নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বলার মত কিছুই নই আমি।একজন মহামূর্খ।
***গল্পের প্রয়োজনে কিছু অশ্রাব্য স্ল্যাং ব্যবহার করা হয়েছে। আশাকরি সকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ***
ডান্ডি- দ্বিতীয় পর্ব
'শেষ পর্ব'
মহিলার পিছু পিছু চলছে ওরা দুজন। তার গা থেকে ভুরভুর করে মেক আপ আর পারফিউমের ঘ্রাণ আসছে। তীব্র ঘ্রাণে ওদের দম বন্ধ হয়ে আসতে চায়। কিন্তু তারপরও মহিলার পিছু ছাড়ে না তারা। এর মধ্যেই মনির লক্ষ করে রাকিব মহিলার ভ্যানিটি ব্যাগের চেইন খুলছে। মহিলা আপন মনেই হেঁটে চলেছে। একটু পরেই ব্যাগ থেকে কিছু একটা বের করে মনিরের হাতে দেয় রাকিব। রাকিব এতো সন্তপর্ণে ও দক্ষতার সাথে কাজটি করে যে মহিলা কিছুই টের পান নি। এরপর মনিরকে ইশারা দেয় সেখান থেকে চলে যেতে। মনির সাথে সাথে দৌড় দেয় জিনিসটা প্যান্টের পকেটে নিয়ে। দৌড় দিয়ে চলে যায় টেম্পুস্ট্যান্ডের পাশের অন্ধকার গলিতে। প্রথমে মনির খেয়াল করে নি জিনিসটা। পকেট থেকে বের করে দেখে একটা মোবাইল। অভ্যস্ত হাতে মোবাইলটা বন্ধ করে সিমটা বের করে ফেলে দেয় রাস্তায়। এরপর সেখানে অপেক্ষা করতে থাকে।
মনিরকে ভাগিয়ে দিয়ে নিজের হাঁটা অব্যাহত রেখেছে রাকিব। ভাবটা এমন যেন কিছুই হয় নি। মহিলা টেম্পুতে উঠে বসলেন। সেই টেম্পুরই পা-দানিতে দাঁড়ালো রাকিব, যেন টেম্পুতে উঠে কোনো গন্তব্যে যাওয়াই তার উদ্দেশ্য। বসার পরে কোনো কারণে মহিলা ভ্যানিটি ব্যাগ খুললেন। খুলে দেখলেন, সবকিছু থাকলেও সেখানে মোবাইলটা নেই। তন্ন তন্ন করে খুঁজেও পেলেন না মোবাইলটা। তিনি টেম্পু থেকে নেমে রাকিবের হাত চেপে ধরলেন। তার থেকে রাকিবই সবচেয়ে কাছে দাঁড়িয়ে আছে। তার পক্ষেই নেয়া সম্ভব। রাকিবকে জেরা করা শুরু করেন তিনি। রাকিব যথারীতি অস্বীকার করে। সেখানে লোক জমে যায় অনেক।
"আমি টোকাই। চোর না।"
"হ্যাঁ। তুই ই নিছিস। তুই ছাড়া আর কেউ ছিলো না আমার ধারে কাছে।" মহিলার কণ্ঠ থেকে ক্ষোভ ঝরে পড়ে।
"তাইলে চেক কইরা দ্যাহেন। পাইলে পুলিশে দিয়েন।"
দুজন লোক রাকিবকে চেক করে। তারা কিছু পায় না। কিন্তু ভিড়ের মধ্যে থেকে এক লোক হঠাৎ জিজ্ঞাসা করে বসে-
"তোর লগেরটা কই? তোর লগেই তো আরেকটারে আইতে দেখলাম।"
এবার একটু ভ্যাবাচ্যাকা খায় রাকিব। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে যথারীতি এটাও অস্বীকার করে বসে।
"কই দেখছেন? মিছা কতা কন মিয়া। আমি নিলে কী এনে থাকতাম? আমারে গরীব পাইয়া জ্বালাইতাছেন। আল্লায় ঠাডা হালাইবো আপনেগো মাতায়।"
আল্লাহর ঠাডা নিক্ষেপের অভিশাপে কারো কোনো ভাবান্তর না হলেও মহিলার মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। তিনি ভাবলেন, ছেলেটার কাছে কিছুই নেই। আবার তার কাছেও কোনো প্রমাণ নেই। শুধু শুধু অবিচার করলে শাস্তি অবধারিত। তিনি রাকিবকে ছেড়ে দিলেন। সাথের লোকগুলো ছাড়তে চাচ্ছিলো না। তারা বারবার মহিলাকে পরামর্শ দিচ্ছিলো রাকিবকে বেঁধে রাখলে তার ফোন পাওয়া যাবে। কিন্তু তিনি ছেড়্র দিতে বললেন ওকে। ছেড়ে দেবার পর রাকিব সেখান থেকে চলে গেল। কিন্তু লোকগুলোর ক্ষোভ প্রশমিত হলো না। তারা রাকিবকে ছেড়ে দিয়ে এবার মহিলার ওপর তাদের ক্ষোভ ঝাড়তে লাগলো।
"অরে বাইন্দা রাখলেই ফোনটা পাওয়া যাইতো আপা।"
"চেক করে তো কিছু পেলাম না। আর কী পাওয়া যাবে? তাছাড়া ফোনই তো। আরেকটা কিনে নেব।"
"তা তো নিবেনই। জামাই কষ্ট কইরা কামাই করে,আর আপনেরা এমন কইরা সেইগুলি নষ্ট করেন।"
"আমার জামাইয়ের টাকা আমি কী করব না করব সেই পরামর্শ দেয়ার আপনি কে? আমার টাকা না আমার জামাইয়ের টাকা সেটা আপনি কিভাবে জানলেন??”
