নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আয়েশ করে, আলসেমিতে...

অলসদের দিয়ে কী আর হয়। আলসেমি ছাড়া!

মুনির হাসান

অলস লোক। নানা কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার খায়েশ কিন্তু করতে পারি না!

মুনির হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

গণিতের সৌন্দর্য সৌন্দর্যের গণিত

২৫ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৩

অনেকদিন এখানে আসা হয় না।

ভাবছি আবার একটু একটি হবো। সেই চিন্তাতে ভাবলাম একটা ব্লগ লিখি। কিন্তু তা তো হলো না। তাই অনেককাল আগের একটা লেখা শেয়ার করছি।


বুমবুমের ঘড়ি

গেল জন্মদিনে বুমবুম আর ওর খালাতো বোন কুঞ্জ দুজনেই দু’টি ঘড়ি উপহার পেয়েছে। তবে ওদের দু’জনের যথেচ্ছ ব্যবহারে দুটোই নষ্ঠ হয়ে কোনোটিই আর সঠিক সময় দিচ্ছে না। সেদিন ওদের দু’জনের ঘড়ির সময় মিলিয়ে দেওয়ার কিছুক্ষন পর বুমবুম এসে বললো ওর ঘড়িটা ঘন্টায় তিন মিনিট করে বেশি চলছে। কুঞ্জ জানালো ওর আবার উল্টো-- প্রতি ঘন্টায় দুই মিনিট করে পিছিয়ে পড়ছে।

সঠিক সময় বুঝতে কী তোমাদের অসুবিধা হচ্ছে?

’তা, হচ্ছে না।’ জানাল বুমবুম।‘যেমন আমার ঘড়িতে এখন ৯টা বেজে ৪০ মিনিট আর কুঞ্জর ঘড়িতে ৯টা। এ থেকে আমি বলতে পারি সঠিক সময় কত।’

ঘড়ি মিলিযে দেখলাম বুমবুমের হিসাব ঠিকই আছে।



নিতান্তই মামুলি সংখ্যা




গণিত আর সৌন্দর্যের কথা এলে অবধারিতভাবে আসে গণিতবিদ শ্রীনিবাস রামানুজনের নাম। উপমহাদেশের এই অসাধারণ গণিতবেত্তা নিজে নিজেই উদ্ভাবন করেছেন গণিতের অনেক থিওরেম। সংখ্যাকে ভালবাসার জোর তার কেমন ছিল তা বোঝাতে আরেকজন গণিতবিদ জি এইচ হার্ডি একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন।

৩০ বছর বয়সে দারুন অসুস্থ্য হয়ে রামানুজন বিলাতের একটি হাসপাতালে ভর্তি হোন। হার্ডি তাকে দেখতে এসেছেন। হার্ডি সেসময় গণিতের কোন এক সমস্যা নিয়ে ভীষন ব্যস্ত। রামানুজনকে বললেন, আজ আমি যে ট্যাক্সি করে হাসপাতালে এসেছি তার নম্বর বড়ই বেরসিক-১৭২৯।

রামানুজন তাৎক্ষনিকভাবে জবাব দিলেন – না, এটি মোটেই বেরসিক নয়, কারণ এটাই সবচেয়ে ছোট সংখ্যা যেটিকে দু’টি সংখ্যার ঘণফলের যোগফল হিসাবে দু’ভাবে দেখানো যায়।



১৭২৯=৯^৩+১০^৩

আবার

১৭২৯=১^৩+১২^৩



রামানুজন কেমনে সেটা জানলেন। কারণ তিনি সংখ্যাতে আনন্দ খুঁজে পেতেন।

কথা সেই! সব সংখ্যাতে আনন্দ খূঁজে পাওয়াটা নিঃসন্দেহে বিশেষ কৃতিত্বের। খেলাধুলায় যারা পরিসংখ্যানের হিসাব নেন তারাও সেই সৌন্দর্য খুজেন। নাম জানা নেই, এরকম একজন টেস্ট খেলুড়ে একবার হাসতে হাসতে এক পরিসংখ্যানবিদকে বলেছিলেন-- ‘টেস্ট খেলা যদি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকে তাহলে তোমার চাকরি চলে যাবে।’ হেসে পরিসংখ্যানবিদ বললেন- ‘কেন?আমরা তথন দেখবো এর আগে সবচেয়ে বেশি সময়ের জন্য কবে খেলা বন্ধ ছিল!’

