নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
“আচ্ছা বিয়াল্লিশ বছর বয়েসটা কি বিয়ের জন্য অনুপযুক্ত?”- হঠাৎ এই প্রশ্নটা করে বসলো শোহান তার কলিগ রেজওয়ানকে।রেজওয়ান একটু হকচকিয়ে গেলো প্রশ্নটা শুনে।শোহান রেজয়ানের কলিগ হলেও রেজওয়ান শোহানকে বন্ধু হিসেবেই মানে।একসাথে কাটানো অনেকগুলো বছরের সমষ্টি তাদেরকে কলিগ থেকে জুড়ে দিয়েছে বন্ধুত্বে।কিন্তু শোহানের ব্যাপারটা আলাদা।শোহানের জীবন দর্শন একটু নয় অনেকাংশেই ভিন্ন।সে রেজওয়ানকে দেখে একজন শুভাকাঙ্খী হিসেবে।যাইহোক, একটু সময় নিয়ে রেজওয়ান শুরু করলো, “দেখ বন্ধু! আমার তো আঠারো বছরের একটা মেয়ে আছে।আমার সময়ে তুই বিয়ে করলে হয়তো তোরও একটা আমার মেয়ের বয়সী একটা মেয়ে থাকতো।কিন্তু বিয়েশাদী নিয়ে তুই কখনো সিরিয়াস ছিলি না।আজ যখন বলছিস তখন বুঝতে পারছি যে গুরু তুমি সিরিয়াস।”
রেজওয়ানের এত বড় ভূমিকায় শোহান একরকম বিরুক্ত হলো।সে আবার পাল্টা প্রশ্ন করলো, “আমি তোর কাছে এই বিশাল বড় ইন্ট্রুডাকশন্ চাইনি।সংক্ষেপে বল, আমি কি এই বয়সে বিয়ে করতে পারি, না কি পারি না?”
রেজওয়ান একটু সামলে নিলো নিজেকে।তারপর বললো, “হুম অবশ্যই পারিস।”
প্রতুত্ত্যরে শোহান বললো, “ব্যাস! এইটুকুই।”
কিন্তু রেজওয়ান অবাক হয়ে গেলো এটা ভেবে যে তার বন্ধু সত্যিই কি এই বয়সে বিয়ে করতে যাচ্ছে? হঠাৎ করে বিয়ে নিয়ে এমন প্রশ্ন সে আশা করেনি।তাছাড়া লম্বা সময়ের বন্ধুত্বে হাসি বা ঠাট্টার সুরে অনেকবার বিয়ে নিয়ে কথা তুলেছে রেজওয়ান কিন্তু শোহান সবসময় এই বিষয়টা এড়িয়ে গেছে।কিন্তু আজ দেখি নিজে যেচে সেই অপ্রত্যাশিত প্রশ্নটা করছে।
সপ্তাহখানেক পর.....
আজকাল শোহানকে দেখা যায় না আর অফিসে।কোথায় গেছে কি করছে আর কেনইবা গেছে সে তার কিছুই জানে না।ফোনে বা সোশ্যাল নেটওয়ার্কেও পাওয়া যাচ্ছে না।একরকম অদৃশ্য হয়ে গেছে মনে হয়।চুপচাপ আর শান্ত প্রকৃতির এই মানুষটিকে কখনোই অফিস কামাই করতে দ্যাখেনি রেজওয়ান।সুতরাং এটা একরকমের বিস্ময় তার জন্য।তাই একদিন বাধ্য হয়েই রেজওয়ান তার বসের কাছে গেলো শোহানের সম্পর্কে জানতে।কিন্তু অফিসে প্রবেশ করতেই বলে উঠলেন, “আরেহ্ রেজওয়ান! তুমি! এসো এসো তোমার জন্য একটা ভালো খবর আছে।”
রেজওয়ান হতচকিত হয়ে শুধু নিচু স্বরে বললো, “জ্বী বলুন? এমন কি খবর রয়েছে আমার জন্য?”
