নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
“এই দেশে রাজনীতি শুরু করে একজন সাধারণ ব্যক্তির পক্ষে ‘প্রধানমন্ত্রী’ হওয়া কি সম্ভব? ওকে, প্রধানমন্ত্রী হওয়া অনেক বড় বিষয় কিন্তু একজন মন্ত্রী হওয়াও কি সম্ভব? অথবা, স্রেফ একজন নির্বাচিত সাংসদ?” – বুঝার সুবিধার্থে বাংলাদেশ কিন্তু একটি টু-পার্টি স্টেট। আপনি হয়তো নির্বাচনে আওয়ামীলীগ কে ভোট দেবেন নতুবা বিএনপি কে। কিছু সিট, ধরে নিলাম সেটা ১৫-৩০টি সিট ‘অন্যান্য’ ধারার রাজনৈতিক দল পেতে পারেন। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনে বাংলাদেশের প্রধান দুটি দল এদেশের জন্মের ৫৩ বছর ধরে তাদের পরিবারের হাতে বা কতৃত্বে বা শাসনে রেখেছেন। আমার এই কথা যদি মিথ্যে হত তাহলে খুব সম্ভবত আমি সবার আগে সবচেয়ে বেশে খুশি হতাম।
আওয়ামীলীগ দল ক্ষমতায় থাকলে খুব সম্ভবত তাদের পরবর্তী নেতৃত্বে আসতেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়। ঠিক একইভাবে, বিএনপি দল ক্ষমতায় থাকলে বা ক্ষমতায় গেলে খুবই সম্ভব নেতৃত্বে আসবেন জনাব তারেক রহমান। তারপর দেশ শাসন করবেন সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছেলে বা মেয়ে অথবা তারেক রহমানের ছেলে বা মেয়ে।
এই পরিবারতন্ত্রের গল্প যদি এখানেই আবদ্ধ থাকতো তাহলেও হত। আওয়ামীলীগ দল যারা দীর্ঘ সময় করেছেন তাদেরই ছেলে বা মেয়ে রাজনীতিতে আছেন আনুমানিক নূন্যতম ১৫০ এরও অধিক এবং বিএনপি তে এই সংখ্যা আনুমানিক ৬০ জনেরও অধিক। যেখানে জাতীয় নির্বাচনে মোট সংসদীয় সিট মাত্র ৩০০টি। যদিও আওয়ামীলীগ ও বিএনপির মধ্যে এখানে ছোট্ট পার্থক্য আছে। আওয়ামীলীগ দল তূলনামূলক বড় হওয়ায় বেশিরভাগ রক্তের সম্পর্ক আছে এমন সদস্য রাজনীতিতে বেশি। বিএনপিতে সেটা দীর্ঘ সময় দলের জন্য কাজ করেছেন তাদের ছেলে বা মেয়ে।
ছোটবেলায় স্কুলে দৌড় প্রতিযোগিতার কথা মনে পড়ে? এই দৌড় প্রতিযোগিতায় নিশ্চয় আমরা কেউ না কেউ প্রথম/দ্বিতীয় বা তৃতীয় হয়েছি। কেন এই দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রথম/দ্বিতীয় বা তৃতীয় হতে পেরেছিলাম জানেন? কারণ, যে লাইন থেকে বাঁশির শব্দে আমাদের দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু হত সেটা সবার জন্য সোজা এবং সমান দুরত্ব যাচাই করে টানা হয়েছিলো। আঁকাবাঁকা নয়। কেউ ৫ মিটার পেছনে থেকে দৌড় শুরু করবে তো কেউ ৫ মিটার সামনে থেকে দৌড় শুরু করে করবে বিষয়টি এমন ছিলো না।
“বিশ্ববিদ্যালয়ে বা কলেজে মেধাবীরা রাজনীতি করেন না কেন?” – এই নিয়ে আমাদের সবার ক্ষোভের শেষ নাই। কিন্তু যিনি মেধার রাজনীতি করতে চাইছেন বা রাজনীতিতে ক্যারিয়ার গড়তে চাইছেন বা নেতৃত্বে আসতে চাইছেন তিনি কীভাবে এই ব্যাপক বৈষম্যের মধ্যে দিয়ে উপরোক্ত দুটি দলের মধ্যে অন্তত একটিতে বিশেষ জায়গা করে নেবেন? আমাকে একটু বুঝান, একটু বাংলা ভাষায় বুঝান তো!