" আপনার ট্যাকা হইলেই এমনে নষ্ট করবেন?? মাইনষে খাইতে পারে না আর উনি মোবাইল মাইনষেরে দিয়া বেড়ায়। হালার মাইয়া মানুষের বুদ্ধিই হাঁটুর নিচে।"
সবার মধ্যে হাসির কলরোল ওঠে। মহিলা সেখান থেকে বের হয়ে এসে একটা রিকশা ডেকে সেখান থেকে চলে যান। সবার অলক্ষ্যে তার চোখ টলটল করতে দেখা যায়।
মনির অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলো। এর আগেও সে অপেক্ষা করেছে।কিন্তু আজ দেরি হচ্ছে। তার অপেক্ষা করতে ইচ্ছা করছে না। তার একটু ভয় করছে।দুটো কারণ আছে এর পেছনে। প্রথমটা হলো, রাকিব যদি ধরা পড়ে যায় তাহলে ওকে মেরে আস্ত রাখবে না। যেহেতু দেরি হচ্ছে,তাতে ধরা পড়েছে বলেই আশংকা হচ্ছে তার। আর দ্বিতীয় কারণ হলো, সে একটা মোবাইল পকেটে নিয়ে ঘুরছে। এই গলিতে এখন কেউ নেই। বড় ভাইদের কেউ, অথবা পুলিশ টের পেলে মোবাইল তো যাবেই, সাথে মাইর ফ্রি। ভয় এবং উৎকণ্ঠায় গলা শুকিয়ে আসে তার। বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় না। একটু পরেই সেখানে চলে আসে রাকিব।
"এত দেরি অইলো ক্যা? ধরা পড়ছিলা নি? মনিরের ঔৎসুক্য প্রকাশ পায়।
" আরে না। এত সহজ নি সবকিছু??"
"তাইলে দেরি করলা যে??"
"ইট্টু দেইক্যা-দুইক্যা আস্তে আস্তে আইছি।"
কথা শুনে রাকিবের জন্য গর্বে বুকটা ভরে যায় মনিরের। পকেট থেকে ফোনটা বের করে দেখাতে চায় রাকিবকে। রাকিব নিষেধ করে। এনে না। আস্তানায় চল আগে। তারা দুজন তাদের আস্তানায় রওনা হয়।
শহর থেকে একটু দূরে ময়লার ভাগাড়। সেখানে সারাদিনে কোনো মানুষ যায় না। শুধুমাত্র সিটি কর্পোরেশনের ময়লার লোকেরা গাড়ি নিয়ে আসে। রাকিব মনিরের মতো বহু টোকাই তাদের জন্য অপেক্ষা করে। ময়লাওয়ালা আসা মাত্রই ময়লা ফেলতে তাকে সাহায্য করে এসব টোকাই। যদিও কোনো অর্থ তারা দাবি করে না এজন্য। তাদের কাজ শুরু হয় ময়লাওয়ালা চলে গেলে। রীতিমতো কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ময়লার মধ্য থেকে বোতল এবং প্লাস্টিক সামগ্রী খুঁজে বের করে বস্তায় ভরে তারা। এই বোতলগুলো চলে যায় ভাঙারির দোকানে। তারপর সেখান থেকে লোকাল পানির ফ্যাক্টরিতে। এই বোতল বাবদ তারা অর্থ পায়। বোতল টোকানোর পর তারা একটা বড় চুম্বক সুতায় বেঁধে নিয়ে ময়লার মধ্যে ফেলে। ঠিক যেমন করে লোকেরা মাছ ধরার জন্য বরশি ফেলে। ময়লার মধ্যে কোনো দাতব বস্তু থাকলে তা চুম্বকে আটকে গিয়ে উঠে আসে। বোতলের চেয়ে লোহার দাম বেশি। প্রতিদিনই এখান থেকে ভালো আয় হয়। কিন্তু এই ভাগারে রাকিব, মনির আসে না। তাদের ডিউটি পার্কে ভিক্ষা করা। তাদের এখানে আসা নিষিদ্ধ। খালার কড়া নির্দেশ। খালাই সবকিছু ঠিকঠাক করে দেয়। বড় অদ্ভূত চরিত্র এই খালা। তাকে কখনো হাসতে দেখেনি রাকিব মনির। তাকে যমের মতো ভয় করে সকলে। সবার সব টাকা খালাকে দিতে হয়। টাকা কম হলে খালা ধরে মারে, সাথে গালি ফ্রি। রাকিব মনির দেখেছে সবার কাছ থেকে টাকা বুঝে নেয়ার পর সে কাকে যেন ফোন দেয়। তারপর এক লোক এসে কিছুক্ষণ খালার সাথে কথা বলে তারপর চলে যায়।তবে রাত বারোটার পরে যখন দুয়েকজন লোক আসে তখন খালার মুখে হাসি দেখা যায়। লোকদের ঘরে ঢুকিয়ে খালা দরজা লাগিয়ে দেয়। তখন ভেতর থেকে কাঠের ক্যাচ ক্যাচ শব্দ আর খালার কণ্ঠ থেকে উহঃ আহঃ শব্দ শোনা যায়। এই শব্দের মানে মনির না বুঝলেও রাকিব বোঝে। এসব শব্দ হলেই রাকিব মুখ টিপে হাসে। শব্দের তারতম্য অনুসারে হাসি ওঠানামা করে। যেদিন শব্দ বেশি হয় সেফিন হয়তো রাকিব বলে বসে, "মাগীরে খিচ্চা লাগাইতাছে রে!!" মনির এই কথার মানে বোঝে না। ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে রাকিবের দিকে। এই অদ্ভুত চরিত্রের খালাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। তার কাছে দিনের সব ইনকাম জমা দিতে যায় তারা।
ময়লার ভাগারের পাশেই একটা ট্রাক স্ট্যান্ড। এখানে ট্রাকগুলোকে বিশ্রাম দেয়া হয়। তার পাশেই কংক্রিটের অনেকগুলো পাইপ রাখা। এই পাইপগুলোর মধ্যেই রাকিব মনির সহ আরো টোকাইরা থাকে। কংক্রিটের পাইপের এলাকা পার হবার পর একটা বস্তি। ময়লার ভাগাড় আর বস্তির মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। বস্তির পাশে একটা নালা।এটা খাল ছিলো একসময়। আলকাতরার মতো কালো এবং দুর্গন্ধযুক্ত পানি বয়ে চলেছে এই নালা দিয়ে। বর্ষার দিনে এই নালার পানি বেড়ে গিয়ে বস্তি ডুবিয়ে দেয়। মানুষ, মরা কুকুর,বিড়াল, মানুষের বিষ্ঠা, ময়লা সবাই একত্রে বসবাস করে তখন।শুকনো মৌসুমে দুর্গন্ধে পেটে মোচড় দেয়।তারপরও মানুষ থাকে সেখানে। এই বস্তির সবচেয়ে বড় ঘরটায় খালা থাকে।
যথারীতি দিনের ইনকাম নিয়ে হাজির হয় রাকিব-মনির। টাকা দেয়ার আগেই খালা বলে,
"মোবাইলডা বাইর কর আগে। দেহি, কত বড় হাত মারছছ আইজকা?"
