নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

মি. বিকেল

আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নাম মি. বিকেল।

মি. বিকেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

আত্মসংশয়ের প্রভাব ও মুক্তির উপায়: অন্ধকার মনোবিজ্ঞান থেকে মুক্তির কৌশল

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৩৩



আমাদের কাছে যেটুকু রিসোর্স আছে, যেটুকু যোগ্যতা ও ক্ষমতা আছে তার বেশি কোন লক্ষ্য নির্ধারণে আমাদের মধ্যে আত্মসংশয় তৈরি হতে পারে। আবার কিছু কিছু সময় দেখা যায় আমরা নিজেদের থেকে অধিক ভালো কিছু প্রত্যাশা করে থাকি যা সবসময় বাস্তবসম্মত নাও হতে পারে। এছাড়াও বর্তমান সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ার ফেব্রিকেটেড জীবন দেখে দেখে আমাদের নিজেদের জীবন নিয়ে এক ধরণের সন্দেহ বা সংশয় তৈরি হতে পারে।

আত্মসংশয় মূলত আমাদের নিজের যোগ্যতার প্রতি সন্দেহ তৈরি করে, আমাদের ক্ষমতা ও কাজের ধরণ ও প্রকৃতির উপর সন্দেহ তৈরি করতে পারে। সর্বোপরি নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে না পারার অক্ষমতা আমাদের নিজের অস্তিত্বকে সন্দেহের মধ্যে ফেলে দেয়। ফলে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়া, প্রকৃত কাজ বা লক্ষ্যের জন্য নিজের মধ্যে দীর্ঘসূত্রতা বেড়ে যাওয়া, ভয়ানক সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা সহ ‘ইমপোস্টার সিনড্রোম’ এর মত মানসিক জটিল সব সমস্যা তৈরি হতে পারে।

আমার আলোচনার বিষয় যতটা ‘আত্মসংশয়’ নিয়ে তারচেয়ে বেশি কিন্তু ‘অন্ধকার মনোবিজ্ঞান’ নিয়ে। যদিও আত্মসংশয় নিজের ভুলের জন্যেও জন্মায় তবুও ‘অন্ধকার মনোবিজ্ঞান’ -এ এক ধরণের কৃত্রিম আত্মসংশয় আমাদের মধ্যে ঢুকানো হয়। অন্ধকার মনোবিজ্ঞান নিয়ে আধুনিক যে পাঠ যেটা কিন্তু প্রায়শই মানুষের মধ্যে কীভাবে আত্মসংশয় ঢুকানো যায় এবং তার মানসিক নিয়ন্ত্রণ নিজের কাছে নেওয়া যায় সেটাতে প্রচুর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

কারণ যদি একবার বিস্তৃতভাবে কোন ব্যক্তির মনে আত্মসংশয় প্রবেশ করানো যায় তাহলে হতেও পারে তিনি তার এক জীবনে প্রচুর ঝামেলার মধ্যে পড়ে যাবেন। তিনি নিজেকে মানে নিজের পরিচয় নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়বেন। তিনি নিজের লক্ষ্য নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়বেন। তিনি যা কিছুই করবেন সেখানে তার আত্মসম্মান বলে তো কিছু থাকবেই না উল্টো সমস্ত কর্মের জন্য সামাজিক স্বীকৃতি চাইবেন; সবসময়।

মানুষ যা চিন্তা করে তা সাধারণত পরবর্তীতে তার সিদ্ধান্তে রুপান্তরিত হতে পারে। এবং এই সিদ্ধান্ত মোতাবেক কাজ করায় সেটার বাস্তব প্রতিফলন দেখা যেতে পারে। কিন্তু মানুষ যখন অস্থিতিশীল অবস্থায় থাকে, নেতিবাচক প্রভাবে জরাজীর্ণ থাকে তখন তিনি যে সিদ্ধান্ত নেন সেটা অনেকটাই ‘ধ্বংসাত্মক সিদ্ধান্ত’ হতে পারে। এখন ধ্বংসাত্মক সিদ্ধান্ত পূরণের লক্ষ্যে যিনি কাজ করছেন তার ফলাফল ভালো কীভাবে হবে?

