![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ওয়াকফ! পবিত্র ধারণা! আল্লাহর নামে সম্পত্তি উৎসর্গ করা—ধর্ম, শিক্ষা, আর সমাজের কল্যাণে। এ যেন এক চলমান পুণ্যের ঝর্ণাধারা! ভারতে এই ঝর্ণাধারা বয়ে নিয়ে এসেছে বিশাল পরিমাণ জমি—এতটাই বিশাল যে, ভারতের রেলওয়ে আর সেনাবাহিনীর পরেই এর স্থান। কিন্তু হায়! যেখানে এত মধু, সেখানে মৌমাছির মতো কিছু ঝামেলা তো থাকবেই—অবৈধ দখল, দুর্নীতি, আর আইনি প্যাঁচ। আর এই সবকিছুর মাঝখানে, ২০২৫ সালে ভারতের সরকার বাহাদুর নিয়ে এলেন এক নতুন আইন—উদ্দেশ্য নাকি স্বচ্ছতা আর জবাবদিহিতা! তবে ফলাফল? স্বচ্ছতার বদলে যেন ঘোলাটে পরিস্থিতি আর জবাবদিহিতার বদলে ঝগড়াঝাঁটি!
ওয়াকফের মাহাত্ম্য
ওয়াকফ মানে হলো, কোনো পুণ্যবান ব্যক্তি তাঁর সম্পত্তি (চলমান বা অচল) স্থায়ীভাবে আল্লাহর নামে উৎসর্গ করবেন। এই সম্পত্তি বিক্রি করা যাবে না, দান করা যাবে না, কেউ এর মালিকানাও পাবে না। এর কাজ শুধু একটাই—সমাজের সেবা করা। মসজিদ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল, কবরস্থান—সব চলবে এই সম্পত্তি থেকে। এ এক দারুণ আইডিয়া, যা নিশ্চিত করে যে দাতার মৃত্যুর পরও তাঁর পুণ্য চলতেই থাকবে... যদি সম্পত্তিটা ততদিনে বেহাত না হয়ে যায় আরকি!
ভারতের ওয়াকফ সম্পত্তি
এক বিশাল খনি! ভারতে ওয়াকফের নামে যে পরিমাণ জমি আছে, তা শুনলে মাথা ঘুরে যেতে পারে। প্রায় ৮.৭ লাখ সম্পত্তি, মোট জমির পরিমাণ প্রায় ৩৯ লাখ একর বা ১৫,৭৮২ বর্গকিলোমিটার! সহজ ভাষায় বললে, বাংলাদেশের রাঙামাটি, চট্টগ্রাম আর ময়মনসিংহ জেলা একসাথে করলে যতটা জায়গা হয়, প্রায় ততটা!
ভাবুন একবার, এত জমি দিয়ে কী না করা যেত! কিন্তু আপাতত এর বেশিরভাগই হয় বেদখল হয়ে আছে, নয়তো আদালতে মামলার বোঝা টানছে, অথবা কোনো এক অলস ফাইলে ধুলোয় মাখামাখি খাচ্ছে। সেদেশের তৃতীয় বৃহত্তম জমিদার হয়েও যেন একরকম কপর্দকশূন্য অবস্থা!
আইনের বিবর্তন ও ২০২৫ সালের মোদী সরকারের ‘মাস্টারস্ট্রোক’
ব্রিটিশ আমল থেকেই ওয়াকফ নিয়ে আইনকানুন ছিল। ১৯৫৪, ১৯৯৫ সালে নানা আইন হয়েছে, বোর্ড গঠন হয়েছে। কিন্তু সমস্যা যেখানে ছিল, সেখানেই রয়ে গেল। তাই ২০২৫ সালে এলো নতুন সংশোধনী আইন—একদম ঝকঝকে, চকচকে! লোকসভা আর রাজ্যসভায় পাশ হতেও সময় লাগল না। লক্ষ্য? সেই পুরোনো কাসুন্দি—স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা!
নতুন আইনের কিছু ঝলক
১. ‘ওয়াকফ বাই ইউজার’ খতম: মানে, কোনো সম্পত্তি দীর্ঘদিন ধরে ধর্ম বা সেবার কাজে ব্যবহৃত হলেই যে সেটা ওয়াকফ হয়ে যাবে, এমনটা আর চলবে না। কাগজপত্র লাগবে! এতে অনেক পুরোনো মসজিদ-মাজারের হঠাৎ পরিচয় সংকট দেখা দিয়েছে। পুরনো দিনের জিনিস, একটু ধুলোবালি তো থাকবেই, তাই বলে কি বাতিল করে দিতে হবে?