মনির তার পকেট থেকে মোবাইলটা বের করলে খালা সেটা নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখে।তার চোখ চকচক করে। "দামি একখান জিনিস আনছছ।" বলে প্রশংসা করে তাদের।তারা খুশি হয়। "এইবার ট্যাকা বাইর কর।" খালা আদেশ দেয়। রাকিব তার পকেট থেকে টাকা বের করে খালার হাতে দেয়। টাকা দেয়া মাত্রই খালা কষিয়ে দুটো চড় বসিয়ে দেয় রাকিবের গালে।
"ট্যাকা এত কম ক্যা? "
"আইজকা ধরা খাইয়া গেছি। এইলিগা পার্কে বইতে পারি নাই বেশি।"
"বেশ্যামাগীর পোলা,মিছা কতা কছ ক্যা?” বলে আরেকটা চড় কষায়।
" মুরগী দিয়া বাত খাইছি আইজকা।"
" ফকিন্নির পুত মুরগি হান্দাইতে গেছে। তর মার ভাতাররে যে বিশ ট্যাকা দিছছ হেইডা কছ না ক্যা? কী মনে করছ? তগো খবর আহে না আমার কানে??"
" ব্যাডায় বিপদে পইড়া চাইছিলো।"
"অহন যে তুই বিপদে পড়লি! হেইডা?? কাইলকাই ব্যাডারতে ট্যাকা ফেরত আইন্না দিবি।"
ওদের ইনকাম থেকে পঞ্চাশ টাকা বের করে রাকিবের দিকে ছুড়ে মেরে তাদেরকে চলে যেতে বলে খালা। খালার ডেরা থেকে বের হয়ে এসে গালির তুবড়ি ছোটাতে থাকে রাকিব।
"খানকি মাগীর গলাডা কোনদিন যানি কাইট্টা হালাইয়া দেই রে মইন্যা।"
"এমুন করবা ক্যা বাই? "
"মাগী আমার মায়রে গাইল দিছে।"
"তুমি তুমার মায়রে দেখছ কোনোদিন?”
" না।"
"তাইলে গাইল দিলেই বা কি? "
"তারপরও কেমুন জানি লাগে মায়রে গাইল দিলে। তর-আমার মায় থাকলে আমগো বিক্কা করোন লাগতো না।"
"কি জানি? আমি বুজি না। "
তারা হাঁটতে হাটঁতে চলে যায় এক হার্ডওয়্যার এর দোকানের সামনে। দোকান তাদের পরিচিত। গিয়ে পঞ্চাশ টাকা দোকানদারের হাতে দেবার পর দোকানদার তাদের কাঙ্ক্ষিত টিনের কৌটাটি তাদের হাতে দেয়। সাথে একটা দেশলাইয়ের বক্স আর মোম। কৌটার গায়ে লেখা রবার সলিয়্যুশন। এমনিতে সবাই জুতার আঠা বলে। দোকানদার নয় টাকা ফেরত দিলে তারা প্রস্থান করে। ট্রাকস্ট্যান্ডের পাশে তাদের ডেরায় ফিরে আসে তারা। তাদের বাসস্থান একটা বড় পাইপের মধ্যে। সেখানে গিয়ে বসামাত্রই হঠাৎ একটা রিকশার বেলের টুংটাং শব্দ ভেসে আসে তাদের কানে।তাদের পাইপের সামনেই একটা রিকশা এসে থামে।তারা দেখলো, রিকশা থেকে এক হিজড়া নেমে এসেছে। নেমেই রিকশাওয়ালার হাত ধরে গালে চুমু খায়। এরপর রিকশাওয়ালা এসে তাদেরকে ধমক দিয়ে পাইপ থেকে বেরিয়ে যেতে বলে। কিন্তু রাকিব দ্বিগুণ তেজে ধমক দেয়।
"ট্যাকার অবাবে মাইয়া লাগাইতে পারোছ না দেইখ্যা হিজলা লাগাস। আবার আমগো ধমক দেছ! হালা ফকিন্নিচোদা। ভাগ!! নাইলে মানুষ ডাকমু।"
রিকশাওয়ালা কোনো উচ্চবাচ্য না করে দূরে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের নিচে চলে যায় সঙ্গীকে নিয়ে। এরপর মনিরকে দুটো পলিথিন আনতে বলে সে মোমে আগুন ধরায়। সোনালি আলোয় ভরে ওঠে পাইপের মধ্যখানটা। মনির পলিথিন নিয়ে এলে জুতার আঠাটির কৌটা খুলে সবটুকু আঠা একটা পলিথিনে ঢেলে নিয়ে সেটা আগুনে পোড়ায় রাকিব। সেখান থেকে অদ্ভুত মাদকতাপূর্ণ একটা ঘ্রাণ বের হয়। আঠা পোড়ানো হয়ে গেলে সেটা অন্য পলিথিনে নিয়ে তার মধ্যে নাক ঢুকিয়ে উপর্যুপরি শ্বাস নিতে ও ছাড়তে থাকে রাকিব। মনিরের রাকিবকে দেখে মনে হয় যেন শ্বাসকষ্টের রোগী। শ্বাস নিতে নিতে রাকিবের চোখ লাল হয়ে আসে। কণ্ঠ জড়িয়ে আসে। চোখ দেখে মনে হয় যেন চোখের পানি আঠালো হয়ে লেগে আছে চোখে। রাকিবের টানা হয়ে গেলে সে পলিথিনটি মনিরের দিকে এগিয়ে দেয়। মনির এই বস্তুটিতে অভ্যস্ত না।অল্পকিছুদিন হয় নেয়া শুরু করেছে। যদিও তার টানতে ভালোই লাগে। মাথা ফাঁকা হয়ে যায়। সারাদিনের কষ্ট ভুলে যায়। রাতেও ঘুম ভালো হয়। সে দেখে,রাকিব বাই বেশি খায়। সে সারাদিন অনেক মাইর খায়। এটা খেয়ে সেসব মাইরের দুঃখ সে ভুলে যায়। নাক টেনে ঘুমায়। একেবারে মরার মতো পড়ে থাকে।সকাল বেলা একেবারে নতুন মানুষ সে। মনির ভেবে পায় না, এতো ভালো একটা জিনিসের নাম ডান্ডি কেন? সে রাকিবকে জিজ্ঞাসা করে,
"বাই এইডার নাম ডান্ডি ক্যা?"
"জানি না।"
" এইডা টানলে এত বালা লাগে ক্যা?"
" পিনিক অয় হেইলিগা।"
"আমার কি পিনিক অইছে?"
"চোকের সামনে কি দেহস?"
