নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

মি. বিকেল

আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নাম মি. বিকেল।

মি. বিকেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভারত বিদ্বেষ: সম্পর্কের অবনতির কারণ কী?

২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৩৯



ভারত বিদ্বেষ বলতে সুনির্দিষ্ট করে কি বুঝায়? ২০২৩ সালের তথ্য মতে, ভারতে বর্তমানে মোট মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ১৯.৭ কোটি। এই প্রায় ২০ কোটি মুসলিম যারা ভারতের নাগরিক তাদেরকেও কি বাংলাদেশের মানুষ ঘৃণা করে? না, ঘৃণা করে না। তাহলে নিশ্চয় ভারতীয় সংখ্যাগুরু হিন্দুদের বাংলাদেশের মুসলিমরা ঘৃণা করে? না, তাও করে না।

আমার মত অতি সাধারণ ছেলেরও ভারতের কিছু মানুষের সাথে পরিচয় আছে। আমার এক আশিয়োর্ধ দিদি আছেন ভারতে। আমার অসুখ-বিসুখ হলে তিনি মন্দিরে আমার মঙ্গল কামনা করে পূজা পর্যন্ত করেন। এই বয়সে এসেও তিনি আমার জন্য দিনের পর দিন, রাতের পর রাত লিখেন। আমার প্রথম লেখা বই পর্যন্ত ভারতে তিনি তার সামর্থ্যে ভারতে প্রকাশ করেছেন।

প্রশ্ন হলো, আমি কি আমার এই ভারতীয় দিদি সহ বাকি পরিচিত জনদের ঘৃণা করি? না, ঘৃণা করার প্রশ্নই আসে না। ফেসবুকে আজও বন্ধু তালিকায় সবাই যুক্ত আছেন এবং থাকবেন ইনশাআল্লাহ। তাহলে বাংলাদেশের অনেক বিখ্যাত মানুষজন আছেন এবং তাদেরও অনেক বন্ধুবান্ধব ভারতীয় আছেন নিশ্চয়। তারাও কি তাদের এই সম্পর্কগুলো নষ্ট করবেন? বা, নাকি ইতোমধ্যেই নষ্ট করেছেন?

খুব সম্ভবত ঘৃণা যতটা সংক্রামক ভালোবাসা বোধহয় ততটা সংক্রামক নয়। তবুও, বিদ্বেষের প্রশ্নেও তো সুনির্দিষ্ট হওয়া জরুরী। ভারতে অবস্থিত মুসলিমদের বিখ্যাত স্থাপনা সমূহ যেমন, তাজমহল, কুতুব মিনার, জামা মসজিদ, হুমায়ুনের সমাধি, গোল গম্বুজ, চারমিনার, ফতেহপুর সিক্রি, বুলন্দ দরওয়াজা, আগ্রা ফোর্ট, বিবি কা মাকবরা ইত্যাদি আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই স্থাপনাগুলো কে বাংলাদেশের মানুষ ঘৃণাভরে দেখে? না, ঘৃণাভরে দেখার প্রশ্নই আসে না। কিছুটা অহংকার ও গর্বের চোখেও দেখেন কেউ কেউ।

ভারতীয় বিশ্ববিখ্যাত বলিউড অভিনেতা শাহরুখ খান, সালমান খান, আমির খান, সাইফ আলী খান, ইরফান খান কে কি বাংলাদেশের মানুষ ঘৃণা করে? না, এখানে খান বংশের অভিনেতাদের বিশাল ভক্ত আছেন। ভারতের মানুষজন যাকে বলিউড বাদশাহ্‌ বানিয়েছেন তিনিও একজন মুসলিম। হ্যাঁ, শাহরুখ খানের কথা বলছি। অথবা, দুলকার সালমানের ভক্ত কি বাংলাদেশে কম? তিনিও তো একজন মুসলিম। সাম্প্রতিক সময়ে মুক্তি পাওয়া ‘পুষ্পা ২’ তে ভিলেন চরিত্রে চমৎকার অভিনয় করেছেন ফাহাদ ফজিল। তিনিও একজন মুসলিম। অথবা, গুলজারের নাম শোনেননি এমন তো হতেই পারে না।

