নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

মি. বিকেল

আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নাম মি. বিকেল।

মি. বিকেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

নারীবাদী ক্যাম্পেইনে ক্যান্সারের ফ্রি-ডেলিভারি!

১০ ই মার্চ, ২০২৫ ভোর ৬:৫৮



বর্তমানে সিগারেটের দাম অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। সিগারেট ও তামাক পণ্যের উপর পুনরায় অতিরিক্ত ভ্যাট বসানো হয়েছে। অনেকেই তার পছন্দের ব্রান্ডের সিগারেট ক্রয় করে পান করতে পারছেন না। এমনকি সবচেয়ে নিচুস্তরের সিগারেট ব্রান্ডের প্রতি শলাকা ৮ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

শোনা যাচ্ছে, এই দাম বৃদ্ধির কারণে কেউ কেউ সিগারেটের পরিবর্তে বিড়ি পান করতে শুরু করেছেন। একদিকে রমজান মাস অন্যদিকে রোজা থেকে ইফতারে সিগারেট পানে এমন অতিরিক্ত মূল্য চুকাতে গিয়ে যুব সমাজের মধ্যে একধরণের তীব্র ও চাপা ক্ষোভ ফেসবুক সহ একাধিক সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা যাচ্ছে।

প্রথম এই সিগারেট পান করতে দেখা যায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় (১৯১৪-১৮) সৈনিকদের মধ্যে। কিন্তু তখনও সিগারেট কে ‘পুরুষালি (Masculinity)’ এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় নেওয়া হত না। ১৯৫০ এর দশকে একটি মার্কিন টোব্যাকো কোম্পানি (ফিলিপ মরিস) সিগারেট পান করাকে পুরুষালি বৈশিষ্ট্যের সাথে যুক্ত করতে সামর্থ্য হোন, যা মূলত পুরুষদের পুরুষত্বের বারোটা বাজিয়ে চলেছে।

সে সময় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘মার্লবোরো ম্যান’ নামক প্রচারণা। ঐ প্রচারণায় কাউবয়দের ব্যবহার করা হয়েছিলো, যারা ‘সাহস’, ‘স্বাধীনতা’ ও ‘পুরুষালি’ শক্তির প্রতীক হিসেবে চিত্রিত হোন। সেখান থেকেই আমরা অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা মানে পুরুষরা আজকের এই সিগারেট পান করা শুরু করেছি।

সিগারেট পান না করলে আমাদের পুরুষালি বৈশিষ্ট্যের যে ঘাটতি থেকে যেত সেটা আমরা আজও টের পাই। আর আমরা যখনই নিজেদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি দেখতে পাই ‘পুরুষ’ হিসেবে তখনই আমরা সিগারেটে আগুন ধরিয়ে পান করার মাধ্যমে পুনরায় ঐ আত্মবিশ্বাস ফিরে পাই।

প্রতি মিনিটে ১ হাজার সিগারেট তৈরির মাধ্যমে বিশাল অঙ্কের লাভাংশ সেসময় হাতিয়ে নিয়েছিলো ‘আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি’। এই বিপ্লব ঘটে ১৮৮১ সালে, যখন জেমস বোনসাক (James Bonsack) নামের একজন উদ্ভাবক স্বয়ংক্রিয় সিগারেট তৈরির মেশিন আবিষ্কার করেন। তাঁর আবিষ্কৃত মেশিন প্রতি মিনিটে প্রায় ১,২০০ সিগারেট তৈরি করতে পারত, যা আগে হাতের সাহায্যে তৈরি করার তুলনায় অনেক বেশি দ্রুত ছিল।

কিন্তু অধিক সিগারেট উৎপাদনের ভোক্তা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত শুধু পুরুষেরা ছিলো। তামাক কোম্পানিগুলো ভাবছিলো যে, শুধুমাত্র পুরুষেরা যদি সিগারেট পান করে তাহলে মোট জনসংখ্যার সর্বোচ্চ ৫০% বা তার কম ভোক্তা পাওয়া যাবে। বাকি ৫০% বা নারীরাও যদি সিগারেট পান করে তাহলে তামাক কোম্পানির ব্যবসা একটা ভালো গতি পাবে।

সেসময় জন্ম হয় এডওয়ার্ড বার্নেজ (Edward Bernays) নামক এক মহামানবের। তাঁকে আজ পর্যন্ত মার্কেটিং জগতের গুরু হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