"একখান টেবিল। টেবিলে অনেক খাওন। তুমি আর আমি বইয়া রইছি। আর তোমার মায় আমাগো খাওয়াইয়া দিতাছে।"
"আমার মা ক্যা? তরডা কই?"
" একজনই তো দ্যাকতাছি। আমার মায়রে তো আমি চিনি না।হেইলিগা ঐডা তোমার মা।"
"তারপর?"
"তুমি ডং করতাছ, খামু না কইয়া। আর আমি খাইতাছি গপাগপ কইরা।"
"হ্যানেও আমারে খাইতে দিবি না? কী খাছ এহন?"
"আঙ্গুর।"
"বালা জিনিস। খাইতে কেমুন?”
" জম্মের টক বাই।"
"বুজছি। তর পিনিক অইছে। এহন গুমা। সকালে পার্কে যাওন লাগবো।"
একথার পরই শুয়ে পড়ে তারা দুজন। কিছুক্ষণ তারা জেগে থাকে।নেশার ঘোরে ঝিমায়। এতে তারা অভ্যস্ত। তাদের প্রতিদিনের রুটিন এটা। তাদের ভালো লাগে এভাবে ঝিমোতে। পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ বলে মনে হয় নিজেদের। সারাদিনের ধকল উবে যায়। দিনরাতের সকল দুঃখ-বেদনা ডান্ডিকে সমর্পণ করে তারা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এই ঘুম পরম শান্তির। এ-ঘুম থেকে জাগতে চায় না তারা।
**সমাপ্ত**
কিছু কথাঃ এটা গল্প হলেও এখানকার সমস্ত ঘটনা সত্যি। এখানে আমার নিজের দেখা ঘটনা, কয়েকজন টোকাইয়ের কাছ থেকে তাদের জীবনযাত্রা শুনে সেসব ঘটনার সম্মিলন ঘটানো হয়েছে। কিছু জিনিস অতিরঞ্জিত মনে হতে পারে কিন্তু সেগুলো সত্যি। তারা কারো না কারো অধীনে কাজ করে, নজরদারীতে থাকে। তারা এমন একটা জালে আবদ্ধ যে রাষ্ট্র কঠিন পদক্ষেপ না নিলে তাদের পুনর্বাসন করা সম্ভব না। এখানে শুধু ছেলেদের জীবন থেকে কিছু ঘটনা বর্ণিত। মেয়েদের জীবন আরো ভয়াবহ। এতটা ভয়াবহ যে তাদের সম্পর্কে লেখার মতো মানসিক শক্তি আমার এই মুহূর্তে নেই। গল্পের চরিত্রগুলো তাদের আনন্দ-বেদনা-ক্ষোভ সবকিছু গালির মাধ্যমে প্রকাশ করে।এমনকি কুশল বিনিময়ও গালি দিয়ে করে। আর তাই অশ্রাব্য কিছু গালি গল্পে আনতে হয়েছে। এজন্য আমি আবারো ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি পাঠকের কাছে।
২৬ শে এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৫:০০
মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ইসিয়াক ভাই। আপনার মন্তব্যের অপেক্ষায় রইলাম।
২| ২৬ শে এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৪:৫৩
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অসাধারণ একটা গল্প। আপনার সিগনেচার গল্প হয়ত হয়ে উঠেছে এটা। এটার পেছনে কত শ্রম দিয়েছেন, নীচের 'কিছু কথা' বক্তব্যটা পড়লেই বোঝা যায়।
চরিত্রগুলো যেন আমাদের চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। ওদের হাসি-কান্না-ছলচাতুরীর সাথে আমাদের পাঠকদের মনও ওঠানামা করেছে। কখনো ওদের দুঃখে যেমন কষ্ট পেয়েছি, চাতুর্য দেখে ক্ষোভের বদলে হেসেছিও।
অল্প পরিসরে খালা চরিত্রটা খুব বাস্তব হয়ে দেখা দিয়েছে।
অভিনন্দন অনবদ্য এ গল্পটার জন্য।
২৬ শে এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৫:১০
মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই এবং একই সাথে আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আপনি প্রতিটি পর্বে সাথে ছিলেন। উৎসাহ যুগিয়েছেন গল্পটি পরিপূর্ণ করতে। ওদের ছলচাতুরী ওদের সারভাইভালের একটা অংশ। আপনি বুঝতে পারবেন এরা চাতুরী করছে,কিন্তু এরা এমন পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটাবে যে আপনাকে মানসম্মান নিয়ে ছুটে চলে আসতে হবে। খালা এদের পরিচালক। তবে খালার কাজ শুধু কাজ দেয়া। কাজ করা টোকাইদের দায়িত্ব। সেটা যেভাবেই হোক পালন করতেই হবে।ওদের চাহিদা সামান্যই।ওদের চাতুরী আমরা চোখে দেখতে পাই। কিন্তু কলমের খোঁচায় যে চাতুরীগুলো আমাদের সাথে প্রতিনিয়ত হচ্ছে সেগুলো দেখতে পাই না।তাই ভদ্রবেশি সেই ডাকাতগুলোর তুলনায় এই টোকাইদের চাতুরী কিছুই না।
আপনার অনুপ্রেরণাদায়ক মন্তব্যে আপ্লুত হলাম ভাই।।
৩| ২৬ শে এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৪৫
বিদ্রোহী সিপাহী বলেছেন: বাস্তব ঘটনার এমন সুন্দর উপস্থাপনা গল্পের মানোত্তীর্ণ। শুভেচ্ছা রইল।
