নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

মি. বিকেল

আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নাম মি. বিকেল।

মি. বিকেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডর(একটি ছাগল সমাজ) – সম্পূর্ণ কাল্পনিক

১৪ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৯:০৬



হটাৎ একদিন এক এলাকায় বাজার বসলো। সেখানে শাক-সবজি বিক্রি করবার জন্য এক বৃদ্ধ মহিলাকে দেখতে পাওয়া গেল। আবুল নামের এক লোক কচুশাক, পুঁই শাক, পালংশাক, কলমীশাক, লালশাক সব মিলে এক কেজি মাত্র দশ টাকা দরে কিনে নিলেন।

বাসায় এই শাকসমূহ রান্না করে খাওয়ার দিন কয়েক পর তার স্ত্রী ডায়েরিয়া হয়ে মারা গেলেন। কিন্তু ঘটনা রটলো, ঐ বুড়ীর শাক খেয়েই আবুলের স্ত্রী মারা গেছেন। এরপর ঐ এলাকায় এই ধরণের উপসর্গ নিয়ে যারা যারা মারা যান তাদের জন্য আবুলকে দায়ী করা হয়। আবুল বেশ নিরীহ লোক। তিনি চুপচাপ সব সহ্য করে যান। অন্যদিকে, এসব ছোঁয়াচে রোগ ভেবে মানুষ আর তাকে কাজে নেন না। তাই আবুলের রোজগার বন্ধ হয়ে যায় এক সময়।

তারপর ঐ এলাকায় এক বছরে বহু মানুষের মৃত্যু ঘটে কিন্তু তার মধ্যে পুরুষদের মৃত্যু ঘটে বেশি। এসব দেখার পর এলাকার চেয়ারম্যান সাহেব বাধ্য হয়ে এক সভা ডাকলেন এবং এলাকার সবার মতামত চাইলেন।

মাঝখান থেকে এক কবিরাজ তসবিহ্ নিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। ওমন বেঢপ রঙের তসবিহ্ খুব কম দেখা যায়। যাইহোক তার মতে, “এটা স্বাভাবিক ঘটনা নয়। এটা মহামারী এবং কোনো এক অতৃপ্ত নারীর আত্মার অভিশাপ; এজন্যই এত এত পুরুষ মারা যাচ্ছেন”।

এলাকার সবাই হা... করে কবিরাজের কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছেন। এবার চেয়ারম্যান সাহেব এই যুক্তির প্রেক্ষিতে মতামত চাইলেন জনসাধারণের কাছে। সর্বশেষে আবুল এবং বুড়ীর ঘটনা বেশ কয়েকবার আলোকপাত করার পর তারা ঐ বুড়ীকে নয় বরং বুড়ীর শাকের মধ্যে জীবিত থাকা একজন খারাপ নারী আত্মার কথায় সহমত প্রকাশ করলেন। কিন্তু, সমাধান তো তবুও মিলছে না। তাই চেয়ারম্যান সাহেব কবিরাজকে ডেকে বললেন, “সবই বুঝলাম, কবিরাজ। কিন্তু এর সমাধান কী? চারদিকে কত মানুষের লাশ পড়ছে”। কবিরাজ সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন, “চেয়ারম্যান সাহেব, এই সমস্যার সমাধানও আছে আমার কাছে”। চেয়ারম্যান সাহেব এবার বেশ সোৎসাহে বলে উঠলেন, “বলো ভাই কবিরাজ! আমরা এই অভিশাপ থেকে মুক্তি চাই। আর আপনি আজ আমার চেয়ারে বসুন তারপর আপনি যা বলবেন তাই আজ আমরা সবাই মেনে নেবো”।

কবিরাজ বললেন, “আমি অনেক দূর থেকে কিছু উন্নত জাতের দূর্বা ঘাস তুলে এনেছি। যদি কেউ এসবের একটা খায় তাহলে তার উপর এই আত্মা আর ভর করতে পারবে না। কিন্তু বিনা-পয়সায় আমি এটা দিতে পারবো না। এসব আমার আবিষ্কার, এখানে আমার শ্রম আছে। যা তা দূর্বা ঘাস নয় মহাশয়! এবং খেতেও হবে ঠিক ছাগলের মত করে। কোনরকম অবিশ্বাস করলে এটি কাজ করবে না”।