আমাদের মধ্যে অনেকেই “আত্মসম্মান... আত্মসম্মান... আত্মসম্মান...” বলে জিকির করেন কিন্তু মূলত ‘আত্মসম্মান’ কী সেটাকে ব্যাখ্যা পর্যন্ত করতে পারেন না। আচ্ছা, আত্মসম্মানবোধ কি কাল্পনিক কোন বস্তু? মানে আমি মনে করলে আছে এবং আমি মনে না করলে নাই! এরকম কিছু কি? মোটেই না।

আমরা কিছু প্রশ্ন পড়ে দেখি এবং এখানে আমি মোট ২৫টি প্রশ্ন উল্লেখ করছি আপনি নিজেও নিজেকে হুবহু এসব প্রশ্ন করুন।

১. আমি কি প্রায়ই আমার সিদ্ধান্ত নিয়ে সন্দেহ করি?
২. আমি কি অন্যদের মতামতকে আমার নিজের মতামতের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিই?
৩. আমি কি প্রায়ই মনে করি যে আমি যথেষ্ট ভালো নই?
৪. আমি কি নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে ভয় পাই?
৫. আমি কি প্রায়ই আমার সাফল্যকে ভাগ্য বা অন্যদের সাহায্যের ফলাফল মনে করি?
৬. আমি কি প্রায়ই আমার ভুলগুলো নিয়ে বেশি চিন্তা করি?
৭. আমি কি প্রায়ই অন্যদের সাথে নিজেকে তুলনা করি?
৮. আমি কি প্রায়ই মনে করি যে আমি ব্যর্থ হবো?
৯. আমি কি প্রায়ই আমার কাজের জন্য প্রশংসা গ্রহণ করতে অস্বস্তি বোধ করি?
১০. আমি কি প্রায়ই মনে করি যে আমি যা অর্জন করেছি তা যথেষ্ট নয়?
১১. আমি কি প্রায়ই আমার ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ করি?
১২. আমি কি প্রায়ই মনে করি যে অন্যরা আমার চেয়ে বেশি যোগ্য?
১৩. আমি কি প্রায়ই আমার কাজের মান নিয়ে সন্দেহ করি?
১৪. আমি কি প্রায়ই মনে করি যে আমি অন্যদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছি না?
১৫. আমি কি প্রায়ই আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকি?
১৬. আমি কি প্রায়ই আমার অতীতের ভুলগুলো নিয়ে চিন্তা করি?
১৭. আমি কি প্রায়ই মনে করি যে আমি যথেষ্ট পরিশ্রম করছি না?
১৮. আমি কি প্রায়ই আমার সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে অনিশ্চিত থাকি?
১৯. আমি কি প্রায়ই মনে করি যে আমি অন্যদের সাহায্য ছাড়া সফল হতে পারবো না?
২০. আমি কি প্রায়ই আমার কাজের ফলাফল নিয়ে সন্তুষ্ট থাকি না?
২১. আমি কি প্রায়ই মনে করি যে আমি আমার লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে পারবো না?
২২. আমি কি প্রায়ই আমার আত্মবিশ্বাসের অভাব অনুভব করি?
২৩. আমি কি প্রায়ই আমার ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ করি?
২৪. আমি কি প্রায়ই মনে করি যে আমি অন্যদের চেয়ে কম যোগ্য?
২৫. আমি কি প্রায়ই আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চিত থাকি?

এই ২৫টি প্রশ্নের উত্তর ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ তে নিজেকে দিন এবং নিচের এই ফলাফল অনুযায়ী আপনার মধ্যে থাকা আত্মসংশয় কতটুকু আছে তা নির্ধারণ করুন।

(ক) মৃদু আত্মসংশয় (Mild Self-Doubt): যদি ২৫টির মধ্যে ৫-১০টি প্রশ্নের উত্তর ‘হ্যাঁ’ হয়।
(খ) মধ্যম আত্মসংশয় (Moderate Self-Doubt): যদি ১১-১৭টি প্রশ্নের উত্তর ‘হ্যাঁ’ হয়।
(গ) তীব্র আত্মসংশয় (Severe Self-Doubt): যদি ১৮-২৫টি প্রশ্নের উত্তর ‘হ্যাঁ’ হয়।

এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শুধুমাত্র (ক) ও (খ) পর্যায়ে থাকা কিছু মানুষজন নিজ উদ্যোগে আত্মসংশয় থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন। কিন্তু (গ) পর্যায়ে যারা চলে গেছেন তাদের জন্য সাইকিয়াট্রিস্ট দেখানো আবশ্যিক বলে আমি বিবেচনায় নিচ্ছি। কারণ আপনাদের নূন্যতম আত্মসম্মানবোধও নাই।

আত্মসংশয় ও আত্মসম্মান শব্দ দুটি কিন্তু একে অন্যের হাত ধরে চলে; অনেকটা ব্যাস্তানুপাতিক। আপনি যদি কোনো ক্ষেত্রেই নিজেকে নিজের কাছেই স্বীকৃতি দিতে না পারেন, মেনে নিতে না পারেন তাহলে আপনার মধ্যে আত্মসম্মান টা থাকলো কোথায়?