২৬ শে এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:০০
মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: আপনার প্রশংসা সূচক মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ব্লগার বিদ্রোহী সিপাহী ভাই। আপনিও শুভেচ্ছা নেবেন।
৪| ২৬ শে এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:১৬
বিদ্রোহী সিপাহী বলেছেন: এদের নিয়ে ভাবনা থেকেই টোকাই শব্দের জন্ম। স্বাধীনতার পর থেকে দরিদ্র যখন আরও দরিদ্র হচ্ছিল তার প্রভাব এরশাদ আমলে প্রকট হয়ে দেখা দেয়। ছিন্নমূল মানুষ রাজধানীতে আশ্রয়ের আশায় ছুটে আসে কিন্তু নিরাপদ আবাসনের অভাব তাদের সন্তানদের টোকাইতে পরিণত করে। কোন কোন সরকারের আমলে এদের নিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও সঠিক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের অভাবে তা দৃশ্যমান নয়।
২৬ শে এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪৯
মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: ফিরতি মন্তব্যের জন্য আবারও ধন্যবাদ জানাই আপনাকে। শুধু আবাসন সমস্যা না। চরম দারিদ্র্যের কারণে এরা টোকাই হয়। তবে বিভিন্ন সিন্ডিকেট এদের দিয়ে কাজ করায়। তাই চাইলেও এদের জন্য আপনি দীর্ঘমেয়াদী কিছু করতে পারবেন না। বহু এনজিও এদের জন্য কাজ করছে।আর সরকারি সুবিধা এদের কাছে পৌছানোর আগেই গায়েব হয়ে যায়। সুচিন্তিত মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
৫| ২৬ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ৮:৩৩
শেহজাদী১৯ বলেছেন: পলিথিন রাবার জুতার আঠা এসব খায় টোকাইরা শুনেছি তবে কখনও এই রকম ভয়াবহ জীবন ও অভিনব উপায়ে নেশা করে এটা জানা তো দূরের কথা ভাবিও নি।
খুব ভালো লিখেছেন তমালভাই। এই অবস্থার অবসান হওয়া উচিৎ। কিন্তু কিভাবে জানা নেই আমার।
২৬ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ৯:২৩
মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: আপনাকে স্বাগত জানাই আমার ব্লগে। এটা বহু পুরাতন পদ্ধতি। টোকাইরা খায়।এর নাম ডান্ডি। এরা বড় হলে খায় ঝাক্কি। এটা ইয়াবার রেসিপি। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে এদের পুনর্বাসন করা সম্ভব। আপনার মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
৬| ২৬ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ৮:৪০
শেরজা তপন বলেছেন: পুরোটা পড়ছি। অসাধারণ বললেও কম হয়ে যায়। লেখার বিষয়বস্তু পুরো অস্তিত্বকে বিবশ করে দেয়। হ্যাটস আপ টু ইউ ব্রো
২৬ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ৯:২৮
মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: আপনাকে এ গল্পের শুরু থেকেই পেয়েছি। শুরু থেকেই অনুপ্রেরণা দিয়ে গেছেন। এজন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই।গল্পটি আপনার অসাধারণ লেগেছে জেনে খুব আপ্লুত হলাম ভাই। এদের জীবনের ভয়াবহতা তুলে আনা ছিলো গল্পের মূল উদ্দেশ্য আর ওদের চোখ দিয়ে প্রতিদিনের সমাজকে একটু পরখ করতে চেয়েছিলাম। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।শুভেচ্ছা নেবেন।
৭| ২৬ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ৯:৪১
শেহজাদী১৯ বলেছেন: পূনর্বাসন দরকার। নয়ত ফুলের মত এই জীবনগুলো পঙ্কিলতায় ডুবে যাচ্ছে।
২৬ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ৯:৪৩
মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: ফিরতি মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। এদের সংখ্যা অনেক বেশি। পুনর্বাসন করা জরুরি।
৮| ২৭ শে এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১১:২৮
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
এমন জীবন যেন কারো না হয়। খুবই ভয়াবহ জীবন ওদের। সরকার , এনজিও ওদের নিয়ে কাজ করেও দৃশ্যমান উন্নয়ন তেমন নেই।
গল্পটি নির্বাচিত ও আলোচিত পাতায় স্থান পাওয়ার দাবী রাখে।
++++++++++++
২৭ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১২:০৯
মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: আপনার প্রশংসামূলক মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। সেই সাথে আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আপনি সবগুলো পর্বেই সাথে ছিলেন। এদের মতো ভয়াবহ জীবন কারোই কাম্য নয়। কোনো দীর্ঘমেয়াদী কঠোর পদক্ষেপ ছাড়া এদের এদের জীবনের ভয়াবহতার অবসান করা সম্ভব নয়। ব্যক্তিগত উদ্যোগে কাজ হচ্ছে। কিন্তু সেগুলো পর্যাপ্ত নয়। এদের সংখ্যা অনেক বেশি। অনুপ্রেরণার জন্য ধন্যবাদ ভাই।
৯| ২৭ শে এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৫:৩১
মা.হাসান বলেছেন: অত্যন্ত দুঃখিত যে আপনার অসাধারণ এই পোস্টটিতে ব্যক্তিগত ব্যস্ততার জন্য আগে মন্তব্য করা সম্ভব হয়নি।
প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্বে ঘটনার বর্ননা চমৎকার থাকলেও শেষ পর্বে রিকশাওয়ালাকে ধমক দেওয়ার পর যে অংশটুকু লিখেছেন এটি অনন্য শিল্পকর্ম; পড়তে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। হ্যাটস অফ টু ইউ।
ভিক্ষুকরা যথেষ্ট অর্গানাইজড এবং এটা শুধু বাংলাদেশেই এমন তা না । ভারতেও অরগানাইজড ভিক্ষাবৃত্তি আছে। ট্রাফিক সিগনাল বা স্লামডগ মিলিয়নিয়ার সিনেমাতে যা আছে তা বাস্তবেরই প্রতিচ্ছবি।
মার্ক টোয়েনের দা প্রিন্স অ্যান্ড দা পপার বইয়ে বর্নিত ১৬ শতকের ইংল্যান্ডেও অরগানাইজড ভিক্ষাবৃত্তির বিবরন দেখি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত ইতালিতে অরগানাইজ ভিক্ষাবৃত্তির কথা শুনেছি । নিজে দেখেছি পূর্ব ইউরোপে এবং পশ্চিম ইউরোপের কোথাও কোথাও এখনো অরগানাইজড ভিক্ষাবৃত্তই আছে (মূলত জিপসিরা এর সাথে জড়িত)। আমার ধারণা এটা পৃথিবীর অনেক দেশেই আছে।
বাংলাদেশের অরগানাইজ ভিক্ষাবৃত্তি নিয়ে সাপ্তাহিক ২০০০ পত্রিকাতে একটা খুব ভালো ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্ট এসেছিল, আজ থেকে প্রায় পনেরো বিশ বছর আগে। প্রতিদিন সকালবেলা হাইকোর্ট রমনা পার্ক এর আশেপাশে এদের হাঁট বসে। যার যার কাছে ছোট বাচ্চা আছে তারা ছোট বাচ্চাগুলো ভাড়া দেয় । বাচ্চার স্বাস্থ্য যত্ ভগ্ন হয়, যত বেশি কাঁদতে পারে, ততো ভাড়া বেশি। স্বাভাবিক কারণেই বাচ্চার বাবা মারা বাচ্চাকে বেশি খাওয়াতে আগ্রহী না।
আপনার লেখার প্রথম পর্বে মোটা মোটা মাথাওয়ালা শিশু দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তির কথা বলেছেন এদের বিষয়টাও এরকম। এরা টাকা বানানোর একটা মেশিন। চিকিৎসার মাধ্যমে অসুস্থ শিশুকে সুস্থ করে ফেললে টাকা আদায় বন্ধ হয়ে যাবে। সাপ্তাহিক ২০০০ এর রিপোর্টে ভিক্ষুদের একজন নেতার কথা এসেছিলো, উনি হাইকোর্টের আশেপাশে বসতেন। ওনার বাড়ি বৃহত্তর রংপুর জেলায়। নিজ গ্রামে তাঁর অনেক আবাদি জমি আছে ( ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে কিনেছেন), মাইক্রোবাসের ব্যবসা আছে। মূল পেশা, যা থেকে এই উন্নতি, সেটা ছাড়তে পারেন নি।
পত্রিকাতে কয়েক বছর আগে এসেছিল কেরানীগঞ্জে আওয়ামী লীগের এক নেতা ভিক্ষুকদের রিঙের গডফাদার। অনেক বাচ্চাকে পঙ্গু করে দিয়ে তাদের মাধ্যমে ভিক্ষাবৃত্তি করায়। এক সময় ভাবতাম এগুলো সব গুজব। পরে দেখেছি, এগুলো আসলে সত্য। মিরপুরে একটা বাচ্চাকে তার মায়ের সহায়তা নিয়ে সৎ বাবা হাত কেটে দেয়, যেন বাচ্চাকে দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করানো যায়। এটাও পত্রিকতে এসেছিল।
রাস্তায় কিছু পঙ্গু ভিক্ষুক দেখা যায় যারা রাস্তার মধ্যে শুয়ে আছেন। কিছু লোক এনাদেরকে সকাল বেলা শুইয়ে দিয়ে যায় , সারাদিন এরা রোদের মধ্যে শুয়ে থাকে, কামাই করে। সন্ধ্যায় কালেকশন পার্টি টাকাসহ এদেরকে নিয়ে যায়। দিনে এরা কিরকম কামালো এর উপর নির্ভর করে এদের ডাল ভাত, মুরগি ভাত, না উপস হবে। এদের কপাল কখনো ফিরে না । একই ঘটনা ঘটে অধিকাংশ অন্ধ ভিক্ষুকদেরসাথে।
শুধু মেয়ে শিশু না, ছেলে শিশুদের কেও ভয়াবহ যৌন নির্যাতনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। একটা পেপার ক্লিপ দিলাম- গতকালকের।
