচেষ্টা বাদ দিয়ে কিংবা এতে কমতি রেখে স্রষ্টা বা নিয়তির উপর ভরসা করা ধর্ম-সম্মত নয়। বরং নিজের সুযোগ-সুবিধা ও যোগ্যতাকে সর্বোচ্চ ও নিখুঁতভাবে কাজে লাগিয়ে স্রষ্টার উপর তাওয়াক্কুল বা ভরসা করা একান্ত আবশ্যক।
৯. কারো কোনো প্রকার দান-অনুগ্রহ গ্রহণ করাকে লজ্জা ও অবমাননার বিষয় বলে গণ্য করতে হবে। উপরন্তু কাউকে কোনো কিছু দিতে পারার মধ্যে আনন্দবোধ করতে হবে এবং এরূপ করতে পারলে তা নিজের ক্ষমতা বলে নয়, বরং স্রষ্টার অনুগ্রহ বলে স্বীকার করতে হবে এবং এ ক্ষমতা আরো বৃদ্ধির জন্য স্রষ্টার সাহায্য প্রার্থনা ও প্রচেষ্টা ক্রমাগত জোরদার করতে হবে।
১০. মানব কল্যাণের জন্য পেরেশান থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে ধর্মের মূল কথাই হলো পরোপকার। তবে অন্যের বা সমাজের উপকার করতে যেয়ে অনেকে নিজের বা পরিবার-আত্মীয়-পড়শির কথা ভুলে যায়—এমন যেন না হয়।
১১. কোনো অবস্থাতেই কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে নিজেকে লাভবান করার মনোভাব পোষণ করা যাবে না। বরং সকলেরই কল্যাণ সাধিত হয়, এমন পদক্ষেপের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে।
১২. কোনো অবস্থাতেই এগিয়ে যাবার জন্য অনৈতিক কোনো ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া যাবে না।
১৩. নিজের কোনো সমস্যার কথা কোনো মানুষের কাছে না বলারই চেষ্টা করতে হবে। বরং তা বলতে হবে কোনো প্রকার মাধ্যম ছাড়া সরাসরি স্রষ্টার কাছে এবং সাহসহারা, মনমরা ও অলস না হয়ে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলার ইতিবাচক পদক্ষেপে এগিয়ে যেতে হবে।
১৪. মানুষের বাহবা অর্জনের জন্য মানব কল্যাণ নয়, বরং স্রষ্টার সান্নিধ্য অর্জনের জন্য মানুষের কল্যাণ ও উপকার করতে হবে।
১৫. লক্ষ্য অর্জনে প্রচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হলেও জীবনের শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত অবিরত চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.