![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
When your values are clear to you, making decisions becomes easier.
খুব সম্ভবত তখন ৪র্থ শ্রেনীতে পড়ি। পড়াশুনায় অনেক ফাকিবাজ হয়ে গিয়েছিলাম।
সারাদিন বাইরেই কাটাতাম। স্কুল থেকে বাসাই ফেরার পরেই দুপুরের খাবার খেয়েই বের হয়ে যেতাম। ঐযে বাসা থেকে বের হোতাম আর ফিরতাম আব্বু অফীস থেকে ফেরার আগে। আম্মুতো মারতোনা তাই আম্মুকে ভয় পেতাম না।
তবে আব্বু আমার জন্য জমের মতো ছিলো। তিনি যতক্ষন বাসায় ততক্ষনই আমার মত লক্ষী ছেলে আর একটা খুজে পাওয়া দুষ্কর ছিলো।
অবশ্য আব্বুকে ভয় পেলেও ছোটবেলা থেকে আব্বুর ভক্তই ছিলাম।
আম্মু মারতোনা তবে আব্বুকে নালিশ করে দিতো, এই জন্য প্রায়ই আম্মুর সাথেই ঝগড়া করতাম।
তখনই তিন চারজন বন্ধু মিলে ২০ টাকা দিয়ে একজনের কাছ থেকে একটা কুকুরছানা এনেছিলাম।
পিচ্ছি কুকুর দেখতে খুব মায়া লাগে। কত্ত আদর করতাম।
কুকুরটাকে রেখেছিলাম একটা বাউন্ডারিতে।
দেওয়াল টপকে ভেতরে যেতে হতো, সারাদিন ওখানেই পড়ে থাকতাম।
কুকুরটার নাম রেখেছিলাম "টাইগার"
অবশ্য গায়ের গ্রাফিক্সটা বাঘের মতই দেখতে ছিলো।
বন্ধুদের মধ্যে আমিই বোধ হয় একটু বেশি আবেগী ছিলাম।
আমি প্রায়ই বাসা থেকে ভাত চুরি করে আনতাম টাইগারের জন্য, এমনকি ফ্রীজে গরুর মাংস থাকলে ওখান থেকেও চুরি করতাম। অন্য বন্ধুরা এমনটা করতোনা।
ওরা অবশ্য অন্য ভাবে খাবার যোগাড় করতো, তবে আমারটা ছিলো দেখার মতন।
একবার ফ্রীজে দু কেজির মতন মাংস রাখছিলো, আমি ওখান থেকে একটু একটু নিতে নিতে কখন যে শেষ করে ফেল্লাম বুঝতেই পারিনি, এদিকে টাইগারও বেশ মোটাতাজা হয়েছে, টাইগারকে দেখলেই অনেক প্রাউড ফিল করতাম।
একদিন আম্মু মাংসো বের করার জন্য ফ্রীজ খুলে দেখলো মাংসো নাই, কি হলো! এমনটাতো হওয়ার কথা না ইত্যাদি ইত্যাদি চিল্লাচিল্লি...
আমাকে জিগ্যেস করা হলো, আমি জ্বীব কামড়ে বল্লাম আমি কিভাবে যানবো!! আমি কি কাচা মাংস খাই নাকি??
ঘটনাটা রাতে আব্বুকে যানানো হলো, আম্মুর কাছে ঘটনাটা ভুতুড়ে মনে হয়েছে।
কারন এর আগেও আম্মু প্রায়ই মাংস কম পেয়েছে কিন্তু তেমন পাত্তা দেয়নি , এবারতো পুরো প্যাকেট সহ গায়েব!
আব্বু আম্মুর অনেক আলাপ আলোচনা শুনলাম তবে মুখ খুলিনাই।
এভাবে কয়েকদিন যাওয়ার পরেই একজনের সাথে তুমুলভাবে ঝগড়া শুরু হয়ে গেলো।
করনটা হচ্ছে সে আমাদের ঐ জায়গাটাতে নতুন একটা কুকুর এনেছিলো, একদম বাচ্ছা কুকুর। তবে আমার টাইগার বোধ হয় সেটা মেনে নিতে পারেনি। প্রায়ই ঐ বাচ্ছা কুকুরটাকে কামড়ে আহত করে দিত, একদিন হাসিব টাইগারকে তুলে একটা আছাড় মারলো, আমাকে আর ঠেকায় কে!!
কিল ঘুসি যা পরছি মারলাম, যদিওবা কখনো মারামারি করিনি, কিন্তু সেদিন ওর উপর এতটায় রাগ হয়েছিলো।
ঔ কাদতে কাদতে বাসায় চলে গেলো।
দুপুরের দিকে দেখি আমার বাসায় হাজির হইসে আম্মুকে নালিশ করার জন্য।
আমি অনেক হাতে পায়ে ধরলাম কিন্তু শুনলোনা।
টাইগারকে কিনে আনার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো স্টোরীটা আম্মাকে শুনিয়ে চলে গেলো। বিশেষ করে মাংস চুরি করে নেওয়ার কথাটা ভালোভাবে হাইলাইট করে দিয়ে ছিলো। ঐদিন আম্মুর কাছে মাইর খেয়েছিলাম দুপুরে।
মাইর দেওয়ার পরে আমাকে এটাও জানিয়ে দেওয়া হলো আব্বুকেও বলে দেওয়া হবে!