একজন সাংবাদিক আছেন, লেখার হাত খুব ভালো। হঠাৎ করে ব্লগে আসেন, আবার নেই হয়ে যান। শেষ দেখেছি বছরেরও মনে হয় বেশি, নিক মনে নেই। ওনার একটা গল্প ছিল, সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা। ফার্মগেট এলাকার এক পথশিশু এক রিকশাওয়ালাকে খুন করে ফেলে কারণ রিকশাওয়ালা তার ছয়সাত বছরের বোনকে নির্যাতন করে মেরে ফেরছিলো। লিঙ্ক খুঁজে পেলে আমি আপনার সাথে শেয়ার করব।
পথ শিশুদের নিয়ে কিছু স্টাডি রিপোর্ট পড়েছিলাম- দশ পনেরো বছর আগে। তাতে বলা ছিল শতকরা ৫০ ভাগের বেশী বাচ্চার ১২ বছরের আগে শারীরিক সংসর্গের অভিজ্ঞতা হয়ে যায়। (ছেলে শিশুদের, মেয়েদের জন্য আরো কম বয়সে)।
যখন গণতন্ত্র ছিল না, সেই এরশাদ সরকারের সময়ে গবেষকদের রিপোর্টের কিছু দাম ছিলো। লেড মিশ্রিত পেট্রোল শিশুদের নিউরোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার করছে সৃষ্টি করছে এরকম একটা রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে এরশাদের আমলে লেড মিশ্রিত পেট্রোল নিষিদ্ধ করা হয়। পরবর্তীতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর দেশে উন্নয়নের জোয়ার চলছে, গবেষকদের গবেষণার তথ্য অবহেলিত। পথশিশুদের নিয়ে যতই গবেষণা করা হোক না কেন, অবস্থার পরিবর্তন হওয়ার কোন আশা দেখিনা।
কিছু সরকারি সেফহোম আছে। এগুলোর অবস্থা আরো ভয়াবহ। যশোরে শিশু সংশোধনাগারে শিশুদেরকে পিটিয়ে মেরে ফেলার ঘটনা কিছুদিন আগেই পত্রিকাতে এসেছিল। যা দেখি তাতে নিজেকে অসুস্থ মনে করি। চোখ বন্ধ করে থাকাটা অনেক বেশি নিরাপদ বলে মনে হয়।
২৭ শে এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:১৩
মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: বেশ সমৃদ্ধ ও তথ্যবহুল মন্তব্য। আপনার এই মন্তব্য থেকে আমি অনেক কিছু জানতে পারলাম। ভারতীয় উপমহাদেশে অর্গানাইজড ভিক্ষাবৃত্তির কথা জানতাম,ইউরোপের কথা জানতাম না। দ্যা প্রিন্স অ্যান্ড দ্যা পপার বইটা পড়া হয় নি।
প্রায় সময়ই দেখা যায় মহিলারা ঘুমন্ত শিশু নিয়ে ভিক্ষা করে। এই শিশুদের ওপর উচ্চ মাত্রার ঘুমের ঔষধ প্রয়োগ করে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়।এদের কখনোই জাগ্রত অবস্থায় দেখা যায় না।
ভিক্ষুকদের সিন্ডিকেট এখন রাজনৈতিক নেতারা নিয়ন্ত্রণ করে। বিশেষ দিনগুলোতে রাজধানীতে ভিক্ষুক আমদানী করা হয়। আমাদের এখানে এক ভিক্ষুক আছে ।তার পাঁচ তলা বাড়ি আছে এবং সুদে টাকা খাটিয়ে তার বেশ ভালো আয় হয়।
বহু পত্রিকা অনুসন্ধানী রিপোর্ট করলেও সেগুলো ধোপে টেকে না। মেয়ে বাচ্চাগুলো এমনভাবে নির্যাতিত হয় যে এরা শৈশবের ট্রমা থেকে বের হতে পারে না। যৌন নির্যাতন সহ শারীরিক, মানসিক নির্যাতনের শিকার হয় প্রতিদিন। আমি একজনের কাছ থেকে তার কাহিনি শুনেছি।সেটা এতটা ভয়াবহ যে লেখার সাহস হয় নি আমার। সেফহোমগুলো শিশুদের জন্য দোযখ। ওখানে শিশুর সমস্ত মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়। বরাদ্দকৃত টাকা অন্যের পকেটে চলে যায়। এগুলো সম্পর্কে যত বেশি জানা যায় তত কষ্ট লাগে।
আপনি প্রথম থেকেই এই গল্পে ছিলেন ,মন্তব্য করেছেন।শেষ পর্বে তথ্যবহুল মন্তব্য করে এই পোস্টকে আরো সমৃদ্ধ করেছেন।আপনাকে একই সাথে অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই মা. হাসান ভাই। শুভেচ্ছা নেবেন।
১০| ০৪ ঠা মে, ২০২১ রাত ৮:০৪
ইসিয়াক বলেছেন: অসাধারণ লাগলো। অনেক পরিশ্রম করেছেন বোঝাই যাচ্ছে। এই ধরনের বাচ্চাগুলোর জন্য খারাপ লাগে। সিন্ডিকেট ভেঙে এদের বের করে আনা খুব একটা সহজ কাজ না তবে সরকারি সহযোগিতায় এই চক্র ভেঙে ফেলা যায়। তবে কে ভাঙবে? সর্ষের মধ্যেই যে ভূত।
প্রিয়তে রাখলাম।
০৪ ঠা মে, ২০২১ রাত ৮:৫১
মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: আপনাকে অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই ইসিয়াক ভাই। আপনি সময় করে সবগুলো পর্ব পড়েছেন এবং মন্তব্য করেছেন।এটা অনেক বড় পাওয়া।