আমার এক আলোচিত ও সমালোচিত শিক্ষকের এই ক্ষোভ তিনি ক্লাসেই প্রকাশ করেছিলেন কিন্তু হাত উত্তোলনেও প্রশ্নটা নিলেন না। উনি আর যাই হোক আমার অভিভাবক এবং সন্তান হিসেবে আমাকে নিশ্চয় চেনেন। খুব সম্ভবত উনার কাছেও এই প্রশ্নের উত্তর নাই। এই বৈষম্য থেকেই মূলত জন্ম ‘I Hate Politics’ প্রজন্মের। এই বৈষম্য থেকেই জন্ম ‘বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন’ এর।
আমার দূর্ভাগ্য আমি ছাত্রদল বা ছাত্রশিবিরের রাজনীতি সরাসরি দেখতে পাইনি। কিন্তু ছাত্রলীগের রাজনীতি দেখেছি। এই দলে কারা নেতৃত্বে গেছেন এবং নেতৃত্বে যাওয়ার মাপকাঠি কি সেটা খোদ এই দলের নেতারাও কি জানেন? আবার এই একই ছাত্রলীগে এত এত ভালো এবং ডেডিকেটেড কর্মী ছিলো যারা কোনোদিন নেতৃত্বের আশেপাশে পর্যন্ত যেতে পারেন নাই। জীবন থেকে ৫ বছর থেকে ১০ বছর দলের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেও কোন পদ/পদবী পান নাই।
আবার বাম ঘরানার দলগুলো একেবারে নুয়ে পড়েছিলো। নিজেদের মধ্যে এত এত মত পার্থক্য থাকলে কীভাবে একটি শক্তিশালী বামদল বা বাম শক্তি হিসেবে সামনে আসবে? যার যে বিশ্বাস সে অনুযায়ী দল তৈরি করেছেন। যে কেউ খুব সংক্ষেপে এই বাম ঘরানার দলগুলোতে নেতৃত্বের পর্যায়ে যেতে পারলেও ছিলো না কোন ভীড়ের শক্তি। এই সব দলের যেন সবাই নেতা, কর্মী কোথায়? কেউ মার্ক্সবাদী, কেউ লেনিনবাদী, কেউ মাওবাদী… কিন্তু দিনশেষে সবাই পুঁজিবাদী।
এরপর তথাকথিত নির্বাচন সিস্টেম আমাদের সামনে আসে। এই দেশে একজন মেম্বার পদপ্রার্থী রাজনীতি চর্চা করেও নূন্যতম ৪-৫ লাখ টাকা খরচ করেন নির্বাচনে লড়াই করতে। হ্যাঁ, লড়াই করতে, জিততে নয়। ধারণা করা যায়, এমপি পদে নির্বাচনে নূন্যতম কোটি টাকার মত খরচ হতে পারে। এছাড়াও নমিনেশন বাণিজ্য রয়েছে।
একটি দরিদ্র দেশে কোটি কোটি টাকার খরচ হয় শুধুমাত্র সেদেশে শাসক কে হবেন সেটা নির্বাচনে। আপনি চিন্তা করুন তো! প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা রাজনীতিতে পরিপক্ক একজন ব্যক্তি কোথা থেকে এই কোটি টাকা সংগ্রহ করবেন বা পাবেন? এছাড়াও জীবনের ঝুঁকি, হেরে যাওয়ার ভয়, মামলা-হামলা ও জেলে যাওয়ার ভয় এসব মেনে নিয়েই মাঠে নামতে হবে। আমরা যে কথায় কথায় আজকাল অভিজাততন্ত্র… অভিজাততন্ত্র… অভিজাততন্ত্র… বলে জিকির করি তাইলে এটা কোন তন্ত্র? গণতন্ত্র তো নিশ্চয় নয়।
“বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন তো ছাত্রদের আন্দোলন! তারা রাজনীতির কি বুঝে? তারা কেন রাজনীতি করতে চাইছেন? তারা কিংস পার্টি হতে যাচ্ছে না তো?” – এই প্রশ্নগুলোই ছাত্রদের বারবার ‘ভদ্রলোক’ হবার আহ্বান জানিয়ে রাজনীতি থেকে দীর্ঘ সময় দূরে রাখা হয়েছিলো। আজও তাই করা হচ্ছে।
বিএনপি সহ সকল সমমনা দলগুলো নিঃসন্দেহে দীর্ঘসময় অত্যাচারিত হয়েছে, শোষিত হয়েছে। এই শোষণ ও নির্বাচন নামক প্রহসনের জন্যই ছাত্ররা মাঠে নামেন। শুরুতে কোটা বিরোধী আন্দোলন থাকলেও তা ক্রমান্বয়ে তাদের চোখে বৈষম্যের দাগ স্পষ্ট হয়েছে এবং একটি বিপ্লব হয়ে গেছে। সেখানে একাধিক বিরোধী দলের উপস্থিতি নিশ্চয় ছিলো কিন্তু সবার সামনে ছিলো এই ছাত্ররা। যারা বুকে পুলিশের গুলি পেতে নিতেও ভয় পায় নাই।