১৯২৯ সালে এডওয়ার্ড বার্নেজ (Edward Bernays) সাহেব একটি যুগান্তকারী ক্যাম্পেইন চালু করেন। তখন নারীবাদ বা নারীর অধিকার আন্দোলন ছিলো শীর্ষে এবং ১৯২০ সালে নারীরা ভোটাধিকার (Suffrage) অর্জন করেন। এই সফল আন্দোলন কে কেন্দ্র করে এডওয়ার্ড বার্নেজ (Edward Bernays) সাহেব ‘লাকি স্ট্রাইক (Lucky Strike)’ কোম্পানির সাথে মিলে একটি ক্যাম্পেইন আয়োজন করেন। নাম দেন, ‘Torches of Freedom (স্বাধীনতার মশাল)’।

বার্নেজ সাহেব নারীবাদী আন্দোলনকে কাজে লাগিয়ে ইস্টার সানডের দিন নিউ ইয়র্কে একদল নারীকে পাবলিক প্লেসে সিগারেট পান করতে উৎসাহিত করেন। সোজা বাংলায়, বার্নেজ সাহেবের মতে, যেহেতু নারীরা আজ সব কিছুতে এগিয়ে যাচ্ছেন সেহেতু তারা সিগারেট পানে পিছিয়ে থাকবেন কেন?

এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় (১৯৩৯-৪৫) যুদ্ধেও নারীদের বিশেষ ভূমিকায় দেখা যায়। ১৯৪০-৫০-এর দশকে হলিউড ফিল্মে নারীদের সিগারেট খাওয়াকে গ্ল্যামারাস ও স্টাইলিশ দেখানো হয়। মার্লিন মনরো, অড্রে হেপবার্ন-এর মতো বিখ্যাত হলিউড তারকারা সিগারেট হাতে ক্যামেরার সামনে আসেন, যা নারীদের মধ্যে ধূমপানের জনপ্রিয়তা আরও বাড়িয়ে তোলে।

সিগারেট পান করাকে নারীদের স্বাধীনতা, নারীদের মুক্তি এবং যেহেতু নারীরা বিভিন্ন ধরণের কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত আছেন তাই পুরুষের সমান অধিকার বিবেচনায় নেওয়া শুরু হলো। নারীবাদ (Feminism) বা নারী অধিকার আন্দোলনে সিগারেট পান করাকে নারীর মুক্তি প্রতীক হিসেবে সে সময় থেকে বিবেচনায় নেওয়া শুরু হলো।

বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই সিগারেট পান করতে দেখা গেল পুরুষদের পাশাপাশি নারীদেরকেও। ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউয়ের ২০২৩ সালের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে ১৫ বছরের ওপরে ধূমপায়ীর সংখ্যা শতকরা ৩৯.১ ভাগ। এর মধ্যে ছেলেদের মধ্যে ধূমপায়ীর সংখ্যা ৬০.৬ শতাংশ এবং মেয়েদের মধ্যে এ সংখ্যা ১৭.৭ শতাংশ।

বাংলাদেশে নারী ধূমপায়ীর সংখ্যা ২০১৯ সালে ছিল ৭ শতাংশের মতো। গত চার বছরে বাংলাদেশে মেয়েদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেয়েদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা বেশি।

Huh! Torches of our Freedom...!

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:২০

রাজীব নুর বলেছেন: আমি দরিদ্র মানুষ। বিলাসিতা বলতে আমার সিগারেট। কমদামী সিগারেট খেতে পারি না। বেনসন খাই। ২০ টাকা। আমার একমাত্র বদ অভ্যাস সিগারেট।

২৭ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ২:২৬

মি. বিকেল বলেছেন: রাজীব ভাই, আপনার অভিজ্ঞতা তামাক কোম্পানিগুলোর শোষণের নির্মম প্রতিচ্ছবি। বেনসনের মতো "ব্র্যান্ডেড" সিগারেটকে "একমাত্র বিলাসিতা" হিসেবে দেখার এই বাধ্যবোধটাই তো তাদের মার্কেটিংয়ের শতবর্ষী কৌশল—যেখানে দরিদ্র মানুষের নিকোটিনের নির্ভরতাকে "পুরুষত্ব" বা "স্বাধীনতা"র মিথ্যা প্রলেপ দিয়ে লাভের ফাঁদে পরিণত করা হয়। আপনার মতো লক্ষ মানুষ যখন মূল্যবৃদ্ধির চাপে পণ্য বদলালেও আসলে কোম্পানির লাভের গাণিতিক সমীকরণে রয়ে যান "নিয়মিত গ্রাহক", তখনই তামাক শিল্পের নৃশংসতা স্পষ্ট হয়। এই লড়াই আপনার একার নয়; ধোঁয়ার গায়ে লুকিয়ে থাকা কর্পোরেট শক্তির বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতাই আমাদের স্বাধীনতার মশাল জ্বালাতে পারে।