সদিচ্ছা থাকলে সব সম্ভব।এই বাচ্চাগুলো জানেও না তারা কার অধীনে কাজ করছে। এসব সিন্ডিকেটের মাথারা জেলা কমিটি থেকে শুরু করে সংসদেও আছে। এ ব্যাপারে আপনার কথাটি (সর্ষের মধ্যে ভূত) একেবারে সত্য।
আপনার জন্য শুভকামনা রইলো ভাই।
১১| ০৫ ই মে, ২০২১ রাত ২:৩৫
রাজীব নুর বলেছেন: এই টাইপ পোষ্ট আপনি আরো লিখুন।
০৫ ই মে, ২০২১ সকাল ১১:৩০
মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: সময় করে পড়ে মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ রাজীব নুর ভাই। অনুপ্রেরণার জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আমি চেষ্টা করব এমন গল্প লেখার।
১২| ০৫ ই মে, ২০২১ রাত ১০:২৫
স্থিতধী বলেছেন: পরিশ্রম, অভিজ্ঞতা আর আন্তরিকতা দিয়ে লেখা আপনার এই পোস্ট। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনি হয়তো চিত্রনাট্য লিখে থাকেন। না লিখে থাকলে আমার অনুরোধ আপনি কিছু চিত্রনাট্য লেখা শুরু করে দিন।
ওদের কে নিয়ে দারিদ্র ব্যাবসার মডেল না বানিয়ে বরং আন্তরিক প্রচেষ্টায় কিছু পাব্লিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে সঠিক ভাবে কাজ আগানো গেলে আজও ওদের এতো সংখ্যায় আমাদের দেখতে হতোনা। এটা আমাদের সামগ্রিক ব্যর্থতা। আমাদের লজ্জা।
০৫ ই মে, ২০২১ রাত ১০:৪৫
মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: সময় করে পড়ে মূল্যবান মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই। আমি তিনটা বিখ্যাত গল্পকে নাট্যরূপ দিয়েছিলাম মঞ্চে তোলার উপযোগী করে। রাজশেখর বসুর চিকিৎসা সংকট, আবুল মনসুর আহমদের হুজুরে কেবলা আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তোতাকাহিনী। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে স্বল্প পরিসরে (২০-২৫ মিনিট) করার উপযোগী ছিলো সেগুলো। চিত্রনাট্য বলতে যা বোঝায় তা করা হয় নি কখনো। মৌলিক চিত্রনাট্য লিখিনি কোনো। আপনার পরামর্শ সাদরে গ্রহণ করলাম ভাই।
এদের জন্য বহু লোক এবং এনজিও কাজ করছে। কিন্তু সেগুলো বিচ্ছিন্নভাবে হওয়ায় এই প্রচেষ্টাগুলো ফলপ্রসূ হচ্ছে না। দীর্ঘমেয়াদী ও সম্মিলিত পরিকল্পনা দরকার এদের জন্য। এরা রাস্তায় কাটাচ্ছে। অন্য এতিমরা কিছু আছে এতিম খানায় আর বাকিরা মাদ্রাসায়।
চমৎকার এবং অনুপ্রেরণাদায়ক মন্তব্যের জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা রইলো আপনার প্রতি।
১৩| ১২ ই মে, ২০২১ রাত ১১:৫৭
সোহানী বলেছেন: শেষ থেকেই শুরু করলাম সিরিজটা পড়া। সময়ের টানাটানিতে বাকিগুলো এখনো পড়া হয়নি। তারপর মন্তব্য। তবে মনে হচ্ছে আপনার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই লিখেছেন, তাই নয় কি?
১৩ ই মে, ২০২১ রাত ১২:৩৯
মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: ব্যস্ততার মধ্যেও সময় করে পড়ে মন্তব্য করায় অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আপনার ধারণা সঠিক। নিজ চোখে দেখা ঘটনা, পথশিশুদের সাথে কথা বলে তাদের জীবনযাপন সম্পর্কে জেনে কয়েকটা ঘটনার সম্মিলন করেছি গল্পে। মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ সোহানী আপু।
১৪| ০৬ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৪:২৫
অশুভ বলেছেন: অদ্ভুত লেখনী আপনার। যত পড়ি ততই মুগ্ধ হই। আর গল্পের এমন সব চমৎকার প্লট কোথায় পান?
০৭ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৪:১৩
মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: আপনাকে অনেক দিন পর পেয়ে ভালো লাগছে। আমার প্লটগুলো বেশির ভাগই গল্পের চরিত্রগুলোর কাছ থেকে সরাসরি তাদের জীবনের গল্প শুনে পেয়েছি। তারপর নিজের মতো করে লিখেছি। আমি প্রায়ই মানুষের কাছ থেকে তাদের গল্প শুনি।
আপনার মন্তব্যে একই সাথে অনুপ্রাণিত ও আপ্লুত হলাম। আপনি বেশ পুরাতন পাঠক। শুভেচ্ছা নেবেন। দেরিতে উত্তর দেয়ায় আন্তরিক ভাবে দুঃখিত ভাই।
©somewhere in net ltd.
১| ২৬ শে এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৪:৩৯
ইসিয়াক বলেছেন: এবার পুরো গল্পটা ধীরে সুস্থে পড়ে মন্তব্য করবো।