এরপরের কথাগুলো শুনে রেজওয়ান শুধু হা... করে তাকিয়ে ছিলো বসের চেহারার দিকে।তার বসের চোখের পাতা কেমন দ্রুত পাল্টাচ্ছে আর অনেক আনন্দে লাফাচ্ছে বলে মনে হলো।তিনি যা বললেন তার সারমর্ম ঠিক এতটুকু যে, “রেজওয়ান তোমার বন্ধু এবার বিয়ের পিঁড়িতে বসেছে।কিন্তু কি দূর্ভাগ্য দেখো আমাদের কেউই একটু মিষ্টি মুখ করতে পারলাম না।”
রেজওয়ান সেদিন কিছু না বলেই অফিস ত্যাগ করলো।সবচেয়ে কাছের বন্ধুটি বিয়ে করলো অথচ তাকে জানালোনা পর্যন্ত! মান-অভিমানে ভিতরটা একসময় ধরে আসলো ওর।মনে মনে একরকম পণ করলো যে, সে আর কখনো শোহানের সাথে কথা বলবেনা।
আরো এক সপ্তাহ পর.....
শোহান তার সদ্য বিবাহিত বউকে নিয়ে অফিসে প্রবেশ করলো।মেয়েটার বয়েস বড়জোর আঠারো থেকে কুড়ি।বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে মাত্র পা দিয়েছে সে।লাল শাড়ি, ঠোঁটে লাল কড়া লিপিস্টিক আর লম্বা হিলে লম্বা এই মেয়েটাকে তালগাছের মত লাগছে।সবার নজর কেড়ে নেবার মত তার রুপ।পাড়ার বখাটে ছেলেদের ভাষায় মেয়েটার রুপের প্রশংসা করলে গেলে বলতে হয়, মেয়েটা দেখতে বেশ টিপটপ।কিন্তু এই বয়সে মানে শোহানের চল্লিষোর্ধ বয়সে এমন একটা বউ মিলে যাওয়াতে অফিস পাড়ার অনেকেই ঈর্ষার আগুনে জ্বলছে।যাইহোক, সবাই এক এক করে এসে শোহানকে ঘিরে ধরলো।তাদের নানাবিধ কৌতুহল পাশে রেখে সবাই তাকে স্বাগতম জানাতে লাগলো।কেউ কেউ আবার উপহার হিসেবে শোহানের হাতে তুলে দিলো ফুলেরতোড়া।কিন্তু সেদিন রেজওয়ানকে অফিসে দেখা গেলো না।শোহান রেজওয়ানের কাছে থেকে অন্তত একবার স্বাগতম শুনতে চেয়েছিলো।পরে অবশ্য ব্যাপারটা চাহর হয়ে উঠলো।সবাই আবিষ্কার করলো, এটা কোনো গর্তে পড়ে যাওয়া বিয়ের মত বিয়ে নয় বরং সম্পর্কের এক পর্যায়ে তাদের বিয়ে হয়েছে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, কি দেখে? কি দেখে মেয়েটা শোহানের মত এমন কুৎসিত আর অহংকারী ছেলেকে ভালোবেসেছিলো? এই প্রশ্নটা নিয়ে অনেক অনেক চর্চা হতে থাকলে অফিসে।কিন্তু কোনো উত্তর কেউ বের করতে পারলো না।একেক জনের ধারনা একেক রকমভাবে প্রকাশ পেতে থাকলো মাত্র।কেউ কেউ বলছে পারিবারিক কোনো সূত্র ধরে এই বিয়েটা হয়েছে আবার কেউ কেউ মজা করছে আর এটা বলে বেড়াচ্ছে যে, অন্তত চল্লিশটা বছরে একটা মেয়েকে পটানো সম্ভব।নেহাত অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে শোহানকে নতুবা ওর কপালে এমন সুন্দরী মেয়ে জুটে যাওয়া একরকম অসম্ভব।
ঐদিকে শোহানের সংসার জীবন একপা দু’পা করে সামনে এগুতে লাগলো।চলে গেলো মাস, সপ্তাহ এমনকি এক বছর।কিন্তু শোহানের সাথে তার বউ মিশুর সম্পর্ক দিনদিন খারাপ হতে থাকলো।হাজার হোক প্রায় দুই জেনেরেশনের গ্যাপ।দুজনের চিন্তা করার ধরণ, পৃথিবীকে দেখার ধরণ এক নয়।মিশু সবসময় ভাবে সারাদিন কাজকর্ম করে এসে শোহানের সাথে একসাথে রান্না করবে, একসাথে বসে কিছু সময় টেলিভিশনে হিন্দি সিরিয়াল দেখবে আর গল্প করবে।তারপর মিশু শোহানকে খাইয়ে দিবে আর শোহান মিশুকে।শুধুমাত্র দৈহিক চাহিদা মিটে গেলেই অন্যপাশে হয়ে ঘুমাতে হবে কেনো? বরং শোহানের বুকে মাথাটা রেখে রাতটা পার করবে।কিন্তু এই সব স্বপ্ন মিশুর জীবনে এতটা দিন ধরে স্বপ্নই থেকে গেছে।
“আচ্ছা মিশু? চল আজ সন্ধ্যায় একটু বাহিরে বের হই।অনেকদিন হলো আমরা চারদেয়ালে আবদ্ধ।যাবে?
