নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"নিজেকে নিয়ে অপ্রকাশিত, জীবনকে জানার চেষ্টা করা, শেখার মাধ্যমে প্রতিদিন নতুন কিছু অর্জন করার পথচলা।\"

মছিউদ দৌলা

মছিউদ দৌলা › বিস্তারিত পোস্টঃ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নতুন এক স্বৈরাচারী শাসনের আশঙ্কা?

২৩ শে জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১১:০৭



বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা সাধারণত জাতীয় নির্বাচনের সময় নিরপেক্ষতা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য গঠিত হয়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক বেড়েছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এটি কি স্বৈরাচারের একটি নতুন রূপ নিতে যাচ্ছে?

নির্বাচনের সময় নিরপেক্ষ প্রশাসন এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রয়োজন হলেও, যদি এটি জনগণের প্রত্যাশা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিপরীতে কাজ করে, তবে তা স্বৈরাচারী শাসনের ইঙ্গিত বহন করতে পারে। এই প্রবন্ধে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সম্ভাব্য স্বৈরাচারী প্রবণতা এবং এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমিকা ও প্রয়োজনীয়তা
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল লক্ষ্য হলো—

নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা।
সরকারি প্রশাসনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখা।
দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা।
তবে বাস্তবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রম অনেক সময় বিতর্কিত হয়ে ওঠে, যখন এর নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয় এবং প্রশাসনকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়।

নতুন স্বৈরাচারের শঙ্কা: যুক্তিযুক্ত সমালোচনা
যদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক মানদণ্ড অনুসরণ না করে, তবে এটি নতুন এক স্বৈরাচারী ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হতে পারে। কিছু যুক্তি ও সমালোচনা নিচে তুলে ধরা হলো—

১. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব:

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রমের ওপর সাধারণ মানুষের সরাসরি তদারকি থাকে না।
অনেক সময় প্রশাসনিক ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার প্রবণতা দেখা যায়, যা স্বৈরাচারের সূচনা হতে পারে।
২. ক্ষমতার অপব্যবহারের ঝুঁকি:

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি দলীয় স্বার্থের দিকে ঝুঁকে পড়ে, তবে এটি নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে।
ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার অভিপ্রায় থাকলে এটি স্বৈরশাসনের দিকে ধাবিত হতে পারে।
৩. রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ব্যবহার:

কোনো বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে গিয়ে বিরোধী দলকে দমন করার প্রবণতা দেখা দিতে পারে।
বিরোধী মত প্রকাশের সুযোগ সংকুচিত করা হলে এটি স্বৈরাচারী শাসনের ইঙ্গিত দেয়।
৪. স্বাধীন প্রশাসনের অভাব:

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি প্রশাসনের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করে এবং পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্ত নেয়, তবে এটি স্বৈরাচারী শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এক ধরনের সূচনা হতে পারে।
৫. জনগণের অংশগ্রহণের সংকোচন:

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণ কম থাকলে স্বচ্ছতা নষ্ট হয়।
গণতন্ত্রের মূল দর্শন হলো জনগণের অংশগ্রহণ, যা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে ব্যাহত হতে পারে।
স্বৈরাচার রোধে করণীয়
যদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্বৈরাচারী হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে হয়, তবে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন—

স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন: নির্বাচন কমিশন যেন সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, তার জন্য আইনি কাঠামো শক্তিশালী করতে হবে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা: সরকারের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণের জন্য মুক্ত গণমাধ্যম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সুশীল সমাজ ও নাগরিক সংস্থার ভূমিকা: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রমের ওপর নাগরিক সমাজের যথাযথ নজরদারি থাকতে হবে।
রাজনৈতিক সংলাপ বৃদ্ধি: সব রাজনৈতিক দলকে অন্তর্ভুক্ত করে নিরপেক্ষ পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন।
দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রমের জন্য নিরপেক্ষ তদন্ত এবং প্রতিনিয়ত জনগণকে অবহিত করার ব্যবস্থা থাকতে হবে।
উপসংহার
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি সত্যিকারের নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে, তবে এটি গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ হতে পারে। তবে ক্ষমতার অপব্যবহার, দলীয় স্বার্থ রক্ষা ও প্রশাসনিক পক্ষপাতিত্বের কারণে এটি স্বৈরাচারের একটি নতুন রূপ নিতে পারে। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য জনগণ, গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক দলগুলোর যৌথ উদ্যোগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা জরুরি।

গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বজায় রাখতে হলে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। অন্যথায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নতুন এক স্বৈরাচারী শাসনে রূপ নিতে পারে, যা গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৯

গেঁয়ো ভূত বলেছেন: বেশ সুন্দর লিখেছেন! আপনার বক্তব্যের সাথে একমত।

২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:২৭

মছিউদ দৌলা বলেছেন: হোক প্রতিবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.