নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নামে মি. বিকেল। একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ডেভেলপার, ওয়েব ডিজাইনার, সম্পাদক, উপস্থাপক এবং নাট্য পরিচালক সহ - এই বহুমুখী পেশার সাথে জড়িত থাকলেও, আমার মূল পরিচয় একজন গল্পকার।

মি. বিকেল

আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নামে মি. বিকেল। একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ডেভেলপার, ওয়েব ডিজাইনার, সম্পাদক, উপস্থাপক এবং নাট্য পরিচালক সহ - এই বহুমুখী পেশার সাথে জড়িত থাকলেও, আমার মূল পরিচয় একজন গল্পকার।

মি. বিকেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

কন্ঠ

১৮ ই জুন, ২০২২ ভোর ৪:৩০




কয়েকবার ধরে চরিত্রের নাম নির্ধারণ করলাম। প্লট যাচাই করলাম। ভাবছিলাম, এই গল্পে নতুন কিছু আনতে। নতুন কিছু আবিষ্কার করতে। আমার অন্য কোনো গল্পের মত করে নয়। একটু ভিন্ন; একটু আলাদা।

প্রায় তিন ঘন্টার চিন্তা-ভাবনায় তেমন কিছুই মনের র‍্যাডারে ধরা পড়ছে না। দীর্ঘদিন ধরে জীবিত রাখা আমার মধ্যে লেখক স্বত্ত্বা এমন সরু রাস্তায় চলে আসবে যে, কোনো প্লট-ই আর আকর্ষণীয় মনে হবে না ঠিক টেনে যাবার মত। খুব সম্ভবত এমনটি কখনো ভাবিনি।

“ধ্যাত” বলে একপাশে ল্যাপটপ ফেলে ইয়ারফোন কানে শুনছিলাম, ফসিল্-স এর গান “আরো একবার…” ।

হঠাৎ করেই কানে এক মিষ্টি কন্ঠ বাজতে লাগলো। এক মেয়ে কি সব জানি অহেতুক বকবক করছে। হ্যাঁ, এফ.এম রেডিওতে। ঢাকা এফ.এম ৯০.৪ এ।

কিছু কথা আমরা প্রায় প্রায় বিভিন্ন মানুষদের কাছে শুনে থাকি। এই যেমন ধরুন, সকালবেলায় “শুভ সকাল”, সন্ধ্যাবেলায় “শুভ সন্ধ্যা” আর রাতের বেলায় “শুভ রাত্রি” । কিন্তু কখনো ভেবে দেখিনি এই একই কথা কারো কন্ঠে এত মধুরও লাগতে পারে!

জীবন নিয়ে অনুপ্রেরণার কথা বলছিলো মেয়েটা। কেন একজন মানুষের সামনে এগিয়ে যাওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ! চাই তকদির যাই হোক কিন্তু লেগে থাকাটা জরুরী। আরো গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, মেয়েটা খুব জোর দিয়ে বলছিলো, “আপনি এমন কোনো মানুষকে দেখেছেন যিনি তার শতভাগ দিয়েও সফল হতে পারেন নি!”

এরপরেই কমার্শিয়াল বিরতি না নিয়ে পরের গানে চলে গেল…

ব্যাপারটা বেশ অদ্ভুত লাগলো। কিন্তু অপেক্ষায় থাকলাম তার ফিরে আসবার। দুঃখিত! তার কন্ঠ ফিরে আসার। না, আর সে ফিরে এলো না। একের পর এক গান চলছে- বাংলা, হিন্দি আর পাশাপাশি ইংরেজি। তারপর নতুন আরেকজনের আবির্ভাব। কিন্তু অত সুন্দর করে আর কেউ “শুভ সকাল” বলতে পারলোনা। খানিকসময় বিরুক্তি লাগলো তারপর আবার ল্যাপটপ হাতে।

আগামী এক বছরের টাকা আগেই নিয়েছি প্রকাশকের কাছ থেকে। আমার প্রকাশকের ধারণা আদিত্য’র লেখা মানেই “বেস্ট-সেলার” । কিন্তু কি করে হবে? গত ক’টা দিন তো রুমের চার দেয়াল ছাড়া আর কিছুই দেখলাম না। নিজের প্রতি এমন নিষ্ঠুর হওয়া উচিত কি! বোধহয় নয়।

অন্তত রাইটার’স ব্লক থেকে বের হবার জন্য হলেও একবার চার দেয়ালের বাইরে যাওয়া উচিত। নিজের চিন্তা ও চেতনা কে পাখীর মত উড়তে দেওয়া উচিত। কিন্তু কীভাবে? ঢাকা শহরের এই বায়ু দূষণে কোন পাখি কে এমনি ছেড়ে দিলেও দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে।

নূপুরের ফোনকল, “আদিত্য! তুই সন্ধ্যায় আসছিস তো? না কি? দেখ, এবারও আমার জন্মদিন মিস করিস না। আর যদি তাই করিস তাহলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না।”


আমি, “কেন? তুই বললেই আমাকে যেতে হবে কেন?”