“কখন বের হবো?”
“তোমাকে ত্রিশ মিনিট সময় দিলাম।এতে চলবে?”
মিশু শুধু মাথাটা নাড়ালো।তারপর প্রায় চল্লিশ মিনিট পর মিশু এসে শোহানের সামনে দাঁড়ালো।শোহান মিশুকে দেখে স্তুব্ধ।শোহানের মনে মনে রাগ হচ্ছিলো এতদিন মিশুর সৌন্দর্যের ছিটেফোঁটাও তার চোখে না পরার জন্য।সেদিন মিশুর হাতটা স্পর্শ করতেই সেই প্রথম স্পর্শের কথা মনে পড়ে গেলো।তারপর বেশি সময় না নিয়ে তারা কার নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো শহরের এক নামকরা রেস্তোরাঁর দিকে।
এই রেস্তোরাঁর থিমটা অসাধারণ।মর্মান্তিক রোমান্টিক।ব্যাকগ্রাউন্ডে চলছে একটা বাংলা গান, “এখন তো সময় ভালোবাসার...”।কেয়ামত থেকে কেয়ামত বাংলা সিনেমার এই গানটি কত স্মৃতি মনে করিয়ে দিচ্ছে।তা ভাবতেই শোহান নস্টালজিক হয়ে যাচ্ছে বারবার।আর খাবারে মাছের ঝোল, আলু ভর্তা, পোলাও ইত্যাদি আইটেমগুলো যেনো বলে দিচ্ছে বাঙালীয়ানার কথা।হালকা নীল লাইট আর খাবারের স্বচ্ছ পরিবেশনা শুধু শহরজুড়ে এই রেস্তোরাঁয় মিলে।প্রথমে মিশু কথা বলা শুরু করলো,
“সারা শহর জুড়ে বুঝি আপনার এই রেস্টুরেন্ট ছাড়া আর কোনো রেস্টুরেন্ট মিলেনি?”
“কেনো? এই রেস্টুরেন্ট খারাপ কীসে?”
“হাহ্....”
“মিশু! তুমি কি ঐ সব রেস্টুরেন্টের কথা বলছো যেসব রেস্টুরেন্টের খাবারের নাম পর্যন্ত জীবনে কখনো শোনোনি! আর ব্যাকগ্রাউন্ডে যেসব মিউজিক চলে সেসব মিউজিকের শিল্পীদের নাম পর্যন্ত জানো না!”
“হ্যাঁ, বলছি।কারণ বর্তমান সময় এসবই ডিমান্ড করছে।”
“হুম, বর্তমান সময় আরো অনেককিছু ডিমান্ড করছে।এই যেমন ধর, পরকীয়া।”
“হঠাৎ পরকীয়ার কথা কেনো উঠলো?”
“কারণ, আমি ব্যাকডেটেড।তোমাদের মত এত আপডেটেডে না।সোশ্যাল নেটওয়ার্কেও খুব একটা যাওয়া হয় না।সময় কই বল?”
“তুমি আসলে কি বলতে চাইছো?”
“কিছুই না।কিন্তু সময় সময় তোমার সোশ্যাল নেটওয়ার্কের দেয়ালে কিছু ফটো আসে।স্বামী হিসেবে ওসব আমার একটু খারাপও লাগে।যদি সম্ভব হয় তো, একটু প্রাইভেসি সেট্যাপ করতে পারো।”
“তুমি কার কথা বলছো? শিহাব? আমার ক্লাসমেট?”