পরিসংখ্যানবিদ কিংবা গণিতবিদদের আর একটি আগ্রহের বিষয় হল রেকর্ড। সংখ্যার আরেক আনন্দ। গিনেজ বুক অব রেকর্ডে তাই সংখ্যারই ছড়াছড়ি থাকে বেশি।

সংখ্যা আবার ইচ্ছা করলে কতো বড় হতে পারে তার ধারণাও গণিতবিদেরা দিয়ে রেখেছেন। সৈয়দ মুজতবা আলীর কল্যানে আফ্রিকার হটেনটট নামের ক্ষুদ্র জাতিস্বত্ত্বার সঙ্গে বাঙ্গালি পরিচয়। তা হটেনটটদের গুনতিতে মাত্র তিনটি সংখ্যা-এক, দুই আর অনেক। অন্যদিকে ইচ্ছে করলে লেখা যায় এক গুগল (১০^১০০) অর্থাৎ ১-এর পরে ১০০ শুণ্য। প্রাচীণ ভারতীয়দের সবচেয়ে বড়ো সংখ্যাও কম যায় নাঅ। এটিকে বলা হতো পরার্ধ, ১-এর পরে ১৭টি শূন্য, ১০^১৭ !



সংখ্যার কথা বলতে না বলতে এসে পড়ে সমীকরণের কথা। সংখ্যা আর সমীকরনের সৌন্দর্য তাই খুঁজে ফিরেছেন অনেকে। যেমন মহামতি বিজ্ঞানী আইনস্টাইন। বলা হয, আগামী কোনো এক সময়, বিজ্ঞানের ইতিহাস লেখা হবে মাত্র চার পাতায়। আর তার এক পাতা জুড়েই থাকবেন আনস্টাইন। স্রেফ কাগজে নানা হিসাব করে আইনস্টাইন দুনিয়াটাকে পাল্টে দিয়েছেন।

যে কোনো বস্তু যে কোনো বস্তুকে আকর্ষন করে। এই আকর্ষনের হিসাব নিকাশ প্রথম সঠিকভাবে করেছেন নিউটন। কিন্তু তার জানানো নিয়মে সৌরজগতের প্রথম গ্রহ বুধের অপসূর-অনুসূরের হিসাব মেলানো যাচ্ছিল না। ফাঁদে পড়ে বিজ্ঞানীরা আমদানী করলেন আরো একটি গ্রহ, বুধ আর সূয়ের মাঝখানে। নাম দেওয়া হল ভালকান।

১৯১৬ সালে আপেক্ষিতার সাধারণ তত্ত্ব আবিস্কারের পর বোঝা গেল ভালকানের প্রয়োজন নেই। অবশ্য এখনো আমাদের দেশে অনেক ”জ্ঞানের বইতে” ভালকান নামের গ্রহটিকে খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভুত দীর্ঘদিন আমাদের পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কাঁধেও ছিল। বাধ্য হয়ে প্রণম্য গণিতবদ মোহাম্মদ আবদুল জব্বার লিখেছিলেন- “ভালকান পাঠ্যপুস্তকে আছে, মহাকাশে নাই।“

ভালকানের থাকা এবং না থাকাটা কিন্তু ঔ গণিতেরই মারপ্যাচ। কলকাঠিটি খুঁজে পেয়েছিলেন আইনস্টাইন। সাধারণ আপেক্ষিকতা প্রকাশের পর কতিপয় পণ্ডিত লেখেন- হান্ড্রেড এগেইনস্ট আইনস্টাইন । জবাবে আইনস্টাইন হেসে বলেছেন- আরে, আমার ভুল হলে তো একজনই যথেষ্ঠ।

তার মানে এক বা এক’শ। সেই সংখ্যায়ই। ঘুরে ফিরে আসে। প্রতিবছর আমাদের জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী যে বাজেট বক্তৃতা দেন তার অনেকটা জুড়ে থাকে সংখ্যা। কিন্তু পরদির ভোর থেকেই টের পাওয়া যায় বাজেট বক্তৃতার সংখ্যাগুলো শুধু সংখ্যা থাকেনা। মানিব্যাগের টাকার সংখ্যাকে যথেষ্ট বিচলিত করে তোলে।

