নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ট্রমা বা মানসিক আঘাত আমাদের জীবনে কোন না কোন মূহুর্তে এসে থাকে। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ মানসিকভাবে শক্ত থাকেন তাই কাটিয়ে উঠতে পারেন, আর কেউ কেউ মানসিকভাবে শক্ত না থাকায় ট্রমা কাটিয়ে উঠতে পারেন না। চলুন, এই ট্রমা নিয়ে বিস্তারিত জেনে নিন এবং কীভাবে ট্রমা কাটিয়ে উঠবেন সে বিষয়েও একটু আলোকপাত করা যাক।
ট্রমা বা মানসিক আঘাত আসলে কী?
ট্রমা হচ্ছে আমাদের এক ধরণের ইমোশনাল রেসপন্স কোন বিশেষ ইভেন্ট বা ঘটনা কে কেন্দ্র করে। হতে পারে উক্ত ঘটনার সাথে বা উক্ত পরিবেশের সাথে আমাদের খারাপ মূহুর্ত কেটেছে বা মনে ভীতি জন্মেছে। অ্যামেরিকান সাইকোলজিক্যাল এসোসিয়েশন ট্রমা কে সংজ্ঞায়িত করেছে এভাবে, “… কোন বিশেষ ঘটনার উপর আমাদের ইমোশনাল রেসপন্স হচ্ছে ট্রমা”।
ট্রমা বিভিন্ন কারণে হতে পারে
যুদ্ধ, ধর্ষণ, প্রাকৃতিক দূর্যোগ, অ্যাক্সিডেন্ট ইত্যাদি কারণে একজন মানুষ ট্রমার শিকার হতে পারেন। তবে সাধারণ কারণেও কেউ কেউ ট্রমার শিকার হতে পারেন। যেমন ধরুন, গালিগালাজ, হ্যারাজমেন্ট, কর্মক্ষেত্রে ব্যর্থতা, কোন বিশেষ গ্রুপ থেকে বিচ্ছিন্নতা ইত্যাদি।
ট্রমার প্রকারভেদ
১. Acute Trauma
এই ধরণের ট্রমা সাধারণ কারণে হয় না। একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, প্রাকৃতিক দূর্যোগের ফলে বন্যায় বা নদী ভাঙনে আপনার ঘর ভেসে গেছে। নিজেকে তখন একা মনে হবে, নিরুপায় মনে হবে। পরবর্তীতে কোথায় থাকবেন বা যাবেন সে ব্যাপারে একটা ভয়ানক অনিশ্চয়তা। টাকার বিষয় তো আছেই।
২. Chronic Trauma
যখন কোন বাজে ঘটনা যা আপনার ইমোশনাল রেসপন্স নিতে পারছে না এবং যদি এই ধরণের ঘটনা নিয়মিত আপনার সাথে ঘটতে থাকে তবে এই ট্রমা হতে পারে। এখানেও আমি একটি উদাহরণ টানছি, ধরুণ একটি পরিবারে বাবা-মা সারাক্ষণ ঝগড়া করেন। তাহলে ঐ পরিবারে থাকা একটি বাচ্চা বেড়ে উঠে কীভাবে স্বাভাবিক আচরণ করবে?
আমরা তো এসব ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের জন্য আত্মহত্যাও করতে দেখি। কিন্তু কেন? মূলত এই Chronic Trauma-ই হলো তার প্রধান কারণ। ঠিক তেমন করে, একজন মেয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ সেক্সুয়্যাল হ্যারাজমেন্টের শিকার হচ্ছে তার পরিচিত এমন কারো কাছে থেকে যা বাইরে বলতেও পারছে না। তো, এখান থেকেও এই ধরণের ট্রমা হতে পারে।
৩. Complex Trauma
মানুষের জীবনে নিদেনপক্ষে দুটি দিক থাকে। একটা হলো তার বাইরের দুনিয়া আর আরেকটি হলো তার ভেতরের দুনিয়া। এখন এই বাইরের দুনিয়া বলতে বোঝায়, কর্মজীবন/শিক্ষাজীবন/বন্ধুত্ব ইত্যাদি। আর ভেতরের দুনিয়া হচ্ছে তার পরিবার। এখন আরো একটি দিক যদি যুক্ত করা যায়, মানে প্রেমের সম্পর্ক বা দাম্পত্য জীবন।
এখন ধরুন এই সমস্ত বিষয় ঝামেলার মধ্যে পড়ে আছে। না কর্মজীবনে ঠিকঠাক কাজ করতে পারছে, না পরিবার কোনভাবে তাকে সাপোর্ট করছে। অন্যদিকে বেলা বোসের বিয়ে হতে চললো বা বৌ সারাক্ষণ অশান্তিতে রেখেছে। একবার ভাবুন তো, এই মানুষের জীবনটা কেমন হবে? এবং সমস্ত বিষয়ে খারাপ পরিস্থিতি যদি দীর্ঘ হয় তাহলে? হ্যাঁ, ইনি কমপ্লেক্স ট্রমায় পড়ে যেতে পারেন। এই হলো ট্রমার প্রধান প্রকারভেদ সমূহ। এছাড়াও এক প্রকারের ট্রমা আছে,
৪. Secondary Trauma
হয়তো আপনি একজন কে খুব কেয়ার করেন বা ভালোবাসেন। কিন্তু উক্ত ব্যক্তি কোন বিশেষ ট্রমার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। তাহলে আপনার মধ্যেও সেই ধরণের ট্রমার লক্ষণ দেখা দিতে পারে। কারণ উক্ত ব্যক্তির ট্রমাটিক এক্সপেরিয়েন্স আপনার উপর প্রতিফলিত হতে পারে। এই ধরণের ট্রমা বিশেষ করে বাবা-মা এবং স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বেশি দেখা যায়।
এখন আসা যাক, PTST(POST TRAUMATIC STRESS DISORDER) সম্পর্কেঃ
এমন লোক সাধারণত সেই ঘটনা বা সেই স্থানে যেতে চাইবেন না। আপনার এতে করে ফ্লাশব্যাক আসতে পারে মানে অতীত চোখের সামনে বারবার আসতে পারে, দুঃস্বপ্ন দেখতে পারেন, কোন বিষয়ে মনোযোগ নাও আসতে পারে, অন্যদের থেকে দূরে থাকতে পারেন, সবসময় বেশি সতর্ক থাকা চারপাশের পরিবেশ নিয়ে। মনে হতে পারে, এই বুঝি আমার সাথে কিছু একটা হয়ে যাবে!