“দেখো, শিহাব শুধু তোমার ক্লাসমেট নয়।এটা যেমন তুমি জানো, এটা আমিও জানি।”
“আমার এই রেস্টুরেন্টে থাকতে দমবন্ধ হয়ে আসছে।আমাকে বেরুতে হবে।”
“ওহ...ওহ...ওহ্ সুইটহার্ট! আজ আমার জন্মদিন।প্লিজ...”
কোনোরকম খাওয়া-দাওয়া শেষে মিশু বের হয়ে পড়লো রাস্তায়।তারপর একটা টাক্সিক্যাব ডেকে উঠে পড়লো বাসার উদ্দেশ্যে।শোহান শুধু চুপচাপ ব্যাপারটা রাস্তায় দাঁড়িয়ে দেখছিলো।ওর মনে হচ্ছিলো যে, মানুষ এক অদ্ভূত প্রাণী আর ওদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে ওরা খুব কম ব্যাপারগুলো গ্রহণ করে থাকে।
ঠিক এজন্যই হয়তো সেদিন শোহান চুপ ছিলো।
কয়েকটা দিন পর শোহানের নামে একটা হারানো বিজ্ঞপ্তি বের হলো।বন্ধু রেজওয়ান হন্ন্যি হয়ে খুঁজে বেরাতে লাগলো শোহানকে।কিন্তু শহরের প্রতিটা অলিগলি, হোটেল, রেস্তোরাঁ এমনকি ফুটপাতের বেড়া দেওয়া কোনো ছোট্ট কুঁড়ে ঘরেও শোহানের দেখা মিললো না।শেষমেশ বাধ্য হলো মিশুকে একটা ফোন করতে।
“আচ্ছা মিশু, তুমি শোহানকে শেষ কোথায় দেখেছিলে?”
“আমাদের শেষ দেখা হয়েছিলো এক রেস্তোরাঁয়।”
“আচ্ছা! সেদিন কি তোমাদের মধ্যে কোনো ধরণের ঝগড়া হয়েছিলো।মানে এসবের মধ্যে যদি কোনো ক্লু পাওয়া যায় আর কি!”
“হ্যা, হয়েছিলো।তবে সেটাকে ঝগড়া বলা যায় কিনা জানিনা।”
এরপর সমস্ত ঘটনা মিশু খুলে বললো রেজওয়ানকে।বন্ধুর কষ্টের জায়গাটা ধরতে তার একটুও বেগ পেতে হলো না।তবে একদিন মজা করে শোহান তাকে ফিল্ম ডিরেকশনের কথা বলেছিলো।বলেছিলো,
“জানিস রেজওয়ান! প্রত্যেকের জীবনেই একটা গল্প থাকে।আমার জীবনে একটা বড় ইচ্ছে যে, সেই সব গল্পের মধ্যে কোনো একটা গল্প নিয়ে কোনো একদিন আমি ফিল্ম ডিরেকশন যাবো।”
কথাটা মনে পড়তেই রেজওয়ান আর দেরি না করে পরের দিন সকালে বি.এফ.ডি.সিতে উপস্থিত হলো।তখন বি.এফ.ডি.সিতে একটা ফিল্মের শূট্যিং চলছিলো।কেউ একজন বেশ জোরে জোরে বলছিলো,
“সিনেমার নাম আমি চল্লিশ, তুমি কুড়ি...দৃশ্য নম্বর ১২৭.... ৩ নম্বর শট্...”
আরো একটু কাছে যেতেই রেজওয়ান আবিষ্কার করলো তার বন্ধু শোহান বেশ উচ্চস্বরে বলছে,
“লাইট...ক্যামেরা...এ্যাকশন...”
২| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১১:৫৪
ওমেরা বলেছেন: প্রত্যেকের জীবনেই একটা গল্প থাকে ।
৩| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১১:৫৬
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: মানুষ এক অদ্ভূত প্রাণী আর ওদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে ওরা খুব কম ব্যাপারগুলো গ্রহণ করে থাকে।
জীবনটা এরকম গল্পের মতো
নাকি গল্পটা জীবনের মতো ???
৪| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ২:২১
সুমন কর বলেছেন: প্লট'টা খারাপ লাগেনি। ভালো হয়েছে।
৫| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৯:১৮
রাজীব নুর বলেছেন: সব মিলিয়ে খুব ভালো।
©somewhere in net ltd.
১| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১১:২১
সনেট কবি বলেছেন: কিছুটা পড়লাম।