বিজ্ঞানী নিউটন কিন্তু ব্রিটিশ সংসদের উচ্চকক্ষের সদস্য ছিলেন। কাগজপত্রে দেখা যাচ্ছে একদিন অন্য এক সদস্যকে জানালা খুলে দেওয়ার অনুরোধ করা ছাড়া তিনি সংসদে আর কিছইু করেননি। নিউটন গণিত যত ভালো বুঝতেন, রাজনীতি ততটা নয়। এদিক থেকে অ্যালবার্ট আইনস্টাইন অনেক সরাসরি। ইসরায়েলের প্রথম প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এ বলে ‘গণিত কিছুটা বুঝলেও রাজনীতি মোটেই বুঝিনা। রাজনীতি বর্তমানের কিন্তু (পদার্থ বিজ্ঞানের একটি) সমীকরণ চিরকালের।’

আমাদের যুগের হিরো ব্রিটিশ পদার্থ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং যে কোনো বিচারে আইনস্টাইনের দুনিয়ার লোক। আইনস্টাইনের দুনিয়া মানে যে দুনিয়া আইনস্টাইনের সমীকরণ মেনে চলে। অবশ্য কেমব্রিজে হকিং-এর চেম্বারে আনইস্টাইনের পোস্টার যেমন আছে তেমনি আছে বিখ্যাত অভিনেত্রী মেরিলিন মনরোর পোস্টারও। তা হকিং যখন তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘এ ব্রিফ স্ট্রি অব টাইম লিখছেন’ তখন তার প্রকাশক তাকে জানালেন প্রতি সমীকরণ ব্যবহারে পাঠক সংখ্যা অর্ধেক করে কমে যাবে। তাই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত, কম পঠিত বই-এ মাত্র একটি সমীকরণ আছে। গণিতের রাজ্যে শুণ্য দিয়ে কোনো কিছুকে ভাগ করা যায় না, করলে ভাগফল হয়ে পড়ে অনির্নেয়।। কাজেই হকিং সুচিন্তিতভাবে বইয়ে একটি সমীকরণ রেখেছেন যাতে পাঠক সংখ্যা অনির্ণেয় না হয়!

গণিতে শূণ্য কিন্তু এই উপমহাদেশেরই দান। আর্যভট্ট এটি আবিস্কার করেন। শূণ্য না থাকলে পরার্ধ আর গুগল লেখার জন্য জগতের সকল কালি শেষ হয়ে যেত!

শুণ্য যেমন সংখ্যার একটি সীমানা তেমনি অসীমেও রয়েছে এর আর একটি সীমানা। গণিতে অসীমের ধারণা এতই বিস্তৃত যে, প্রায় সবাই এই আনন্দের কিছু না কিছু পেয়ে থাকে। যেমন ধরা যাক একটি আন্তর্জাতিক চেইন হোটেলের কথা। যদি তারা বানাতে পারে এমন একটি হোটেল যেখানে অসীম সংখ্যক ঘর রয়েছে, তা’হলে সেখানে কেমন সমস্যার উদ্ভব হতে পারে?

কোনো একদিন সেই হোটেলে হাজির হলে তুমি। দেখলে সব ঘর ভর্তি! ম্যানেজার তখন ১-নং ঘরের বাসিন্দাকে ২-নং ঘরে, ২নং-এর বাসিন্দাকে ৩নং-এ পাঠিয়ে তোমার জন্য ১-নং ঘরটি খালি করতে পারবেন।

বেশ! যদি তোমার বদলে হাজির হোন দুর্বাসা মুনি। দুর্বাসা মুনি খুবই রাগী লোক। গোরা েরা করেন তার অসীম সংখ্যক শিষ্য নিয়ে! তাহলে?

তো, আমাদের হোটেলের ম্যানেজার যদি তোমার মত গণিতে পারদর্শী হয় তাহলে সহজেই সে এই সমস্যার সমাধান করে ফেলতে পারবে। সে প্রত্যেক বাসিন্দাকে বর্তমান কক্ষনং-এর দ্বিগুন নম্বরের কক্ষে পাঠিয়ে দেবে। অর্থাৎ ১নং ঘরের বাসিন্দাকে ২ নং ঘরে, ২নংকে ৪নং, ৩ নং-কে ৬নং ঘরে...। এভাবে সব জোড় নম্বরের কক্ষগুলো ভর্তি হয়ে বেজোড় নম্বরের কক্ষগুলো খালি হয়ে যাবে। যেহেতু বেজোড় সংখ্যক কক্ষের সংখ্যাও অসীম, তাই দুর্বাসা মুনি ও তার অসীম সংখ্যক শিষ্যকে জায়গা দিতে তেমন একটা অসুবিধা হবে না।