আমাদের যে বাঙালী হিসেবে বিল্ট-ইন ফিচার পিএনপিসি করার বদ অভ্যেস আছে সেটাকে বিদায় দেওয়া আবশ্যিক। সারাক্ষণ অন্যের ভুল ধরা, অন্যর মত হওয়া, অন্যের মত কাজ করা, অন্যেরা যা বলছে বা করছে তাকে মহান ভেবে নিজের কাছে নিজেকে ছোট করার যে সৃজনশীল শিল্প তা থেকে আগে বের হতে হবে। তবেই না আপনি নিজেকে নিয়ে ভাবতে পারবেন। নিজের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রতি ফোকাশ করতে পারবেন।

অন্ধকার মনোবিজ্ঞান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা তাদের জন্য জরুরী যারা তাদের স্বপ্ন ও লক্ষ্য পূরণের উদ্দেশ্যে নিরন্তর ছুটছেন, কাজ করছেন। কারণ কাজ করলে ভুল হবে এবং এই ভুল কে পুঁজি করে ভিক্টিম বানানোর কৌশল নির্মিত হয়। কিন্তু যারা কাজ-ই করছেন না, এবং নিজের কোনো স্বপ্ন বা লক্ষ্য নাই এমন মানুষ তো নিজেই নিজের শক্রু।

অন্ধকার মনোবিজ্ঞানে আপনার কাজ, সিদ্ধান্ত এবং মতামতকে ক্ষীণ করে দেখানো হতে পারে। ভালো কাজ করলেও ক্রমাগত গ্যাসলাইটিং করা হতে পারে। এছাড়াও ক্রমাগত নেতিবাচক ফিডব্যাক আপনাকে আত্মসংশয়ে ফেলে দেবে। সুতরাং আগে নির্ধারণ করা উচিত আপনি যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তা যথেষ্ট শক্ত ও যৌক্তিক, আপনি যে মতামত দিচ্ছেন সেটা ভুলও হতে পারে কিন্তু সেটা আপনার কাছে মূল্যবান। আপনি জীবনে যে স্বপ্ন দেখেছেন বা লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন তা অন্তত আপনার কাছে আগে শক্ত ও যৌক্তিক হতে হবে।

কারণ স্বপ্ন ছাড়া মানুষ মৃতপ্রায়। স্বপ্ন ছাড়া বেঁচে থাকা খুবই কঠিন। যার স্বপ্ন যত কম এবং অস্পষ্ট তার জীবনের প্রাণশক্তি ঠিক ততটাই ক্ষীণ ডিমলাইটের মতন। খুব সম্ভবত আমরা আমাদের প্রধান প্রধান কাজগুলো এড়িয়ে যাই; যেটা উচিত নয়। চাই আপনার ভালো লাগুক বা না-লাগুক আপনাকে কিছু তিতা কাজ করতে হতে পারে আপনার স্বপ্ন পূরণে।

আত্মসংশয় জীবনের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং সময়ে আসতে পারে। খারাপ সময়গুলোতে আসতে পারে। আত্মসম্মান লোপ পেতে পারে কিন্তু স্বপ্নের জন্য এবং আপনার তৈরি লক্ষ্যের জন্য নিরন্তর কাজ করে যাওয়া ছাড়া উপায় নাই। মানে যদি সত্যিই এই সমস্ত মানসিক সংশয়, দ্বন্দ্ব এবং অনিশ্চতা থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে নিরন্তর কাজ করে নিজেকে ‘আউট-পারফর্মার’ হিসেবে হাজির করতেই হবে। যে কাজ বেশি তিতা লাগে আগে সে কাজ দিয়েই আপনাকে শুরু করতে হবে।


Also Read It On: আত্মসংশয় ও অন্ধকার মনোবিজ্ঞান: মানসিক শক্তি ও আত্মসম্মান পুনরুদ্ধার

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.