নূপুর, “কারণ সবাই জানে আমরা শুধু কাজিন নই, এর বেশি কিছু। ঠিকাছে!”

আমি, “যা নয় তা জোর করে প্রতিষ্ঠিত করার যে আপ্রাণ চেষ্টা করছিস এটা ছেড়ে দে, বুঝলি?”

নূপুর, “কি নয়? আমাদের বিয়ের ব্যাপারটা তুই ভুলে গেছিস? আর ক’টা দিন আছে হাতে?”

আমি, “সেটা খালা-খালু দেখবেন। আমার চিন্তার বিষয় নয়।”

নূপুর, “আমি সেসব জানিনা। তুই আসছিস, আর এটাই ফাইনাল।”


নূপুর অনেক জেদি একটা মেয়ে। কাজের চেয়ে কথা বেশি। সদ্য দায়িত্ব পাওয়া সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার। তাই একটু-আধটু দেমাগ থাকা সহী বৈকি। খুব সম্ভবত এজন্যই আমি ওর এত কথা শুনতে বাধ্য হই।

আর দেখাশোনায় মাশাআল্লাহ দারুণ। কিন্তু কিছু একটা নেই ওর মধ্যে। কিছু একটা আমি চারপাশে খুঁজে চলেছি। এই এক জীবনে আমার অর্ধাঙ্গীনি হিসেবে।

যাইহোক, রাত ৯টায় অনুষ্ঠান শুরু হলো। বাসার চারদিকে লাইটিং সিস্টেম এত চমৎকার যে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। খালা আমায় দেখে অত্যন্ত আনন্দিত হলেন। সালাম জানাতেই, বুকে টেনে নিলেন। খালার এই ভালোবাসা একটু বেশি-ই মায়ের কথা মনে করিয়ে দেয়।


খালা, “মুখ শুকনো কেন? কিছু খেয়েছিস তো?”

আমি, “আচ্ছা খালা, মায়েরা শুধু কি খাবারের ব্যাপারে-ই বেশি চিন্তিত থাকেন?”

খালা একটু মুচকি হেসে, “তোরা বড় হয়েছিস। নিজেদের সিদ্ধান্তও নিজেরা নিতে শিখেছিস। তাহলে আমাদের হাতে কি বাকি রইলো?”

আমি, “কেন তোমার পুরনো গল্পগুলো? আমায় ছোটবেলায় শোনাতে!”

খালা, “ওহ্, একজন বিখ্যাত গল্পকার আমার গল্পগুলো আজও মনে রেখেছে!”

আমি, “হ্যাঁ, খালা। ঐ চাঁদ মামা কে বড় হয়ে খুঁজে পাচ্ছি না।”

খালা একটু মুচকি হেসে, “কিন্তু বাবা, ছাদে যে চাঁদ গত আধাঘন্টা ধরে অপেক্ষায় আছে তাকে খুঁজে না পেলে বড্ড বিপদে পড়ে যাবে।”

ছাদে যেতেই দেখলাম বিশাল আয়োজন। এত মানুষের নিমন্ত্রণ করার কি আছে তা বুঝে আসলো না। আমাকে দেখে নূপুর একরকম দৌড়ে আসলো আমার কাছে। আর তারপর কানে ফিসফিস করে বললো, “আমি জানতাম তুই আসবি। কেকটা এখনো কাটা হয়নি। চল দু’জনে মিলে সব ভুলে কেকটা কাটি?”

না, করতে পারলাম না। কেকটা কেটে প্রথম অংশ নূপুরকে খাইয়ে দিলাম। আর কেকের কিছু অংশ নূপুর কেটে আমাকে খাইয়ে দিলো। ঠিক এই মূহুর্তে, একটা অপরিচিত হাত কেক নিয়ে আমার সামনে আসলো। হাতে স্পষ্ট আমার নাম মেহেদি দিয়ে লেখা, “আদিত্য” । মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আমি ‘থ’ হয়ে গেলাম।


অপরিচিতা, “হ্যালো, আদিত্য!”

নূপুর, “আদিত্য, ও আমার কলিগ শ্রাবণী।”


কেক খেতে খেতে অতীতের একটা ফ্ল্যাশব্যাক খেলে গেল মাথার ভেতর দিয়ে। মনে পড়ছিলো, একেকটা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্মৃতি। কি নিষ্পাপ সেসব! কি সুন্দর সেসব! অথচ, আজ আমি কোথাই!


