নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজেকে ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে তোল পৃথিবী তোমার জন্য ভাল কিছু নিয়ে অপেক্ষা করছে।তবে ঠিক ততটুকুই তোমাকে সে দিবে যতটুকু তুমি নিজেকে গড়েছ।

পথিক৬৫

আমি খুব সাধারন একজন মানুষ,যে কিনা পৃথিবীর মানুষ গুলোকে হাসতে দেখলেই হাসে,আর কারো কান্না সহ্য করতে পারেন না। তবে অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে ভুল করেন না।

পথিক৬৫ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোট গল্প । চাঁদের চন্দনি

১৮ ই জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০১

সময় টা এখন রাত ১২.১৪ মিনিট। চারদিকে অনেকটা নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। গত তিন দিনে মারমারা আর বসফরাসের দেশে ঘটে যাওয়া রায়টে দেশপ্রেমিক মানুষ গুলো রাজপথে থেকে খুব ক্লান্ত শ্রান্ত। যদিও কিছু মানুষ এখনও বিদ্রোহী সেনাদের বিচারের দাবী আর এই শত্রুর বিরুদ্ধে বিজয়ের শক্তি বুকে নিয়ে রাজপথে শ্লোগান দিয়ে যাচ্ছে। তবে সেই শব্দটা আমি যেখানে আছি সেখান অব্দি পৌছাই না। বাড়ি ফিরে যাওয়া মানুষ গুলো একবুক বিজয়ের প্রশান্তি নিয়ে শ্রান্ত দেহখানি পাটিয়ে বিছিয়ে দিয়েছে।

খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে মারমারা প্রান্ত থেকে আসা বাতাস আর গগনে ঠিক তোমার মূখ খানির মত উজ্জল চাঁদটি দেখছি। তমম্নিস্বরে কেন যেন চাঁদের ঠিক মাঝখান টাতে তোমার শৈশবের জলছাপ খানা ভেসে উঠল।তুমি ঠিক আগের মতই আছ,জান! সেই প্রায় ১৯ বছর আগে তোমার বাবার বদলির কারনে যেদিন সিলেট যাওয়ার সময়ে আমার সাথে শেষ বিদায়ে তোমাকে দেখেছিলাম, ঠিক তেমন ই আছ। এতটুকুও বদলাওনি তুমি।সেই হাসি মাখা মূখ,চার আংগুলের থেকেও বড় কপালটা তোমার। আচ্ছা তোমার কি মনে পড়ে আমি যে তোমাকে তোমার কপাল টা বড় হওয়া নিয়ে অনেক চেতাতাম। আর তুমি বলতে দেখিস আমার এই বড় কপালের কারনেই আমি অনেক ভাল একটা জামাই পাব। আর আমি দুষ্টুমি করে বলতাম তোর কপাল যত বড় হোক না কেন আমি ছাড়া তোমাকে আর কেহ বিয়ে করবে না। তুমি সে কথা শুনে রাগে তিন দিন আড়ি করে আমার সাথে কথায় বলতে না।(হা হা হা)কি বোকাই না ছিলাম সেদিন। একটা মেয়েকে এভাবে কি ছোট বয়সে বিয়ের কথা বলতাম। তোমরা যেদিন সিলেট চলে গিয়েছিলে প্রথমে একটু খারাপ লাগছিল। শত হলেও ঝগড়া করার জন্য তো তুমি ছিলে।

এরপর তোমাকে ভুলেই গিয়েছিলাম। তোমাদের সেই দক্ষিন পাশের বাসাটাতে নতুন একটা বাড়াটে এসেছিল।কোথা থেকে এসেছিল সেটা এখন মনে নেই।তবে তারা বেশ কয়েক বছর ছিল সেখানে।জান,তোমার চলে যাওয়ার বেশ কিছুদিন আমি তোমাকে ভুলেই ছিলাম।আসলে বুঝতে পারিনি তুমি কে ছিলে।ভেবেছিলাম সকালে একবার, দুপুরে খাবারের পর একবার আর রাতে মাঝে মাঝে স্বপ্নে তোমাকে দেখব, আর সেটাও কেটে যাবে একসময়। কিন্তু এর মাঝেই যে তুমি আমার পুরোটা জুড়ে ছিলে সেটা বুঝতে শুরু করলাম যেদিন তোমার ১১তম জন্মদিন ছিল।তোমার মনে আছে কিনা জানি না,কিন্তু তোমার প্রতিটি জন্মদিনে তোমার বাসায় কেক কাটার আগে পুকুর পারে আমরা মাটির কেক কাটতাম। তুমি আমাকে মিছে মিছি খাইয়ে দিতে আর আমি তোমাকে।তোমার সেই ১১তম জন্মদিন টা ছিল তোমরা চলে যাওয়ার ১৫ দিন পর। আমি চিৎকার করে তোমাকে ডাকতে ডাকতে তোমাদের দক্ষিনের বাসাটায় গিয়েছিলাম সেদিন। পুকুর পারে কেক কাটব বলে।হা হা হা। দেখ আমি কি বোকা।আমি ভুলেই গিয়েছিলাম তুমি তো চলে গিয়েছিলে আমার থেকে অনেক দূরে।তোমার শুন্যতাটা সেদিন থেকেই বুঝতে শুরু করেছি আর আজও বয়ে চলছি একই ভাবে। বোধায় সেদিন তোমাদের বাসায় যাওয়াটাই আমার ঠিক হয়নি।তাহলে হয়তো তোমাকে অনুভবের কারন টা সৃষ্টি হত না আর এই প্রায় ১৯ বছর সেই অনুভবের ক্লান্ত ভার বয়ে চলতে হত না।