উপায়বুদ্ধি না পেয়ে চেয়ারম্যান সাহেব কবিরাজকে টাকা-পয়সার ব্যাপারে আশ্বস্ত করলেন। একটু লুকিয়ে চেয়ারম্যান সাহেব কবিরাজের পকেটে কচকচে পাঁচশ টাকার নোট গুঁজে দিয়ে বললেন, “প্রথম দূর্বা ঘাস আমার। তারপর বাকি দূর্বা ঘাস আমার পরিবারের। তারপর আমার আত্মীয়-স্বজনের এবং বন্ধুদের। অতঃপর যদি এই উন্নত মানের দূর্বা ঘাস আরও পাওয়া যায় তবে তা বিনামূল্যে অন্যদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া হবে”।

এরপর ছাগলের মতন সবাই দূর্বা ঘাস খেতে আরম্ভ করলো। কিন্তু কেল্টু মিয়া এবং সল্টেক শাহ্ এর মধ্যে বেশ বিরোধ দেখা দিলো। কেল্টু মিয়ার আবদার দূর্বা ঘাস খাওয়া যাবে না, সে তো আর ছাগল নয়। অন্যদিকে সল্টেক বলছেন, এটা যদি আমাদের ভালোর জন্য হয় তবে সমস্যা কোথায়? এদিকে, চেয়ারম্যান সাহেব নিজের কিছু করার দায়িত্ব আছে ভেবে এলাকায় প্রতিদিন সন্ধ্যা ছ’টার পর সবাইকে নিজ নিজ বাড়িতে থাকার আদেশ দিলেন। শুধু তাই নয়, সবার হাতে একটি ভ্রাম্যমাণ টয়লেট থাকা বাধ্যতামূলক করে দিলেন। এলাকার চারদিকে ব্যানার এবং ফেস্টুনে ভরে গেলো। সেখানে লেখা আছে, “হাগু করার পর দুই ঘন্টা ধরে সাবান দিয়ে হাত ধৌত করবো”। যারা করছেন না তাদেরকে বেধরক কিছুদিন মার খেতে হলো। কারো কারো তো আবার ভ্রাম্যমাণ টয়লেট নেই তাই গুণতে হচ্ছে জরিমানা।

উন্নত মানের এই ঘাস আমদানি দিতে সূদুর এলাকায় বহু কর্মী নিয়োগ পেলো, সাথে আবুলও। তারা সবাই ভ্যানে করে দূর্বা ঘাস নিয়ে আনতো। আর অন্যদিকে ঐ এলাকা সহ পাশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ এসে দূর্বা ঘাস কিনতে আরম্ভ করলো। কেউ কেউ তো এডভ্যান্স টাকা দিয়ে রাখলো। এদিকে কবিরাজকে ধনী হতে দেখে চেয়ারম্যান সাহেব ঈর্ষাবোধে ভ্যাট বসালো দূর্বা ঘাসের উপর। প্রতি একশ টাকায় এখন দু'টাকা ভ্যাট দিতে হবে যদি অন্য এলাকার কেউ এসে এই দূর্বা ঘাস কিনে নেয়। অবশ্য তাতেও কারো কিচ্ছু আসলো বা গেলো না। সবাই হুরহুর করে সমস্ত দূর্বা ঘাস কিনে স্টক আউট করে দিলো।

ছাগলের মতন করে এখন পুরো দেশে সবাই দূর্বা ঘাস খায় নিয়ম করে; তিনবেলা। এতে করে অনেক পুরুষ বেঁচে যায় বলে বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপানো হয়। এবং যেহেতু কবিরাজের মতে, এটা একটি মহামারী তাই প্রতিদিন পত্রিকায় কত জন মানুষ মৃত্যুবরণ করছে সেটাও জানানো হচ্ছিলো। এক সময় এই ভয়ের পরিমাণ এত বেশি বেড়ে যায় যে, “দূর্বা ঘাস না খেয়ে কোনো শ্রমিক তার কোম্পানীতে কাজ করতে পারবেন না। মেয়েবন্ধু তো দুর স্ত্রীর কাছেও যেতে পারবেন না, সকল ধরণের পাঠদান বন্ধ করে দেওয়া হলো”। আসলে রোগটা বড্ড ছোঁয়াচে কিনা তাই।