সত্যিই তাই হলো! আব্বু অফীস থেকে আসার পর আম্মু সব বলে দিলো!! কিন্তু আব্বু সেদিন আর মারেনি।
আব্বুর ভয়ে পড়তে বসেছিলাম, দেখলাম আব্বু আমার রুমে এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন, আমি ভয়ে ভয়ে আব্বুর দিকে তাকালাম ,উনি আমাকে অভয় দিয়ে বল্লেন
"পৃথিবীর সকল প্রানীর উপরই মমতাবোধ রাখবি, ক্ষুধার্থকে খাবার দিবি, অসহায়দের সাহায্য করবি। তবে চুরি করে না, অসৎভাবে কিছু করবিন। তোর সামর্থে যতটুক পারবি দিতে চেষ্টা করবি, তবে কাউকে কোনদিন ঠকাবিনা"
বলে রুম থেকে চলে গেলেন।
আব্বুর কথা গুলোর জন্যই কেমন যানি গর্ব হচ্ছিলো আব্বুকে নিয়ে। কতো দামি দামি কথা বলে গেলেন।
এর পরদিন অবশ্য মাইর খেয়েছিলাম কারন পরীক্ষার রেজাল্ট আউট হয়েছিলো, পজিশনে ৭ম হয়েছিলাম বলেই মাইরটা খেতে হয়েছিলো !!
আব্বুর সেই কথাগুলো এখনো মনে আছে।
মনে আছে বলেই কাউকে কখনো ঠকাতে পারিনি।
অসহায় কোন ব্যাক্তিকে সাধ্যমতন সাহায্য করার চেষ্টা করেছি।
তবে খারাপ লাগে এটা দেখেই, যে বর্তমানের উন্নত পৃথবীতে মানুষের চাইতে কুকুরকেই প্রাধান্ন বেশি দেয়া হয়।
আমি না হয়, না বুঝেই করেছিলাম, কিন্তু এখনকার মানুষ গুলো তো বুঝে শুনেয় এসব করছে।
আধুনিক পরিবার গুলোতে কুকুরের ঠায় হয় বেড এ, খাবারের তালিকায় দামি দামি খাবার থাকে, দামি শ্যম্পু দিয়ে গোসল করানো হয়, না যানি আরো কতো যত্ন!!
অথছো একটু রাস্তায় বেরিয়েই দেখুন না! দেখতে পাবেন অসহায় ক্ষুধার্থ মুখগুলো, দেখতে পাবেন ক্ষুধার যন্ত্রনাই কাতর হয়ে থাকা টলটলে চোখ গুলো।
বস্ত্রহীন, আশ্রয়হীন, এসব মানুষ গুলোর শেষ আশ্রয় রাস্তার ফুটপাত, রাস্তার ধুলোবালিই এদের পরিচয়। এমনটা কি কথা ছিলো?
আমি খুব বড়োলোক ঘরের ছেলে না।
খুবই সাধারন মধ্যবিত্ত একটা পরিবারেই বড়ো হয়েছি।
তবে আব্বা আম্মা যথেষ্ট সাহায্য পরায়ন ছিলেন।
এখন আমিও যতটুক পারি চেষ্টা করি।
তবে ঘৃনা হয় অতি আধুনিক বড়ো মাপের মানুষ গুলোকে, যাদের কাছে একটা কুকুর মানুষের চাইতে কুকুরের মুল্য বেশি।
কুকুর না, কুকুরতো ডাস্টবীনের খাবারও খেতে যানে, ডাস্টবীনের খাবার খেয়েই ওরা বাচতে পারে।
তাই কুকুর না, একটু ঐ মানুষ গুলোর দিকে তাকান যাদের কাছে একটা টাকা আপনার শত কোটি টাকার সমান।
আপনার অর্থ প্রাচূর্য্য ওদের প্রয়োজন নেই,
শুধু যদি পারেন ওদের এক বেলা ক্ষুধা নিবারন করে দিন, বাচার জন্য কোন একটা রাস্তা দেখিয়ে দিন।
ঈদে সবাই দামি দামি পোশাক পরেন, আনন্দ করেন, যদি পারেন কোন একটা অসহায়ের মুখে হাসি ফুটিয়ে দিন।
জীবিকা নির্বাহের জন্য কিছু টাকা খরচ করে কোন একটা ব্যাবস্থা করে দিন।
এভাবে একেকজন ধনী, শিল্পপতীরা যদি একেকটা পরিবারের দিকে সাহায্যের হাত বড়িয়ে দেয় তাহলে হয়তো ঐ মানুষ গুলোকে ক্ষুধা নিয়ে রাস্তার ফুটপাতে ঘুমিয় থাকতে হবেনা।
আসুন না একটু আলোর পথে চলি, একজন সত্যিকারে মানুষ হিসেবে নিজের পরিচয় দিই!
আসুন না মানুষ গুলোকে একটু ভালোবাসি,
ভালোবাসা দেয়ানেয়ার মাধ্যেই কি প্রকৃত শান্তি না?
আমি এ পথেই চলতে চাই, বাবার দেয়া শিক্ষা কাজে লাগাতে চাই।
সবারই বাবা-মা কোন না কোন ভাবেই আপনাদের এই একই শিক্ষা হয়তো দিয়েছেন।
অনেকতো "আই লাভ ইউ মম" দিয়ে ফেসবুকের প্রোফাইল ফটো সাজালেন।
তো বাবা মায়ের দেয়া শিক্ষা গুলোকে কাজে লাগাবেননা?
২| ২৮ শে মে, ২০১৬ রাত ১:২২
Mostafiz R Rahman বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন।
শুভোকামনা রইলো।
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে মে, ২০১৬ রাত ১:১০
কবি হাফেজ আহমেদ বলেছেন: সহমত। দারুন প্রকাশ।