গণিতের সৌন্দর্য পিয়াসীরা নানাভাবে সে সৌন্দর্য খুঁজে পান। আমাদের জাতীয় সংসদ ভবন কিন্তু সেই রকম সৌন্দর্যেরই বহিঃপ্রকাশ। স্থপতি লুই আই কান জ্যামিতিক ফিগারের নানা তারতম্যে এই শিল্পকর্মটি ডিজাইন করেছেন। জ্যামিতির ধারণা কত সহজভাবে, কঠিন সমস্যার সমাধান করতে পারে, তা এমনকী প্রাচীণ মিসরীয়দেরও জানা ছিল। একটি কঠিন রাশি, ২-এর বর্গমূল বের করার জন্য তারা জ্যামিতির শরণ নিয়েছিল। এখন অবশ্য যারা পীথাগোরাসের উপপাদ্য জানে তাদের জন্য এটি কোনো সমস্যা নয়।



সৌন্দর্যের গণিত

গণিতের সৌন্দর্য খোঁজা আমাদের প্রয়াসের একটি দিক। অপরদিকে, সুন্দরের কী গণিত হ’তে পারে?

আবার আমরা ফিরে যায় রামানুজনের কাছে। তার উদ্ভাবিত কিছু থিওরেম সম্পর্কে হার্ডি বলছেন- এগুলো এত সুন্দর যে, তা সত্য না হয়ে পারে না।

১৯২২ সালে আলেকজান্ডার ফ্রিডম্যান আইনস্টাইনের সমীকরণের সমাধান করলেন। তিনি দেখলেন দুনিয়া ক্রমাগত চারদিকে সম্প্রসারিত হচ্ছে। সবারই মাথায় হাত! কারণ দুনিয়া সম্পসারিত হতে থাকবে তা মেনে নেওয়া তখন বেশ কঠিন ছিল। খোদ আইনস্টাইন তার সমীকরণে একটি ধ্রুবক বসিয়ে দুনিয়াকে থামাতে চাইলেন। অথচ, পরে দেখা গেল, ফ্রিডম্যানই ঠিক। বাচ্ছাকাচ্চা সমেত বেড়েই চলছে এই দুনিয়া।

সত্যানুসন্ধানে তাই গণিত কেবল কিছু সংখ্যাই থাকে না।। দুনিয়াকে পাল্টে দেওয়ার মতো ঘটনাও সে ঘটিয়ে ফেলে।



ঘুরেফিরে তাই ভালোবাসতে হয় সংখ্যাকেই।



সংখ্যাকে ভালবেসে তাই তোমার জীবনকে আনন্দময় করে তোল।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৩

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: +++++++ ও প্রিয়তে :)

অসাধারণ পোস্ট ।
ভালো থাকবেন :)

২| ২৭ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ১:৩৬

ছোটমির্জা বলেছেন:
একটানে পড়ে ফেল্লাম। গনিত খুব মজার আর কাজের জিনিস। আপনি সেটা সুন্দর করে, দারুন লিখেছেন।
প্রিয়তে।

৩| ২৮ শে জুন, ২০১৩ রাত ২:৩৮

ব্ল্যাক_ডাইমণ্ড বলেছেন: আসলেই খুব মজা :-B
অটঃ আমি জানতাম আফ্রিকার বুশম্যানেরা তিন পর্যন্ত সংখ্যার হিসেব করতে পারে। হটেনটটরাও যে তাই করে এটা জানতাম না।

৪| ২৮ শে জুন, ২০১৩ রাত ৩:০৮

স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: বুকমার্ক করে রাখলাম , কাল ফ্রি হয়ে পড়বো ! গনিত নিয়ে পোষ্ট দেয়ার চিন্তা ভাবনা করছি ! আমার এক স্যার বলতেন গনিত দিয়ে ঈশ্বর প্রমাণ করা সম্ভব !

৫| ১৫ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ১১:১৪

মোঃ মুনজুর মোরশেদ বলেছেন: বুকমার্ক করে রাখলাম , কাল ফ্রি হয়ে পড়বো

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.