নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"নিজেকে নিয়ে অপ্রকাশিত, জীবনকে জানার চেষ্টা করা, শেখার মাধ্যমে প্রতিদিন নতুন কিছু অর্জন করার পথচলা।\"

মছিউদ দৌলা

মছিউদ দৌলা › বিস্তারিত পোস্টঃ

আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও স্বৈরাচারের ছায়া

২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:৪৭



বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কের জন্ম দিয়েছে ‘আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন’ নীতি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রস্তাবিত এ দৃষ্টিভঙ্গি রাষ্ট্র পরিচালনায় স্থিতিশীলতা আনার একটি প্রয়াস হলেও, অনেকে আশঙ্কা করছেন এটি স্বৈরাচারের নতুন রূপ নেওয়ার ইঙ্গিত বহন করছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার স্বাভাবিক ধারাকে উপেক্ষা করে সংস্কারের অজুহাতে নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়া কি গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা প্রয়োজন।

এ প্রবন্ধে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রস্তাবিত নীতির পেছনের যুক্তি, সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ এবং এটি গণতন্ত্রের জন্য কী ধরনের হুমকি সৃষ্টি করতে পারে তা বিশদভাবে আলোচনা করা হবে।

সংস্কারের যুক্তি: কেন নির্বাচন পেছানোর কথা বলা হচ্ছে?
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমর্থকরা মনে করেন, নির্বাচন পরিচালনার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রয়োজন, যা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করবে। তাদের মতে, এসব সংস্কারের উদ্দেশ্য হলো—

নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা।
প্রশাসনের দলীয় প্রভাব মুক্ত করা।
বিচারব্যবস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্কার।
দলীয় সহিংসতা ও অস্থিরতা রোধ।
তাদের দাবি, এসব সংস্কার না হলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং গণতন্ত্র আরও দুর্বল হবে। তবে, এই নীতির বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী যুক্তি হলো, সংস্কারের নামে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘমেয়াদি হুমকি হয়ে উঠতে পারে।

স্বৈরাচারের সম্ভাব্য ছায়া: বিশ্লেষণ ও সমালোচনা
‘আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন’ নীতির প্রয়োগ যদি যথাযথভাবে না হয়, তবে এটি স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দিতে পারে। কয়েকটি কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো—

১. ক্ষমতার অপব্যবহারের আশঙ্কা:
সংস্কারের নামে যদি নির্বাচন দীর্ঘায়িত করা হয়, তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাহী ক্ষমতা ধরে রেখে স্বেচ্ছাচারী নীতি গ্রহণ করতে পারে। জনগণের ক্ষমতার পরিবর্তে প্রশাসনিক কর্তৃত্বের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়তে পারে, যা গণতন্ত্রের মূল আদর্শের পরিপন্থী।

২. অস্থায়ী সরকারের স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা:
ইতিহাস সাক্ষী, বহু দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিজেদের অবস্থান দীর্ঘায়িত করেছে এবং একপর্যায়ে পূর্ণাঙ্গ শাসন কাঠামো গঠন করে। বাংলাদেশেও যদি সংস্কারের নামে নির্বাচন দীর্ঘ সময় স্থগিত রাখা হয়, তবে এটি স্বৈরাচারের রূপ নিতে পারে।

৩. রাজনৈতিক মতপ্রকাশের সংকোচন:
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কখনো কখনো মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত করতে পারে, যা বিরোধী দল ও সাধারণ মানুষের জন্য উদ্বেগজনক। একনিষ্ঠ সংস্কার কার্যক্রমের নামে বিরোধী কণ্ঠ রোধ করা হলে তা একনায়কতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যাবে।

৪. জনগণের আস্থাহীনতা বৃদ্ধি:
নির্বাচন গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি। নির্বাচনের বিলম্ব সাধারণ মানুষের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি করে এবং সরকারের প্রতি আস্থাহীনতা বাড়ায়। দীর্ঘ সময় সংস্কারের নামে ক্ষমতা ধরে রাখা হলে জনগণের অসন্তোষ বাড়তে পারে, যা রাজনৈতিক সংকটকে ঘনীভূত করবে।

৫. প্রশাসনিক পক্ষপাত ও নিরপেক্ষতার অভাব:
সংস্কার পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসনিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি নিরপেক্ষ না হয়, তবে এর অপব্যবহারের আশঙ্কা থাকে। ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতার ফলে একপক্ষীয় সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া সহজ হয়, যা স্বৈরাচারী শাসনের প্রতিফলন।

গণতান্ত্রিক বিকল্প: সংস্কার ও নির্বাচনের সমান্তরাল প্রয়াস
একটি সুস্থ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংস্কার এবং নির্বাচন পাশাপাশি চলতে পারে। যদি প্রয়োজনীয় সংস্কার সময়মতো করা না হয়, তবে তা নির্বাচন পরবর্তী সময়েও ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। বিকল্প হিসেবে নিম্নলিখিত উপায়গুলো বিবেচনা করা যেতে পারে—

সমন্বিত রোডম্যাপ প্রণয়ন: একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে নির্বাচনের পাশাপাশি সংস্কার কার্যক্রম পরিচালিত হতে পারে।
স্বাধীন পর্যবেক্ষণ ও সংলাপ: নির্বাচন প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তায় পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
নির্বাচন পরবর্তী সংস্কার প্রক্রিয়া: সরকার গঠনের পর সংসদীয় ও প্রশাসনিক কাঠামোয় কাঙ্খিত সংস্কার বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।
বাংলাদেশের অতীত অভিজ্ঞতা ও শিক্ষণীয় বিষয়
বাংলাদেশ অতীতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছে, নিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্র রক্ষায় এই ব্যবস্থার সফলতা যেমন রয়েছে, তেমনি ব্যর্থতাও রয়েছে। ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দীর্ঘায়িত মেয়াদ এবং সে সময়ের জরুরি অবস্থার অভিজ্ঞতা এখনো অনেকের কাছে ভীতির কারণ। সেই সময় সংস্কারের নামে স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক কার্যক্রম স্থগিত ছিল, যা জনগণের মৌলিক অধিকার খর্ব করেছিল।

এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে, আগামীতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবশ্যই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বজায় রেখে স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

উপসংহার
‘আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন’ নীতি যদি সঠিক উদ্দেশ্যে এবং সময়সীমার মধ্যে পরিচালিত না হয়, তবে এটি নতুন এক স্বৈরাচারী ব্যবস্থার জন্ম দিতে পারে। জনগণের ভোটাধিকার হরণ করা হলে গণতন্ত্র তার মূল উদ্দেশ্য হারিয়ে ফেলবে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ হবে নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন আয়োজনের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়ন করা, যাতে গণতন্ত্র ও সুশাসন একসঙ্গে এগিয়ে যায়। জনগণের অংশগ্রহণ, রাজনৈতিক সংলাপ এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করাই হবে সবচেয়ে কার্যকর পথ।

সংক্ষেপে, নির্বাচন কখনোই সংস্কারের অন্তরায় হতে পারে না, বরং নির্বাচনই প্রকৃত সংস্কারের সূচনা করতে পারে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.