আর আমরা খুব সহজেই এসব মানুষ কে অসামাজিক বা মানসিকভাবে দূর্বল বা ভীতু বলেই কাজ সেরে ফেলি। কিন্তু তার ভেতরে থাকা সমস্যা নিয়ে কখনো আমরা ভাবিনা।
কীভাবে ট্রমা বা মানসিক আঘাত থেকে বের হয়ে আসবেন?
দেখুন, ট্রমায় যাবার পর সবসময় সেখান থেকে বের নাও হতে পারেন। কেউ কেউ বের হয়ে আসেন খুব সহজে। কিছু ট্রমাটিক মূহুর্ত এমন হয় যে, চারপাশে চারটা উঁচু দেয়াল দেখতে পাওয়া যায়। উপরে যাবার কোন রাস্তা থাকে না। এই ধরণের ট্রমাটিক মূহুর্ত থেকে সহজে বের হওয়া যায় না।
উল্লেখ্য, যেসব সাধারণ ট্রমা আছে সেসব নিয়ে আমি আলোকপাত তেমন একটা করতে চাই না। ধরুণ, কেউ সাঁতার জানে না। তাহলে তাকে অল্প একটু জলে নামান। প্রতিদিন এই আর এই করুন। আর একদিন তাকে তার সাথে সাঁতার কাটুন। এসব সহজ। কিন্তু যেসব ট্রমা থেকে বের হতে অনেক সময় ও ইতিবাচক মানসিকতা দরকার সেসব বিষয়ে কিছু কথা বলতে চাই।
১. মানসিক ও সামাজিক সাপোর্ট দরকার
ধরুণ, ধর্ষণের শিকার একটা মেয়ে যাকে না তার পরিবার সাপোর্ট করছে বা তার সমাজ। তার মনে হতে পারে, সে আস্তে আস্তে ঐ পরিবার ও ঐ সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং উক্ত ব্যক্তির জন্য পারিবারিক ও সামাজিক সাপোর্ট দরকার। সবার বাউন্স-ব্যাক ক্যাপাবিলিটি এক নয়।
২. প্রতিকার নয় প্রতিরোধ করুন
ডাক্তার যারা আছেন তারা প্রায় প্রায় এই কথা বলে থাকেন। সুতরাং মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখা জরুরী। তাই কাউকে আঘাত করার আগে, গালিগালাজ করার আগে, তার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার আগে, ছোট বা হেয় করার আগে, ইনফেরিওর বা বিচ্ছিন্ন করে দেবার আগে একবার চিন্তা করা উচিত আমাদের। এই ছোট ছোট বিষয় যখন দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যাবে তখন তার জন্য বাড়তি হয়ে যাবে আর ট্রমার শিকার হতে পারে।
৩. ইতিবাচক মানসিকতা রাখুন
দেখুন, আপনার কোন কাজ যেভাবে আপনি পরিকল্পনা করেছেন সেভাবে সেটা ঘটেনি। তারমানে এই নয় যে, আপনার গল্প এখানেই শেষ। আরো একবার চেষ্টা করে দেখতে পারেন, হতে পারে আপনি এইবার সফল হবেন।
৪. সমস্যা কোথায় হচ্ছে বের করুন
সময় সময় তো আমাদের মন খারাপ থাকে। বিষন্নতা বা হতাশা আসতে পারে। কিন্তু এটা হচ্ছে কেন? এর শেকড় কোথায়? যদি আপনি এই সমস্যা ধরতে পারেন তবে তার সমাধানও বের করতে পারবেন। ধরুন, আপনার একটি চাকুরী লাগবে? কেন লাগবে? টাকার জন্য। তাহলে সঠিক উপায়ে সেই টাকা উপার্জন করুন বা সেই রাস্তা বের করুন। দেখবেন সমস্যা থেকে অনেকখানি বের হয়ে গেছেন।
৫. এডজাস্ট ও কম্প্রোমাইজ করার অভ্যাস বাদ দিন
দেখুন, যা আপনার দরকার তা দরকার। আমরা না জানি প্রতিনিয়ত কতগুলো বিষয়ের সাথে এডজাস্ট করে যাচ্ছি। কিন্তু আমরা ভুলে যাচ্ছি, এই এডজাস্টমেন্ট ও কপ্রোমাইজেশনের ফলে আমরা আরো একটি ভয়ানক সমস্যা ট্রমার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। কারণ কিছু স্তর পর্যন্ত এই এডজাস্টমেন্ট ঠিক হলেও একটা সময় নিজের জন্য স্ট্যান্ড করুন।
৬. বাস্তবতা মেনে নিন, এডপ্ট করুন