২. বোর্ডে অমুসলিম সদস্য: এবার ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিমরাও থাকবেন। দারুণ ইনক্লুসিভ আইডিয়া! যদিও অনেকে বলছেন, এটা অনেকটা নিরামিষভোজীদের মাংসের দোকানে বসানোর মতো ব্যাপার।
৩. কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি: দিল্লি থেকে এবার সরাসরি নজরদারি চলবে। কারণ স্থানীয় লোকজন তো আর নিজেদের সম্পত্তি সামলাতে পারে না!
সেদেশের সরকারের দাবি, এতে দুর্নীতি কমবে, জমি উদ্ধার হবে। কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, এটা আসলে ধর্মের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ। ফলাফল? পথে-ঘাটে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ আর কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা (যা বর্তমান ভারতের চিরচেনা রুপ হিসেবে আমরা জানি)।
চ্যালেঞ্জ যখন কমেডির অংশ
ওয়াকফ সম্পত্তির চ্যালেঞ্জগুলো শুনলে মনে হবে কোনো কমেডি সিনেমার প্লট!
১. অবৈধ দখল: প্রায় ৬০ হাজার সম্পত্তি বেদখল! গুজরাটের দুটি দ্বীপ নিয়ে ওয়াকফ বোর্ড আর প্রশাসনের মধ্যে বছরের পর বছর ধরে চলছে “তুই মালিক না মুই মালিক” খেলা। পাঞ্জাবেও প্রায় ৫,৬১০ সম্পত্তি হাওয়া! যেন সম্পত্তিগুলোর পা গজিয়েছে!
২. দুর্নীতি ও মিসম্যানেজমেন্ট: কর্ণাটকে বোর্ড নিজেই নাকি জমি বেচে দিয়েছে! আবার ৪ লক্ষ ৩৫ হাজার সম্পত্তির কোনো হিসেবই নেই—ডিজিটাল ইন্ডিয়ার যুগে এ যেন এক বিস্ময়! সম্ভবত সম্পত্তিগুলো ক্লাউডে আপলোড হতে গিয়ে হারিয়ে গেছে!
৩. আইনি বিবাদ: প্রায় ১৪ হাজার সম্পত্তি নিয়ে কোর্টে মামলা চলছে। বেঙ্গালুরুর ঈদগাহ মাঠ থেকে সুরতের মিউনিসিপাল বিল্ডিং—সবকিছুতেই আইনি প্যাঁচ। উকিলদের পোয়াবারো!
৪. পারদর্শিতার অভাব: সাচার কমিটি সেই ২০০৬ সালেই বলেছিল, প্রশাসনে স্বচ্ছতার অভাব। এতদিনেও সেই অভাব পূরণ হয়নি। গুজরাট আর উত্তরাখণ্ডে সার্ভেই নাকি শেষ হয়নি!
৫. রক্ষণাবেক্ষণের অভাব: অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনা ভেঙে পড়ছে। দেখার কেউ নেই। যেন এ সম্পত্তিগুলো রাষ্ট্রের কাছে ‘আপদ’ মাত্র!
নতুন আইন: বিতর্ক যখন তুঙ্গে
২০২৫ সালের আইন যেন আগুনে ঘি ঢেলেছে। ‘ওয়াকফ বাই ইউজার’ বাতিলের সিদ্ধান্তে ঐতিহাসিক স্থানগুলোর মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় মুসলিম সংগঠনগুলো রাস্তায় নেমেছে। দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, তামিলনাড়ুতে বিক্ষোভ হয়েছে। কোথাও কোথাও শান্তিপূর্ণ, কোথাও আবার একটু উত্তপ্ত! দিল্লিতে তো পুলিশের সাথে সংঘর্ষও হয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলোও বসে নেই। কংগ্রেস, এআইএমআইএম, ডিএমকে সবাই সমস্বরে বলছে—এ আইন ‘মুসলিম-বিরোধী’, ‘সংবিধান-বিরোধী’। ইমরান প্রতাপগড়ির মতো নেতারা বলছেন, এটা ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ।
সুপ্রিম কোর্ট: বিচারকেরাও ধন্দে!
