নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাজবাড়ি। আমার প্রাণের শহর। কিন্তু এখন এখানে টিকে থাকাটা একরকম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে আমার জন্য। কিছুদিন পূর্বে গ্রামের বাড়ি থেকে মা ফোন দিয়েছিলেন কিছু টাকা পাঠানোর জন্য। চাকুরী নেই, আবার তাই বলে কিছুই করি না তাও নয়। কিন্তু কি পদে চাকুরী করি সেটা ব্যাখ্যা দেবার বোধহয় প্রয়োজন আছে। ইংরেজিতে আমি "প্রক্সি ম্যান"। ব্যাখ্যায় গেলে এভাবে বলা যায়, চাকুরীজীবি যারা আছেন তাদের কর্মস্থলে অনুপস্থিতিতে আমি হাজিরা দিয়ে থাকি। আর এসব করে কিছু টাকা কামানো গেলেও জীবন একদমই চলছিলো না।
হোটেল ছাড়তে হয়েছে। ভাড়ার বাকি টাকা না দিতে পারায় রোজ রোজ মালিক গালিগালাজ করে আমার চৌদ্দ গোষ্ঠি উদ্ধার করছিলো।
এক সন্ধ্যায় রেস্টুরেন্টে বিনা পয়সায় খেতে বসেছিলাম। প্রচন্ড খিদে পেয়েছিলো। তাই ইচ্ছে মত অর্ডার করেছি নানাবিধ খাবারের আইটেম। গো-মাংসও বাদ যায়নি, সাথে আবার কোক ছিলো। পাশে এক সত্তর বয়সী বৃদ্ধা বসেছিলেন। ভদ্রমহিলা বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছেন। আর তাকাবেন না-ই বা কেন? যেভাবে খাবার কব্জি ডুবিয়ে মুখে পুড়ছিলাম!
বিল আসলো ৫০০ টাকা। বিল দেখে আমার চোখ তখন চড়াক গাছ। সর্বোচ্চ ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকার মধ্যে হবার কথা ছিলো। ওদিকে ধানের দাম কমছে, অন্যদিকে চালের দাম বাড়ছে। কৃষকদের উপর রেটোরিক অর্থে " স্যাটায়ারিক" প্রভাব পড়েছে বলা যায়, আর বাকিটা "আইরোনি"। অবশ্য সেদিন আমি মুখেই বলে দিলাম, "দুঃখিত! আমার কাছে আপনাদের বিল পরিশোধ করার মত টাকা নেই"।
গায়ে কোর্ট-টাই দেখে হয়তো ওয়েটার বকশিস পাবে বলে ভেবেছিলো। সে ইচ্ছেই তো গুড়ো বালি পড়লো তার উপর রেস্টুরেন্টের মালিক অশ্রাব্য ভাষায় আমি সহ ওয়েটারকে গালি দিতে শুরু করলো।
এক সময় ব্যাপারটা ধস্তাধস্তি পর্যায়ে গড়ালো। কিন্তু না, আমি টাকা দিতে প্রস্তুত নই।
"আরেহ্ ভাই, আমার মানিব্যাগে আজ এক পয়সাও নেই। একটু তো বুঝুন?"
এরপর এক দীর্ঘদেহী ওয়েটার মাত্র আমার শার্টের কলার ধরবে বলে সিনেমাটিক স্টাইলে হুমকি দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসছে। কিন্তু ততক্ষণে বৃদ্ধার খাওয়া-দাওয়া শেষ। তখন বিল দিচ্ছেন। ভদ্রমহিলা আমার এই অবস্থা দেখে রেস্টুরেন্ট মালিককে বললেন, "ওর যা বিল হয়েছে আমি দিয়ে দিচ্ছি। অনুগ্রহ করে আপনারা একটু থামুন"।
রেস্টুরেন্টের বাহিরে পা দিতেই ভদ্রমহিলা ইশারা করলেন,
: সিগারেট খাও?
: হ্যাঁ
: আমি পাবলিক প্লেসে স্মোক করি না। আমার সাথে যাবে?
