![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বর্তমানে সিগারেটের দাম অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। সিগারেট ও তামাক পণ্যের উপর পুনরায় অতিরিক্ত ভ্যাট বসানো হয়েছে। অনেকেই তার পছন্দের ব্রান্ডের সিগারেট ক্রয় করে পান করতে পারছেন না। এমনকি সবচেয়ে নিচুস্তরের সিগারেট ব্রান্ডের প্রতি শলাকা ৮ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
শোনা যাচ্ছে, এই দাম বৃদ্ধির কারণে কেউ কেউ সিগারেটের পরিবর্তে বিড়ি পান করতে শুরু করেছেন। একদিকে রমজান মাস অন্যদিকে রোজা থেকে ইফতারে সিগারেট পানে এমন অতিরিক্ত মূল্য চুকাতে গিয়ে যুব সমাজের মধ্যে একধরণের তীব্র ও চাপা ক্ষোভ ফেসবুক সহ একাধিক সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা যাচ্ছে।
প্রথম এই সিগারেট পান করতে দেখা যায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় (১৯১৪-১৮) সৈনিকদের মধ্যে। কিন্তু তখনও সিগারেট কে ‘পুরুষালি (Masculinity)’ এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় নেওয়া হত না। ১৯৫০ এর দশকে একটি মার্কিন টোব্যাকো কোম্পানি (ফিলিপ মরিস) সিগারেট পান করাকে পুরুষালি বৈশিষ্ট্যের সাথে যুক্ত করতে সামর্থ্য হোন, যা মূলত পুরুষদের পুরুষত্বের বারোটা বাজিয়ে চলেছে।
সে সময় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘মার্লবোরো ম্যান’ নামক প্রচারণা। ঐ প্রচারণায় কাউবয়দের ব্যবহার করা হয়েছিলো, যারা ‘সাহস’, ‘স্বাধীনতা’ ও ‘পুরুষালি’ শক্তির প্রতীক হিসেবে চিত্রিত হোন। সেখান থেকেই আমরা অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা মানে পুরুষরা আজকের এই সিগারেট পান করা শুরু করেছি।
সিগারেট পান না করলে আমাদের পুরুষালি বৈশিষ্ট্যের যে ঘাটতি থেকে যেত সেটা আমরা আজও টের পাই। আর আমরা যখনই নিজেদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি দেখতে পাই ‘পুরুষ’ হিসেবে তখনই আমরা সিগারেটে আগুন ধরিয়ে পান করার মাধ্যমে পুনরায় ঐ আত্মবিশ্বাস ফিরে পাই।
প্রতি মিনিটে ১ হাজার সিগারেট তৈরির মাধ্যমে বিশাল অঙ্কের লাভাংশ সেসময় হাতিয়ে নিয়েছিলো ‘আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি’। এই বিপ্লব ঘটে ১৮৮১ সালে, যখন জেমস বোনসাক (James Bonsack) নামের একজন উদ্ভাবক স্বয়ংক্রিয় সিগারেট তৈরির মেশিন আবিষ্কার করেন। তাঁর আবিষ্কৃত মেশিন প্রতি মিনিটে প্রায় ১,২০০ সিগারেট তৈরি করতে পারত, যা আগে হাতের সাহায্যে তৈরি করার তুলনায় অনেক বেশি দ্রুত ছিল।
কিন্তু অধিক সিগারেট উৎপাদনের ভোক্তা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত শুধু পুরুষেরা ছিলো। তামাক কোম্পানিগুলো ভাবছিলো যে, শুধুমাত্র পুরুষেরা যদি সিগারেট পান করে তাহলে মোট জনসংখ্যার সর্বোচ্চ ৫০% বা তার কম ভোক্তা পাওয়া যাবে। বাকি ৫০% বা নারীরাও যদি সিগারেট পান করে তাহলে তামাক কোম্পানির ব্যবসা একটা ভালো গতি পাবে।
সেসময় জন্ম হয় এডওয়ার্ড বার্নেজ (Edward Bernays) নামক এক মহামানবের। তাঁকে আজ পর্যন্ত মার্কেটিং জগতের গুরু হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
১৯২৯ সালে এডওয়ার্ড বার্নেজ (Edward Bernays) সাহেব একটি যুগান্তকারী ক্যাম্পেইন চালু করেন। তখন নারীবাদ বা নারীর অধিকার আন্দোলন ছিলো শীর্ষে এবং ১৯২০ সালে নারীরা ভোটাধিকার (Suffrage) অর্জন করেন। এই সফল আন্দোলন কে কেন্দ্র করে এডওয়ার্ড বার্নেজ (Edward Bernays) সাহেব ‘লাকি স্ট্রাইক (Lucky Strike)’ কোম্পানির সাথে মিলে একটি ক্যাম্পেইন আয়োজন করেন। নাম দেন, ‘Torches of Freedom (স্বাধীনতার মশাল)’।
বার্নেজ সাহেব নারীবাদী আন্দোলনকে কাজে লাগিয়ে ইস্টার সানডের দিন নিউ ইয়র্কে একদল নারীকে পাবলিক প্লেসে সিগারেট পান করতে উৎসাহিত করেন। সোজা বাংলায়, বার্নেজ সাহেবের মতে, যেহেতু নারীরা আজ সব কিছুতে এগিয়ে যাচ্ছেন সেহেতু তারা সিগারেট পানে পিছিয়ে থাকবেন কেন?
এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় (১৯৩৯-৪৫) যুদ্ধেও নারীদের বিশেষ ভূমিকায় দেখা যায়। ১৯৪০-৫০-এর দশকে হলিউড ফিল্মে নারীদের সিগারেট খাওয়াকে গ্ল্যামারাস ও স্টাইলিশ দেখানো হয়। মার্লিন মনরো, অড্রে হেপবার্ন-এর মতো বিখ্যাত হলিউড তারকারা সিগারেট হাতে ক্যামেরার সামনে আসেন, যা নারীদের মধ্যে ধূমপানের জনপ্রিয়তা আরও বাড়িয়ে তোলে।
সিগারেট পান করাকে নারীদের স্বাধীনতা, নারীদের মুক্তি এবং যেহেতু নারীরা বিভিন্ন ধরণের কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত আছেন তাই পুরুষের সমান অধিকার বিবেচনায় নেওয়া শুরু হলো। নারীবাদ (Feminism) বা নারী অধিকার আন্দোলনে সিগারেট পান করাকে নারীর মুক্তি প্রতীক হিসেবে সে সময় থেকে বিবেচনায় নেওয়া শুরু হলো।
বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই সিগারেট পান করতে দেখা গেল পুরুষদের পাশাপাশি নারীদেরকেও। ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউয়ের ২০২৩ সালের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে ১৫ বছরের ওপরে ধূমপায়ীর সংখ্যা শতকরা ৩৯.১ ভাগ। এর মধ্যে ছেলেদের মধ্যে ধূমপায়ীর সংখ্যা ৬০.৬ শতাংশ এবং মেয়েদের মধ্যে এ সংখ্যা ১৭.৭ শতাংশ।
বাংলাদেশে নারী ধূমপায়ীর সংখ্যা ২০১৯ সালে ছিল ৭ শতাংশের মতো। গত চার বছরে বাংলাদেশে মেয়েদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেয়েদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা বেশি।
Huh! Torches of our Freedom...!
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:২০
রাজীব নুর বলেছেন: আমি দরিদ্র মানুষ। বিলাসিতা বলতে আমার সিগারেট। কমদামী সিগারেট খেতে পারি না। বেনসন খাই। ২০ টাকা। আমার একমাত্র বদ অভ্যাস সিগারেট।