মামলা গড়িয়েছে সেদেশের সর্বোচ্চ আদালতে। সুপ্রিম কোর্ট ১৬ এপ্রিল থেকে শুনানি শুরু করেছে। কোর্ট একদিকে বলছে, হ্যাঁ, স্বচ্ছতা দরকার। কিন্তু অন্যদিকে ‘ওয়াকফ বাই ইউজার’ বাতিল আর তার জেরে হওয়া হিংস্রতা নিয়ে বেশ চিন্তিত। কোর্ট প্রস্তাব দিয়েছে, পুরনো সম্পত্তিগুলোকে এখনই ‘ওয়াকফ নয়’ বলে দাগিয়ে না দিতে। সরকার অবশ্য নারাজ। কোর্ট আরও এক মোক্ষম প্রশ্ন তুলেছে, “তাহলে কি হিন্দু ধর্মীয় ট্রাস্টেও মুসলিমদের ঢোকানো হবে?” এই প্রশ্নের উত্তর আপাতত ঝুলে আছে।
নতুন আইনের ‘আশীর্বাদ’: যা যা ঘটল
আইন পাশ হওয়ার পর থেকেই সেদেশে একের পর এক ‘আশীর্বাদ’ বর্ষিত হচ্ছে!
১. মসজিদ ভাঙচুর: হরিয়ানার ফরিদাবাদে ৫০ বছরের পুরনো আল আকসা মসজিদ কর্পোরেশন ভেঙে দিয়েছে—অবৈধ নির্মাণের দোহাই দিয়ে, যদিও মামলা চলছিল সুপ্রিম কোর্টে! নোটিশ ছাড়াই এমন ‘দক্ষ’ উচ্ছেদ অভিযান!
২. সহিংস প্রতিবাদ: মুর্শিদাবাদে প্রতিবাদ সহিংস রূপ নেওয়ায় একজনের মৃত্যু, অনেকে আহত, বহু গ্রেফতার! হুগলিতেও একই অবস্থা। বাড়িঘর পোড়ানো হয়েছে। ত্রিপুরাতেও অশান্তি। যেন আইন পাশ হয়নি, গৃহযুদ্ধের ডাক দেওয়া হয়েছে!
৩. আইনি চ্যালেঞ্জ: সুপ্রিম কোর্টে পিটিশনের বন্যা। আইন সংবিধানের ২৬ নম্বর ধারা (ধর্মীয় স্বাধীনতা) লঙ্ঘন করছে কিনা, তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
৪. সোশ্যাল মিডিয়ার গুজব: এক্স হ্যান্ডেলে উড়ছে খবর—যোগী সরকার নাকি ১৬টা মসজিদ ভেঙে দিয়েছে! উত্তরাখণ্ডে ১০টা মাদ্রাসা সিল! যদিও খবরের সত্যতা যাচাইয়ের কেউ নেই। গুজব ছড়াচ্ছে আগুনের গতিতে।
৫. ডিজিটাইজেশনে গোলমাল: যে ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে স্বচ্ছতা আনার কথা ছিল, সেখানেই বিরাট ফাঁকি! RTI করে জানা গেছে, প্রায় ৪.৩৫ লক্ষ সম্পত্তির তথ্যই নেই পোর্টালে! ফান্ড অব্যবহৃত, অডিট নেই! এ যেন ডিজিটাল প্রহসন!
৬. রাজনৈতিক বিভেদ: দেশজুড়ে রাজনৈতিক দলগুলো দুই ভাগে বিভক্ত। একদল বলছে ‘সংস্কার’, আরেক দল বলছে ‘সাম্প্রদায়িক ষড়যন্ত্র’।
হাসব না কাঁদব?
ওয়াকফ সম্পত্তি নিঃসন্দেহে এক বিরাট সম্পদ। কিন্তু এর পরিচালনা আর নতুন আইন নিয়ে যা হচ্ছে, তা এক বিরাট ট্র্যাজিকমেডি। একদিকে ওয়াকফ’র উদ্দেশ্য, অন্যদিকে চরম অব্যবস্থা আর সংঘাত। ২০২৫ সালের আইন হয়তো কিছু সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছে, কিন্তু তার চেয়ে বেশি নতুন সমস্যা তৈরি করেছে। ধর্মীয় স্বাধীনতা, আইনি জটিলতা, সামাজিক অস্থিরতা—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি বেশ ঘোলাটে।
ওয়াকফ মানে আল্লাহর নামে দান... কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, এর পরিচালনা আর নতুন আইন নিয়ে যা হচ্ছে, তাতে দানগ্রহীতাদের চেয়ে আইনজীবী আর রাজনীতিবিদদেরই বেশি লাভ হচ্ছে! সুপ্রিম কোর্ট কী রায় দেয়, সেটাই এখন দেখার। তবে একটা বিষয় পরিষ্কার—এই ওয়াকফনামা আপাতত করুণ কমেডি হিসেবেই মঞ্চস্থ হচ্ছে!
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ২:৩৪
নতুন বলেছেন: ধর্মের নামে দুনিয়াতে মোল্যা পুরহিতরা ধান্দাই করে যাচ্ছে।

সাধারন মানুষ ধর্মীয় আবেগে দান করে। ফয়দা লুটে অল্পকিছু মানুষ, রং নম্বার।