: কোথায়?
: আমার বাসায়। ভয় নেই, আমি একা থাকি।
: চলুন? তবে আপনার সাথে গাড়ি আছে কি?
: হুহ্
শহর থেকে অল্প একটু দূরে। ঠিক যেনো এক জমিদার বাড়ির সামনে ড্রাইভার গাড়িটা থামালেন। গাড়ি থেকে নেমে আমি হা করে বাড়িটার দিকে তাকিয়ে রইলাম,
: এটা বাড়ি না কি ছোটখাটো প্রাসাদ!
: আমার দাদু জমিদার ছিলেন। হালকা শ্যাওলা পড়েছে তাই না?
: হ্যাঁ, তা পড়েছে। কিন্তু এত পুরনো বাড়ি এখনো অক্ষয় হয়ে অমরত্বের জানান দিচ্ছে।
একটু বাদেই চমৎকার একটি রুমে আমাকে বসানো হলো। পুরো ব্যাপারটার মধ্যে একটা রাজকীয় ভাব ছিলো। তারপর আমার সামনে এক এক করে ওয়াইনের বোতল, দামী ব্রান্ডের সিগারেট এবং একটি আশট্রে রাখা হলো। ভদ্রমহিলা এক গ্লাসে নিজে ওয়াইন ঢাললেন উল্লেখ্য "র" নিলেন। জলের বিড়ম্বনা আর না করে তিনি মস্তবড় খাটে পা দুলিয়ে বসলেন। আমি সোফায় বসে ততক্ষণে ধাতস্থ হবার চেষ্টা করছি। শুরুটা উনি করলেন,
: মদ খাও?
: কখনো কখনো...
: নাম কি তোমার?
: আমি হাসান। আর আপনি?
: মুসলিম? আমি স্মৃতি দত্ত। কি করো তুমি?
: বেকার, কিছু করি না।
ততক্ষণে ওয়াইনের সাথে হালকা জল নিয়ে ছোট একটা পেগ আমিও বানালাম। আর সিগারেট ঠোঁটে নিয়ে মনে হলো রাজ্যের সুখ আমি এখন অনুভব করছি। তিনি আবার শুরু করলেন,
: কোথায় থাকো তুমি?
: মিসেস দত্ত, বর্তমানে আমার কোন আবাস্থল নেই।
: তোমাকে একটা অফার করতে চাই। আপত্তি না থাকলে বলবো।
: বলুন? কোন চাকুরী? না কি বাড়ির পরিচায়ক হতে হবে?
: না, তোমাদের এই প্রজন্ম হুট করে ভূমিকা ছাড়াই উপসংহারে চলে যায়। বলছিলাম, তুমি চাইলে এখানে থাকতে পারো। কিছু রুম এমনিতেও খালি পড়ে আছে। চাকুরী পেলে না হয় চলে যেও।
: আপনার মেহেরবানি। তা এতবড় উপকার কেনো করতে চাইছেন?
: সিক্রেট... সওদা মঞ্জুর?
: না বলার অপশন নেই। শুধু ভয় হচ্ছে রাত দুপুরে কেউ গলা টিপে না দেয়।
এরপর চার দেয়ালে হাসির শব্দ ধ্বনিত হতে থাকলো। ফ্রি খাওয়া-থাকার ব্যবস্থা হচ্ছে তার উপর চমৎকার একজন ভদ্রমহিলা। বয়েস কম হলে এখানেই ঘর বাঁধতাম। যদিও সেই কল্পনা মাথা থেকে অল্পতেই চলে গেলো।
এরপর পুরো একটা মাস বসে শুয়েই কাটিয়ে দিলাম। হঠাৎ একদিন কেউ একজন দরজায় কড়া নাড়লো। প্রথমে মনে হলো, মিসেস দত্ত হবেন হয়তো। উঁহু! আজকের বাজার করা হয়নি। কিন্তু না, উনি তো আমায় ঘুম থেকে ডাকেন না। আবার বাড়িতে আর কেউ থাকেও না। কোনো সমস্যা হয়েছে মনে হচ্ছিলো। তাই খালি গায়েই দরজা খুললাম। ওমা একি! এত আস্ত রাজকন্যা!