মানুষের দূর্বা ঘাস হজম হত না; না পেত স্বাদ। তাই অন্য তরকারি বেশ ভালো লাগতো। একসময়, এই দূর্বা ঘাসেও কোনো ফল না পাওয়ায় সবাই ভিন্ন জাতের দূর্বা ঘাস হন্ন্যি হয়ে খুঁজতে লাগলো। সবার মুখে এখন এই দূর্বা ঘাসের চর্চা এবং প্রতিদিন ক'টা প্রাণ গেলো তার হিসেব-নিকেশ। কিন্তু মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুও যে হতে পারে তা যেন সবাই ভুলে গেলো। সবাই ভুলে গেলো এই রোগ ছাড়াও বাকি রোগ এখনো আছে; সেসব রোগ নিশ্চয় ছুটি কাটাতে যায়নি। অথচ বিভিন্ন এলাকায় এই রোগ ছড়িয়ে পড়ায় সেসব নির্দিষ্ট জায়গায় পা-বন্দী করা শুরু হলো। এখন কেউ তার নিজ এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যেতে পারবেন না। গত কিছুদিন হলো, সল্টেক ঘাস খেয়েও এবং কেল্টু ঘাস না খেয়েও বিছানায় পড়ে রয়েছেন। আবুলের মত নিরীহ শ্রমিক মানুষদের জীবন আর জীবিকা পড়লো সংকটে। ওদের সময় কাটতে লাগলো না খেয়ে, সার্ভাইভ করাটাই ওদের জন্য এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।

শুরুর দিকে একে অপরকে দোষারোপ করলেও এখন অবশ্য সবাই ভাই ভাই। সবার এখন দূর্বা ঘাস চাই-ই চাই। ছাগলের মতন করে খেতে হবে নিয়মকরে; তিনবেলা। ঐ বুড়ী কে অথবা এই সমস্যার সমাধান আর খুঁজে পাওয়া গেলো না। সবার হাতে এখন একটি করে ভ্রাম্যমাণ টয়লেট।

অবশ্য চেয়ারম্যান সাহেব বেশ বুদ্ধিমান মানুষ। লোকমুখে শোনা যায়, “তিনি এক শ্বেতাঙ্গকে ফোন করেছিলেন। এই সমস্যা সমাধানের জন্য সূদুর ব্রিটেন থেকে কেউ না কি আসবেন। তাছাড়াও ফোনে ফিসফিস করে বলছিলেন 1984… ”।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৯:১২

চাঁদগাজী বলেছেন:




আপনাকে কিন্ডারগার্টেন থেকে ১ম শ্রেণীতে প্রমোশান দেয়ার সময় হয়ে গেছে।

১৪ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৯:৫৬

মি. বিকেল বলেছেন: হা হা হা.. যাক আপনার সাথে ঝগড়ার পরিমাণ কিছুটা কমবে এখন।

ধন্যবাদ

২| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১০:৪১

বিদ্রোহী সিপাহী বলেছেন: সার্ভাইভ করাটাই ওদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। সমাজের কঠিন বাস্তবতা।

১৪ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১১:০০

মি. বিকেল বলেছেন: ওরা তো আর এত বেশি বোঝে না। যদি একটু বুঝতো তাহলে ক্ষমতাধর মানুষদের খুন করা আরম্ভ করে দিত।

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

৩| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:০২

রাজীব নুর বলেছেন: গরুর রচনা।

১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১:০১

মি. বিকেল বলেছেন: অন্তত পড়েছেন দেখে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।

৪| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:১০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
যা কইছেন হিসাব্ করে কইছেন তো?
পরে কইতে পারবেন না যে এটা আপনি
বলেন নাই। ওরা কিন্তু রওনা দিছে হিসাব্
নেবার জন্য কত ঘাষ বিক্রি হইছে আর কত
ভ্যাট তুলছে। সাথে টিভি ক্যামেরাও আছে !!

রাজীব নুর বলেছেন: গরুর রচনা।

তার মগজতো তার গুরু পুরাই ধোলাই কইরা দিছে !

১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১:০০

মি. বিকেল বলেছেন: হা হা হা... দেখুন, কাজে কর্মে তো আর জোনাথন সুইফট্ হতে পারছি না। কিন্তু আমরা স্যাটায়্যার লেখাকে রম্য ভেবে অযোগ্য বা অমূলক হিসেবে চিহ্নিত করতে পারি না। এখানে বাস্তবতার অনেক উপরে গিয়ে কিছু একটা আঁকার চেষ্টা। ব্যর্থতা দু'দিক থেকেই হতে পারে। চেষ্টাটা সত্য।


ধন্যবাদ

৫| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:৪৫

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: সুদূর ব্রিটেন থেকে জিনিস কি আসবে?

যাই হোক, রূপকের মাধ্যমে যা বললেন, সবাই সেটা ধরতে পারবেন না।

১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১:০৩

মি. বিকেল বলেছেন: সুদূর ব্রিটেন - এটার ব্যাখ্যা দিলে আমি ঝামেলায় পড়ে যাবো। পড়ের লাইনে সেটাই আপনি স্পষ্ট করেছেন।

ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.