জুলাই বিল্পব নিয়ে ভারতের বিখ্যাত দুই ইউটিউবার ছাত্রদের পক্ষে একের পর এক ভিডিও বানিয়েছেন। আকাশ ব্যানার্জি ও ধ্রুব রাঠির কথা বলছি। তাদেরকেও কি বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ ঘৃণা করেন? খুব সম্ভবত নয়। বাংলাদেশের বর্তমান প্রশাসন এক শ্রেণীর মিডিয়া (গদি মিডিয়া) ব্যতীত সকল মিডিয়াকে সঠিক তথ্য দিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করছেন বলেও তো জানিয়েছেন। আবার জুলাই বিপ্লবে পশ্চিমবঙ্গেও বাংলাদেশের ছাত্রদের পক্ষে আন্দোলন দেখা গেছে।

দেশভাগ/বাংলা ভাগ হলেও যারা আজও বাংলা ভাষাকে ওপার বাংলায় রক্ষায় প্রত্যক্ষভাবে রীতিমতো যুদ্ধ করছেন তাদেরকেও কি বাংলাদেশের মানুষ ঘৃণা করেন? না, ঘৃণা করেন না। বাংলা ভাষা রক্ষার জন্য এপার বাংলার মানুষ প্রাণ দিয়েছে। ওপার বাংলাও (সবাই নন) আজ হিন্দি ভাষার আগ্রাসন বন্ধে রীতিমতো যুদ্ধ করছেন। কতটুকু পেরেছেন সেটা সমালোচনার জন্ম দেবে কিন্তু চেষ্টাটুকু তো দৃশ্যমান।

আমার মন চায় তাই ঘৃণা করি এমন হলে তো চলবে না। আমাদেরকে সুনির্দিষ্ট হতে হবে। বিশৃঙ্খলাও কিন্তু একটি নিয়ম মেনে চলে। বাংলাদেশের মানুষজনের মধ্যে কংগ্রেস বা ইন্ডিয়া জোটের বিরুদ্ধে কিছু বলতে দেখবেন না। কংগ্রেস বা ইন্ডিয়া জোট কি ধোয়া তুলসীপাতা? নিশ্চয় নয়। মমতা ব্যানার্জি সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ নিয়ে যা-তা বলছেন কিন্তু বাংলাদেশের এসব বিষয়ে প্রতিক্রিয়া তেমন দেখবেন না। অথবা, বিজেপির প্রতি বিদ্বেষ থাকলেও বিজেপির সকল নেতাকে বাংলাদেশ ঘৃণা করে? খুব সম্ভবত নয়।

সমস্যা হচ্ছে, একটি রাষ্ট্রের সাথে আরেক রাষ্ট্রের অসম্মানজনক আচরণ। আরো একটি বিষয় যা বাংলাদেশের মানুষ মুখ ফুটে বলেন না বা বলতে চান না বা বুঝে নিতে বলেন তা হলো, বাংলাদেশের মানুষ মোদী সরকার কে দেখতে পারেন না। একদম স্পষ্ট। বাংলাদেশের মানুষ এই গুজবে বিভ্রান্ত হয়ে চটে গেছেন এবং ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা বলছেন, মিডিয়া সহ। কারণ একটি রাষ্ট্র যদি অন্য রাষ্ট্রকে স্রেফ ক্ষুদ্র বলে বারবার ছোট করেন, শোষণ করেন তাহলে দীর্ঘকাল সে সয়েই যাবে এমন হতে পারে না।

ছোট করা হয়তো বুঝা যায় কিন্তু শোষণ গুলো কেউ স্পষ্ট করেন না। মানুষ এখানে সাম্প্রদায়িক ভোটব্যাংক চান না। শোষণমুক্তি স্বাধীনতার স্বাদ চান। অথবা, মোদী সরকারকে শুধুমাত্র সাম্প্রদায়িক বলে বাংলাদেশের মানুষ ঘৃণা করেন না। আমি আজ মাত্র একটি বিষয়ে অবতারণা করছি যেখানে দুই দেশের জায়গা থেকেই সংশোধন অতি জরুরী।

এই চরিত্রের নাম হলো গৌতম আদানী। তারও আগে প্রশ্ন, বাংলাদেশের মানুষ কি বড় বড় ভারতীয় আরবপতিদের দেখতে পারেন না? দেখতে পারেন। টাটা হলো তার জ্বলন্ত উদাহরণ। কিন্তু হিনডেনবার্গের রিসার্চে আদানীর আসল চরিত্র বাংলাদেশের মানুষদের সামনে চলে আসে। এই আদানী চরিত্রের ঝলক সামান্য হলেও ‘জওয়ান’ ও ‘ল্যাকি ভাস্কর’ সিনেমায় দেখতে পাওয়া যায়। বুঝলাম, হিনডেনবার্গ তাদের নিজ স্বার্থ কায়েমে আদানীর মুখোশ খুলেছিলেন স্টক মার্কেটে শর্ট সেলিং করার জন্য। কিন্তু সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রে গৌতম আদানীর গ্রেফতার ওয়ারেন্ট কি বার্তা দেয়?