অনেক সময় এমন হয় যে, আমাদের চারপাশের পরিবেশের মধ্যে “নো কম্প্রোমাইজ” সেকশন-ই নেই বা থাকে না। না আপনি এই পরিস্থিতি থেকে মুভ অন করতে পারছেন, না আপনি সেখানে থাকতে পারছেন। তাই এডপ্ট করুন কিন্তু মনে রাখবেন সেটা যেন পুরো জীবনের জন্য না হয়ে যায়। তাহলে ফাঁদে পড়ে যাবেন।
৭. চেষ্টা করা বন্ধ করুন এবং নিজেকে সময় দিন
ট্রমা থেকে বের হবার জন্য অনেক চেষ্টা তো করলেন। কিছু ভিডিও দেখলেন ইউটিউবে, কিছু বই পড়লেন এমনকি আমার এই পোস্টও। কিন্তু কিছুই কাজে আসছে না। তাহলে এটা সিরিয়াস ট্র্যাপ। তাই নিজেকে সময় দিন।
পরিশেষ
পৃথিবীতে এমন সমস্যা খুব কম আছে যার কোন সমাধান নেই। আপনি নিজেকে হয়তো অভাগা বা দূর্ভাগা যাই ভাবুন না কেন তার সমাধানও আছে। দিন দিন আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। কিন্তু সেটা তো সমস্যার সমাধান নয়। সুতরাং ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখুন। আপনি পারবেন বা আপনার কাজটি একদিন সফল হবেই। পরিশ্রমের ফল কখনো বৃথা যায় না। ধন্যবাদ।
- মেহেদি হাসান(Mehedi Hasan)
২০ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১:১২
মি. বিকেল বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ মন্তব্য করবার জন্য।
২| ১৯ শে অক্টোবর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২২
ফুয়াদের বাপ বলেছেন: অসাধারন একটি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত লিখা শেয়ার করেছেন। শরীরের রোগ হলে হাসপাতাল-ডাক্তার কাছে গেলে চিকিৎসা নিয়ে শরীর ভালো হতে পারে। কিন্তু মনের অসুখ ভালো করতে মেডিসিন এর চাইতে মানসিক সাপোর্ট বেশি প্রয়োজন। সঠিক দিকনের্দশনা আর সাপোর্ট না পেলে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পরা মানুষ অনেকক্ষেত্রে আত্বহননের পথ বেছে নেন।
২০ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১:১৩
মি. বিকেল বলেছেন: মানসিক ও শারীরিক অবস্থা কো-রিলেটেড। আপনার সাথে সহমত
ধন্যবাদ
৩| ১৯ শে অক্টোবর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৫৩
জুল ভার্ন বলেছেন: গুড পোস্ট।
২০ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১:১৪
মি. বিকেল বলেছেন: প্রাপ্তির খাতায় থেকে গেল
আপনাকে ধন্যবাদ ও ভালোবাসা।
৪| ১৯ শে অক্টোবর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৫৬
*আলবার্ট আইনস্টাইন* বলেছেন: কাউন্সেলিং সাইকোলজি
২০ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১:১৫
মি. বিকেল বলেছেন: আমার দিক থেকে চেষ্টা করেছি
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
৫| ২৪ শে অক্টোবর, ২০২১ ভোর ৪:০২
সোহানী বলেছেন: অনেকদিন থেকেই এ বিষয় নিয়ে লিখবো ভাবছিলাম। আপনার লিখাটা আমার চিন্তাধারাকে সমৃদ্ধ করেছে ও লিখার দায় থেকেও মুক্ত করেছে। এ নিয়ে যত বেশী আলোচনা হবে ততবেশী সচেতনতা সৃষ্টি হবে।
প্রিয়তে নিলাম ও ফলোতে রাখলাম আরো চমৎকার লিখা পড়ার জন্য।
২৫ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ৩:৩২
মি. বিকেল বলেছেন: শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানবেন।
আমি চেষ্টা করবো আরো ভালো ও গঠনমূলক লেখা উপহার দেবার।
©somewhere in net ltd.
১| ১৯ শে অক্টোবর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:১৯
উদারত১২৪ বলেছেন: ওনেক কিছু সিখার আছে