তুমি যাওয়ার দিন আমার কানে কানে বলেছিলে “আমার আম্মু তোমার আম্মুর কাছে যে চিঠি পাঠাবে আমি তার মাঝে তোমার জন্য আমার একটা চিঠি গোপনে ডুকিয়ে দিব, তুমি ও আমাকে এভাবে চিঠি লিখ”।আমাদের আম্মুদের মাঝে সম্পর্কটা অনেক ভাল হওয়ার সুবাদে তোমার আম্মুর থেকে দু-একটি চিঠি আমার আম্মুর কাছে এসেছিল বটে তোমার কোন চিঠি আমার জন্য সেখানে স্থান পায়নি।তুমি জান,প্রথম যেদিন তোমার আম্মুর থেকে চিঠি এলো আম্মু পড়ার আগেই আমি লুকিয়ে সেটি পুকুর পাড়ে আমাদের সেই প্রিয় রেন্টি গাছটির নিচে গিয়েছিলাম,ছিড়ে তোমার চিঠি খুজতেছিলাম।কিন্তু কোন চিঠি তো পাওয়া গেলই না উল্টো আম্মুর চিঠি খোলার অপরাধে আব্বু দুটি চড় খেতে হয়েছিল।

আচ্ছা তুমি তো এখন আমার মত অনেক বড় হয়ে গিয়েছ।তাই না? কিন্তু তোমার আর আমার সেই স্মৃতি গুলো আজও বড় হল না।
তুমি চলে যাওয়ার পর আমি কিছুদিন বাসার পাশের সেই রেলস্টেশনেও যেতেম আর একা একা রেললাইনে হাটতাম।সিলেট থেকে কোন রেল এলেই মনে হত এই রেলেই বুঝি তুমি এসেছো আর এখনই রেললাইনের দু দিকে হাত ছড়িয়ে দিলে হেটে তোমার প্রিয় শখটি পুরন করবে।আর শেষে আমাকে বলবে “জান আমি না আজ এত পা না ধরে হেটেছি”।কিন্তু একটা সময় বুঝতে পারলাম এটা কেবলই গোড়।রেল লাইন তো যেদিক থেকে যায় সেদিকে আর ফিরে আসে না,শুধু যেতেই থাকে।

তুমি বলতে,বড় হয়ে ডাক্তার হবে।আর তাই মাঝে মাঝে লাঠি আর সুতো দিয়ে তোমার সেই যন্ত্রটা দিয়ে একজন পাকা,পোক্ত ডাক্তারের মত আমার হার্টবিট শুনতে।হয়তো তুমি সেদিনও সেই হার্টবিট সত্যি শুনতে পেতে,কিন্তু কোন অর্থ বুঝতে না।আজ হয়তো তুমি সত্যিই একজন ডাক্তার হয়েছ,কিন্তু আজ বাস্তব যন্ত্র দিয়েও সেদিনের মত সেই প্রিয় স্পন্দন শুনতে পাবে না।নাকি পাবে?

তুমি হয়তো পৃথিবীর কোন এক প্রান্তে বসেই আমার কথা ভাবছ! আরে না। সে তোমার এখন আর ভাবার কথা না।তুমি তো আমাকে সেই চলে যাওয়ার দিনেই ভুলে গিয়েছ।তুমি ফিরে আসবে আর তোমার সেই চলে যাওয়ার সেই অর্থ যদি সেদিন বুঝতাম হয়তো তোমাকে যেতেই দিতাম না।

তোমাকে অনুভব করতে শেখার সেদিন থেকে আজ অব্দি এই পলকের জন্য আমাদের বেড়ে না উঠা ছোট ছোট স্বপ্নগুলো আমাকে বার বার তোমার কাছে নিয়ে গিয়েছে। আমার ভেতরে ঘটতে থাকা এই বাটুল স্মৃতির ওজন যে ধীরে ধীরে আমার উত্তলন শক্তির বাহিরে চলে যাবে সেটা বুঝলে সেদিনই একে ছুড়ে ফেলে দিলাম অনেক দূরে।

চাঁদের মাঝে তোমার বেড়ে না উঠা মূখখানি দেখতে দেখতে অনেক খানি লিখে ফেলেছি আজ।অজানা আর এই বাটুল স্মৃতিপট লেখায় যখন আমি ব্যস্ত,তুমি হয়তো তোমার খুজে পাওয়া ভালবাসা আর তার স্নিগ্ধতায় নিজেকে মুড়িয়ে নিয়েছ চন্দনি। আমার জন্য না হয় তোমার রেখে যাওয়া সেই ছোট ছোট বাটুল স্মৃতিটাই থাক।ভাল থেক চন্দনি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.