এই নাগরিক ঐক্য বা জনশক্তি দল নামক নতুন দল যদি জন্মায়ও তাহলেও এই মাটিতে অভিজাতদের রাজনীতি থেকে নিস্তার নাই। কিন্তু সবার রাজনীতি করার অধিকার দেওয়া উচিত, বিকল্প ধারার রাজনীতি শুরু হওয়া উচিত। হতে পারে প্রথম দিকে এই গতানুগতিক নির্বাচনীয় ব্যবস্থার কিছুই সংস্কার হবে না, একটি সিটও পাবে না তবুও এই শুরুর ‘শুরু’ টা করা উচিত। একদিন নিশ্চয় এই সমস্ত সংস্কার চোখের সামনে বাস্তবায়িত হবে। এই বৈষম্যের বেড়াজাল থেকে হয়তো একদিন বের হওয়া যাবে।
মানুষ বাঁচে স্বপ্নে। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন বা নাগরিক ঐক্য বা জনশক্তি যে দল-ই হোক আমাদের একটি জান্নাত উপস্থাপনা করবেন তা ধরে নিচ্ছি না। কিন্তু বাকি দলগুলোর থেকে একজন অতি সাধারণ মানুষের মধ্যে আর তেমন প্রত্যাশাও নাই। সুতরাং এই স্বপ্ন দেখতে তো মানা নাই। এবং এই স্বপ্ন অনেক সুন্দর স্বপ্ন। অভিজাতদের দাসত্ব থেকে স্বাধীনতার স্বপ্ন। অভিজাতরা স্বপ্ন ভাঙলেই ফের দাস বানাবেন জেনেও এই নিষ্ঠুরতম বাস্তবতা থেকে দূরে থাকার এক ধরণের মায়াজাল।
মার্ক টোয়েইন বলেছিলেন, “যদি নির্বাচন করেই সব হত তাহলে খুব সম্ভবত এই নির্বাচন ব্যবস্থা ই থাকতো না।” আর আমি বলি কি, “১০ টাকায় চা, সিঙ্গাড়া, চপ, সমুচা থেকে বের হয়ে একটি সুন্দর নির্বাচন ব্যবস্থা গড়ে উঠুক। সেটা আনুপাতিক করবেন না পৌনঃপুনিক ঘটনা হিসেবে আরো বহু মানুষের লাশ ফেলবেন সেটা আমাদের মানুষ হবার গল্প।”
Also Read It On: বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের রাজনীতি: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
২| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:০৪
এস.এম.সাগর বলেছেন: সত্যই কি বাংলাদেশের জনগন চায়?
৩| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:২৬
নতুন বলেছেন: গনতন্ত্র শিক্ষিত সমাজের জন্য। আমাদের মতন দেশের জন্য একনায়কতন্ত্র দরকার।
দেশে গনতন্ত্রের নামে রাজতন্ত্র চলছে এবং দেশের মানুষ মেনে নিয়েছে যে নেতার ছেলেই নেতা হবে।
মানুষ এখন তারেক জিয়া অথবা জয়ের প্রধানমন্ত্রী হবার বিষয়টা মেনে নিচ্ছেন।
আপনিও যেমন মেনে নিয়েছেন যে রাজনিতিক পরিবারের সন্তান না হলে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী হউয়া সম্ভবনা।
ওকে, প্রধানমন্ত্রী হওয়া অনেক বড় বিষয় কিন্তু একজন মন্ত্রী হওয়াও কি সম্ভব? অথবা, স্রেফ একজন নির্বাচিত সাংসদ?”
তাহলে বুঝুন সাধারন জনগনের মনে কিভাবে এই ভাবনা না আসবে যে একটা সত্যিকারের গনতন্ত্রের দেশে প্রধানমন্ত্রী সাধারন পরিবার থেকে আসতে পারে।
©somewhere in net ltd.
১| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ভোর ৪:২৭
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: ইনক্লুসিভ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে চাইলে আপনার প্রধানমন্ত্রী যদি একজন হিজড়াও হয় তাকে মেনে নিতে হবে। কারণ সে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত এসেছেন। আপনার প্রেসিডেন্ট অথবা প্রধানমন্ত্রী একজন হিন্দু হবেন তা আপনাকে মেনে নিতে হবে। মুচি, মেথর, গার্মেন্টস শ্রমিক যে কেউ হতে পারে আপনার প্রেসিডেন্ট অথবা প্রধানমন্ত্রী। ক্ষমতায় আভিজাত্য ধরে রাখতে, সাম্প্রদায়িকতা ধরে রাখতে পরিবারতন্ত্র, ধর্মভিত্তিক তন্ত্র ও ছাত্র নেতাদের তন্ত্র থাকবেই বাংলাদেশে। তা না হলে দেশের এলিট অথবা সুশিক্ষিত শ্রেণী নেতৃত্ব মানবে না।