![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শিক্ষক
[ মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ মূল্যায়ন করা, শহীদগণের তালিকা চূড়ান্ত করা, বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের নিহত সদস্যদেরকে ‘শহীদ’ আখ্যা দেয়া এবং বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে স্থায়ী সাংবিধানিক মর্যাদা দেয়া ইত্যাদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অপরিহার্য দাবি।]
মুক্তিযোদ্ধাদের মূল্যায়ন প্রসঙ্গ---
আমাদের এ প্রিয় মাতৃভূমিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যাঁরা ভূমিকা পালন করেছেন, তাঁরা সবাই প্রকৃতপক্ষে সম্মান, মর্যাদা ও প্রশংসা পাবার হকদার। তন্মধ্যে যাঁরা প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে শহীদ হয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, আহত হয়েছেন, নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের সকলকেই যথাযথ মূল্যায়ন করা দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসাবে আমাদের সকলেরই অপরিহার্য দায়িত্ব।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের আহ্বান ও নেতৃত্ব দেয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবার পরিজনদের উপযুক্ত মূল্যায়নের নিমিত্তে আমার কিছু প্রস্তাবনা বিগত ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে আমার ফেইসবুক আই.ডি Hafiz Md Mashhud Chowdhury তে পাবলিক পোস্টের মাধ্যমে দেয়া লেখায় উপস্থাপন করেছি। পাশাপাশি দেশের স্বাধীনতা অর্জন ও স্বাধীনতা রক্ষায় যাঁরা ভূমিকা রেখেছেন ও নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, ঐ লেখায় তাঁদেরকে উপযুক্ত মূল্যায়নের ইঙ্গিত করেছি।
দেশ স্বাধীনের পরপরই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় স্থাপন করে ঐসব বিষয়ে যথাযথ গুরুত্ব দেয়া দরকার ছিল। কিন্তু অচিন্তনীয় হলেও সত্য যে, অনেক বছর পর্যন্ত এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হয় নি। অবশেষে বহুদিন পর এ বিষয়ে বোধোদয় হয় এবং দেরিতে হলেও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় স্থাপন করা হয়। এজন্যে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ।
মুক্তিযোদ্ধাদেরকে বর্তমানে ভাতা দেয়া হচ্ছে, তাঁদের সন্তানদেরকে সকল ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা দেয়া হচ্ছে—এটা আনন্দের কথা। দেশের অর্থনীতি সবল হবার সাথে সাথে এসব সুযোগ-সুবিধা আরো বৃদ্ধি করা উচিত।
সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের তুলনায় যেসব মুক্তিযোদ্ধা পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, তাঁদেরকে তুলনামূলকভাবে অতিরিক্ত মূল্যায়ন করা ন্যায়-ইনসাফের দাবি। এক্ষেত্রে তাঁদেরকে কীভাবে কতটুকু মূল্যায়ন করা হচ্ছে, তা দেশপ্রেমিক জনতাকে জানতে দিলে তাঁরা আশ্বস্ত হবেন।
বিশেষ করে স্বাধীনতা যুদ্ধ করতে যেয়ে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের পরিবার ও স্বজনদের প্রতি আমাদের আরো অধিক পরিমাণে দায়িত্ব পালন করা ও সহানুভূতি প্রকাশের ব্যবস্থা করা দেশপ্রেম, বিবেক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার একান্ত দাবি।
প্রতিটি গ্রাম, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি প্রশাসনিক স্তরে মুক্তিযোদ্ধা, পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা, ক্ষতিগ্রস্ত ও শহীদদের তালিকা করে তাঁদের পরিবার ও স্বজনদের প্রতি কতটুকু ও কী কী দায়িত্ব পালন করা হয়েছে, সে সবের পূর্ণ বিবরণ জনসমক্ষে প্রকাশ করা উচিত। পাশাপাশি ভবিষ্যতে তাঁদের কল্যাণে আরো কী কী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে, তারও একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ ও প্রচার করা উচিত।
শহীদগণের তালিকা করা হোক-----
যে কোনো যুদ্ধে বা সংঘর্ষে শহীদ বা নিহতদের চেয়ে পঙ্গুত্ব বরণকারী ও আহতদের সংখ্যা হয় অনেক বেশি। উপরন্তু ক্ষতিগ্রস্তদের সংখ্যা হয় তারও চেয়ে অনেক অনেক বেশি। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, দেশ স্বাধীন হবার পাঁচ দশক অতিবাহিত হতে চললেও আজ পর্যন্ত পঙ্গু ও ক্ষতিগ্রস্তদের সংখ্যা ও পরিমাণ নির্ণয় তো দূরের কথা মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের তালিকা পর্যন্ত অদ্যাবধি করা হয় নি। অথচ এ সংখ্যা নির্ধারিত। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের জবান থেকে ঘোষণা করা ৩০ লক্ষ শহীদের সংখ্যা আজ সর্বত্র প্রচারিত ও প্রতিষ্ঠিত। একটুখানি উদ্যোগ নিলে শহীদদের তালিকা করা খুবই সহজ হবার কথা। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, শহীদদেরকে যথাযথ মর্যাদা প্রদান এবং তাঁদের পরিবারবর্গ ও প্রজন্মের প্রতি দায়িত্ব পালন বিবেকবোধ, দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অপরিহার্য দাবি। আর এ দাবি পূরণের জন্য দ্রুত শহীদ, পঙ্গু, আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে তাঁদের কল্যাণার্থে সম্ভাব্য পদক্ষেপ নেয়া উচিত। আর স্বাভাবিক কারণেই ইনসাফের দাবি পূরণার্থে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারকারী হিসাবে শহীদদের তালিকা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তৈরি করা জরুরী। এসব তালিকা তৈরি ও তাঁদের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালনের মতো বিরাট ও বিশাল কাজ একা সরকারের পক্ষে সম্পূর্ণ করা কঠিন। তাই এক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকলকে সরকারের সহযোগিতায় এগিয়ে আসা অবশ্যই উচিত। আগেই উল্লেখ করেছি, জাতির জনকের ঘোষণা অনুযায়ী শহীদদের সংখ্যা যেহেতু নির্ধারিত, সেহেতু শহীদদের তালিকা করা খুবই সহজ। একটু সমন্বিত উদ্যোগ নিলেই এটা সম্ভব।
বাংলাদেশের গ্রাম সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ৮৭ হাজার। মোট শহীদ সংখ্যা ৩০ লক্ষ ধরে হিসাব করলে প্রতি গ্রামে গড়ে শহীদ সংখ্যা দাঁড়ায় ৩০ লক্ষ ভাগ ৮৭ হাজার = ৩৫ জন (প্রায়)। আবার বাংলাদেশে ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন সংখ্যা মোট ৪৮99টি। সুতরাং প্রতি ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনে গড়ে শহীদ সংখ্যা ৩০ লক্ষ ভাগ ৪৮99 = ৬১২ জন (প্রায়)। অনুরূপ উপজেলা সংখ্যা ৪৮৯টি। তাই প্রতি উপজেলায় গড়ে শহীদ সংখ্যা ৩০ লক্ষ ভাগ ৪৮৯টি = ৬১৩৫ জন (প্রায়)। ঠিক তেমনি জেলা সংখ্যা ৬৪টি। অতএব জেলা প্রতি গড়ে শহীদ সংখ্যা ৩০ লক্ষ ভাগ ৬৪ = ৪৬৮৭৫ জন।
নতুন শিক্ষাক্রম অনুসারে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা সমূহে Continuous Assessment (CA) বা ধারাবাহিক মূল্যায়ন এর অংশ হিসাবে অনুসন্ধানমূলক কাজ অত্যাবশ্যক। বিভিন্ন স্কুল / মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন এলাকা নির্ধারণ করে দিয়ে গ্রাম ভিত্তিক শহীদ সংখ্যার অনুসন্ধানী রিপোর্ট সংগ্রহ করা যেতে পারে।
অন্যভাবে প্রত্যেক ইউনিয়ন, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান/মেয়রগণের নেতৃত্বে মেম্বার কাউন্সিলরগণ, প্রত্যেক গ্রামের মসজিদ/গীর্জা/উপাসনালয় প্রধান এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা প্রধানদের নিয়ে কমিটি করে স্বল্প সময়ের ভিতরেই শহীদগণের তালিকা করা সম্ভব। প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছার। হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙালি বলে খ্যাত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুখ নিঃসৃত ঘোষণার মর্যাদা রক্ষায় যথাশীঘ্র সম্ভব শহীদদের তালিকা তৈরি করতে দেশপ্রেমিক, মুজিবপ্রেমিক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকলেরই এগিয়ে আসা অত্যাবশ্যক।
বঙ্গবন্ধুকে ‘শহীদ’ ঘোষণা করা হোক----
বিচার বহির্ভূতভাবে সন্ত্রাসী আক্রমণের স্বীকার হয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মরহুম শহীদ জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ায় তাঁকে ‘শহীদ’ হিসাবে আখ্যা দেয়া হয়। এ ‘শহীদ’ উপাধি দেয়ায় আজ পর্যন্ত কোনো আলেম-উলামা, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব বা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থেকে আপত্তি উত্থাপন করা হয়েছে বলে আমার জানা নেই।
একই কায়দায় হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসাবে সর্বত্র পরিচিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানকে অত্যন্ত জঘণ্য ও নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো, অথচ আজ পর্যন্ত তাঁকে শহীদ হিসাবে ঘোষণা করা হলো না এবং এ জন্যে কোনো মহল থেকে দাবিও তোলা হলো না—এটা ভাবতে অবাক লাগে।
তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দাবি অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুকে ‘শহীদ’ হিসাবে ঘোষণা করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রি ও জননেত্রি শেখ হাসিনার প্রতি আবেদন জানাচ্ছি। পাশাপাশি এখন থেকে বঙ্গবন্ধুর নামের আগে ‘শহীদ’ শব্দ যুক্ত করার জন্য সকল মহলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
একই কারণে শেখ ফজিলাতুন্নেছা, শেখ কামাল ও শেখ রাসেলসহ ঐ ন্যাক্কারজনক ঘটনায় নিহত সকলের নামের আগে উপাধি হিসাবে ‘শহীদ’ শব্দ যুক্ত করার জন্য সর্ব মহলের প্রতি অনুরোধ করছি।
বঙ্গবন্ধু পরিবারকে স্থায়ী সাংবিধানিক মর্যাদা দেয়া হোক---
বিগত ৭ অক্টোবর ২০১৬ তারিখের লেখায় এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট প্রস্তাব করা হয়েছে।
©somewhere in net ltd.