আমি, “ওহ্, আপনি নিশ্চয় শ্রাবণী বিশ্বাস?”

নূপুর, “আদিত্য, তুই কি শ্রাবণী কে আগে থেকেই চিনিস!”

আমি, “না, মানে… উনি তো ঢাকা এফ.এম ৯০.৪ -এ কাজ করেন, তাই না?”

শ্রাবনী, “হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন, পার্ট-টাইম।”


বাড়ি ফেরার পথে আর উবার ডাকলাম না। হেঁটে যাচ্ছিলাম আর ভাবছিলাম, প্রত্যেক গল্পকারেরা কি আমার মত এমন নিষ্ঠুর হয়! নাকি নিষ্ঠুর না হয়ে গল্পকার হওয়া যায় না? শ্রাবণী আমার একসময় সব ছিলো। কিন্তু ও কে মাত্র একটা চরিত্র ছাড়া আমি কিছু ভাবিনি, ভাবতে পারিনি। আজ যখন সত্যটা সামনে এসে দাঁড়ায় তখন কেন এমন অদ্ভূত অনুভূতি হচ্ছে?

আমরা এই যে, প্রত্যেক গল্পে নতুন নতুন চরিত্র তৈরি করি আবার তাদেরকে শেষও করে দেই। কখনো ওদের অনুমতি নেই না। নেবার প্রয়োজনও বোধ করি না। আর আমাদের মত গল্পকারের বই হয়ে যায়, “বেস্ট সেলার” । কিন্তু পাঠকের কাছে প্রত্যেক গল্পের পেছনের গল্প অজানা থেকে যায়।

ঢাকার পান্থপথ দিয়ে হেঁটে যাওয়ায় কিছু নিয়ন আলোয় একটু দূরে একটা মেয়ে কে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। কারের পাশে এলোমেলো চুল ছেড়ে দেওয়া। অসম্ভব সুন্দর। খুব সম্ভবত শ্রাবণী। কিন্তু কেন? পুরনো কোন হিসেব বাকি আছে?


একটু কাছে যেতেই শ্রাবণী, “হেঁটে যাচ্ছেন, রাস্তা তো অনেক দূর!”

আমি, “সেটা আমার উপর ছেড়ে দিন। আপনি এখানে?”

শ্রাবণী, “কিছু প্রশ্ন ছিলো… একটু সময় হবে?”

আমি, “বলুন?”


শ্রাবণী একটি বই হাতে, “নান্দনিক নন্দিতা (১ম খন্ড) – বইটি আপনার লেখা। অদ্ভুত নাম। কিন্তু এখানে প্রধান চরিত্রের সাথে আমার খুব মিল আছে। তো, ২য় খন্ড কবে পাবো?”

আমি, “বাজারে এখনো এসব চলে… তবে ২য় খন্ড নিয়ে এখনো ভাবিনি।”

শ্রাবণী, “এখনো ভাবেননি! নাকি এই চরিত্রের মৃত্যু ঘটেছে?”

আমি, “না, এখন আরো বেশি জ্বলন্ত এবং উজ্জ্বল। বাই দ্য ওয়ে, আমার যেতে হবে।”


এরপর একা একা রাস্তা ধরলাম। ভাবলাম কিছু কথা বলা যেতেও পারতো। আমাদের ছোট ছোট ভুলও কেমন করে যেন জীবনের মাঝরাস্তায় এসে খুব করে চোখে ধরা দেয়। সেদিনের আমার টিউশনি টা আর তোমার একটু অভিমান; দূর করে দিলো আমাদের।

ব্যস্ততা আস্তে আস্তে খেয়ে নিলো পুরো সম্পর্কটাকে। শ্রাবণী তোমার মত চরিত্র আছে বলেই এত কথা লেখা যায়। কারো স্বপ্ন পূরণ হয়। তোমাদের মত চরিত্রের হৃদয় বলি দিয়েই কোন না কোন বই হয়ে যায় “বেস্ট সেলার” । কোন না কোন সিনেমা হয়ে যায় “ব্লকবাস্টার হিট” ।

শিল্পীদের নির্দয় হতে হয় বোধহয়। স্বপ্নের জন্য কিছু বলি, কিছু ত্যাগ না থাকলে শিল্পী শুধুমাত্র নামে মাত্র…


আপনি চাইলে আমার ওয়েবসাইট থেকে একবার ঘুরে আসতে পারেন: https://www.backspace-journal.com

মন্তব্য ০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.