লম্বা আর কালো চুলে তামাটে বর্ণের এক যুবতী। কি নিষ্পাপ দেখতে! উচ্চতায় ৫ফুট ৬ইঞ্চি মত হবে। মানে ঐশ্বরিয়া রায়। কফি হাতে এসেছে। খালি গায়ে দেখেও খুব বেশি একটা তোয়াক্কা করলো না।
: হাসান সাহেব, আমাদের পরিচিতি পর্ব এখনো হয়নি। মা বললেন আপনার সাথে অন্তত একবার দেখা করা উচিত। তাছাড়া আপনি এই বাড়ির অতিথি বলে কথা।
: সে না হয় বুঝলাম। কফি হাতে কি তবে বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকবেন?
: ওহ্, দুঃখিত! আপনার জন্যই কফিটা করেছি। তাছাড়া আপনিও তো ভিতরে প্রবেশ করবার অনুমতি দিচ্ছেন না।
: আসুন... আসুন, মিস...
: হ্যাঁ, মিস... মিস স্নেহা দত্ত
: মানে আপনার সাথে লাল শাড়িটা মানিয়েছে। কিন্তু স্নেহা দত্ত নামটা বেঢপ।
: আপনি মনে হয় যা বলার মুখেই বলেন। কফিটাও মুখে নিলে অত্যুক্তি হবে না আশা করি।
: এখুনি চলে যাবেন এই ভয় দেখাচ্ছেন?
: না, ভয় পাচ্ছি। আপনার চোখ মিষ্টি কিছু বলছে না। ওখানে অনুরাগ আছে, টানও আছে।
এরপর স্নেহার প্রস্থান ঘটলো। হার্ট দ্রুত বিট করছে। প্রেমে পড়ার লক্ষণ। কিন্তু চাকুরী নেই, তাই এই আশা ছাই।
এরপর প্রায় সকাল সকাল এক কাপ কফি করে দিত স্নেহা। রুমে প্রবেশের অনুমতিও নিত না। যেনো নিজেরই রুম। হ্যাঁ, আমি উড়ে এসে জুড়ে বসেছি। তবুও তো একটা কার্টেসি দেখাবে না কি! পরে ভাবলাম বেকারদের এতকিছু ভাবতে নেই।
২| ২১ শে অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১১:০১
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আচ্ছা!?
তো চলুক....
৩| ২১ শে অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১২:৩৪
রাজীব নুর বলেছেন: পকেটে টাকা না থাকা স্বত্ত্বেও হোটেলে খেতে বসা বিরাট সাহসের কাজ।
অনেকদিন আগে কোলকাতার একটা মুভি দেখেছিলাম ''বসু পরিবার'।
৪| ২১ শে অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৩:৫৭
পদ্মপুকুর বলেছেন: শুরুটা ভালোই হয়েছে। আপনি কি পশ্চিমবঙ্গ থেকে লিখছেন?
৫| ২১ শে অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:৪৮
করুণাধারা বলেছেন: কেমন রহস্যময় পরিবার!! দেখি সামনে কী আছে। এই পর্ব ভালো লাগলো।
৬| ২১ শে অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৮
মা.হাসান বলেছেন: হরর গল্প? শুরুটাতো ভালোই মনে হচ্ছে। চলুক।
৭| ২১ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ৯:৪৩
সৈয়দ মোজাদ্দাদ আল হাসানাত বলেছেন: শেষ?
৮| ২২ শে অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১২:০৮
মি. বিকেল বলেছেন: না, আমি বাংলাদেশ বা পূর্ব বাংলা থেকেই লিখছি।
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে অক্টোবর, ২০২০ সকাল ৯:১২
একাল-সেকাল বলেছেন:
স্মৃতি দত্ত একা থাকে, স্নেহা দত্ত তার মেয়ে কফি হাতে। কল্পনায় ছন্দ পতন ।