নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আপনি একদিন রাতে ঘুমুতে গেলেন। তারপর ঘুম থেকে উঠে দেখলেন আপনি একটি ভিন্ন পৃথিবীতে চলে এসেছেন। এখানে ২০-২৫ জন মানুষ একটি চারকোণা ঘরে আবদ্ধ এবং চিন্তিত। এই ঘরের উপরিভাগে একটি বড় স্ক্রিন সাঁটানো আছে। অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে, উক্ত স্ক্রিনে আপনাদের সবার ছবি এবং নাম প্রদর্শিত হচ্ছে।
সাধারণত ভার্চুয়াল গেমের মত করে হঠাৎ একটি নির্দেশনা ভেসে উঠলো উক্ত বড় স্ক্রিনে। আপনাদের সবাইকে মিলে ‘টিম’ হিসেবে একটি গেম খেলতে হবে। খেলাটা খুব সহজ তবে এটি কোনো ভার্চুয়াল গেম নয়, বাস্তবে খেলতে হবে। এখানে আপনারা আপনাদের ভুলের জন্য মৃত্যুবরণ করতে পারেন আর যদি সবাই একে অপরকে সত্য বলে সাহায্য করেন তাহলে পুনরায় প্রায় সবাই সত্যিকারের পৃথিবীতে ফেরত যেতে পারবেন।
এই গেম খেলার কিছু বৈশিষ্ট্য এবং কিছু নিয়ম-কানুন আছে,
১. সবার গলায় একটি চেইন মত অদ্ভুত একটি ইলেকট্রিক শেকল বাঁধা আছে। এই ইলেক্ট্রিক শেকলের পেছনে আছে ক্ষুদ্র একটি স্ক্রিন এবং সেখানে একটি নির্দিষ্ট চিহ্ন ভেসে আছে। প্রতি লেভেল আপ হবার সাথে সাথে এটি পরিবর্তিত হবে।
২. এই চিহ্ন আপনি নিজে থেকে দেখতে পাচ্ছেন না কারণ শেকলের পেছনে ঐ চিহ্ন ছোট স্ক্রিনে ভেসে আছে। একেবারে মাথার পেছনে। আপনাকে এই চিহ্ন সম্পর্কে জানতে অন্যের সাহায্য নিতে হবে।
৩. উক্ত ঘরের বড় স্ক্রিনে ভেসে উঠা নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী গেম খেলা শুরু হবে। তখন আপনাকে চিহ্ন জেনে এই কয়েদখানার কোন একটি নির্দিষ্ট কক্ষ বাছাই পূর্বক সেখানে গিয়ে আপনাকে জানাতে হবে যে, আপনি কি চিহ্ন পেয়েছেন? যদি ভুল হয় তাহলে তাৎক্ষণিক এই ইলেক্ট্রিক চেইন বিস্ফোরিত হয়ে আপনি মারা যাবেন।
৪. এই খেলাটা ততক্ষণ চলতে থাকবে যতক্ষণ না অবধি আপনাদের মধ্যে থাকা এই খেলার মাস্টারমাইন্ড মারা না যান।
৫. যতক্ষণ এই খেলার মাস্টারমাইন্ড বা ‘হৃদয়ের রাজা’ মারা না যাচ্ছেন ততক্ষণ অবধি এই খেলা চলতেই থাকবে। হতে পারে সেটা যুগের পর যুগ। তবে এখানে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় খাবার এবং থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।
আপনি এই খেলার এক কর্ণারে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছেন। খেলার বাকি সদস্যদের খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। বাকিরা ভাবছে, এ তো খুবই সহজ খেলা। সবাই মিলে একটি টিম তৈরি করছেন। ঠিক যেমন একটি টিমের মধ্যে আরো একাধিক টিম। সর্বশেষ অন্তত প্রতি দুজনে মিলে একটি টিম এবং সর্বোচ্চ কয়েকজিন মিলে একটি টিম তৈরি হলো।
খেলার প্রথম ধাপে প্রায় সব টিম একে অপরকে সত্য বললো এবং কেউ মারা গেলেন না। কিন্তু খেলার দ্বিতীয় ধাপে এক টিমের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয় এবং মিথ্যে বলায় খেলার একজন খেলোয়াড় মৃত্যুবরণ করেন। উল্লেখ্য, এই গেম খেলা থেকে সত্যিকারের দুনিয়ায় আসতে ‘হৃদয়ের রাজা’ কে মৃত্যুবরণ করা জরুরী।
কিন্তু মাত্র এই একজন মৃত্যুবরণ করার পর খেলার পরের ধাপগুলো হয়ে উঠতে লাগলো ভীষণ ভয়ানক। এখন সবাই দ্রুত এই খেলা থেকে প্রস্থান চাচ্ছেন। মানে সত্যিকার দুনিয়ায় ফেরত যেতে চাইছেন। ফলে একে অন্যকে মিথ্যে বলছেন প্রায় ব্যক্তিগত সামান্য ক্ষোভের জন্য, সামান্য খারাপ লাগার জন্য, কখনো কখনো তো একেবারেই অযথা কারণে এবং ‘হৃদয়ের রাজা’ কে মেরে ফেলার জন্য।
সবচেয়ে বড় যে টিম ছিলো সে টিমের প্রধানও হয়ে উঠলো ভয়ানক। যার উদ্দেশ্য ছিলো সবাই একসাথে থাকা এবং সবাইকে সুরক্ষা দেওয়া তিনি কিনা এখন টিম কে ষড়যন্ত্রে নামিয়ে দিলেন এবং একের পর এক মানুষকে মারতে শুরু করলো। এবার এসব দেখে টিমের বাকি অংশ ষড়যন্ত্র করে টিম লিডার কে-ই মিথ্যা বলে মেরে ফেললো। ফলে এই টিম একসময় হয়ে পড়লো নিঃশেষ।
এখন যদি ‘হৃদয়ের রাজা’ কে ভ্রম হিসেবে ধরি, আমাদের পার্থিব জীবনের বিভিন্ন লক্ষ্য কে যদি ভ্রম হিসেবে ধরি অথবা আমাদের জীবনের প্রতিযোগিতায় কারো এগিয়ে থাকা এবং অন্যের পিছিয়ে পড়াকে মেনে নিই তাহলে ‘অস্তিত্ববাদ’ দর্শনের খেলাটা ভয়ানক প্রাসঙ্গিক। আর এই প্রাসঙ্গিক গল্প নিয়ে একই রকম খেলা দেখতে পাবেন জাপানীজ সিরিজ ‘Alice in Borderland (Season 2)’ তে।
এই সিরিজ দেখার পর বেশ কিছু প্রশ্ন মাথায় আসলো,
১. আপনি সত্যবাদী কিন্তু যদি সেটা বাঁচা/মরার প্রশ্নে দাঁড়ায় তাহলে আপনি কতদূর সত্যবাদী?