এই গৌতম আদানী আবার মোদী সরকারের অতি কাছের। ভারতেও তো বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয় যে, গৌতম আদানী মানেই কিন্তু ভারত নয়। অথবা, রাহুল গান্ধীর আদানীর উপর যত অভিযোগ সবই কি মিথ্যা? খুব সম্ভবত নয়। কিছু রটে কিছু তো বটে। এখন এই আদানীর সাথে বাংলাদেশের একটি বিশাল বিদ্যুৎ চুক্তি রয়েছে আগামী ২৫ বছরের জন্য। মোট প্রায় ১,৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারতের ঝাড়খণ্ড থেকে আদানী পাওয়ার লিমিটেড বাংলাদেশ কে দেবার কথা।

কিন্তু এই চুক্তির কোনায় কোনায় সমস্যা। বাংলাদেশের এত ঠেকা পড়েছে যে এত চড়া দামে বিদ্যুৎ ক্রয় করতে হবে? অথবা, বিদ্যুৎ ব্যবহার না করলেও মেইনটেন্যান্স বহন করতে হবে? এই পুরো চুক্তি সাবেক সরকার শেখ হাসিনার সময় জনগণের কাছে পুরোপুরি উন্মুক্ত ছিলো না। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ টের পেয়েছিলেন কিছু তো ভুলভাল ঘটছে এবং পরবর্তীতে সেটাই সত্য হলো। এই চুক্তি বাতিল যোগ্য কিনা সেটা আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষদের কাছে উন্মুক্ত নয়।

মানুষ তার স্বার্থে আঘাত পেলে খেপে উঠবেন সেটাই স্বাভাবিক। রাষ্ট্র তো টাকা রোজগার করে না। তাহলে এই বেকায়দার চুক্তির মাশুল গুনবেন কে? নিশ্চয় সাধারণ মানুষ। এমনিতেই বাংলাদেশ পূর্ববর্তী প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলারের ঋণে জর্জরিত। এবার মরার উপর খাড়ায় ঘা। বাংলাদেশের আগামীর সবচেয়ে বড় মাথাব্যাথা এই বিদ্যুৎ চুক্তি। একইসাথে এই চুক্তি দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে রীতিমতো গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কিন্তু, হাতির সামনে বাংলাদেশ এখানে মশা বরাবর। প্রথমেই বাংলাদেশকে রাজনৈতিক ভাবে দেউলিয়া করা হলো খুব সুকৌশলে। এবার ভয়ানক অর্থনৈতিক সংকট সামনে। তথাকথিত বন্ধু রাষ্ট্র হয়ে ভারতের মত এতবড় একটি দেশকে বড় হিসেবে ম্যাচিউর ভূমিকায় দেখতে পাওয়া গেল না উল্টো রিউমারস ছড়িয়ে কাদা মাখামাখি।

আবার এদেশের রাজনৈতিক দলগুলোও একেকটা ভাঁড়। সারাদিন ভারত বিদ্বেষের ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে কিন্তু আদানীর মত পাহাড়কে লড়ানোর কথাও কেউ সাহস করে বলতে পারছেন না। মানে তাত্ত্বিক ঘরানার একটি দেশে বাংলাদেশও পরিণত হতে চলেছে। সবই খাতা-কলমে, মাঠের দৃশ্যে কোন অগ্রগতি নাই।

উল্লেখ্য, এই শোষণের মাত্র একটি উদাহরণ তুলে ধরা হলো।

Also Read It On: ভারত বিদ্বেষ: সম্পর্ক, সংস্কৃতি ও রাজনীতির বিশ্লেষণ

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৫৩

রাজীব নুর বলেছেন: উলটা পালটা কথা বলে লাভ নাই।
ভারত আমাদের বন্ধু।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.