২| ১০ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:১৯

কাঁউটাল বলেছেন: বেডিরা বিরি খাইয়া স্বাধীন হইতে চায়।

২৭ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ২:৩৪

মি. বিকেল বলেছেন: আপনার ব্যঙ্গোক্তিই তো তামাক কোম্পানির "স্বাধীনতা"র মায়াকাননের সাফল্য প্রমাণ করে! এডওয়ার্ড বার্নায়েসের 'টর্চেস অফ ফ্রিডম' ক্যাম্পেইন যেমন নারীবাদী আন্দোলনের ভাষাকে হাইজ্যাক করে সিগারেটকে নারীর "মুক্তি"র প্রতীকে পরিণত করেছিল, আজ বিরি-সিগারেটের ধোঁয়াও সেই একই কর্পোরেট ফাঁদে জড়িয়ে। নারীদের ধূমপানকে হাসি-ঠাট্টার বিষয় বানানোর চেষ্টা আসলে সেই পুরনো ন্যারেটিভকেই পুনরুৎপাদন করে—যেখানে নারীর দেহ ও অভ্যাস পুরুষতন্ত্র আর পুঁজির যৌথ মঞ্চনাট্যের প্রপ। প্রকৃত স্বাধীনতা তো ধোঁয়াশার প্যাকেটে বিক্রি হয় না; বরং তামাক শিল্পের নেশা আর লিঙ্গীয় কুসংস্কারের ডবল বেড়ি ছেঁড়ার সংগ্রামেই নিহিত। সত্যিকারের স্বাধীনতার মশাল জ্বলবে যখন আমরা বুঝব, "বিরি" বা "বেনসন"—উভয়ই একই ব্যবস্থার বিষবৃক্ষ, যার শেকড় প্রোথিত লাভের গণিত আর সামাজিক অসমতার মাটিতে।

৩| ১০ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:২১

নিমো বলেছেন: @কাঁউটাল, বেডারা খাইয়া কি কাঁউটাল আর কু-ক-রা হইতে চায়?

৪| ১০ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:৫৭

কৃষ্ণের মুরলী বলেছেন: যারা সিগারেট খায় তারা একটু বেপরোয়া আর অ্যাডভেঞ্চারাস হয়। টেনশনের সময় সিগারেট খাওয়া ভালো।

২৭ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ২:৩৬

মি. বিকেল বলেছেন: সিগারেটকে "বেপরোয়া" বা "অ্যাডভেঞ্চারাস" জীবনের প্রতীক বানানো তামাক শিল্পের শতবর্ষী মনস্তাত্ত্বিক ফাঁদ! মার্লবোরো ম্যানের কাল্ট কিংবা হলিউডের গ্ল্যামারাইজড ধূমপায়ী চরিত্রগুলো এই বিভ্রম তৈরি করেছে যে ধোঁয়া আর নিকোটিন "টেনশন কমানোর" যাদুকরী মাধ্যম—যেখানে বাস্তবে এটি একটি শারীরিক-মানসিক অ্যাডিকশন সাইকেল। বিজ্ঞান বলে, নিকোটিন মস্তিষ্কে ডোপামিন ক্ষরণ বাড়ালেও দীর্ঘমেয়াদে উদ্বেগ বাড়ায়, আর সেই টেনশন থেকেই পরের সিগারেটের তীব্র তাড়না জন্মায়। "বেপরোয়া" ইমেজের পেছনে লুকিয়ে আছে কর্পোরেট রক্তচোষা গণিত: যুবক-যুবতীদের মাঝে আত্মবিশ্বাসের সংকটকে পুঁজি করে নেশাকে "স্বাধীনতা"র মিথ চাপানো। প্রকৃত সাহস তো নেশার শৃঙ্খল ভাঙতে, স্বাস্থ্যকে বেছে নিতে; সিগারেটের আগুনে পোড়া ফুসফুস নয়, বরং সচেতনতার আলোয় জ্বলুক জীবনযুদ্ধের মশাল!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.