২. নিজের অস্তিত্ব রক্ষায়/নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে/নিজের স্বার্থ রক্ষায় আপনি ঠিক কত নিচে নামতে পারবেন?
৩. আপনি যে কোম্পানিতে কাজ করছেন বা যে প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করছেন আপনি সেখানে কতটুকু নিষ্ঠাবান? যদি সেটা বাঁচা/মরার প্রশ্নে দাঁড়ায় তাহলেও কি আপনি নিষ্ঠাবান?
৪. আপনি নিষ্ঠাবান বটে কিন্তু সেটা কতদূর পর্যন্ত?
৫. প্রশ্ন যখন জীবন বা মরণের তখনও কি আপনি প্রতারক থাকবেন?
৬. মৃত্যু কাছে আসলে কি মানুষ প্রতারণা ভুলে যায়?
৭. নিজেকে বাঁচানোর জন্য আপনি অন্যের সাথে ঠিক কি পরিমাণ প্রতারণা করতে পারবেন?
৮. জীবন যদি ঠিক ঐ কয়েকখানার মত হয় তাহলে আপনি/আমি ওরকম খেলার খেলোয়াড়দের অংশবিশেষ নই কি?
অন্যদিকে এটি ডার্ক সাইকোলজির একটি অংশ। কারণ আপনি আগে থেকেই এক ধরণের আধাসত্য বা ভ্রম যদি রাখেন যে, এখানে ‘হৃদয়ের রাজা’ আছেন সেক্ষেত্রে পার্থিব জীবনেও এমন খেলায় আমরা একে অন্যকে মেরে ফেলতে মাতিয়ে উঠবো। এখানে একটি সুপারন্যাচারাল দুনিয়া দেখানো হয়েছে এবং ব্যক্তিকে ‘Derealization’ এর মধ্যে রাখা হয়েছে। না মৃত, না জীবিত। খানিকটা বলা যায় যে, আপনার প্রকৃত শরীর এখানে কমায় আছে এবং একটি অন্য পৃথিবীর ‘Perception’ এর মধ্যে রয়েছে।
কারণ আমরা সবাই জিততে চাই, আমরা সবাই জীবন যুদ্ধে এগিয়ে থাকতে চাই, আমরা সবাই নিজেকে সুপিরিয়র ভাবতে চাই, আমরা সবাই বাঁচতে চাই, আমাদের বাঁচার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্দেশ্য চাই এবং সর্বশেষ, আমরা শুধু খেলোয়াড় হয়ে থাকতে চাই না, আমরা ‘হৃদয়ের রাজা’ হয়ে থাকতে চাই যে কিনা আরো স্মার্ট খেলা অফার করতে সক্ষম।
ছবি: বিং এন্টারপ্রাইজ
Also Read It On: ডার্ক সাইকোলজি এবং হৃদয়ের রাজা ও ছদ্মবেশ (Jack of Hearts & Derealization)
২২ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫
মি. বিকেল বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ০৬ ই মার্চ, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫
রানার ব্লগ বলেছেন: আপনার উদ্দেশ্য কি ? এমনি তেই বাজার অফিস পরিবার নিয়া চিন্তায় বাঁচি না এর মধ্যে এই চিন্তা মাথায় ঢুকিয়ে দিচ্ছেন ।
২২ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৭
মি. বিকেল বলেছেন: এসব চিন্তা করবার মতন সময় পাই না, আমি নিজেও... তাই সময় করে একটু নিজে জানছি, জানাচ্ছি... কিন্তু আপনার মন্তব্য সবসময় পাচ্ছি না।
৩| ০৬ ই মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫২
রাজীব নুর বলেছেন: আমি যদি ঘুম ভাঙ্গার পর দেখি অন্য কোনো জগতে চলে গেছি, তাহলে আমি ভয় পাবো না। বরং খুশি।
তবে প্রকৃতি এরকম ভুল কখনও করবে না।
২২ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৭
মি. বিকেল বলেছেন: ওকে
৪| ২৫ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ২:৩১
BM Khalid Hasan বলেছেন: সবার মাঝে ভিন্ন পৃথিবীতে যাবার বাসনা কমবেশি আছে। কিন্তু সত্যি বলতে অন্য কোনো পৃথিবীতে টিকে থাকা কঠিন হবে। এই পৃথিবীর অসহনীয় কষ্টকেও তখন আশীর্বাদ মনে হবে!
©somewhere in net ltd.
১| ০৬ ই মার্চ, ২০২৪ সকাল ১০:১০
তাসমিমা ইসলাম প্রতিভা বলেছেন: ভালো লিখেছেন।